অস্থিরতা, সহিংসতা দূর হয়ে প্রতিবেশী দেশের জন্য শান্তি কামনা করেছেন ভারতের বাংলা ও সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির অভিনয় শিল্পীরা।
Published : 08 Aug 2024, 10:58 PM
সরকার পতনের পর বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন কলকাতা সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির অভিনয় শিল্পীরা। পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, ইধিকা পাল, শ্রীলেখা মিত্রসহ আরো অনেকের আশঙ্কা, ছাত্র আন্দোলকে পুঁজি করে ‘স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে’। হত্যা, হামলা, লুটপাট এবং ভাস্কর্য ভাংচুরসহ সব ধরনের সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
আর অস্থিরতা, সহিংসতাকে দূরে ঠেলে দেওয়ার তাগিদ দিয়ে প্রতিবেশী দেশের জন্য শান্তি কামনা করেছেন বলিউডের কয়েক শিল্পী।।
কলকাতার অভিনেতা পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় বাংলা দৈনিক আনন্দবাজারে বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে কলাম লিখেছেন। কিছুদিন আগে শবনম ফেরদৌসীর পরিচালনায় পরমব্রত অভিনীত ‘আজব কারখানা’ মুক্তি পেয়েছে বাংলাদেশে।
সিনেমার টিজার ও পোস্টার প্রকাশ সুবাদে ঢাকা ঘুরে যাওয়া পরমব্রত লিখেছেন, ‘এক শুভবুদ্ধিসম্পন্ন ব্যক্তি দেখলাম একটি পোস্ট দিয়েছেন, ‘যে মসজিদ থেকে মানুষকে এক হওয়ার ডাক দিয়েছেন, সেই মসজিদ থেকেই সংখ্যালঘুদের রক্ষা করার ডাক দিন!’ আরেকটি পোস্টে পড়লাম, “কালীবাড়ি রক্ষা করছেন মাদ্রাসার ছাত্রেরা।” সত্যিই ভালো লাগল পড়ে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এসবের প্রয়োজন পড়ছে কেন?’
পরমব্রত আরও লিখেছেন, “বিজয়োল্লাসে মত্ত কিছু মানুষ দেখলাম বঙ্গবন্ধুর মূর্তি ভাঙছেন, গণভবন লুটপাট করছেন। শুনলাম ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে আগুন দেওয়া হয়েছে! কারাগার ভেঙে দেওয়ায় বন্দীরা পালাচ্ছেন। সাবেক শাসক দলের সাংসদদের বসতবাড়িতে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, এমনকি পিটিয়ে হত্যাও চলছে।
যে আন্দোলনকে ‘ধনধান্য পুষ্পভরা’ বা ‘আমার সোনার বাংলা’ গেয়ে ছাত্র ও সাধারণ জনতা এগিয়ে নিয়েছেন, তারা ভাঙচুর লুট করতে পারেন না বলে মন্তব্য করেছেন এই অভিনেতা।
তিনি লিখেছেন, “ওঁৎ পেতে থাকা কিছু স্বাধীনতাবিরোধী, কট্টরপন্থি শক্তি আপনাদের এই অসামান্য আন্দোলন হাইজ্যাক করে ফেলছে না তো?”
ঢাকাই সিনেমার সুপারস্টার শাকিব খানের ‘হিট’ সিনেমা ‘প্রিয়তমা’র নায়কি ইধিকা পালের কথা হল “এক রাতের মধ্যে বদলে গেল আমার চেনা বাংলাদেশ!”
আনন্দবাজারকে বাংলাদেশ নিয়ে আপ্লুত ইধিকা বলেছেন, “ভাবতেই পারিনি আমার চেনা সেই দেশে এত রক্ত ঝরবে। ঝরবে লাখো লোকের চোখের জল। এও মনে হচ্ছে, আমি না হয় অন্য দেশের। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষেরাই কি টের পেয়েছিলেন, এ ভাবে ছাত্র আন্দোলনের ধারা বদলে যাবে?”
