যৌথ প্রযোজনার কাজ কমে যাওয়ার এই ধারায় বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের জন্য খুব একটা ভালো কিছু দেখছেন না নতুন পুরনো নির্মাতা-প্রযোজকরা।
Published : 12 Apr 2024, 01:45 AM
‘ধীরে বহে মেঘনা’, ‘পদ্মা নদীর মাঝি’, ‘হঠাৎ বৃষ্টি’ অথবা ‘মনের মানুষ’ সিনেমাগুলোর নাম উঠলে আলোচনায় আসে চিত্রনাট্যে সুসাহিত্যের ছাপ বা বাংলাদেশ-ভারত দুই দেশের অভিনয় শিল্পী এবং নির্মাতার কাজের মুন্সিয়ানার কথা।
এ সিনেমাগুলো বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ প্রযোজনার ফসল। এ ধরনের সিনেমা যখন তৈরি হয়েছিল, যৌথ প্রযোজনায় সিনেমা নির্মাণে শক্ত সব নীতিমালা ছিল না। নীতিমালা সংশোধনের পর থেকে শ্লথ হয়েছে যৌথ প্রযোজনায় সিনেমা নির্মাণ কাজ। বিপরীতে বেড়েছে ঢাকার শিল্পী ও নির্মাতাদের কলকাতাকেন্দ্রিক কাজের সংখ্যা ও প্রবণতা।
স্বাধীনতার পর যৌথ প্রযোজনার সিনেমা নির্মাণের এক ধরনের জোয়ার আসে। পরবর্তী দশকগুলোয় ধাপে ধাপে সেই জোয়ার ধীরে স্তিমিত হয়ে এলেও এ ধরনের সিনেমা নির্মাণ কমেছে ২০১৭ সালের পর। কারণ ওই বছর যৌথ প্রযোজনার নীতিমালা সংশোধন করা হয়; বেঁধে দেওয়া হয় একরাশ নিয়মকানুন। সেসব নিয়ম যৌথ কাজের জটিলতা বাড়িয়েছে বলে নির্মাতা-প্রযোজকদের ভাষ্য।
যৌথ প্রযোজনার কাজ কমে যাওয়ার এই ধারায় বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের জন্য খুব একটা ‘ভালো কিছু দেখছেন না’ নতুন পুরনো নির্মাতা-প্রযোজকরা।
দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ ও ভারতের সঙ্গে অনেকগুলো যৌথ প্রযোজনার সিনেমা নির্মাণ করেছে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ‘আশীর্বাদ চলচ্চিত্র’। আর গত কিছু দিনে যৌথ প্রযোজনায় যেসব সিনেমা তৈরি হয়েছে, বেশির ভাগের প্রযোজনা করেছে ‘জাজ মাল্টিমিডিয়া।‘
‘নিয়তি’, ‘নবাব’, ‘বাদশা’, ‘বস টু’, ‘নূরজাহান’, ‘রোমিও ভার্সেস জুলিয়েট’, ‘আশিকী’, ‘শিকারি’সহ আরও অনেক যৌথ প্রযোজনার সিনেমার বাংলাদেশ অংশের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ‘জাজ মাল্টিমিডিয়া’।
প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার আব্দুল আজিজ গ্লিটজকে নীতিমালার সীমাবদ্ধতা তুলে ধরে বলেন, “নতুন যে নীতিমালা আছে, সেটি মেনে যৌথ প্রযোজনায় সিনেমা করা যাবে না। কারণ, নীতিমালা মেনে দুই দেশের শিল্পী সংখ্যা এবং টিমের লোকজনের সংখ্যা সমান করে কাজ করা সম্ভব হয় না। এছাড়া কারিগরি বিভাগসহ অন্যান্য ক্ষেত্রেও সমান সংখ্যক লোকবল নেওয়া যায় না। কিন্তু নীতিমালায় শতভাগ নিশ্চিত না করে কাজও করা যাবে না। তাই ২০১৭ সালের পর আমরা যৌথ প্রযোজনার সিনেমা করার কোনো উদ্যোগ নিইনি।”
