“তিনি ছিলেন শিল্পী-সংস্কৃতিকর্মীদের প্রকৃত অভিভাবক।”
Published : 12 Jan 2024, 08:34 PM
গান-কবিতা-আলোচনা ও স্মৃতিচারণের মধ্য দিয়ে শিল্পী-সংগ্রামী গোলাম মোহাম্মদ ইদুকে স্মরণ করেছে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী।
শুক্রবার বিকাল ৪টায় ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এই স্মরণসভার আয়োজন করা হয়।
উদীচীর প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য ও সাবেক সভাপতি ইদু দীর্ঘদিন ধরে নানা ধরনের জটিল রোগের সঙ্গে লড়াই করে গত ২২ ডিসেম্বর ঢাকায় মারা যান। পরে তাকে আজিমপুর কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।
শোকসঙ্গীতের মাধ্যমে শহীদ মিনারে শুরু হয় স্মরণসভার কার্যক্রম। এরপর উদীচীর শিল্পীরা সম্মেলক কণ্ঠে পরিবেশন করেন ‘তোমার অসীমে প্রাণমন লয়ে' এবং ‘সংগ্রাম থেমে গেছে বলে কে, বলে কে' গান দুটি।
পরে প্রয়াত ইদুর প্রতিকৃতিতে বিভিন্ন সংগঠন এবং ব্যক্তির পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এরপর উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমানের সভাপতিত্বে শুরু হয় আলোচনা পর্ব। সন্ধ্যায় শ্রদ্ধা জানিয়ে মোমবাতি প্রজ্বালন করা হয়।
স্বাগত বক্তব্য দেন গোলাম মোহাম্মদ ইদুর সভাপতিত্বের সময় উদীচীর সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালনকারী ও বর্তমান সহ-সভাপতি হাবিবুল আলম।
তিনি বলেন, “তার মতো আজীবন বিপ্লবী মানুষকে হারানো দেশের সংস্কৃতি জগতের জন্য বড় ক্ষতি। শারীরিকভাবে না থাকলেও মানসিক শক্তি হয়ে উদীচীর সব লড়াই-সংগ্রামে থাকবেন গোলাম মোহাম্মদ ইদু। তার আদর্শ ও চেতনাকে ধারণ করেই উদীচী পথ চলবে।”
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ বলেন, “নিভৃতচারী সাংস্কৃতিক সংগঠক গোলাম মোহাম্মদ ইদু ছিলেন শিল্পী-সংস্কৃতিকর্মীদের প্রকৃত অভিভাবক।”
“অসাম্প্রদায়িক, সাম্যবাদী সমাজ বিনির্মাণের যে আদর্শকে ধারণ করে তিনি আজীবন লড়াই করে গেছেন, সেই আদর্শ প্রতিষ্ঠায় উদীচী অবিচল থাকবে,” বলেন উদীচীর সহ-সভাপতি মাহমুদ সেলিম।
স্মরণ সভা সঞ্চালনা করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে।
আলোচনার ফাঁকে ইদু'র পছন্দের সম্মেলক ও একক গান এবং আবৃত্তি পরিবেশন করেন উদীচীর এবং আমন্ত্রিত শিল্পীরা। একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন মায়েশা সুলতানা ঊর্বি ও জয়া সেন গুপ্তা। দলীয় আবৃত্তি পরিবেশন করেন উদীচী কেন্দ্রীয় আবৃত্তি বিভাগের বাচিক শিল্পীরা।
অন্যদের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন সিপিবির সভাপতি কমরেড শাহ আলম, সিপিবির সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান খান, সংস্কৃতিজন ম. হামিদ, গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের আব্দুল মালেক, শিশু সাহিত্যিক আখতার হুসেন, ছায়ানটের নির্বাহী সদস্য মফিদুল হক, মহিলা পরিষদের সভাপতি ফৌজিয়া মোসলেম এবং গোলাম মোহাম্মদ ইদু'র সন্তান আনিসুল কবির অসীম।
গোলাম মোহাম্মদ ইদুর জন্ম ১৯৩৬ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি। আনুষ্ঠানিকভাবে উদীচী প্রতিষ্ঠিত হওয়ার প্রায় এক দশক আগে সত্যেন সেন একটি গানের দল গঠন করেন। সেই গানের দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন গোলাম মোহাম্মদ ইদু।
পরে ১৯৬৮ সালের ২৯ অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে উদীচী প্রতিষ্ঠিত হলে গোলাম মোহাম্মদ ইদু প্রথম আহ্বায়ক কমিটির অন্যতম সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৮ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন তিনি।
ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন তথা বাংলাদেশের প্রতিটি ন্যায়সঙ্গত, প্রগতিশীল আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন গোলাম মোহাম্মদ ইদু।