নতুন আইনে ওয়েব সিনেমার ক্ষেত্রেও সেন্সরবোর্ড থেকে ছাড়পত্র নেওয়ার বিধি রাখা হয়েছে। কিন্তু চলচ্চিত্র নির্মাণ সংশ্লিষ্টদের পাশাপাশি সেন্সর বোর্ডের সদস্যরাও সে ব্যাপারে অবগত নন।
Published : 27 Apr 2024, 01:30 AM
এক যুগ আগের এক সাড়া জাগানো হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে গল্পের মিল থাকায় পরিচালক রায়হান রাফীর নতুন ওয়েব ফিল্ম ‘অমীমাংসিত’ সেন্সরবোর্ডে আটকে যাওয়ার পর নানা প্রশ্ন উঠছে।
যে প্রশ্নটি বেশি আলোচিত হচ্ছে– ওয়েব সিনেমার জন্যও কী তাহলে সেন্সরবোর্ডের ছাড়পত্র নিতে হবে?
তথ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা এবং আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যাচ্ছে, নতুন আইনে ওয়েব সিনেমার ক্ষেত্রেও সেন্সরবোর্ড থেকে ছাড়পত্র নেওয়ার বিধি রাখা হয়েছে। কিন্তু চলচ্চিত্র নির্মাণ সংশ্লিষ্টদের পাশাপাশি সেন্সর বোর্ডের সদস্যরাও সে ব্যাপারে অবগত নন।
ফজলুল হক ইনস্টিটিউট অব মিডিয়া স্ট্যাডিজের পক্ষে ‘অমীমাংসিত’ সিনেমার প্রযোজক শহীদুল আলম সাচ্চু। গত ২৯ ফেব্রুয়ারি ওটিটি প্ল্যাটফর্ম আইস্ক্রিনে ‘অমীমাংসিত’ মুক্তির ঘোষণা ছিল। কিন্তু সেন্সর বোর্ডের আপত্তির কারণে পেছানো হয় তারিখ। এরপর ঈদের বিশেষ চমক হিসেবে মুক্তির কথা জানানো হয়। সেটিও পরে হয়নি।
গত ৪ মার্চ সেন্সর বোর্ডের সদস্যরা সিনেমাটি পরীক্ষা করেন। এরপর সেটি অধিকতর যাচাই-বাছাইয়ের জন্য ২২ এপ্রিল বোর্ড সদস্যরা পুনরায় পরীক্ষা করেন। পুনরায় যাচাই শেষে বোর্ড সভায় চলচ্চিত্রটির বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
শেষ পর্যন্ত বুধবার প্রযোজক শহিদুল আলম সাচ্চুকে দেওয়া সেন্সর বোর্ডের উপপরিচালক মো. মঈনুদ্দীন স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে জানানো হয়, সিনেমাটি জনসাধারণের মধ্যে ‘প্রদর্শন উপযোগী নয়’।
কেন এই সিদ্ধান্ত? সেন্সরবোর্ড বলছে, “এতে নৃশংস খুনের দৃশ্য রয়েছে। কাল্পনিক কাহিনী, চিত্রনাট্য ও সংলাপের বিষয়বস্তু বাস্তবতার সঙ্গে মিল রয়েছে। এ ধরনের ঘটনা বাস্তবে ঘটেছে এবং ঘটনা সংশ্লিষ্ট মামলা উচ্চ আদালতে বিচারাধীন। চলচ্চিত্রটির কাহিনী/বিষয়বস্তু বিচারাধীন মামলার সঙ্গে মিল থাকায় ভুল বার্তা দিতে পারে এবং তদন্তের বিঘ্ন ঘটাতে পারে।”
কোন বাস্তব ঘটনার সঙ্গে মিলের কারণে এই সিদ্ধান্ত, চিঠিতে তা স্পষ্ট করেনি সেন্সর বোর্ড। তবে বোর্ডের একজন সদস্য গ্লিটজকে বলেছেন, এ সিনেমার গল্পের সঙ্গে সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের মিল রয়েছে। সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড এখন আদালতে বিচারাধীন। সেজন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আপত্তি তোলা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আপত্তির জায়গাটা কী? এ বিষয়ে জানতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমানকে ফোন করেছিল গ্লিটজ, কিন্তু তাদের সাড়া মেলেনি।
কী আছে সিনেমায়?
“কারা খুন করল অর্ণব আর নীরুকে? মুখোশধারী লোকগুলো কারা? এই অমীমাংসিত রহস্যের আদৌ কী জট খুলবে?”