নীতিমালা পরিবর্তনের কোনো চেষ্টা করেছেন কি না– এ প্রশ্নে তিনি বলেন, “তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে সংশোধিত নীতিমালা করেছে। বারবার আমরা বলে আসছি যে নিয়মকানুন সূক্ষ্মভাবে মেনে সিনেমা নির্মাণ অনেক কঠিন। এই নীতি যারা প্রণয়ন করেছে, তারা পরিবর্তনের চেষ্টা করবেন। আমাদের তো কোনো অপশন নেই।”
বর্ষীয়ান নির্মাতা এবং চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি কাজী হায়াৎ মনে করেন, আগের মত যৌথ প্রযোজনার সিনেমা হওয়া উচিত।
তিনি বলেন, “আমাদের দেশে যৌথ প্রযোজনার সিনেমা যখন হত তখন চলচ্চিত্র শিল্প লাভজনক ছিল অনেক। এখন হচ্ছে না বলে একটু ক্ষতিই হচ্ছে। “
কী ধরনের ক্ষতি হচ্ছে? কাজী হায়াৎ বলেন, “এই যে এখন হিন্দি সিনেমা আমদানি করতে হচ্ছে। আমি মনে করি যৌথ প্রযোজনার সিনেমা হওয়া উচিত, তাহলে নির্মাতা, প্রযোজক এবং শিল্পীদেরও উপকার হবে এবং হল মালিকরাও বেঁচে যাবেন।”
১৯৭৩ সাল থেকে বাংলাদেশে যৌথ উদ্যোগে ছবি নির্মাণ শুরু হয়। ওই বছরে প্রখ্যাত নির্মাতা আলমগীর কবিরের পরিচালনায় ‘ধীরে বহে মেঘনা’ সিনেমাটি ছিল এ উদ্যোগের প্রথম প্রয়াস।
একই বছর আশীর্বাদ চলচ্চিত্রের প্রযোজনায় ঋত্বিক ঘটকের পরিচালনায় ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ মুক্তি পায়। এ সিনেমাকে অবশ্য অবশ্য যৌথ প্রযোজনার চলচ্চিত্র বলতে নারাজ ছিলেন প্রযোজক হাবিবুর রহমান।
১৯৮৬ সালে তৎকালীন সরকার যৌথ উদ্যোগের সিনেমা নির্মাণের ব্যাপারটিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে একটি নীতিমালা তৈরি করে। সেই নীতিমালার সংশোধিত রূপ প্রকাশ পায় ২০১২ সালে।
এরপর ২০১৭ সালে ‘যৌথ প্রযোজনার নামে যৌথ প্রতারণা’র অভিযোগ তোলে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। সেসময় সিনেমায় ‘প্রতারণা’ বন্ধের দাবিতে আন্দোলনে নামে দেশীয় চলচ্চিত্রের নির্মাতা-তারকা ও কলাকুশলীদের ১৪টি সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত চলচ্চিত্র ঐক্যজোট।
আন্দোলনের প্রেক্ষিতে ‘যৌথ প্রযোজনার চলচ্চিত্র নির্মাণ নীতিমালা-২০১২ (সংশোধিত)’-কে সরকার ২০১৭ সালে ‘যুগোপযোগী ও পূর্ণাঙ্গ’ করার উদ্যোগ নেয়।
এ নীতিমালায় বলা আছে, “চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য নিয়োজিত পরিচালক, মুখ্য অভিনয় শিল্পী এবং কলাকুশলীর সংখ্যা, যৌথ প্রযোজকগণ যৌথ প্রযোজনা চুক্তির মাধ্যমে নির্ধারণ করবেন। চলচ্চিত্র পরিচালনার ক্ষেত্রে অংশগ্রহণকারী দেশসমূহের যৌথ চলচ্চিত্র পরিচালক নিয়োজনকে উৎসাহিত করা হবে। তবে সাধারণভাবে যৌথ চলচ্চিত্র প্রযোজনার ক্ষেত্রে প্রধান চরিত্রের অভিনয় শিল্পী এবং মুখ্য কারিগরি কর্মীসহ শিল্পী ও কলাকুশলী সমানুপাতিক হারে নিয়োজনের বিষয়টি ১০০% নিশ্চিত করতে হবে। “
