আইসিইউ থেকে হাসপাতালের কেবিনে দেওয়া হয়েছে সাইফকে।
Published : 17 Jan 2025, 05:47 PM
প্রাণহানির শঙ্কা কেটে যাওয়ায় নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্র-আইসিইউ থেকে হাসপাতালের কেবিনে দেওয়া হয়েছে বলিউডি অভিনেতা পতৌদি নবাব পরিবারের ছেলে সাইফ আলী খানকে।
শুক্রবার এনডিটিভি লিখেছে, পাঁচ ঘণ্টার অস্ত্রোপচার শেষে সাইফের শরীর মেরুদণ্ডের খুব কাছ থেকে ছুরির আড়াই ইঞ্চির ভাঙা অংশ চিকিৎসকরা বের করেছেন বলে মুম্বাইয়ের লীলাবতী হাসপাতালের চিকিৎসক নীতিন নারায়ণ জানিয়েছেন।
দুপুরে হাসপাতালে এক সংবাদ সম্মেলনে নারায়ণ সাইফের শারীরিক অবস্থার সর্বশেষ পরিস্থিতি তুলে ধরেন। এছাড়া পিঠে ছুরি নিয়ে রক্তস্নাত সাইফ কীভাবে হেঁটে হাসপাতালে ঢুকেছিলেন সেই বর্ণনাও হাসপাতালের সিইও নীরাজ উত্তমানী দিয়েছেন সাংবাদমাধ্যমের কর্মীদের সঙ্গে। তার কাছে সাইফ বাস্তব জীবনেও একজন ‘হিরো’।
চিকিৎসক নারায়ণ বলেন, “সাইফ ভালো আছেন। অস্ত্রোপচারের পর আমার তাকে হাঁটিয়েছি। তিনি সুন্দর স্বাভাবিকভাবে হেঁটেছেন। তার শীরের তেমন একটা ব্যথা এখন নেই। বড় কোনো সমস্যাও আমরা দেখছি না।”
আইসিইউ থেকে সাইফকে বিশেষ একটি কেবিনে স্থানান্তরিত করা হয়েছে জানিয়ে নারায়ণ বলেছেন, অস্ত্রোপচারতো বটেই, মেরুদণ্ডের ক্ষতের কারণে আগামী এক সপ্তাহের জন্য দর্শনার্থী চলাচল সীমিত করা হয়েছে।
“কারণ এই সময়ে সংক্রমণের ঝুঁকি আছে। তবে সাইফের পক্ষাঘাতের কোনো সম্ভাবনা নেই।”
সিংহের মত হাসপাতালে পা রাখেন সাইফ
ওই সংবাদ সম্মেলনে হাসপাতালের সিইও নীরাজ উত্তমানী বলেছেন, সাইফকে যখন হাসপাতালে আনা হয় তার দুই ছেলে ইব্রাহিম আলী খান ও তৈমুর আলী খান সঙ্গে ছিল।
“সাইফ আলী খান হেঁটে হাসপাতালে ঢুকেছেন, স্ট্রেচার ব্যবহার করেননি। তিনি সিংহের মত হেঁটে এসেছিলেন। সত্যি, তিনি একজন আসল নায়ক।
“সাইফ ভাগ্যবান। ওই ছুরিটি যদি মেরুদণ্ডের কাছের ওই জায়গায় আর মাত্র ২ মিলিমিটার ঢুকে যেত, তাহলে তার আঘাতের ভয়াবহতার কোনো সীমা থাকত না। অস্ত্রোপচারে ছুরির ভাঙা অংশ বের করা হয়েছে।”
অ্যানেসথেসিয়ার চিকিৎসক নিশা গান্ধী বলেছেন সাইফের মেরুদণ্ডের আঘাত খুবই গভীর ছিল। অল্পের জন্য বেঁচে গেছে তিনি।
“সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেম (কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র) থেকে ২ মিলিমিটার দূরে ছুরিকাঘাত করা হয়। সেই আঘাত নিয়েই হাসপাতালে আসেন তিনি। অ্যানেসথেসিয়া দেওয়ার আগে সন্তানদের নিয়ে উদ্বেগে ছিলেন সইফ। বাচ্চাদের কথা বার বার জিজ্ঞাসা করছিলেন তিনি।”
পুরনো খবর:
সাইফের হামলাকারীকে দেখা গেছে বান্দ্রা স্টেশনে
সিসিটিভির ব্যক্তি কী সাইফের হামলাকারী? পুলিশের অভিযান জোরদার
সাইফের শরীর থেকে বের করে আনা ছুরি মুম্বাই পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
অভিনেতাকে এর মধ্যে হাসাপাতালে গিয়ে দেখে এসেছেন সাইফ ও অমৃতা সিংয়ের ছেলেমেয়ে ইব্রাহিম আলী খান ও সারা আলী খান। হাসপাতালে ভর্তির ঘণ্টাখানেকের মধ্যে গিয়েছিলেন তারকাভিনেতা শাহরুখ খান।
শুক্রবার সকালে মা অভিনেত্রী শর্মিলা ঠাকুর ও স্ত্রী কারিনা কাপুরও হাসপাতালে গিয়েছিলেন সাইফকে দেখতে।
বুধবার রাত আড়াইটার দিকে এক ব্যক্তি অভিনেতার বান্দ্রার বাড়িতে প্রবেশ করে। সেখানে সাইফকে ছুরিকাঘাত করে সে। ধারণা করা হচ্ছে হামলাকারী চুরি করতেই ওই বাড়িতে ঢুকেছিল।
ভারতের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম বলছে, ‘চোর’ বাড়িতে ঢোকার পর গৃহকর্মীরা চিৎকার শুরু করে। তাতেই ঘুম ভাঙে পতৌদির নবাব পরিবারের ছেলে সাইফের। সে সময় 'চোর 'এক গৃহকর্মীর সঙ্গে ধস্তাধস্তিতে জড়ায়। এরপর সাইফ গিয়ে সেখানে পড়লে তাকে দেখে ওই ‘চোর’ অভিনেতার ছোট ছেলের ঘরে ঢুকে পড়ে। বাধা দিতে গেলে সাইফের সঙ্গে ‘চোরের’ ধস্তাধস্তি হয় এবং তাকে ছুরিকাঘাত করা হয়।
হামলার পরপর সাইফ ও অমৃতা সিংয়ের বড় ছেলে ইব্রাহিম আলী খান ও বাড়ির কর্মীরা সাইফকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যান। তখনই লীলাবতী হাসপাতালের চিকিৎসকরা বলেছিলেন ছয়টি গভীর ক্ষত রয়েছে সাইফের শরীরে, যার মধ্যে মেরুদণ্ডের খুব কাছে ছুরির আঘাতটি বিপজ্জনক।
সাইফ আলী খানের সন্দেহভাজন হামলাকারীকে মুম্বাইয়ের বান্দ্রার রেলস্টেশনের কাছে একবার দেখা গেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এনডিটিভি লিখেছে, মুম্বাই পুলিশের ধারণা বান্দ্রা স্টেশন থেকে প্রথম লোকাল ট্রেন ধরে জেলার পালঘর, বাসাই বা নালাসোপারার দিকে পালিয়েছেন ওই হামলাকারী। ওই সব জায়গায় অভিযান জোরদার করেছে পুলিশের টিম।
মুম্বাই পুলিশের ভাষ্য, বান্দ্রা স্টেশনসংলগ্ন ক্লোজডসার্কিট ক্যামেরায় ধরা পড়েছেন সাইফের অ্যাপার্টমেন্টের পেছনের সিড়ি দিয়ে নেমে যাওয়া ওই ব্যক্তি।
হামলাকারীকে খুঁজে বের করতে বৃহস্পতিবার থেকে উঠেপড়ে লেগেছে মুম্বাই পুলিশ। সময়ের সাথে সাথে অভিযানকারী টিমের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। এখন পর্যন্ত পতৌদি নবাবপুত্রের হামলাকারীকে ধরতে পুলিশের ৩৫টি টিম কাজ করছে।
এর মধ্যে মুম্বাই অপরাধ দমন বিভাগের ১৫টি টিম আছে আর মুম্বাই পুলিশ মাঠে নামিয়েছে তাদের ২০টি টিমকে। আর হামলার তদন্তের মূল দায়িত্ব পেয়েছেন পুলিশের ‘অ্যানকাউন্টার’ বিশেষজ্ঞ দয়া নায়েক।
তবে ক্লোজড সার্টিক ক্যামেরায় ধরা পড়া ব্যক্তির পরিচয় সামনে আনেনি পুলিশ কর্তৃপক্ষ
বাড়ির তিন গৃহকর্মীকে থানায় নিয়ে জেরা করেছে পুলিশ এবং পরিচারিকা লিমাকে সন্দেহের আওতায় রেখেছে তদন্তকারী দল। লিমার ভাষ্য, 'চোর ' লিমার সঙ্গে ধস্তাধস্তিতে জড়ায় এবং আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে এক কোটি রুপি দাবি করে বলে ভাষ্য ওই পরিচারিকার।
লিমার চিৎকার শুনে ঘুম ভেঙে গিয়ে সাইফ সেখানে হাজির হলে তাকে দেখে ওই ‘চোর’ অভিনেতার ছোট ছেলে জাহাঙ্গীরের ঘরে ঢুকে পড়ে। বাধা দিতে গেলে সাইফের সঙ্গে ‘চোরের’ ধস্তাধস্তি হয় এবং তাকে ছুরিকাঘাত করে।
পুরনো খবর:
গাড়ি না পেয়ে রক্তাক্ত সাইফকে অটোতে হাসপাতালে নেন ইব্রাহিম