সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন না সংগঠনটির সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমান।
Published : 09 Feb 2025, 09:31 PM
কাউন্সিলে প্রতিনিধিদের সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থনে ধারাবাহিক অধিবেশন শেষ করার পর অনুমোদিত কমিটিই উদীচীর কমিটি বলে মন্তব্য করেছেন সংগঠনটির নবঘোষিত কমিটির একাংশের সাধারণ সম্পাদক জামসেদ আনোয়ার তপন।
তিনি বলেছেন, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর কমিটির বৈধ-অবৈধতার প্রশ্নও অবান্তর।
তার ভাষ্য, “দেশে সংস্কৃতিকর্মীদের বিভ্রান্ত করার জন্য উদীচীর ক্ষুদ্র একটি অংশ পাল্টা কমিটি ঘোষণা করেছে। এটা উদীচীর বিরুদ্ধে স্পষ্টত ষড়যন্ত্র। কাউন্সিল অধিবেশনের অনুমোদন ছাড়া তারা কমিটি কীভাবে ঘোষণা করেন? তারা অবৈধ।”
রোববার রাজধানীর তোপখানা রোডে উদীচীর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এবং পরে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন তিনি।
উদীচীর ২৩তম জাতীয় সম্মেলনের কাউন্সিল অধিবেশনে ঘোষিত কমিটি ও উদ্ভূত পরিস্থিতির বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া বিভ্রান্তি দূর করতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয় বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণাকে কেন্দ্র বিভক্তি এবং উত্তেজনার মধ্যে এই সংবাদ সম্মেলন করেন জামসেদ আনোয়ার তপন। এতে বক্তব্য দেন উদীচীর সিনিয়র সহসভাপতি হাবিবুল আলম।
তবে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন না সংগঠনটির সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমান।
সংবাদ সম্মেলনে জামসেদ আনোয়ার বলেন, “উদীচীর সম্মেলন নিয়ে অনেকের মধ্যে নানা অসন্তোষ, আকাঙ্ক্ষা, ক্ষোভ, প্রশ্ন থাকা অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু সাংগঠনিক গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া মেনেই অধ্যাপক বদিউর রহমানকে সভাপতি ও জামসেদ আনোয়ার তপনকে সাধারণ সম্পাদক করে উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের নতুন কমিটি গঠিত হয়েছে।”
শনিবার বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর ২৩তম জাতীয় সম্মেলনের শেষ দিনে নির্বাচনী অধিবেশনে সাধারণ সম্পাদক বাছাই ঘিরে ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটেছে বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন সেখানে উপস্থিত থাকা কয়েকজন।
সম্মেলনে এক পক্ষ বর্তমান সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দেকে আগামী দুই বছরের জন্য দায়িত্ব দিতে চাইলেও আরেক পক্ষ সাধারণ সম্পাদক পদে চান জামশেদ আনোয়ার তপনকে। এ নিয়ে উত্তেজনা ছড়ায় দুপক্ষের মধ্যে।
নিজেদের পছন্দের কমিটি গঠন করে পৃথক পৃথক বিবৃতিও দিয়েছে দুই পক্ষ।
সংগঠনটির সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমান সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত না থাকার কারণ হিসেবে জামসেদ আনোয়ার তপন বলেন, “উনি শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকায় এখানে উপস্থিত হতে পারেন নি।”
তবে অধ্যাপক বদিউর রহমান রোববার দুপুরে লিখিত বক্তব্য দিয়েছেন, যা উদীচীর ফেইসবুকে প্রচার করা হয়। সেখানে সম্মেলনে ঘটে যাওয়া ঘটনার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন।
পাল্টাপাল্টি কমিটি ঘোষণার প্রেক্ষিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জামসেদ আনোয়ার তপন বলেন, “গঠনতান্ত্রিক সকল নিয়ম মেনেই কমিটি হওয়ার পর অমিত রঞ্জন দে সম্মেলন শেষে অপেক্ষমান খুবই কম সংখ্যক ব্যক্তির সম্মুখে কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করেন। এটা গঠনতান্ত্রিকভাবে অবৈধ হিসেবে গণ্য হবে এবং এই প্রক্রিয়া উদীচী সংশ্লিষ্ট নয়। বরং উদীচীকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য একটি ষড়যন্ত্রমূলক অপপ্রয়াস মাত্র।
“অধ্যাপক বদিউর রহমানকে সভাপতি ও জামসেদ আনোয়ার তপনকে সাধারণ সম্পাদক করে বিষয়নির্বাচনি কমিটি ৯১ সদস্যের যে খসড়া প্রস্তাব প্রতিনিধিদের সামনে উত্থাপন করেছিল সে কমিটিই সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে অনুমোদন পায় এবং কমিটি অনুমোদনের পর সংগঠনের রীতি অনুযায়ী বিষয়নির্বাচনি কমিটির সভাপতি অধিবেশনে উপস্থিত সবাইকে নিয়ে কমিটির নেতৃবৃন্দকে শপথ বাক্য পাঠ করান। আমরা সে শপথ বাক্য পাঠ করে কেন্দ্রীয় সংসদের নেতৃত্ব হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছি।”
সংবাদ সম্মেলনে হাবিবুল আলম বলেন, “উদীচীর সম্মেলনে যা হয়েছে, তাতে আমরা খুবই মর্মাহত। তবে আমরা বিশ্বাস করি, সবাইকে নিয়ে আমরা ঐক্যবদ্ধ হব। যারা বিপথে গেছে, তাদেরকেও আমরা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করব।”
এক প্রশ্নে উদীচীর নবনির্বাচিত কমিটির এই সহসভাপতি বলেন, “জুলাই অভ্যুত্থানের পর দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতে সর্বব্যাপী নতুন চিন্তার সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে তোলার ঐতিহাসিক দায় বর্তেছে উদীচীর উপর। আমরা সমস্ত বিভেদ ভুলে দেশের সমস্ত সংস্কৃতি কর্মীদের নিয়ে ঐক্যবদ্ধ সাংস্কৃতিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে চাই। এ সময় উদীচীর মধ্যে এ ধরনের বিভক্তি যারা করছে তারা সাংস্কৃতিক আন্দোলনের জন্য শুভশক্তি নয়।”
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন নবনির্বাচিত কমিটির সহসভাপতি ইকরামুল কবীর ইল্টু, জহিরুল ইসলাম স্বপন, সহসাধারণ সম্পাদক ইকবালুল হক খান, সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য আরিফ নূর, বিজন রায়, সদস্য রুমি দে, শিল্পী আক্তার, তাহমিনা আক্তার নীলা প্রমুখ।
আগের খবর-
উদীচীর কমিটি গঠন নিয়ে উত্তেজনা, যা বলছেন বদিউর
কমিটি নিয়ে বিভক্তি, উদীচীর সভাপতি বদিউর, সাধারণ সম্পাদক কে?
সমতার মন্ত্রে লড়াই জারি রাখার প্রত্যয়ে শুরু উদীচীর সম্মেলন