যৌথ প্রযোজনার ‘মনের মাঝে তুমি’ সিনেমা করে দারুণ খ্যাতি পাওয়া নায়ক রিয়াজ আহমেদ একসময় এই যৌথ প্রয়াসের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যান।
সংশোধিত নীতিমালার পক্ষে মতামত দিয়ে গ্লিটজকে তিনি বলেন, “এটা তো কঠিন কিছু নয়, যৌথ মানে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে যে সব কিছু সমান হতে হবে। যারা নীতিমালা প্রণয়ন করেছেন, তারা বিচক্ষণ হয়েই প্রণয়ন করেছেন। তবে যৌথ প্রযোজনার নামে যৌথ প্রতারণা হলে তো হবে না, একটা সময়ে বাংলাদেশ থেকে একজন শিল্পী নিয়েই যৌথ প্রযোজনার সিনেমা হত৷ তারপরই নতুন নীতিমালা করা হয়েছে।”
রিয়াজ বলেন, “যৌথ প্রযোজনা হলে আরেক দেশের শিল্প সংস্কৃতি সম্পর্কে জানা যায়, টেকনিশিয়ানরা আরেক দেশের কাজগুলো নিয়ে জানতে পারে, নিজেকে আপডেট করতে পারে। চলচ্চিত্রের সবাই দুই দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারে। দুই দেশের খরচ ও কমে যায় অর্ধেক হয়ে যায়। মুক্তি পেলে ভালো ব্যবসাও করতে পারে। আমি মনে করি যৌথ প্রযোজনার সিনেমা হওয়া উচিত। এটা হলে ভালো হবে।“
১৯৮৬ এবং ১৯৮৭ সালে ‘হিমালয়ের বুকে’ এবং ‘আপোষ’ নামে দুটি সিনেমা নির্মিত হয়।
নব্বইয়ের দশকে ‘জীবন পরীক্ষা’, ‘লেডি স্মাগলার’, ‘ভালোবাসা ভালোবাসা’, ‘প্রতীক্ষা’, ‘নীল দরিয়া’, ‘দেশ-বিদেশ’, ‘ভাইবন্ধু’, ‘ব্যবধান’, ‘লক্ষ্মীবধূ’, ‘লাভ ইন আমেরিকা’ ‘সত্য-মিথ্যা’, ‘কুচবরণ কন্যা’, ‘বেদেনীর প্রেম’, ‘রাজার মেয়ে’, ‘মায়ের আশীর্বাদ’, ‘প্রিয় শত্রু’, ‘বলবান’, ‘বিরোধ, ‘দুনিয়া’ ‘স্বামী কেন আসামী’, ‘মেয়েরাও মানুষ’, ‘আমি সেই মেয়ে’, ‘স্বামী ছিনতাই’, ‘হঠাৎ বৃষ্টি’, ‘মনের মাঝে তুমি’,‘মনের মানুষ’সহ আরও কিছু কয়েকটি সিনেমা যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত হয়।
রিয়াজ-পূর্ণিমাকে জুটি করে নির্মাতা মতিউর রহমনের যৌথ প্রযোজনার সিনেমা ‘মনের মাঝে তুমি’ ২০০২ সালে মুক্তির পর দারুণ ব্যবসা করে। এর পরই আশীর্বাদ চলচ্চিত্র তৃতীয়বারের মতো যৌথ প্রযোজনায় নির্মাণ করে ‘মনের মানুষ’।
২০১৪ সালের পর থেকে পরবর্তী তিন বছর ঢাকাই চলচ্চিত্রে যৌথ প্রযোজনার সিনেমার একটি বড় প্রভাব পড়েছিল। ‘আমি শুধু চেয়েছি তোমায়’,‘রোমিও বনাম জুলিয়েট’, ‘শিকারী’, ‘বাদশা’, ‘নবাব’ সিনেমাগুলো পর পর ব্লকবাস্টার হয়।
২০১৮ সালে ‘স্বপ্নজাল’, ‘নূরজাহান’ ও ‘তুই আমার রানী’ নামে তিনটি সিনেমা মুক্তি পেলেও সিনেমাগুলো আগের নীতিমালা মেনে করা হয়।
যৌথ প্রযোজনা না হলেও বেড়েছে যৌথ কাজ
২০১৭ সালের পর যৌথ প্রযোজনার কাজ কমতে থাকলেও কোভিড মহামারীর ক্রান্তিকাল পেরিয়ে কলকাতার সিনেমার ঢাকার অভিনয়শিল্পীদের যাতায়াত বেড়েছে।
