মঞ্চে ফিরছে ‘৪.৪৮ মন্ত্রাস’। প্রস্তুতি কেমন?
গত ১৭ নভেম্বর থেকে আমরা নাটকটির মহড়া করছি। ইতোমধ্যে গত ৮ ডিসেম্বর আইসিডিডিআর,বি’র আমন্ত্রণে একটা সফল মঞ্চায়নও করেছি। তাই প্রস্তুতি ভালো বলতে পারি। তারপরও মনের ভেতর খুঁতখঁত থেকে যায়। মনে হয়, আরও ভালো কাজ করতে পারতাম। যেহেতু শো না হওয়া পর্যন্ত বোঝার উপায় নেই কী হবে, একটা শঙ্কা তো থেকেই যায় মনে।
নাটকটি তো ২০২০ সালে প্রথম মঞ্চে এসেছিল?
২০২০ সালের মার্চে নাটকটি নিয়ে কাজ শুরু হয়; তখন করোনা মহামারীর কারণে কাজ কিছুটা থমকে গেলেও অনলাইনে চলে মহড়া। ওই বছরের ডিসেম্বরে অর্ধেক আসন খালি রেখে কোভিডবিধি মেনে নাটকটির টানা ১৭টি প্রদর্শনী হয়। তখন অনেকেই কোভিড পরিস্থিতির কারণে নাটকটি দেখতে পারেননি। তাদের কথা বিবেচনা করেই মূলত নাটকটি ফের মঞ্চায়ন হচ্ছে। নাটকটি এরপর আর মঞ্চে নাও আসতে পারে।
এবার কি কোনো পরিবর্তন হচ্ছে এই নাটকে?
সৈয়দ জামিল আহমেদ সব সময় তার চিন্তা পরিবর্তন করে চলেন। হ্যাঁ, কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আছে। খুব বড় অংশ না। কিন্তু পরিবর্তনগুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করি। কোরিওগ্রাফি, চিন্তা এবং কস্টিউমের কিছু পরিবর্তন আছে।
এই সময়ে নাটকটি কতটা প্রাসঙ্গিক বলে মনে করেন?
‘৪.৪৮মন্ত্রাস’ এই সময়ে ব্যাপকভাবে প্রাসঙ্গিক। এটি মনোবৈকল্যর কথা বলে। এর কারণগুলো চিহ্নিত করে। সামাজিক অস্থিরতা কীভাবে একজন মানুষকে মানসিক বিপর্যয়ের দিকে নিয়ে যায়, তা তুলে ধরে। আমাদের শহরে খেয়াল করলেই দেখবেন, আমরা অধিকাংশ মানুষই ডিপ্রেশনে ভুগছি, আত্মহত্যা বাড়ছে। কিন্তু মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে আমরা খুব কম চিন্তা করি। আমাদের থেকে আলাদা বৈশিষ্ট্যের মানুষ হলেই আমরা তাকে পাগল সাব্যস্ত করি। এই যে নিষ্ঠুরতা, গ্রহণ করতে না পারা- এগুলোর পরিবর্তন প্রয়োজন। মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে চিকিৎসার উন্নয়ন প্রয়োজন।
‘মন্ত্রাস’ শব্দের মানে কী? মনের ত্রাস ....
ঠিকই বলেছেন, এটা মনের ত্রাস। ‘সন্ত্রাস’ এর মতই। মনের যত ত্রাস আছে তা নিয়ে একজন মানুষ বাঁচে কী করে? মনের সেই দুর্বিষহ অবস্থার কথাই এই নাটকটা বলে। তাই আমার মনে হয় অনুবাদক শাহমান মৈশান যথার্থই নাম দিয়েছেন। এই নাট্যের বিষয়বস্তুর কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন এক তরুণ শিল্পী, যার মনস্তত্ত্বে প্রবলভাবে বিরাজমান বিষণ্ণতা! কারণ, সমাজে ব্যাপকভাবে ঘটে যাওয়া সহিংসতার সাক্ষী হয়েছিলেন তিনি। ধর্ষণ থেকে শুরু করে ও যৌন নিপীড়ন, খুন, অপমৃত্যু, নির্যাতন, ধর্মীয় সহিষ্ণুতা এবং সমাজের বিশৃঙ্খল অনিশ্চয়তা প্রভাব ফেলেছে তার মানসিকতায়।
এরপর কোন নাটক নিয়ে পরিকল্পনা করছে স্পর্ধা?
২০১৮ সালের ১২ই সেপ্টেম্বর সৈয়দ জামিল আহমেদের নেতৃত্বে ‘স্পর্ধা: ইনডিপেনডেন্ট থিয়েটার কালেক্টিভ’ নামের এই পেশাদার নাট্যদলটি গঠিত হয়। স্পর্ধা ইতোমধ্যে মঞ্চে এনেছে শহিদুল জহিরের ‘জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতা’, ‘বিস্ময়কর সবকিছু’ এবং ‘৪.৪৮ মন্ত্রাস’। স্পর্ধা এবার নীলিমা ইব্রাহিমের ‘আমি বীরাঙ্গনা বলছি’ ও কাজী নজরুল ইসলামের ‘বিদ্রোহী’ মঞ্চায়নের পরিকল্পনা করছে।
এই মুহূর্তে আমাদের পাঠকদের কোন বার্তাটি দিতে চাইবেন?
শুধু এটুকুই বলবো- মঞ্চ নাটক দেখুন, সংস্কৃতি চর্চার পাশে থাকুন। আর আপনার আশেপাশের সকল প্রাণীর প্রতি সদয় হোন।
নাটকের মঞ্চায়ন সূচি
বৃহস্পতিবার, ৫ জানুয়ারি সন্ধ্যা ৭টায় মহিলা সমিতির নীলিমা ইব্রাহিম মিলনায়তনে এ নাটকের দ্বিতীয় দফার উদ্বোধনী মঞ্চায়ন হবে। এরপর ৬ ও ৭ জানুয়ারি প্রতিদিন বিকেল ৪টা ও সন্ধ্যা ৭টায়; ৯ থেকে ১২ জানুয়ারি প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭টায় এবং ১৩ জানুয়ারি বিকেল ৪টা ও সন্ধ্যা ৭টায় সমাপনী মঞ্চায়ন হবে।
ইতোমধ্যে এ নাটকের অগ্রিম টিকিট বিক্রি চলছে। টিকিটের দাম ধরা হয়েছে ৫০০ ও ১ হাজার টাকা। থিয়েটারকর্মী ও শিক্ষার্থীদের জন্য ৩০০ টাকা।
কুশীলব: নাটকটির নির্দেশনা এবং মঞ্চ, আলো পরিকল্পনা ও সঙ্গীত নির্বাচন করেছেন সৈয়দ জামিল আহমেদ। ড্রামাটার্গ ও পোশাক পরিকল্পনা করেছেন মহসিনা আক্তার। সহ-নির্দেশক হিসেবে আছেন সোহেল রানা। পোস্টার ডিজাইন করেছেন সব্যসাচী হাজরা। দ্রব্য সামগ্রী সাক্ষ্য শহীদ ও মুরতাজা যুবাইর। আলোক প্রক্ষেপণে আছেন পলাশ হেনড্রি সেন, পাপেট নির্মাণ তানজি কুন। নাটকটিতে মহসিনা আক্তার ছাড়াও অভিনয় করবেন বুড়ী আলী, সোহেল রানা, শারমিন আক্তার শর্মী, সরওয়ার জাহান উপল, মুরতাজা যুবাইর, ইরফান উদ্দিন, তানভীর আহমেদ ও হাসান মুহাম্মদ তাবিন।