গত ১৩ ফেব্রুয়ারি ফেইসবুকে এই পোস্ট লিখেছিলেন নির্মাতা রায়হান রাফী, প্রকাশ করেছিলেন ‘অমীমাংসিত’ সিনেমার টিজার ও পোস্টার।
টিজার প্রকাশের পর সোশাল মিডিয়ায় কিছু মন্তব্য থেকে আঁচ করা যায়, তারা আলোচিত সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের দিকে ইঙ্গিত করছেন।
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারে ভাড়া বাসায় খুন হন বেসরকারি টিভি চ্যানেল মাছরাঙার বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার এবং তার স্ত্রী এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনি। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী আজও সেই হত্যা রহস্যের মীমাংসা করতে পারেনি।
৪০ সেকেন্ডের টিজারে হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে কিছু ধারণা লিখিত সংলাপ আকারে তুলে ধরা হয়েছে। সেগুলো এরকম- ‘খুনগুলো হয়েছে আনুমানিক রাত দেড়টা থেকে ২টার মধ্যে। ধারণা করছি, এটা কোনো চুরি ডাকাতি কেস...’; ‘সাংবাদিক, প্রতিবেশী, আত্মীয়স্বজন সবাই ক্রাইম জোনের আলামত নষ্ট করেছে। আমার করার কী ছিল’; ‘ওদের কেউ মারেনি। ওরা নিজেরাই নিজেদের খুন করেছে’; ‘এটা নিশ্চিত পরকীয়া কেস! নইলে সেদিন...’।
সিনেমার পোস্টারে দেখা যায়, মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন ইমতিয়াজ বর্ষণ ও তানজিকা আমিন। তাদের পেছনে কয়েকজন ব্যক্তি দাঁড়িয়ে, যাদের মুখে কালো কাপড় বাঁধা। তারা কারা? এর উত্তর মেলার কথা ছিল মূল ছবিতে।
সিনেমাটি সাগর-রুনির হত্যাকাণ্ড নিয়ে কিনা- এমন প্রশ্নে নির্মাতা রায়হান রাফী গ্লিটজকে বলেছিলেন, “সাংবাদিকের গল্প বলেই কেউ কেউ ধারণা থেকে বলছে, এটি সাগর-রুনির ঘটনা নিয়ে। এজন্যই সেন্সর বোর্ড থেকে সিনেমাটি দেখতে চেয়েছে। এখন কেন আটকে রেখেছে, জানি না।”
আর ওটিটি প্ল্যাটফর্ম আইস্ক্রিনের প্রকল্প পরিচালক রিয়াজ আহমেদ বলেন, “এটি সাগর-রুনি হত্যার ঘটনা নিয়ে সিনেমা না। যদি আংশিক মিলেও যায়, তাহলে কি এটা বন্ধ করে দিতে হবে, আমি জানি না।”
‘অমীমাংসিত’ কেন সেন্সরে?
গত ১২ ফেব্রুয়ারি ‘অমীমাংসিত’ সিনেমার টিজার প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে মিলিয়ে আলোচনা শুরু হয়। সেই প্রেক্ষাপটে ১৯ ফেব্রুয়ারি সিনেমাটি সেন্সরবোর্ডে জমা দিতে নির্দেশ দেয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়।
চিঠিতে বলা হয়, কোনো চলচ্চিত্র যে কোনো মাধ্যমে প্রচারের পূর্বে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের নিকট হতে সার্টিফিকেশন গ্রহণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
চলচ্চিত্র ও অনুষ্ঠান নির্মাতাদের মধ্যে এতদিন সাধারণ ধারণা ছিল, ওটিটি প্ল্যাটফর্মের কনটেন্টের ক্ষেত্রে হয়ত ওই বাধ্যবাধকতা কাজ করে না।
তবে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, “দেশীয় চলচ্চিত্র শিল্পের সুরক্ষা, বিকাশ, সংরক্ষণ, পারিবারিক ও সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় রোধসহ নানাবিধ কারণে Censorship of Films Act, 1963 রহিতক্রমে সময়োপযোগী করে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন আইন ২০২৩ প্রণয়ন করা হয়েছে; যা ইতোমধ্যে গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়েছে।”
