শেহজাদ বলেছেন, তিনি কার বাড়িতে ঢুকেছিলেন সেটি তিনি জানতেন না, এমনকি সইফ আলি খান বলে কোনো অভিনেতাকেও চেনেন না তিনি।
Published : 22 Jan 2025, 02:45 PM
বলিউড তারকা সাইফ আলী খানকে ছুরিকাঘাত করার ঘটনায় গ্রেপ্তার ‘বাংলাদেশের নাগরিক’ শরিফুল ইসলাম শেহজাদকে অভিনেতার বান্দ্রার ফ্ল্যাটে ঘুরিয়ে এনেছে মুম্বাই পুলিশ।
এই খবর জানিয়ে ইন্ডিয়া টুডে লিখেছে, বুধবার গভীর রাতে সাইফের ওপর হামলার ঘটনাটি ‘পুননির্মাণ’ করতে শেহজাদকে সাইফিনার বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়।
পুলিশ এই কাজটি করেছে মঙ্গলবার লীলাবতী হাসপাতাল থেকে সাইফ তার বাড়িতে ফেরার আগে। শেহজাদ বর্তমানে আদালতের নির্দেশে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশের হেফাজতে আছেন। তদন্তের স্বার্থে তাকে ওই বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ।
তদন্তে পুলিশ জেনেছে, সাইফ ও কারিনা কাপুরের ছোট ছেলে চার বছরের জাহাঙ্গীর আলী খানকে অপহরণ করে এক কোটি রুপি আদায় করাই ছিল শেহজাদের মূল উদ্দেশ্য।ওই টাকা নিয়ে তিনি বাংলাদেশে ফিরতে চেয়েছিলেন বলেও ভাষ্য মুম্বাই পুলিশের।
এছাড়া ধরা পড়ার পর পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে শেহজাদ বলেছেন, তিনি কার বাড়িতে ঢুকেছিলেন, সেটি তিনি জানতেন না। এমনকি সইফ আলি খান বলে কোনো অভিনেতাকেও চেনেন না তিনি।
অভিনেত্রী স্ত্রী কারিনা কাপুর, দুই ছেলে তৈমুর আলী খান ও জাহাঙ্গীর আলী খানকে নিয়ে সাইফ বান্দ্রার ‘সৎগুরু শরণ’ নামের ১২ তলা অ্যাপার্টমেন্টের বিশাল ওই অ্যাপার্টমেন্টে পরপর কয়েকটি তলা নিয়ে থাকেন। ওই বাড়িতে তিনজন গৃহকর্মীও থাকেন।
পুলিশ প্রথমে জানিয়েছিল বাংলাদেশের নাগরিক শেহজাদ চার মাস ধরে মুম্বাইয়ে থাকছেন। নাম পাল্টে রাখেন বিজয় দাস। তিনি একটি হাউজিং কোম্পানিতে চাকরি করতেন। এখন পুলিশের ভাষ্য, এক ডান্স বারে কাজ করতেন শেহজাদ।
এদিকে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে আসা ছবি দেখে শেহজাদকে শনাক্ত করেছেন ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার মোল্লারহাট ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আব্দুস সালাম।
তিনি বলেন, “২০১৭ সালে মোল্লারহাট স্টিল ব্রিজের কাছে ভাড়ায় মোটরসাইকেলের চালক রফিকুল ইসলামকে হত্যার ঘটনায় রাজাবাড়িয়া গ্রামের মুহাম্মদ শরিফুল ইসলাম শেহজাদকে আসামি করা হয়। এ ঘটনার পরে তিনি এলাকা ছেড়ে আত্মগোপনে চলে যান।”
এলাকায় থাকার সময় ছিনতাই, চুরি ও মারামারিতে জড়িত থাকারও অভিযোগ আছে শেহজাদের বিরুদ্ধে।
মুম্বাই পুলিশ বলছে, সাত মাস আগে মেঘালয়ের ডাউকি নদী পাড়ি দিয়ে অবৈধভাবে ভারতে আসার পর, ভারতীয় পরিচয়পত্র বানানোর চেষ্টা করেছিলেন শেহজাদ। তিনি প্রথমে যান পশ্চিমবঙ্গে। সেখানো কোনো একজনের আধার কার্ড ব্যবহার করে সিমকার্ড নিয়েছিলেন শেহজাদ।
ওই সিমকার্ডটি খুকুমণি জাহাঙ্গীর নামে পেয়েছে পুলিশ। পরে মুম্বাইয়ে এসে বিজয় দাস নামে নিজের পরিচিতি তৈরি করেন। এছাড়া নিজের জন্য একটি আধার কার্ডও বানাতে চেষ্টা করেছিলেন শেহজাদ, কিন্তু সে কাজে আগাতে পারেননি। তবে ওই সিম থেকে বাংলাদেশের কয়েকটি নম্বরে ফোন করতেন শেহজাদ।
মুম্বাইয়ে আসার পর শেহজাদ প্রথমে ভেবেছিলেন চুরি করবেন, পরে তিনি পরিকল্পনা বদলান।
নতুন পরিকল্পনায় শেহজাদ ঠিক করেন মুম্বাইয়ে অভিজাত এলাকা বান্দ্রায় কিছু একটা করবেন। তাই ঠিক করেন সাইফের বাড়িতে ঢুকে তার কোনো একটি সন্তানকে অপহরণ করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেবেন।
