সাইফিনার বাড়িতে পাওয়া ১৯টি আঙুলের ছাপের সঙ্গে শেহজাদের ১০ আঙুলের ছাপ পায়নি মহারাষ্ট্র সিআইডির ফিঙ্গারপ্রিন্ট বিশেষজ্ঞরা।
Published : 27 Jan 2025, 10:38 AM
বলিউড তারকা সাইফ আলী খান ও কারিনা কাপুরের বাড়ি থেকে হামলাকারীর যে ১৯টি ফিঙ্গারপ্রিন্ট পাওয়া গেছে, পুলিশের পরীক্ষায় সেগুলোর সঙ্গে গ্রেপ্তার হওয়া বাংলাদেশের শরিফুল ইসলাম শেহজাদের আঙুলের ছাপের ‘কোনো মিল পাওয়া যায়নি’।
এই তথ্য জানিয়ে এনডিটিভি বলেছে, সাইফিনার বাড়িতে পাওয়া ১৯টি আঙুলের ছাপের সঙ্গে শেহজাদের ১০ আঙুলের ছাপ পায়নি মহারাষ্ট্র সিআইডির ফিঙ্গারপ্রিন্ট বিশেষজ্ঞরা। এই নিয়ে তারা প্রতিবেদনও জমা দিয়েছে আদালতে।
এখন সাইফের বাড়িতে পাওয়া আঙুলের ছাপগুলো কার, সেটি খুঁজে বের করতে তদন্তে নেমেছে পুলিশ।
যদিও মুম্বাই পুলিশ দাবি করেছে, তারা জিজ্ঞাসাবাদে এমন সব তথ্য পেয়েছে, যা প্রমাণ করেছে ওই রাতে সাইফের ওপর শেহজাদই হামলা চালিয়েছে।
এছাড়া সাইফের বাড়ির ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরায় ধরা পড়া ব্যক্তিই শেহজাদ কী না সেটি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। শেহজাদের বাবা রুহুল আমিন ফকির বলেছেন পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তি তার ছেলে শেহজাদ। তবে সিসিটিভির ভিডিওতে যাকে দেখা গেছে, সেই ছেলে অন্য কেউ, তার ছেলে নন।
সাইফের অস্ত্রোপচারের পর লীলাবতী হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন, অভিনেতার মেরুদণ্ডের কাছ থেকে ছুরির আড়াই মিলিমিটার টুকরো তারা অস্ত্রোপচার করে বের করেছেন।
আর মুম্বাই পুলিশ জানিয়েছে, ছুরির একটি টুকরো তারা অভিনেতার বাসভবন থেকে এবং আরও একটি টুকরো বান্দ্রা তালাওয়ের কাছ থেকে উদ্ধার করেছেন। পালিয়ে যাওয়ার সময় ঘাতক এটি সেখানে ছুড়ে ফেলেছিলেন বলে ধারণা করছে পুলিশ।
গত ১৫ জানুয়ারি রাত আড়াইটার দিকে বান্দ্রার ‘সৎগুরু শরণ’ নামের বহুতল ভবনে নিজের ফ্ল্যাটেই ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত হন সাইফ। ওই রাতেই তাকে লীলাবতী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পাঁচ ঘণ্টার অস্ত্রোপচারের পর চিকিৎসকরা বলেছিলেন, সাইফের শরীরে ৬টি গুরুতর আঘাতের মধ্যে মেরুদণ্ডের কাছের দুটি ক্ষত গভীর। সেখান থেকে ছুরির ভাঙা অংশ বের করেন চিকিৎসকরা।
এরপর ১৬ জানুয়ারি ভোর থেকে তদন্তে নামে পুলিশ। তখন মুম্বাই পুলিশ জানিয়েছিল, সন্দেহভাজন হামলাকারীকে বান্দ্রা স্টেশনের কাছে দেখা গেছে। দুদিন পর ১৯ জানুয়ারিতে মহারাষ্ট্রের থানের কাছে জঙ্গল থেকে বাংলাদেশের নাগরিক শরীফুল ইসলাম শেহজাদকে আটক করে সেদিনই আদালতে তোলে পুলিশ। এরপর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালত তাকে পাঁচদিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছিল।
ওই রিমান্ডের মেয়াদ শেখ হওয়ায় শেহজাদকে শনিবার আরও ৫ দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছে বান্দ্রার আদালত।
পুলিশ প্রথমে জানিয়েছিল বাংলাদেশের নাগরিক শেহজাদ চার মাস ধরে মুম্বাইয়ে থাকছেন। নাম পাল্টে রাখেন বিজয় দাস। তিনি একটি হাউজিং কোম্পানিতে চাকরি করতেন। এখন পুলিশের ভাষ্য, এক ডান্স বারে কাজ করতেন শেহজাদ।
এদিকে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে আসা ছবি দেখে শেহজাদকে শনাক্ত করেছেন ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার মোল্লারহাট ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আব্দুস সালাম।
এলাকায় থাকার সময় ছিনতাই, চুরি ও মারামারিতে জড়িত থাকারও অভিযোগ আছে শেহজাদের বিরুদ্ধে।
মুম্বাই পুলিশ বলছে, সাত মাস আগে মেঘালয়ের ডাউকি নদী পাড়ি দিয়ে অবৈধভাবে ভারতে আসার পর, ভারতীয় পরিচয়পত্র বানানোর চেষ্টা করেছিলেন শেহজাদ। তিনি প্রথমে যান পশ্চিমবঙ্গে। সেখানো কোনো একজনের আধার কার্ড ব্যবহার করে সিমকার্ড নিয়েছিলেন শেহজাদ।
ওই সিমকার্ডটি খুকুমণি জাহাঙ্গীর নামে পেয়েছে পুলিশ। পরে মুম্বাইয়ে এসে বিজয় দাস নামে নিজের পরিচিতি তৈরি করেন। এছাড়া নিজের জন্য একটি আধার কার্ডও বানাতে চেষ্টা করেছিলেন শেহজাদ, কিন্তু সে কাজে আগাতে পারেননি। তবে ওই সিম থেকে বাংলাদেশের কয়েকটি নম্বরে ফোন করতেন শেহজাদ।
মুম্বাইয়ে আসার পর শেহজাদ প্রথমে ভেবেছিলেন চুরি করবেন, পরে তিনি পরিকল্পনা বদলান।
নতুন পরিকল্পনায় শেহজাদ ঠিক করেন মুম্বাইয়ে অভিজাত এলাকা বান্দ্রায় কিছু একটা করবেন। তাই ঠিক করেন সাইফের বাড়িতে ঢুকে তার কোনো একটি সন্তানকে অপহরণ করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেবেন।
আরও পড়ুন...
প্রথমে চিনতেই পারিনি উনি সাইফ আলী: অটোরিকশা চালক
সিসিটিভির ব্যক্তি কী সাইফের হামলাকারী? পুলিশের অভিযান জোরদার
সাইফের হামলাকারীকে দেখা গেছে বান্দ্রা স্টেশনে
গভীর রাতে নিজের বাড়িতে ছুরিকাহত বলিউড তারকা সাইফ আলী খান
আড়াই ঘণ্টার অস্ত্রোপচারের পর আইসিউতে সাইফ
আর যদি ২ মিলিমিটার গভীরে ঢুকত ছুরি...
গাড়ি না পেয়ে রক্তাক্ত সাইফকে অটোতে হাসপাতালে নেন ইব্রাহিম