ইধিকার প্রত্যাশা, বাংলাদেশের পরিস্থিতি শিগগিরই শান্ত হয়ে উঠবে। ফের তিনি ঢাকায় আসবেন সিনেমায় অভিনয় করার জন্য।
বাংলাদেশ নিয়ে অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্রও সরব। চাকরিতে কোটা ব্যবস্থার সংস্কার নিয়ে শুরু হওয়া ছাত্র আন্দোলন সরকার পতনের আন্দোলনে রূপ নেওয়ায় এবং সেখান থেকে ঘটে যাওয়া সহিংসতার ঘটনায় হৃদয় ভার হয়েছে এই অভিনেত্রীর।
আনন্দবাজারকে শ্রীলেখা বলেন, “ছাত্র আন্দোলেনর মধ্যে কোনও অন্যায় ছিল না। তাদের দাবি ন্যায্য, তাই আন্দোলনও নৈতিক। এই রকম ক্ষেত্রে আন্দোলন এত বড় আকার নিলে অনেক সময়ই রাশ হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। দুর্ভাগ্যক্রমে এখানেও তাই ঘটেছে।”
এছাড়া ফরিদপুরের চকবাজার এলাকার একজন মুসলমান ব্যক্তির শ্রী শ্রী রামধ্বনি মন্দির পাহারা দেওয়ার ছবি ফেইসবুকে পোস্ট করে তিনি লিখেছেন, “সব শেষ হয়নি, সব শেষ হয় না।”
অভিনেতা জিৎ এক্সে লিখেছেন, “বাংলাদেশের এই কঠিন সময়ে আমার প্রার্থনা রইল বাংলাদেশের মানুষদের জন্য। যে সমস্ত ঘটনা প্রকাশ্যে আসছে সেটা খুবই দুঃখজনক।”
বাংলাদেশের এই কঠিন সময়ে আমার প্রার্থনা বাংলাদেশের মানুষদের জন্য। যে সমস্ত ঘটনা সামনে আসছে সেটা খুবই দুঃখজনক। এই ধরনের মর্মান্তিক দৃশ্যের সাক্ষী হওয়া হৃদয়বিদারক।
আশা করি এই কঠিন সময় খুব তাড়াতাড়ি পেরিয়ে যাবো। প্রতিটা জীবনই মূল্যবান তাই যে কোনও মূল্যে সেটা রক্ষা হওয়া…
— Jeet (@jeet30) August 5, 2024
“এই ধরনের মর্মান্তিক দৃশ্যের সাক্ষী হওয়া হৃদয় বিদারক”, বলেন এই অ্যাকশন হিরো।
অভিনেতা আদিল হুসেন এক্সে লিখেছেন, “বাংলাদেশের সিনেমা ও ভিডিওগুলি সত্যিই হৃদয়বিদারক। সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ও সাধারণ মানুষের উপর হামলার ঘটনা চমকে দেওয়ার মতো”
Heart Wrenching visiluals from Bangladesh. The Attacks and Atrocities on Minority communities and on others in Bangladesh are Shocking! India must do more to Protect them.
I stand with the Pains and Sufferings of the Victims. And I urge the Perpetrators to Stand Down. They…
— Adil hussain (@_AdilHussain) August 7, 2024
সহিংসতা বন্ধের জন্য অনুরোধ জানান আদিল।
এই সহিংসতার মধ্যে চলচ্চিত্র প্রযোজনা ও পরিবেশনা সংস্থা শাপলা মিডিয়ার সত্বাধিকারী সেলিম খান ও তার ছেলে অভিনেতা শান্ত খানকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন নায়ক দীপক অধিকারী দেব।
শাপলা মিডিয়ায় প্রযোজিত ‘কমান্ডো’ সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন দেব। তবে সিনেমাটি আলোর মুখ দেখেনি।
দেব সংবাদ প্রতিদিনকে বলেন, “আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছে না। খুবই খারাপ খবর। তবে শুধু এই ঘটনা নয়। বাংলাদেশ কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। আমি চাইব ওপার বাংলায় শান্তি ফিরে আসুক। সব কিছু যেন স্বাভাবিক হয়ে যায়।”
কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে সোশাল মিডিয়ায় শুরু থেকেই সোচ্চার ভূমিকায় দেখা গেছে কলকাতার অভিনেত্রী স্বস্তিকা মুখার্জিকে।
বাংলাদেশের পাশে থাকার বার্তা দিয়ে সোশাল মিডিয়ায় স্বস্তিকা লিখেছেন, “ওদের ভাষাতেই বলতে ইচ্ছে করে, শোক নয় দ্রোহ। আমি পাশে আছি, যেভাবে তোমরা বলবে। পাশের আছি আমার সোনার বাংলার। শান্তি ফিরুক। ”
এছাড়া সাম্প্রদায়িক হামলা রুখে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন শিক্ষার্থীদের প্রতি।
কলকাতার অভিনেতা অভিনেত্রীদের পাশাপাশি হিন্দি সিনেমার অভিনেত্রীদেরও বাংলাদেশ নিয়ে উদ্বিগ্ন হতে দেখা গেছে।
বলিউড অভিনেত্রী সোনম কাপুর বলেছেন, “এটা সত্যই বাংলাদেশে যা ঘটছে, খুবই ভয়ানক ঘটনা।“
এই নায়িকার ভাষ্য, “চলুন, সবাই মিলে বাংলাদেশের মানুষের জন্য প্রার্থনা করি।”
দেশত্যাগের পর ভারতে আশ্রয় নেওয়া আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিষয়ে অভিনেত্রী এবং সরকারদলীয় এমপি কঙ্গনা রানাউত এনডিটিভিকে বলেছেন, “ভারত আশপাশের সব মুসলিম রাষ্ট্রের প্রকৃত বন্ধুরাষ্ট্র।“
কঙ্গনার ভাষ্য, “আমরা গর্বিত এবং সম্মানিত যে বাংলাদেশের একজন নেতা ভারতে সুরক্ষিত বোধ করেন।”