"বুদ্ধিজীবীদের কীভাবে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে হত্যা করা হয়েছে, তার ইতিহাস আমরা জানি।"
Published : 14 Dec 2024, 11:26 PM
দেশের বুদ্ধিজীবীদের আত্মত্যাগের ইতিহাসের সঙ্গে তরুণদের সংযোগ তৈরির গুরুত্ব তুলে ধরে গবেষক মফিদুল হক বলেছেন, মানব কীভাবে দানব হয়ে ওঠে, সেই ইতিহাস নতুন প্রজন্মের জানতে হবে।
সংস্কৃতি শিক্ষার প্রতিষ্ঠান ছায়ানট আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “আমাদের এগিয়ে যাওয়ার পথে বুদ্ধিজীবীদের নানাভাবে স্মরণ করতে হবে। তারা যে স্বপ্নের মানবিক বাংলাদেশের জন্য জীবন দিয়েছেন, সেই বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে।"
শনিবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে ছায়ানট সংস্কৃতি-ভবন মিলনায়তনে এই অনুষ্ঠান হয়। এতে গান ও বক্তৃতায় স্মরণ করা হয় ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের।
সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় সমবেত কণ্ঠে 'ও আমার দেশের মাটি' গানের মধ্যে দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। পরে বক্তব্য দেন গবেষক ও ছায়ানটের উপদেষ্টা মফিদুল হক।
তিনি বলেন, "বুদ্ধিজীবীদের আত্মত্যাগের দিনটির সঙ্গে আজকের প্রজন্মের একটা সংযোগ তৈরি করে দেওয়া আমাদের দায়িত্ব। এই প্রজন্ম যেন সেই আত্মত্যাগের কথা মনে রাখে। মানব কীভাবে দানব হয়ে ওঠে, তার ইতিহাস নতুন প্রজন্মের জানতে হবে।
"মুক্তিযুদ্ধ আমাদের কাছে এক পরম দুঃখময় দিন এবং এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে এক পরম আনন্দময় বিজয়। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের দিকে যখন তাকাই, তখন দেখি বেদনা এবং বিজয় পাশাপাশি চলেছে।"
মফিদুল হক বলেন, "মুক্তিযুদ্ধের সময় বুদ্ধিজীবীদের কীভাবে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে হত্যা করা হয়েছে, তার ইতিহাস আমরা জানি। কারা রাজনীতির নামে, ধর্মের নামে এই নৃশংসতা চালিয়েছে তাদের কথাও আমরা জানি।"
অনুষ্ঠানে স্মৃতিকথনে অংশ নেন শহীদ বুদ্ধিজীবী মোফাজ্জাল হায়দার চৌধুরীর ছেলে শোভন হায়দার চৌধুরী।
তিনি বলেন, "ছায়ানটের উষালগ্ন থেকেই আমার বাবার সম্পৃক্ততা ছিল। ষাটের দশকে যখন রবীন্দ্রনাথকে নিষিদ্ধ করার প্রয়াস চালানো হল, তখন যারা প্রতিবাদটা করেছিলেন, আমার বাবা তাদের একজন।
"মুক্তিযুদ্ধে যেসব বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করা হলো, তাদের সবাই তো রাজনীতিতে সম্পৃক্ত ছিলেন না। তবুও তাদের কেন হত্যা করা হল? তার কারণ হিসেবে কোনো কোনো গবেষক মনে করেন, তাদের প্রায় সবারই একটা জায়গায় মিল ছিল, তারা বাঙালির ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি নিয়ে তৎপর ছিলেন।"
অনুষ্ঠানে একক কণ্ঠে 'আমায় বলো না গাহিতে বলো না' গেয়ে শোনান দীপ্র নিশান্ত। সুমন মজুমদার শোনান 'ভেব না গো মা তোমার ছেলেরা'; বিজন চন্দ্র মিস্ত্রী শোনান 'এই না বাংলাদেশের গান'।
মিরাজুল জান্নাত সোনিয়া শোনান 'আমি খুঁজে বেড়াই আমার মাকে', আবুল কালাম আজাদ শোনান 'এ পৃথিবী যেমন আছে’। অন্যদের মধ্যে গান গেয়ে শোনান নাসিমা শাহীন ফ্যান্সী।
অনুষ্ঠানে সমবেত কণ্ঠে শিল্পীরা শোনান 'ধনধান্য পুষ্পভরা' গানটি। সবশেষে সমবেত কণ্ঠে 'মৃত্যু নাই, নাই দুঃখ' গানের পর জাতীয় সঙ্গীতের মধ্যদিয়ে অনুষ্ঠান শেষ হয়।
সংগীত পরিবেশনে তবলায় ছিলেন সুবীর ঘোষ ও গৌতম সরকার। কিবোর্ডে ছিলেন রবিন্স চৌধুরী। মন্দিরায় ছিলেন প্রদীপ কুমার রায়।