সাইফকে ছুরিকাঘাত করা হয় বুধবার রাত আড়াইটার দিকে। সাইফ-কারিনার বাসায় গত চার বছর ধরে কাজ করা গৃহকর্মী ইলিয়ামা ফিলিপস ওরফে লিমার বর্ণনায় জানা যায়, সাইফ-কারিনার ছোট ছেলে জাহাঙ্গীর আলী খানকে ঘুম পাড়ানোর ঘণ্টা তিনেক পর একটি আওয়াজে তার ঘুম ভেঙে যায়।
“হামলাকারী প্রথমে জেহর (জাহাঙ্গীর আলী খানকে) ঘরে ঢুকেছিল। ওই ঘরের বাথরুমের দরজা খোলা দেখি এবং সেখানে আলো জ্ব্লছিল। ভেবেছিলাম মিসেস কাপুর (কারিনা কাপুর) বোধহয় জেহকে দেখতে ঘরে এসেছেন।
“একটু পর বুঝতে পারলাম কোথাও একটা সমস্যা আছে। আমার ঘর থেকে জেহর ঘরে গিয়ে দেখি একটা লোক বাথরুম থেকে বেরিয়ে জেহর ঘরে এসে দাঁড়াল। আমাকে দেখে ওই ব্যক্তি ঠোঁটের সামনে আঙুল ধরে শাসিয়ে বলল যে আমি যেন কোনো শব্দ না করি এবং ঘর থেকে বের না হই। ”
লিমা বলেছেন, তিনি দৌড়ে জেহর বিছানার কাছে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তখন ওই ব্যক্তি এক হাতে লাঠি এবং আরেক হাতে ব্লেড নিয়ে এসে তাকে আটকাতে চেষ্টা করে।
“আমি যখন হাত দিয়ে ঠেকাতে যাই, তখন ওই ব্যক্তি আমার বাম হাতের মধ্যমার উপরে ব্লেড চালিয়ে দেয়। আমি তখন জিজ্ঞাসা করি আপনি কি চান? তখন ইংরেজিতে উনি বলেন যে এক কোটি রুপি তাকে দিতে হবে।”
আরেক গৃহকর্মী জুনু লিমার ওপরে হামলার ঘটনা দেখে দৌড়ে সাইফ-কারিনার ঘরে যেয়ে তাদের ডেকে তোলেন।
সাইফ দৌড়ে জেহর ঘরে আসার পর সাইফও বলেন, “আপনি কি চান?” উত্তরে তখনও ওই ব্যক্তি টাকা দাবি করেন বলে জানিয়েছেন লিমা। এরপর ওই ব্যক্তি ছুরি বের করে সাইফকে একের পর এক আঘাত করেন। আর কাঁদতে কাঁদতে জেহ ওই ঘর থেকে পালিয়ে যায়।
বাড়ির তৃতীয় গৃহকর্মী গীতা এরপর ওই ব্যক্তিকে প্রায় আরেকটি ঘরে আটকে ফেলেছিলেন, কিন্তু কোনো রকমে তিনি পালিয়ে যান।
আর বাড়ির সবাইকে নিয়ে কারিনা তখন ওপরের তলায় চলে যান বলে জানিয়েছেন লিমা।
ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত হওয়ার পর যখন রক্তে ভেসে যাচ্ছিলেন, তখন তাকে হাসপাতালে নেওয়ার জন্য একটি গাড়িও বাড়িতে প্রস্তুত ছিল না। উপায় না দেখে অটোতে করে বাবাকে মুম্বাইয়ের লীলাবতী হাসপাতালে নিয়ে যান তার বড় ছেলে ইব্রাহিম আলী খান, তাদের সঙ্গে ছিল তৈমুরও।
পরদিন বৃহস্পতিবার ভোর থেকে শুরু করে পাঁচ ঘণ্টার অস্ত্রোপচার শেষে সাইফের শরীর মেরুদণ্ডের খুব কাছ থেকে ছুরির আড়াই ইঞ্চির ভাঙা অংশ চিকিৎসকরা বের করেছেন বলে লীলাবতী হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন।
বতর্মানে শারীরিক অবস্থা ভালোর দিকে যাওয়ায় বুধবার হাসপাতাল ছেড়ে বান্দ্রার বাড়িতে গেছেন সাইফ। ওই বাড়িটি ঘিরে নেওয়া হয়েছে কড়া নিরাপত্তা।
লীলাবতী হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, সাইফ এখন ভালো আছেন, তবে আগামী কিছুদিন অভিনেতাকে পূর্ণ বিশ্রামে থাকতে হবে।
এছাড়া অস্ত্রোপচার হওয়ায় সংক্রমণ এড়াতে দর্শনার্থী এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে সাইফকে।
প্রথমে চিনতেই পারিনি উনি সাইফ আলী: অটোরিকশা চালক
সিসিটিভির ব্যক্তি কী সাইফের হামলাকারী? পুলিশের অভিযান জোরদার
সাইফের হামলাকারীকে দেখা গেছে বান্দ্রা স্টেশনে
গভীর রাতে নিজের বাড়িতে ছুরিকাহত বলিউড তারকা সাইফ আলী খান
আড়াই ঘণ্টার অস্ত্রোপচারের পর আইসিউতে সাইফ
আর যদি ২ মিলিমিটার গভীরে ঢুকত ছুরি...
গাড়ি না পেয়ে রক্তাক্ত সাইফকে অটোতে হাসপাতালে নেন ইব্রাহিম
আড়াই ঘণ্টার অস্ত্রোপচারের পর আইসিউতে সাইফ