উৎসবে অনেক তারার মেলা বসলেও মূল আকর্ষণ ছিলেন বলিউডের ‘ভাইজান’।
Published : 07 Dec 2023, 01:32 PM
কলকাতা শহরে ছোটখাট একটি বাড়িতে ‘সাদাসিধেভাবে’ থাকেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। তার এই জীবযানযাপনের ধারাকে ‘হিংসে’ হয় বলিউড সুপারস্টার সালমান খানের।
মঙ্গলবার বিকেলে কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবের ২৯তম আসরের উদ্বোধনী মঞ্চে এ কথা নিজেই কবুল করলেন বলিউডের ভাইজান।
তবে তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা মমতা আশ্বাস দিয়েছেন, সালমানকে বিপদআপদ থেকে ‘দেখেশুনে’ রাখবেন তিনি।
আনন্দবাজার লিখেছে, নেতাজি ইন্ডোরে আয়োজিত এই উৎসবে ক্রিকেটার সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, বলিউডের শত্রুঘ্ন সিন্হা, সোনাক্ষী সিন্হা, মহেশ ভাট, অনিল কাপুর এবং কলকাতা থেকে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, দেবসহ বহু তারাকা আলো ছড়ালেও মূল আকর্ষণ ছিলেন সালমান। কলকাতার এ উৎসবে এবারই প্রথম এলেন তিনি।
উদ্বোধনী মঞ্চে বক্তব্যে দিতে গিয়ে সালমান বলেন, তিনি কি বলবেন, সেটাই বুঝে উঠতে পারছেন না।
“আমার আগে যারা কথা বললেন, আমাকে তারা রীতিমতো বিপর্যস্ত করে দিলেন। কারণ বলার আর কিছুই বাকি রাখেননি তারা।“
এ কথায় হাসির রোল ওঠে দর্শক সারিতে।
গত মে মাসে কলকাতায় এসে মমতার সঙ্গে দেখা করে সালমান এই উৎসবে আসার কথা দিয়ে গিয়েছিলেন। মমতাকে আর সবার মত ‘দিদি’ সম্বোধন করে ভাইজান বলেন, “গতবার দিদি অনুরোধ করেছিলেন। আমি কথা দিয়েছিলাম বলেই আজ এখানে এলাম।“
এরপর সিনেমার সংলাপ ধার করে সালমান বলেন, “কারণ, এক বার আমি কাউকে কথা দিলে তারপর আমি আর নিজের কথাও শুনি না।“
এ নায়ক জানান, তিনি শুনেছিলেন মমতা ব্যানার্জি ছোট একটা বাড়িতে সাদামাটাভাবে থাকেন। কিন্তু সেই ‘সাধারণত্ব’ কতটা সেটা জানার কৌতুহল থেকে তিনি মে মাসে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে যান।
“গিয়ে দেখলাম, সত্যিই তাই,“ বলেন সালমান।
দিদির জীবনযাপনের সঙ্গে নিজের জীবনের মিল খুঁজে পাওয়ার কথাও সালমান বলেন। মুম্বাইয়ে সালমানের বিশাল খামাড়বাড়ি থাকলেও শহরের বান্দ্রার ‘গ্যালাক্সি’ কমপ্লেক্সে এক কামরার একটি ঘরে থাকেন তিনি।
সেই প্রসঙ্গে ভাইজান বলেন, “দিদিকে দেখে সত্যিই হিংসা হল। কারণ দেখলাম, তিনি সত্যিই আমার চেয়েও সাধারণভাবে থাকেন।“
মমতা ও নিজেকে ‘সরল মনের মানুষ’ হিসেবে বর্ণনা করে এই নায়ক বলেন, “আসলে আমার ও দিদির মত সরল মনের মানুষদের জীবন যাপনের জন্য খুব বেশি কিছুর প্রয়োজন হয় না।“
মুখ্যমন্ত্রী সালমানকে ফের কলকাতায় আসার অনুরোধ করলে নায়কও কথা দিতে দেরি করেননি। বলেছেন, আগামীতে কলকাতায় তিনি শুটিংয়ের কাজ রাখবেন।