এক দশকের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের অভিনেত্রী জয়া আহসান কলকাতার সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করছেন। জয়ার পথে ধরে এগিয়েছেন হালের অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন এবং রাফিয়াত রশীদ মিথিলা।
অভিনেতাদের মধ্যে চঞ্চল চৌধুরী, মোশাররফ করিম, কলকাতার সিনেমার প্রধান চরিত্রে কাজ করে বেশ প্রশংসা পাচ্ছেন। এছাড়া অপি করিম, জিয়াউল ফারুক অপূর্ব, তাসনিয়া ফারিণ, শবনম বুবলী, শামসুন্নাহার স্মৃতি পরীমণিও কলকাতায় জমি খুঁজছেন ভারতীয় নির্মাতাদের হাত ধরে।
বাংলাদেশের শিল্পীদের বিপরীতে কলকাতার অভিনয়শিল্পীদের ঢাকার কাজে তেমন আগ্রহের প্রকাশ পাওয়া যায়নি।
কলকাতার কাজে ঢাকার শিল্পীদের ঝুঁকে পড়ার প্রবণতা নিয়ে জাজ মাল্টিমিডিয়ার কর্ণধার আজিজ বলেন, “শূন্যস্থান খালি থাকে না। সেটা কোনো না কোনোভাবে পূরণ হবেই। যেহেতু যৌথ প্রযোজনা হচ্ছে না, তাই সিনেমা আমদানি করতে হবে। শিল্পীদেরও কোনো নির্দিষ্ট সীমানায় আটকে থাকা উচিত নয়। তারা কাজের প্রস্তাব পেলে ভিসা নিয়ে সে দেশে গিয়ে সিনেমা করে আসবেই।“
তাছাড়া, বাংলাদেশের নির্মাতারা কলকাতায় গিয়ে সিনেমা নির্মাণ করছেন। গত বছরের শেষ নাগাদ কলকাতায় মুক্তি পেয়েছে বাংলাদেশি নির্মাতা সঞ্জয় সমদ্দারের নির্মাণে ‘মানুষ’।
‘মানুষ’ সিনেমায় প্রধান চরিত্র জিৎ এর বিপরীতে অভিনয় করেছেন ঢাকার নায়িকা বিদ্যা সিনহা মিম। এ সিনেমার নায়িকা ও নির্মাতা ঢাকার হলেও, নায়ক ও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ছিল কলকাতার।
কলকাতায় মুক্তির পর বাংলাদেশি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান অ্যাকশন কাট এন্টারটেইনমেন্ট সিনেমাটি আমদানি করে বাংলাদেশে ৪৫টি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি দেয়।
একইভাবে চলতি বছরের শুরুতে কলকাতায় ‘ফ্ল্যাশব্যাক’ নামের সিনেমায় যুক্ত হওয়ার খবর দেন বুবলী। বাংলাদেশি নির্মাতা রাশেদ রাহা ও খায়রুল বাসার নির্ঝরের গল্পে সিনেমাটিতে বুবলীর সঙ্গে অভিনয় করছেন পশ্চিমবঙ্গের পরিচালক-অভিনেতা কৌশিক গাঙ্গুলি ও অভিনেতা সৌরভ দাস।
সিনেমাটির প্রযোজনা করছে ব্লু হোয়েল এন্টারটেইনমেন্ট ও বিগ আর এন্টারটেইনমেন্ট। প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান কলকাতার, তাই সিনেমাটি মুক্তি দেওয়া হবে কলকাতায়। বাংলাদেশে সিনেমাটি দেখতে হলে সাফটা চুক্তির আওতায় সিনেমাটি আমদানি করতে হবে।
যৌথ প্রযোজনার সিনেমা না হলেও যৌথভাবে কাজ করছেন এপার ও ওপার বাংলার শিল্পী ও নির্মাতারা। তাহলে যৌথ প্রযোজনার কাজে বাঁধা কোথায়?