ওই আইনের ধারা ৫ এর উপধারা (১) অনুযায়ী সিনেমাটি সেন্সরবোর্ডে জমা দিতে বলা হয় এবং ওটিটি প্ল্যাটফর্ম আইস্ক্রিনে মুক্তি দেওয়ার আগে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড থেকে সেন্সর সার্টিফিকেট নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
‘অমীমাংসিত’ সংশ্লিষ্টদের বলা হয়, “চলচ্চিত্রটির টিজার এবং বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ মারফত জানা গেছে, কোনো তদন্তাধীন বিষয়কে কেন্দ্র করে চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করা হয়েছে। এ রকম তদন্তাধীন বিষয়ের ওপর নির্মিত ‘অমীমাংসিত’ নামক চলচ্চিত্রটি আগামী ২৯-০২-২০২৪ তারিখে ওটিটি প্লাটফর্ম আইস্ক্রিনে মুক্তি দেওয়া হলে তদন্ত কার্যক্রম সম্পাদনে বিঘ্ন ঘটতে পারে। সে কারণে তদন্তাধীন একটি বিষয়ের ওপর নির্মিত চলচ্চিত্র ওটিটি প্ল্যাটফর্ম আইস্ক্রিনে মুক্তিদানের পূর্বে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড হতে সেন্সর সার্টিফিকেট গ্রহণ করা সমীচীন।”
সিনেমাটি যে সেন্সর সনদ পাচ্ছে না, তা জানার পর আইস্ক্রিনের প্রকল্প পরিচালক রিয়াজ আহমেদ গ্লিটজকে বলেন, “আমরা ২৯ ফেব্রুয়ারি সিনেমাটি মুক্তি দেওয়ার সব পরিকল্পনা শেষ করার পর সেন্সর বোর্ড থেকে আমাদের চিঠি দেওয়া হয়, তারা সিনেমাটি দেখবেন। আমরা সে মোতাবেক আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে সিনেমাটি জমা দিই। এখন সেন্সরবোর্ড জানিয়েছে, সিনেমাটি প্রদর্শন উপযোগী নয়। এই সিদ্ধান্ত কেন নেওয়া হল? জানা নেই। আমরা আপিল করব।”
তবে চিঠি পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সরকারের কাছে আপিল করার সুযোগ রয়েছে বলে গ্লিটজকে জানিয়েছেন সেন্সর বোর্ডের উপপরিচালক মো. মঈনুদ্দীন।
সেন্সরবোর্ডের সদস্য ও চলচ্চিত্র প্রযোজক খোরশেদ আলম খসরু বলছেন, বোর্ডের সদস্যরা সিনেমাটি দেখে সম্মিলিত মতামতের ভিত্তিতেই ‘প্রদর্শন অযোগ্য’ ঘোষণা করেছে। কিন্তু ওয়েব সিনেমা সেন্সরে কেন, সেটা তার কাছে বোধগম্য নয়।
গ্লিটজকে তিনি বলেন, “সাধারণত প্রেক্ষাগৃহে যেসব সিনেমা মুক্তি দেওয়া হয়, সেসব সিনেমার জন্য সেন্সরবোর্ড থেকে ছাড়পত্র নিতে হয়। কিন্তু ওয়েব সিনেমার জন্যও সেন্সরবোর্ড থেকে ছাড়পত্র নিতে হয় কিনা, আমার জানা নেই।”
তার ভাষ্য, “সিনেমাটি যদি ওটিটিতেই মুক্তি দেওয়া হয়, তবে সেন্সরবোর্ডে কেন জমা দেওয়া হয়েছে? তারা ওটিটিতে তো এমনিতেই মুক্তি দিতে পারত।”
এ বিষয়ে গ্লিটজ কথা বলেছে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তানজিম আল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেছেন, সরকার ১৯৬৩ সালের ‘সেন্সরশিপ অব ফিল্মস অ্যাক্ট’ রহিত করে ‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন আইন ২০২৩’ করায় ওয়েব ফিল্ম বা ওটিটির চলচ্চিত্রও এর আওতায় থাকছে।