সবশেষে সালমান বলেন, “এখনো বলিউড বেঁচে আছে কারণ সেখানে বাঙালিরা রয়েছেন। তবে এ বার আমাদের এখানে এসে কাজ করার পালা।“
বক্তৃতার মাঝে বেশ কয়েকবার “আর কিছু বলার নেই” বলে সালমন মঞ্চ ছাড়ার প্রস্তুতি নেন। কিন্তু দর্শকদের অনুরোধে আবার বলতে শুরু করেন। এবং কথাবার্তা সবটাই মজার ছলেই বলেন সালমান।
শুধু হিন্দি নয়, সলমন দর্শকদের উদ্দেশে বাংলাতেও কথা বলেন। তার মুখে ‘কলকাতা কেমন আছ’, ‘আমি তোমাকে ভালবাসি’ শুনে করতালির বন্যা বয়ে যায়।
মমতা বলেন, সবার আগ্রহ-কৌতুহল ছিল শেষ পর্যন্ত ভাইজান আসেন কী না। শহরের মানুষের সেই আশা পূরণ হয়েছে।
সালমানকে দেখে রাখার আশ্বাস দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বলেন, কেউ যদি তাকে (সালমান) বিরক্ত করে, তাহলে যেন দিদিকে জানান।
“দিদি সালমানের পাশে আছে। বাংলা কাউকে ভয় পায় না। আমরা ভারতকে ভালোবাসি। আমরা মানবিকতার পক্ষে,” বলেন মমতা।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রীর পাশের আসনে বসেছিলেন সালমান খান। মাঝে মাঝে তাকে মমতার সঙ্গে কথা বলতেও দেখা যায়।
অনুষ্ঠানের আরেক অতিথি বলিউডের অভিনেতা অনিল কাপুর বলেন, কলকাতা থেকে তার ক্যারিয়ারের সূচনা।
কখনও ভাঙা ভাঙা বাংলা, আবার কখনও ইংরিজিতে আবেগঘন বক্তব্য দেন অনিল। তিনি বলেন, “যে শহর থেকে ক্যারিয়ার শুরু করেছিলাম, সেই শহরে এসে আজকে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছি।“
সত্তরের দশকে পরিচালক এমএস সথুর ‘কাঁহা কাঁহা সে গুজর গয়া’ সিনেমা শুটিং করেছিলেন কলকাতায়। ওই সিনেমা অনিলের প্রথম কাজ।
অনিল বাংলায় বলেন, “১৯৭৯ সালে মুম্বইয়ের ভিটি স্টেশন থেকে ট্রেনে চেপে হাওড়া স্টেশনে এসে নেমেছিলাম। তারপর বাসে চেপে গিয়ে উঠেছিলাম বালিগঞ্জের গেস্টহাউসে। পরবর্তী ৪৫ দিন কলকাতাই ছিল আমার বাড়ি।“
উত্তম কুমার প্রসঙ্গে অনিলের ভাষ্য, সত্যজিৎ রায়ের ‘নায়ক’ সিনেমা দেখে তিনি বুঝতে পারেন, কেন বাঙালিরা তাকে ‘মহানায়ক’ বলেন।
কেবল উত্তম কুমার নয়, সত্যজিতের কথাও উঠে আসে এই অভিনেতার বক্তব্যে। অনিল জানান, তিনি এবং তার ছেলে অভিনেতা হর্ষবর্ধন কাপুর সত্যজিৎ রায়ের ‘গুণমুগ্ধ’।
তবে উদ্বোধনী মঞ্চে দক্ষিণের তারকা অভিনেতা কমল হাসানকে পাওয়া যায়নি। ঘূর্ণিঝড় মিগযাউনের প্রভাবে চেন্নাই বন্যা কবলিত হয়ে পড়ায় শেষ মুহূর্তে অনুষ্ঠানে আসতে অপারগতা প্রকাশ করেন কমল হাসান।
মমতাকে একটি চিঠি দিয়ে কমল জানিয়েছেন, তিনি একজন রাজনীতিক হিসেবে এই পরিস্থিতিতে বিপর্যস্ত মানুষের পাশে থাকতে চান।
কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবের পর্দা নামবে আগামী ১২ ডিসেম্বর। উৎসবের বিশেষ আয়োজনে থাকছে প্রয়াত চলচ্চিত্রকার মৃণাল সেনের সিনেমা। মৃণালের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে তার পরিচালিত কিছু সিনেমা দেখানো হবে উৎসবে।