‘ফ্ল্যাশব্যাক’ নির্মাতা রাশেদ রাহা গ্লিটজকে বলেন, “আমাদের দেশে যৌথ প্রযোজনার যে নিয়ম নীতি সেটা একজন নির্মাতার মেনে চলা অনেক কঠিন। এই নিয়ম মেনে কাজ করলে কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা যাবে যে নির্মাতা তার কাজটাই শেষ করতে পারবেন না। আগে কলকাতার সিনেমা যৌথ প্রযোজনার সিনেমা হিসেবে বাংলাদেশে চালিয়ে দেওয়া হতো। সেটা থেকে মুক্তি পেতেই কিন্তু এই নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়। কিন্তু এখন নীতিমালা এমন হয়ে গেছে যে যৌথ প্রযোজনায় ছবিই করা যাচ্ছে না। কারণ কোন সিনেমার ক্ষেত্রেই সম্ভব না যে কাজ শুরুর পর একটি দেশ থেকে আপনি ৫০ শতাংশ জিনিসপত্র নিবেন, অন্য দেশ থেকে আবার ৫০ শতাংশ নেবেন। “
সমান সমান করাটা ‘কঠিন ব্যাপার’ মন্তব্য করে রাশেদ বলেন, “সিনেমা তো ক্রিয়েটিভ জিনিস। আপনার যে লোকেশন ভালো মনে হবে, আপনি সেই জায়গা নির্বাচন করবেন। সেখানে সমানুপাতিক হারে কাজ করা কীভাবে সম্ভব।”
“আমরা যারা ভারতে গিয়ে সিনেমা নির্মাণ করছি, সেটার প্রধান প্রযোজক থাকছে ভারতের, সাপোর্টিং প্রোডাকশন হাউজ হিসেবে বাংলাদেশের কাউকে যুক্ত করা হয়৷ সাপোর্টিং প্রযোজক যুক্ত করার কারণ হচ্ছে আমরা যখন কলকাতায় সিনেমা করতে যাচ্ছি, আমাদের মাথায় থাকে আমাদের কাজগুলো যেন কোনো এক সময় আমার নিজের দেশের দর্শক দেখতে পারে। সেটা যেন আমরা আমদানি করতে পারি। সেজন্য বাংলাদেশ থেকে কিছু জিনিস যোগ করার চেষ্টা করি। “
এক্ষেত্রে যৌথ প্রযোজনার কাজ করার তুলনায় অন্য দেশে গিয়ে সিনেমা তৈরি সহজ কি না- সেই প্রশ্নে রাশেদ বলেন, “কলকাতায়ও কিছু নিয়ম আছে। আমাদের দেশে যেমন অনুমতি নিতে হয় সেখানেও অনুমতি নিতে হয়। এছাড়া একজন ডিরেক্টর সরাসরি সেখানে গিয়ে কাজ করে ফেলবে, বা একজন প্রোডিউসার সেখান থেকে বাংলাদেশের একটি সিনেমা নির্মাণ করে ফেলবে, সেটা কিন্তু এত সহজে হচ্ছে না। তবে সেখানে এত সিনেমার কাজ হয়, দেখা যায় ছোট ছোট কাজগুলো করার জন্য হয় তাদের এত নিয়ম কানুনের প্রয়োজন হয় না। তাদের চোখে এত পড়ে না। ভিসার জটিলতা হয়তো তৈরি হয়, তাছাড়া আর কোনো ঝামেলা হয় না। বিজনেস ভিসা নিয়ে সেখানে সিনেমা করে আসা যায়।”