“নতুন আইনে ওয়েব চলচ্চিত্রকেও এখন সেন্সরবোর্ডের ছাড়পত্র নিতে হবে। সেন্সরবোর্ড যে ‘অমীমাংসিত’ সিনেমাটি প্রদর্শন আযোগ্য ঘোষণা করেছে, সেটি আইন অনুযায়ী ঠিক আছে।”
আইনে বলা হয়েছে, "বাংলাদেশে নির্মিত চলচ্চিত্র, আমদানিকৃত বিদেশি চলচ্চিত্র, বাংলাদেশি কোনো ব্যক্তি কর্তৃক দেশে বা বিদেশে নির্মিত কোনো চলচ্চিত্র এবং যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত চলচ্চিত্র জনসাধারণের মধ্যে যে কোনো মাধ্যমে প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে পরীক্ষণ ও সার্টিফিকেশন প্রদানের জন্য বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন বোর্ড নামে একটি বোর্ড গঠন করবে।"
প্রশ্ন আছে আরো
‘অমীমাংসিত’ যেভাবে নতুন আইনে আটকে দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজ অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক বেলায়াত হোসেন মামুন।
গ্লিটজকে তিনি বলেন, "সরকার যদি চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন আইন প্রণয়ন করে থাকে এবং তা গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়ে থাকে, তাহলে তো সেন্সরবোর্ড বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার কথা এবং তার জায়গায় এখন চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন বোর্ড হয়ে যাওয়ার কথা।
“আর সার্টিফিকেশন বোর্ড হলে তো কোনো চলচ্চিত্র আটকে দেওয়ার কথা নয়৷ সার্টিফিকেশন আইনের কনসেপ্টই তো এটা৷ অন্যদিকে পুরোনো সেন্সর আইনে ওয়েব কনটেন্ট 'সেন্সর' করার কোনো উল্লেখ নেই৷ থাকার কথাও নয়৷ তাহলে সেন্সরবোর্ড কীভাবে ওয়েব কনটেন্ট সেন্সরের আওতায় নিচ্ছে বা সেন্সর করছে?”
চলচ্চিত্র নির্মাতা অমিতাভ রেজা চৌধুরী বলছেন, “ওয়েব ফিল্মকে সেন্সর আইনে আনা সম্ভব নয় বা যুক্তিযুক্তও নয়। ইউটিউব বা সোশাল মিডিয়ায় যে কন্টেন্ট দেখি, সেগুলোও তো এক ধরনের ওয়েব কন্টেন্টই। ওটিটি তো আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্ম। কেউ চাইলে দেশের বাইরে থেকেও অনলাইনে কন্টেন্ট সরবরাহ করতে পারছে।”
চাইলে যে কোনো কিছু বন্ধ করার সুযোগ যে সরকারের আছে, সে কথা তুল ধরেই অমিতাভ রেজা বলেন, “কোনো কন্টেন্ট যদি সমাজের জন্য ক্ষতিকর হয়, সেটা সরকার নানাভাবেই বন্ধ করা যায়। এর জন্য অন্য অনেক আইনও আছে। কিন্তু এর জন্য ওয়েব ফিল্মকে সেন্সরবোর্ড থেকে ছাড়পত্র নিতে হবে কেন?”
আর এত এত ওটিটি কনটেন্ট যখন দেশে তৈরি হচ্ছে, বিদেশি কনটেন্ট যেখানে দেশে দেখা যাচ্ছে, সেখানে ‘অমীমাংসিত’ সিনেমাকেই কেন সেন্সরবোর্ড থেকে ছাড়পত্র নিতে বলা হল, সে প্রশ্নও তোলেন অমিতাভ রেজা।
যে যুক্তি দিয়ে ‘অমীমাংসিত’ আটকে দেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে সিনেমাটির নির্মাতা রায়হান রাফীর।
তিনি বলেন, “কোনো সিনেমায় কোনো সাংবাদিক দম্পতি খুন হতে পারবে না? সিনেমায় কোনো মেয়ে গুম হয়ে খুন হলে তা কুমিল্লার তনুর সাথে মেলানো হবে? সিনেমায় কোন কিশোরের লাশ নদীতে পাওয়া গেলে তার সাথে নারায়ণগঞ্জের ত্বকী হত্যাকাণ্ড মেলানো হবে? এগুলো কেমন কথা?”
