নির্মাতা রাফী সিনেমাটি মুক্তির ব্যাপারে এখনো আশা ছাড়েননি।
Published : 12 Apr 2024, 03:06 PM
কারা খুন করল অর্ণব আর নীরুকে? মুখোশধারী লোকগুলো কারা? এই অমীমাংসিত রহস্যের আদৌ কী জট খুলবে? গত ১৩ ফেব্রুয়ারি ফেইসবুকে এই পোস্ট লিখেছিলেন নির্মাতা রায়হান রাফী, প্রকাশ করেছিলেন ‘অমীমাংসিত’ সিনেমার টিজার এবং পোস্টারও। জানিয়েছিলেন ২৯ ফেব্রুয়ারি আইস্ক্রিনে আসছে ‘অমীমাংসিত’।
মুক্তির সব প্রস্তুতি থাকলেও বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের আপত্তির কারণে পেছানো হয় সিনেমাটির মুক্তির তারিখ। পরে জানানো হয়, ঈদে মুক্তি পাবে এ সিনেমা। কিন্তু ঈদেও মুক্তি পাচ্ছে না রায়হান রাফী পরিচালিত সিনেমা ‘অমীমাংসিত’।
অনেকে বলছেন, আলোচিত সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে সিনেমাটি নির্মাণ করা হয়েছে। তবে কী সত্য ঘটনা অবলম্বনে সিনেমাটি নির্মাণের গুঞ্জন থেকেই সেন্সর বোর্ডে আটকে আছে ছবিটি? প্রশ্নের উত্তর মিলছে না সেন্সর বোর্ড সংশ্লিষ্টদের কারো কাছ থেকেই।
তবে নির্মাতা রাফী সিনেমাটি মুক্তির ব্যাপারে এখনো আশা ছাড়েননি।
ওটিটির সিনেমা কেন সেন্সরে?
বাংলাদেশে ওটিটি প্ল্যাটফর্মে সিনেমা মুক্তি দেয়ার ক্ষেত্রে চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড থেকে ছাড়পত্র নেয়ার নিয়ম না থাকলেও তাদের আপত্তিতেই আটকে আছে ‘অমীমাংসিত’।
ছবিটি প্রথমে ২৯ ফেব্রুয়ারি মুক্তির ঘোষণা দেয় আইস্ক্রিন। গত ১২ ফেব্রুয়ারি যখন এর টিজার ছাড়া হয় অন্তর্জালে, তখন দর্শকরা বলছেন, ছবিটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে বানিয়েছেন রাফী। কেউ কেউ এখানে সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের বিষয়টিও সামনে আনেন। যদিও সিনেমা সংশ্লিষ্ট কেউই তা নিশ্চিত করেননি।
সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচনার প্রেক্ষিতেই সেন্সর বোর্ড থেকে সিনেমাটি দেখার জন্য চিঠি দেওয়া হয়। যথাযথ নিয়ম মেনে সিনেমাটি সেন্সর বোর্ডে জমা দেওয়া হয়।
‘অমীমাংসিত’ সিনেমাটি ঈদের বিশেষ চমক হিসেবে মুক্তির কথা ছিল ওটিটি প্ল্যাটফর্ম আইস্ক্রিনে। কিন্তু সেটি আর হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন আইস্ক্রিন এর প্রকল্প পরিচালক রিয়াজ আহমেদ।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা ২৯ ফেব্রুয়ারি সিনেমাটি মুক্তি দেয়ার সব পরিকল্পনা করার পর সেন্সর বোর্ড থেকে আমাদের চিঠি দেয়া হয়, তারা সিনেমাটি দেখবেন। আমরা সে মোতাবেক আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে সিনেমাটি জমা দেই। প্রায় দুই মাস হয়ে গেল, এখনো আমাদের কিছুই জানানো হয়নি।
“আমাদের পরে অনেক সিনেমা সেন্সর ছাড়পত্র হয়েছে, এটি কেন আটকে আছে জানি না। সেন্সর সার্টিফিকেট পাওয়া সাপেক্ষে অতি দ্রুত সিনেমাটি মুক্তি দেয়ার ইচ্ছা রাখছি।”
রিয়াজ বলেন, “আন-অফিশিয়ালি সেন্সর বোর্ডের একাধিক সদস্য আমাদের জানিয়েছেন, সিনেমাটি দেখে তারা আপত্তির কিছু পাননি। তাহলে কেন আটকে আছে, আমরাও জানি না।”
সিনেমাটির নির্মাতা রায়হান রাফী বলেন, “সিনেমাটি সেন্সর বোর্ডের সদস্যরা দেখেছেন, তাদের কেউ কেউ আমাদেরকে বলেছেন, তাদের কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু সেন্সর বোর্ড কেন আটকে দিল, তা তো জানি না।”