কারিগরি দিকেও যে পার্থক্য আছেম সেটা তুলে ধরে এ নির্মাতা বলেন, “আমাদের দেশে বড় ডেটা সাবমিট করতে মাসখানেক সময় লেগে যায়। আর সেদেশে (ভারত) অনলাইনে পাঁচ থেকে সাত দিনের মধ্যে সব হয়ে যায়।“
ভিন্ন কথা শোনা গেল নির্মাতা অনন্য মামুনের কাছে। যৌথ প্রযোজনায় তিনি নির্মাণ করেছেন ‘আমি শুধু চেয়েছি তোমায়’, ‘তুই শুধু আমার’ও ‘স্পর্শ’। এছাড়া বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ প্রযোজনায় প্রথম প্যান ইন্ডিয়ান সিনেমা ‘দরদ’ও তৈরি করছেন তিনি, এই সিনেমায় নায়ক বাংলাদেশের সুপারস্টার শাকিব খান এবং নায়িকা বলিউডের সোনাল চৌহান।
গ্লিটজকে মামুন বলেন, “‘দরদ’ সিনেমায় দুই দেশের প্রযোজক যেহেতু আছে, আমরা যৌথ প্রযোজনার সংশোধিত নীতিমালা মেনেই সিনেমা করছি। আমার কাছে নীতিমালা কঠিন মনে হয়নি। যে নীতিমালা আছে সেটা চাইলেই মেনে কাজ করা যায়। তবে কাজ কম হচ্ছে।“
যৌথ প্রযোজনার সিনেমা তৈরি হলে মান ও ব্যবসা দুটোই ভালো হত বলে মনে করেন চলচ্চিত্র প্রযোজক ও পরিবেশক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সামসুল আলম।
তিনি গ্লিটজকে বলেন, “এখন তো যৌথ প্রযোজনার সিনেমা নাই বলা যায়। নীতিমালা আর একটু সহজ করে দিলেই অনেকে যৌথ প্রযোজনায় আগ্রহী হবে। সিনেমার মান ও ব্যবসাও ভালো হত। সিনেমায় বৈচিত্র্য আসত।”
নীতিমালা পরিবর্তনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন কি না জানতে চাইলে না সামসুল আলম বলেন, “আমরা অনেকবারই উদ্যোগ নিয়েছি। প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ফলপ্রসূ হচ্ছে না। আমাদের তো প্রযোজক সমিতির বর্তমান কমিটি নেই, প্রশাসন আছেন। তারা যদি সরকারের সঙ্গে কোনো বৈঠক করে, আমরা অনুরোধ করব সরকারকে নীতিমালা সহজ করে দেওয়ার সুপারিশ করতে।”
একই মতামত দিয়েছেন চলচ্চিত্র প্রদর্শকরাও। মধুমিতা সিনেমা হলের কর্ণধার ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ বলেন, “যৌথ প্রযোজনায় যখন সিনেমা নির্মাণ হত, তখন সিনেমা ব্যবসা খুব রমরমা ছিল। এখন আমাদের দেশের সিনেমা ঈদকেন্দ্রিক হয়ে যাচ্ছে। বছরের অন্য সময়ে হল বন্ধ রাখতে হয়।
তিনি বলেন, “ভারতীয় সিনেমা তো আমদানি হচ্ছে, তাহলে যৌথভাবে নির্মাণ করতে সমস্যা কোথায়? শুধু উদ্যোগ নিয়ে নীতিমালা পরিবর্তন করতে হবে, না হয় সহজ করতে হবে।”