আগামী শুক্রবার রাত ৮টার বাংলা সংবাদের পর বিটিভি ও বিটিভি ওয়ার্ল্ডে পর্বটি প্রচার হবে।
Published : 26 Jan 2025, 10:58 AM
চলতি মাসের শুরুতে ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলে ইত্যাদির যে পর্বটির দৃশ্যধারণ ঘিরে ‘বিশৃঙ্খলার’ ঘটনা ঘটেছিল, সেই পর্বটি প্রচারে আসছে।
আগামী শুক্রবার রাত ৮টার বাংলা সংবাদের পর বিটিভি ও বিটিভি ওয়ার্ল্ডে ওই পর্বটি প্রচার হবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে ফাগুন অডিও ভিশন জানিয়েছে।
ইত্যাদি রচনা, পরিচালনা ও উপস্থাপনা করেছেন হানিফ সংকেত; আর স্পন্সর করেছে কেয়া কসমেটিকস লিমিটেড।
'ইত্যাদি' এ বছর পা রেখেছে ৩৭ বছরে; এগুগুলো বছর ধরে ইত্যাদি রচনা, পরিচালনা ও উপস্থাপনা করে আসছেন হানিফ সংকেত। অনুষ্ঠানটি নির্মাণ করেছে ফাগুন অডিও ভিশন।
ঠাকুরগাঁও জেলায় ইত্যাদির দৃশ্যধারণের দিনের অভিজ্ঞতা জানিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে লেখা হয়েছে, ইত্যাদির ধারণ উপলক্ষে গত ৯ জানুয়ারিতে পুরো ঠাকুরগাঁও জেলায় ছিল উৎসবের আমেজ। অনুষ্ঠানস্থল ঘিরে বসে জমজমাট মেলা। বিভিন্ন পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেন দোকানিরা, ছিল নাগরদোলাও। রানীশংকৈলে অনুষ্ঠানটি ধারণ হলেও ঠাকুরগাঁওয়ের বিভিন্ন উপজেলাসহ পাশের জেলা পঞ্চগড় এবং দিনাজপুর থেকেও দর্শকরা এসেছিলেন।
ওইদিন দুপুর তিনটা থেকে আমন্ত্রিত অতিথিরা অনুষ্ঠানস্থলে আসতে শুরু করেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় অনুষ্ঠানস্থল। আমন্ত্রিত দর্শক ছাড়াও অনুষ্ঠানস্থলের বাইরে ‘লক্ষাধিক মানুষ’ উপস্থিত হন অনুষ্ঠান দেখার জন্য।
ফলে সেখানে দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে দর্শকেরা হানিফ সংকেতকে দেখার অনুষ্ঠানস্থলে ঢুকে পড়েন। ফলে কিছু সময়ের জন্য অনুষ্ঠান ধারণ স্থগিত করা হয়। স্থানীয় প্রশাসন ও সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত সহযোগিতায় কিছুক্ষণ পরে আবার ধারণ কাজ শুরু হয়।
অনুষ্ঠানস্থলে ধারণক্ষমতার কয়েক গুণ লোক বেশি হওয়ার কারণে অনেক দর্শকই আশপাশের বিভিন্ন স্থাপনার ছাদ, রাস্তা, পাঁচিল ও গাছের ওপর উঠে তীব্র শীত উপেক্ষা করে দীর্ঘ সময় ধরে উপভোগ করেছেন অনুষ্ঠান ধারণ কাজ।
রাণীশংকৈলে ইত্যাদির দৃশ্যধারণ অনুষ্ঠানে ‘মারপিট ও ভাঙচুরের’ ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায় ওই সময়ে।
তবে ঘটনাটি তেমন নয় দাবি করে ফেইসবুকে দেওয়া পোস্টে হানিফ সংকেত নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছিলেন।
হানিফ সংকেত বলেন, "আমরা ৬ হাজার দর্শকের বসার ব্যবস্থা করি এবং সন্ধ্যা ৭টার দিকে অনুষ্ঠান শুরু করি। কিন্তু কিছুক্ষণ পরে আমরা জানতে পারি অনুষ্ঠানস্থলের বাইরে প্রায় লক্ষাধিক মানুষ অপেক্ষা করছেন অনুষ্ঠান দেখার জন্য। অনুষ্ঠানে দর্শক বাছাই, নৃত্য ও গান ধারণ করার পরই হঠাৎ করে বাঁশের ঘেরা সরিয়ে কয়েক হাজার লোক আমন্ত্রণপত্র না পেয়েও তাদের প্রিয় ইত্যাদি দেখার জন্য অনুষ্ঠানস্থলে ঢুকে পড়ে।