‘অমীমাংসিত’ সিনেমায় কোনো কিছুই প্রমাণ করা হয়নি মন্তব্য করে এই নির্মাতা গ্লিটজকে বলেন, “জাস্ট বিভিন্নজনের ধারণা দেখানো হয়েছিল, তারপরও এই সিনেমা আটকে দেওয়াটা সত্যি দুঃখজনক।”
অনলাইনের মুক্তবাজারে সেন্সর বোর্ড থাকা উচিৎ কি না, সেই প্রশ্নও আসছে। চলচ্চিত্র সেন্সর আপিল বোর্ডের সদস্য নাসির উদ্দীন ইউসুফ নিজেই সেন্সর নিয়মের বিলুপ্তি চান।
এর আগে মোস্তফা সরয়ার ফারুকী পরিচালিত ‘শনিবার বিকেল’ সিনেমাটি সেন্সরবোর্ড থেকে আটকে দেওয়া হলে, তা নিয়ে আন্দোলনে সরব ছিলেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক এই সভাপতি।
গ্লিটজকে তিনি বলেন, “আমি মনে করি সিনেমায় সেন্সর থাকা উচিত নয়। তবে একটা গ্রেডিং প্রক্রিয়া থাকতে পারে। যেখানে এটা কোন ধরনের সিনেমা, তা আগে উল্লেখ করে দেওয়া হবে। শিশুদের উপযোগী সিনেমা নাকি প্রাপ্তবয়ষ্কদের উপযোগী, এরকম গ্রেডিং থাকতে পারে। কোনো সেন্সর থাকা উচিত নয়।”
নাসির উদ্দীন ইউসুফ বলেন, “সমাজের জন্য ক্ষতিকর যে কোনো কিছুই বন্ধ করার এখতিয়ার সরকারের নানাভাবে আছে। কিন্তু তার জন্য ওয়েব সিনেমাকেও সেন্সরের আওতায় আনার প্রয়োজন নেই।”
এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে সেন্সর বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান খালেদা বেগমকে ফোন করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার গ্লিটজের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, "নতুন আইন অনুযায়ী, এখন থেকে যে কোনো মাধ্যমেই সিনেমা প্রদর্শন করতে গেলে সেন্সর সনদ নিতে হবে। এ কারণেই 'অমীমাংসিত' সিনেমাটি সেন্সর বোর্ড সদস্যরা দেখে সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন।"
বদলে যাচ্ছে সেন্সর বোর্ডের নাম
ফিল্ম সোসাইটিজ অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক বেলায়াত হোসেন মামুন যে প্রশ্ন তুলেছেন, তার উত্তর পাওয়া গেল তথ্য সচিব হুমায়ুন কবীরের কথায়।
তিনি জানালেন, নতুন আইন অনুযায়ী চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের নাম বদলে যাচ্ছে। এর নামকরণ হবে 'বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন বোর্ড'।
"শিগগিরই আইন অনুযায়ী নতুন বোর্ড গঠন করা হবে। এতদিন যেটি চলচ্চিত্র সেন্সরবোর্ড নামে ছিল, সেটি হবে সার্টিফিকেশন বোর্ড।"
মন্ত্রণালয়ের আইন অধিশাখার একজন কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বোর্ডের কার্যপদ্ধতি এখনো বিধি আকারে তৈরি হয়নি। বিধি ছাড়াও যেসব কার্যাবলী সম্পন্ন করা যায়, সেগুলো করা হচ্ছে। বিধি চূড়ান্ত হলেই নতুন বোর্ড গঠন করা হবে। সপ্তাহখানের মধ্যেই হয়তো বিধি চূড়ান্ত হতে পারে।
বোর্ড গঠনের বিষয়ে আইনে বলা হয়েছে, একজন চেয়ারম্যান এবং অনধিক ১৪ জন সদস্য নিয়ে বোর্ড গঠিত হবে। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব বোর্ডের চেয়ারম্যান হবেন। বোর্ডের মেয়াদ হবে এক বছর। তবে পরবর্তী বোর্ড কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত বিদ্যমান বোর্ড কার্যক্রম চলমান রাখবে। বোর্ডের কার্যপদ্ধতি বিধি দ্বারা নির্ধারিত হবে।
বোর্ডের কার্যাবলিতে বলা আছে, "এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, বোর্ডের কার্যাবলি হবে, "চলচ্চিত্রের সার্টিফিকেশন প্রদানের লক্ষ্যে আবেদন গ্রহণ। চলচ্চিত্রের শ্রেণিবিন্যাস ও মূল্যায়ন প্রতীকসহ সার্টিফিকেশন প্রদান। চলচ্চিত্রের সার্টিফিকেশন সাময়িক স্থগিত বা বাতিলকরণ। চলচ্চিত্রের প্রচার সামগ্রীর অনুমোদন প্রদান। যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত চলচ্চিত্রের সার্টিফিকেশন প্রদান। চলচ্চিত্র আমদানি ও রপ্তানির অনুমোদন ও সার্টিফিকেশন প্রদান। সরকার কর্তৃক, সময় সময়, অর্পিত অন্য কোনো কার্য সম্পাদন।"
পুরনো খবর: