নাটক, চলচ্চিত্রসহ নানা আয়োজনে প্রথমবারের মত শুরু হয়েছে ‘আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী শিল্প উৎসব’।
Published : 26 Apr 2024, 10:19 PM
দৃষ্টিহীন মোহন সরকার ঢাকার জাতীয় নাট্যশালার লবিতে বসে সুর তুলছিলেন বাঁশিতে, পাশে দাঁড়িয়ে তা শুনছিলেন বাংলাদেশ সরকারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রী দীপু মনি।
মন্ত্রীকে কাছে পেয়ে মোহন বললেন, প্রতিবন্ধীরাও যেন সমাজে ভূমিকা রাখতে পারে, সেজন্য সরকার যেন কিছু পরিকল্পনা করে। বিশেষ করে দৃষ্টিহীনদের জন্য কিছু করার আবেদন জানান মোহন।
মন্ত্রী দীপু মনিও আশ্বস্ত করেন। বলেন, "আমি শুনেছি আপনার কথা। অবশ্যই করার চেষ্টা করব।"
পরে মন্ত্রী ঘুরে দেখেন লবিতে থাকা বিভিন্ন শিল্পকর্ম। মোহন তার বাঁশিতে সুর তোলেন- ‘সোনা সোনা সোনা/লোকে বলে সোনা/ সোনা নয় তত খাঁটি/যত বলো খাঁটি/তার চেয়েও খাঁটি/বাংলাদেশের মাটি’।
মোহনের মত আরও অনেক শিল্পী জড়ো হয়েছেন ঢাকার শিল্পকলা একাডেমিতে। নাটক, চলচ্চিত্রসহ নানা আয়োজনে প্রথমবারের মত শুরু হয়েছে ‘আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী শিল্প উৎসব’।
শুক্রবার বিকেলে জাতীয় নাট্যশালার প্রধান মিলনায়তনে এ উৎসবের উদ্বোধন হয়। উৎসবে থাকছে দেশি-বিদেশি চলচ্চিত্র প্রদর্শনী। প্রতিদিন বেলা ৩টা থেকে পাঁচটি করে নাটক মঞ্চস্থ হচ্ছে জাতীয় নাট্যশালার মূল মঞ্চে।
উৎসব উপলক্ষে নাট্যশালার লবিতে 'অদম্য শিল্পোৎসব' শীর্ষক একটি প্রদর্শনী আয়োজন করা হয়েছে। সেখানে আইআইডি'র তত্ত্বাবধানে সংগীত, চিত্রকলা, ভাস্কর্যসহ নানান শিল্পকর্ম প্রদর্শন করা হয়। এছাড়া রয়েছে থিয়েটার পারফরমেন্স, প্যানেল আলোচনা, ফিল্ম প্রদর্শনী ও মেলার আয়োজন।
উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মন্ত্রী দীপু মনি বলেন, "যারা নানা রকম প্রতিবন্ধিতায় আক্রান্ত, তারা কিন্তু সৃজনশীলতায় অনেক বেশি এগিয়ে। এই উৎসব বলে দেয়, তারা সমাজে আর সব মানুষের মত এবং তারাও দারুণ শিল্প নির্মাণ করতে পারেন। নান্দনিক মননশীলতার চর্চায় তারা এগিয়ে যেতে পারেন, যদি তাদের সুযোগ করে দেওয়া হয়।"
সরকার অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ ও রাষ্ট্র নির্মাণের চেষ্টা করছে মন্তব্য করে দীপু মনি বলেন, সেজন্য প্রয়োজন সচেতনতা সৃষ্টি।
“বঙ্গবন্ধু বৈষম্যহীন সমাজ তৈরি করতে চেয়েছিলেন। বর্তমান সরকারও প্রতিটি মানুষের পাশে আছে। আমরা চাই, সবাই যেন উন্নয়নের মূল ধারায় আসতে পারেন।"
ডেপুটি ব্রিটিশ হাই কমিশনার ম্যাট ক্যানেল, গ্রেআই থিয়েটার কোম্পানির আর্টিস্টিক ডিরেক্টর জেনি সিলি, ব্রিটিশ কাউন্সিল বাংলাদেশের ডিরেক্টর (ইন্টেরিম) শ্যানন ওয়েস্ট, ঢাকা থিয়েটারের প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক নাসির উদ্দীন ইউসুফ এবং ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেটিকস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইআইডি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সাঈদ আহমেদ উপস্থিত ছিলেন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে।
নাসির উদ্দীন ইউসুফ বলেন, "মূলধারার সংস্কৃতিচর্চায় সমাজের সব শ্রেণির মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করতে ২০১৩ সাল থেকে প্রতিবন্ধীদের নিয়ে নাট্য ও শিল্পচর্চার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এক যুগ ধরে দেশের আটটি বিভাগে প্রতিবন্ধীদের শিল্পসংগঠন ‘সুন্দরম’ গড়ে তোলা হয়েছে। এতে সহায়তা দিচ্ছে ব্রিটিশ কাউন্সিল।"
উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতার পর মুক্তিযুদ্ধের স্মরণে একটি থিয়েটার পারফরমেন্স 'নৈঃশব্দ্যে '৭১' পরিবেশিত হয়। সংলাপহীন এই নাটকে সংগীতের মূর্ছনা আর অভিনয়ের নান্দনিকতায় তুলে ধরা হয় মুক্তিযুদ্ধের কাহিনী।
প্রথম দিন আরও মঞ্চস্থ হয় সুন্দরম চট্টগ্রামের নাটক ‘স্বপ্ন কাহন’, বরিশালের ‘সার্কাস সার্কাস’, খুলনার ‘অতঃপর করিম বাওয়ালী’ এবং রংপুরের নাটক ‘ত্রিবেণি’।
রাজধানীর সেগুনবাগিচায় শিল্পকলা একাডেমিতে এ উৎসব চলবে শনিবার রাত পর্যন্ত। দেশের আটটি বিভাগের প্রতিবন্ধী শিল্পীদের সংগঠন ‘সুন্দরম’ ও কলকাতার প্রতিবন্ধী শিল্পীদের একটি নাট্যদল উৎসবে অংশ নিচ্ছে।
আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, অন্তর্ভুক্তিমূলক থিয়েটার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী শিল্পীদের নিয়ে ব্রিটিশ কাউন্সিলের দীর্ঘমেয়াদী প্রচেষ্টার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে আয়োজন করা হয়েছে এ উৎসব।
শনিবার উৎসবের সমাপনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজাহার খান।
উৎসবের দ্বিতীয় দিনে মঞ্চস্থ হবে সুন্দরম সিলেটের নাটক ‘সঙগতি’, রাজশাহীর নাটক ‘পিতৃগণ’, ঢাকার নাটক ‘কেন্দ্র বরাবর সুড়ঙ্গটির নাম পৃথিবী’, ময়মনসিংহের নাটক ‘কাজলরেখা’ এবং কলকাতার জনসংস্কৃতি সেন্টার ফর দ্য থিয়েটার অব দ্য ওপ্রেসডের নাটক ‘দ্য ওয়েস্ট ল্যান্ড আ জার্নি’।
শনিবার বেলা ১১টা ও বেলা সাড়ে ৩টায় দুটি সেমিনার আয়োজনও রয়েছে। চিত্রশালা মিলনায়তনে উৎসবের দ্বিতীয় দিন বেলা ১১টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত থাকবে দেশি-বিদেশি চলচ্চিত্র প্রদর্শনী। এ ছাড়া দুই দিনই একাডেমি প্রাঙ্গণে বেলা ১১টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত থাকবে প্রতিবন্ধী শিল্পীদের তৈরি হরেক রকম হস্ত ও কারুশিল্প এবং খাদ্যসামগ্রীর প্রদর্শনী।