"ফলে অনুষ্ঠানস্থলে সাময়িক বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। আমরা পরিস্থিতি অনুধাবন করে প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে কিছু সময়ের জন্য অনুষ্ঠান ধারণ স্থগিত করি এবং পরিস্থিতি শান্ত হলে আবার ধারণ শুরু করি। যদিও ইতোমধ্যে স্থগিতের কথা শুনে অনেক দর্শক চলে যান। পরে পুলিশ, সেনাবাহিনী ও স্থানীয়দের সহযোগিতায় আমরা শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠান ধারণ করি।"
উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণ ‘হামলা, ভাংচুর বা মারামারি নয়’ দাবি করে হানিফ সংকেত বলেন, "ইত্যাদির প্রতি দর্শকদের ভালোবাসা, আর এই ভালোবাসার কারণেই তারা ইত্যাদির ধারণ দেখার জন্য সবাই উন্মুখ হয়ে ছিলেন। কিন্তু স্থানাভাবে দাঁড়াতেও পারছিলেন না। তাই চেয়ার সরিয়ে দাঁড়াবার স্থান করছিলেন। আর সে কারণে এই চেয়ার ছোড়াছুড়ি।
“এর ফলে কিছুটা বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। কিন্তু ঘটনাটিকে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে কেউ কেউ মিথ্যে তথ্য দিয়ে এবং রাজনৈতিক রঙ লাগিয়ে বিভিন্নভাবে অপপ্রচারের চেষ্টা করছেন।"
এবারের পর্বে আছে যা যা
অনুষ্ঠানের শুরুতেই রয়েছে ঠাকুরগাঁওকে নিয়ে মনিরুজ্জামান পলাশের কথায় একটি পরিচিতিমূলক গান ও নাচ রয়েছে। যা পরিবেশন করেছেন স্থানীয় শতাধিক নৃত্যশিল্পী।
নাচের কোরিওগ্রাফি করেছেন রোহিত খান, কণ্ঠ দিয়েছেন তানজিনা রুমা, রাজীব, অয়ন চাকলাদার ও সানজিদা রিমি। গানটির সুর করেছেন হানিফ সংকেত এবং সংগীত আয়োজন করেছেন মেহেদী।
ইত্যাদির এই পর্বের সংগীত পরিবেশন করেছেন দুই প্রজন্মের কণ্ঠশিল্পী রবি চৌধুরী ও সানিয়া সুলতানা লিজা। গানটির কথা লিখেছেন লিটন অধিকারী রিন্টু। সুর ও সংগীতায়োজন করেছেন কিশোর দাশ।
তবে এবার ঠাকুরগাঁওয়ের মঞ্চে নাতিকে দেখা গেলেও দেখা যায়নি নানিকে। সাথিহারা নাতি কী করেছে এবারের ইত্যাদিতে, সেটাই দেখা যাবে অনুষ্ঠান প্রচারের দিন।
এছাড়া চিঠিপত্র পর্ব ছাড়াও সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয় ও প্রসঙ্গ নিয়ে সামাজিক অসংগতি ও সমাজ সংস্কারের ওপর রয়েছে বেশ কয়েকটি নাট্যাংশ।
জ্যোতিষের অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ, একালের বিবাহবার্ষিকীতে সেকালের উপহার, সময়ের বিবর্তনে ঘরোয়া ভাষার পরিবর্তন, সবজিবাজারে ঘোরগ্রস্ত ক্রেতা, চিৎকারসর্বস্ব উপস্থাপকের সাক্ষাৎকার, পারিবারিক শিক্ষা বনাম পারিপার্শ্বিক শিক্ষা, ইউটিউবের নেশায় বিপর্যস্ত পারিবারিক পরিবেশ, নিজের বেলায় ষোলো আনা, দিন যায় কথা থাকে, চাপা আতঙ্কসহ বেশ কয়েকটি নাট্যাংশ রাখা হয়েছে এই পর্বে।
এসবে নাট্যাংশে অংশ নিয়েছেন আবদুল আজিজ, বাবুল আহমেদ, সুভাশিষ ভৌমিক, মোমেনা চৌধুরী, সোলায়মান খোকা, আবদুল্লাহ রানা, মাহফুজুর রহমান, আল মামুন, জিল্লুর রহমান, মাহমুদুল ইসলাম, কাজী আসাদ।
আরও অংশ নিয়েছেন মামুনুল হক, প্রাণ রায়, জয়রাজ, আমিন আজাদ, শাহেদ আলী, মুকিত জাকারিয়া, তারিক স্বপন, কামাল বায়েজিদ, বিলু বড়ুয়া, নিপু, আনোয়ার শাহী, জাহিদ শিকদার, জামিল হোসেন, আনন্দ খালেদ, সজলসহ আরো অনেকে।
আরও পড়ুন:
ঠাকুরগাঁওয়ে 'ইত্যাদি': ভাঙচুর-মারামারি, স্থগিতের কয়েক ঘণ্টা পর শুরু