কোনো ব্যক্তি সুশান্তকে হত্যা করেছে বা আত্মহত্যায় প্ররোচণা করতে পারে এমন কোনো প্রমাণ সিবিআইয়ের হাতে আসেনি।
Published : 23 Mar 2025, 04:52 PM
যার মৃত্যুর খবর নাড়িয়ে দিয়েছিলে পুরো বলিউড ইন্ডাস্ট্রিকে, সেই অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুত ‘আত্মহত্যাই করেছিলেন’ জানিয়ে চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন দিয়েছে ভারতের সেন্ট্রাল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন, সিবিআই।
এনডিটিভি লিখেছে, শনিবার মুম্বাইয়ের বান্দ্রার ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সিবিআই এই মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। আদালত এই মামলার শুনানির পরবর্তী দিন ঠিক করেছে ৮ এপ্রিল।
২০২০ সালের ১৪ জুন বান্দ্রার ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হয় সুশান্তের মরদেহ। অভিনেতার মৃত্যুর কারণ নিয়ে গত পাঁচ বছর ‘ধোঁয়াশায়' কেটেছে। মাউন্ড ব্লাঙ্ক অ্যাপার্টমেন্টে ওই দিন ঠিক কি হয়েছিল, সেই প্রশ্নের উত্তরে বহু জলঘোলা হয়েছে।
পুলিশের দাবি ছিল নিজের ফ্ল্যাটে সুশান্ত ‘আত্মহত্যা’ করেছেন, ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনও তাই বলা হয়েছে। যদিও পরিবারের দাবি ‘খুন’ করা হয় সুশান্তকে।
অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সেসের (এইমস) একটি ফরেনসিক দলও জানিয়েছিল যে, সুশান্তকে হত্যা করা হয়নি। তার মৃত্যু হয়েছিল আত্মহত্যার কারণে।
সুশান্তের মৃত্যুর আড়াই বছর পর মুম্বাইয়ের কুপার হাসপাতালের মর্গের কর্মী রূপকুমার শাহ দাবি করেছিলেন, অভিনেতা ‘আত্মহত্যা’ করেননি, তাকে ‘খুন’ করা হয়েছিল। কুপার হাসপাতালেই সুশান্তের মরদেহের ময়নাতদন্ত হয়েছিল।
তিনি বলেছিলেন, তার শরীরে আঘাতের একাধিক চিহ্ন ছিল। এছাড়া ঘাড়ে দুটি থেকে তিনটি দাগ ছিল। এছাড়া সুশান্তর আইনজীবী বিকাশ সিংয়েরও ভাষ্য ছিল সুশান্তের মৃত্যু সাধারণ ‘আত্মহত্যার’ কোনো ঘটনা নয়, এর পেছনে কোনো ‘ষড়যন্ত্র’ আছে।
মুম্বাই পুলিশের পর ভারতের এনফোর্সেমন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি), নার্কোটিকস কন্ট্রোল ব্যুরোও (এনবিসি) সুশান্তের মৃত্যুর তদন্ত করে, পরে ২০২০ সালের অগাস্টে তদন্তে দায়িত্ব আসে সিবিআইয়ের ওপরে।
সুশান্তের জন্য মাদক যোগাড়ের অভিযোগে তার বাবন্ধী অভিনেত্রী রিয়া চক্রবর্তীকেও গ্রেপ্তার করা হয়। তবে ৩৪ বছর বয়সী এই এ অভিনেতা কী কারণে আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন, সে বিষয়ে কোনো ধারণা দিতে পারেনি তদন্তের দায়িত্বে থাকা বিভাগগুলো।
এখন পাঁচ বছরের তদন্ত শেষে চূড়ান্ত প্রতিবেদনে সিবিআই ‘খুন নাকি আত্মহত্যা’ সেই প্রশ্নের উত্তর জানাল।
সুশান্তের মৃত্যুর পর তার বাবা কে কে সিং পাটনায় একটি মামলা করেন। আত্মহত্যার প্ররোচণার ওই মামলায়, অভিনেত্রী রিয়া চক্রবর্তী ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিনেতাকে মানসিকভাবে হয়রানি করার, অর্থের জন্য ব্যবহার করার অভিযোগ আনা হয়।
উল্টোদিকে রিয়া অভিযোগ এনেছিলেন সুশান্তের দিদি প্রিয়াঙ্কা সিং রাজপুত ও দিল্লির এক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে।
রিয়ার অভিযোগ ছিল, সঠিক চিকিৎসা না করে সুশান্তকে ভুল ওষুধ দিয়েছেন সেই চিকিৎসক। এবং প্রিয়াঙ্কা কোনো নিয়ম না মেনে ভাইকে সেই ওষুধ খাওয়াচ্ছিলেন।
কে কে সিং এবং রিয়া চক্রবর্তীর করা দুই মামলারই চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন জমা পড়েছে আদালতে।
সিবিআইয় বলছে, কোনো ব্যক্তি সুশান্তকে আত্মহত্যায় প্ররোচণা করতে পারে বা হত্যা করতে পারে এমন কোনো ষড়যন্ত্রের প্রমাণ তাদের হাতে আসেনি। তাই রিয়া চক্রবর্তী ও তার বাবা-মা ও ভাইকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
প্রতিবেদন মাদক সংক্রান্ত কোনো দিকও উঠে আসেনি।
এই মামলার দায়িত্ব নেওয়ার পর সিবিআই কেন্দ্রীয় ফরেনসিক সায়েন্স ল্যাবরেটরিকে (সিএফএসএল) ঘটনাস্থলের ফরেনসিক পরীক্ষার নির্দেশ দেয়। তখন সুশান্তর বাসা থেকে ল্যাপটপ, কম্পিউটারের হার্ডডিস্ক, ক্যানন ক্যামেরা এবং দুইটি মোবাইল ফোন জব্দ করে সেগুলোর ফরেনসিক পরীক্ষা করা হয়।
তদন্ত শুরু করে সিবিআই রিয়া চক্রবর্তীসহ ২০ জনের বেশি মানুষকে জিজ্ঞাসাবাদও করেছে।
আদালত চূড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করলে মামলাটির নিষ্পত্তি হয়ে যাবে।
বিবৃতিতে রিয়ার আইনজীবী সতীশ মানেশিন্দে পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তের জন্য সিবিআইয়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
তিনি বলেন, “কোভিড মহামারীর সময় দেশে আর কিছু না ঘটায় সবাই টেলিভিশন এবং সোশাল মিডিয়ার দিকে তাকিয়ে ছিল। ওই সময় এই ঘটনায় নিরীহ কিছু মানুষকে হয়রানি করা হয়েছে। আমি আশা করি আর কোনো মামলায় এর পুনরাবৃত্তি হবে না। রিয়া চক্রবর্তীকে অনেক সমস্যার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে। তার কোনো দোষ না থাকলেও তাকে ২৭ দিন কারাবন্দি থাকতে হয়েছে।
“রিয়া ও তার পরিবারকে কুর্নিশ জানাই। তারা নীরবে থেকেছেন, তাদের প্রতি অমানবিক আচরণ সহ্য করেছেন। আমার টিমকেও হুমকি দেওয়া হয়েছিল, আমাকে হয়রানি করা হয়েছিল।“
সিবিআইয়ের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর সুশান্তর পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
১৯৮৬ সালের ২১ জানুয়ারি পাটনায় জন্ম হওয়া সুশান্ত প্রকৌশলে পড়েছিলেন। তিনি পদার্থ বিজ্ঞানে ভারতের জাতীয় অলিম্পিয়াড প্রতিযোগিতায় বিজয়ী ছিলেন। তবে নাচ ও অভিনয়ে সময় দিতে বছর খানেক বাকি থাকতেই প্রকৌশলে পড়ালেখার পাট চুকিয়ে ফেলেন সুশান্ত রাজপুত।
ছোট পর্দায় ‘কিস দেশ মেয় হ্যায় মেরা দিল‘ সিরিয়াল দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু হয় এই অভিনেতার। এরপর জনপ্রিয়তা পান ‘পবিত্র রিশতা‘ সিরিয়ালের মাধ্যমে।
অভিনয় এবং ক্যারিশমাটিক উপস্থাপনার জন্য ডাক পান বড় পর্দা থেকে খুব কম সময়ের মাঝেই।
'এমএস ধোনি- দ্যা আনটোল্ড স্টোরি’ সিনেমাটি সুশান্তের ক্যারিয়ারে অন্যরকম মাত্রা যোগ করে।
’কাই পো চে’, ‘কেদারনাথ’, ‘ছিছোরে’, ‘রাবতা’ , ‘পিকে’ সিনেমায় অভিনয় করে বলিউডের পরিচিত নাম হয়ে ওঠেন সুশান্ত। নেটফিক্সের ‘ড্রাইভ’ সিনেমাতেও তাকে দেখা গেছে।
'আত্মহত্যা করেছেন' সুশান্ত সিং রাজপুত
'খুন' হয়েছিলেন সুশান্ত রাজপুত, দাবি মর্গকর্মীর