“যেকোনো ধরণের গল্প নিয়েই তো সিনেমা হতে পারে। এই সিনেমায় আপত্তি করার মতো কী আছে, ঠিক বুঝতে পারছি না।”
কেন আটকে আছে ‘অমীমাংসিত’- তা জানতে চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা কেউই মন্তব্য করতে রাজি হননি।
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন সদস্য বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এই সিনেমার গল্পের সঙ্গে সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের মিল রয়েছে। সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড এখন আদালতে বিচারাধীন। এজন্যই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আপত্তি করা হয়েছে।”
এ বিষয়ে সেন্সর বোর্ডের চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন তিনি।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার বর্তমানে রয়েছেন সেন্সর বোর্ডের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে। বর্তমানে বিদেশে থাকায় তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
সেন্সর বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান খালেদা বেগমকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, “আমি এ বিষয়ে মন্তব্য করতে পারব না।”
খালেদা বেগমের আগে সেন্সর বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকা মুহা. সাইফুল্লাহও কোনো মন্তব্য করতে চাননি।
কী আছে সিনেমায়
‘অমীমাংসিত’ নামেই রহস্যের গন্ধ স্পষ্ট। টিজার প্রকাশের পর সোশাল মিডিয়ায় কিছু মন্তব্য থেকে আঁচ করা যায়, তারা আলোচিত সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের দিকে ইঙ্গিত করছেন। একযুগ পেরিয়ে গেলেও সেই ঘটনার রহস্য এখনও উন্মোচিত হয়নি।
প্রকাশ্যে আসা ৪০ সেকেন্ডের টিজারে হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য লিখিত সংলাপ আকারে তুলে ধরা হয়েছে। সেগুলো এরকম- ‘খুনগুলো হয়েছে আনুমানিক রাত দেড়টা থেকে দুইটার মধ্যে। ধারণা করছি, এটা কোনও চুরি ডাকাতি কেস...’; ‘সাংবাদিক, প্রতিবেশী, আত্মীয়স্বজন সবাই ক্রাইম জোনের আলামত নষ্ট করেছে। আমার করার কী ছিল’; ‘ওদের কেউ মারেনি। ওরা নিজেরাই নিজেদের খুন করেছে’; ‘এটা নিশ্চিত পরকীয়া কেস! নইলে সেদিন...’।
টিজারের পর ওয়েব ফিল্মটির পোস্টারও প্রকাশ করেছেন নির্মাতা রায়হান রাফী। যেখানে দেখা গেছে, মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন ইমতিয়াজ বর্ষণ ও তানজিকা আমিনকে। তাদের পেছনে কয়েকজন ব্যক্তি দাঁড়িয়ে আছেন; যাদের মুখে কালো কাপড় বাঁধা! তারা কারা উত্তর মিলবে মূল ছবিতে।
সিনেমাটি কী সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনির হত্যাকাণ্ড নিয়ে- এমন প্রশ্নে নির্মাতা রায়হান রাফী বলেন, “সাংবাদিকের গল্প বলেই কেউ কেউ ধারণা থেকে বলছে, এটি সাগর-রুনির ঘটনা নিয়ে। এজন্যই সেন্সর বোর্ড থেকে সিনেমাটি দেখতে চেয়েছে। এখন কেন আটকে রেখেছে, জানি না।”
রিয়াজ আহমেদ বলেন, “এটি সাগর-রুনি হত্যার ঘটনা নিয়ে সিনেমা না। যদি আংশিক মিলেও যায়, তাহলে কি এটা বন্ধ করে দিতে হবে, আমি জানি না।”
সিনেমার গল্প প্রসঙ্গে রিয়াজ বলেন, “২০১৮ সালের এক দম্পতি খুনের ঘটনা নিয়ে এই সিনেমাটি। ঘটনাক্রমে সেই দম্পতি ছিলেন সাংবাদিক। এর জন্য হয়তো কেউ কেউ মনে করছেন, এটা সাগর-রুনির খুনের ঘটনা নিয়ে। আমরা কিন্তু তা বলছি না।”