সিটি ভোট: ১০৩ অভিযোগ, বেশির ভাগই কাউন্সিলর প্রার্থীদের বিরুদ্ধে

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের ১০৩টি অভিযোগ পেয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তারা।

মঈনুল হক চৌধুরী জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Jan 2020, 05:58 AM
Updated : 25 Jan 2020, 05:59 AM

এর বেশিরভাগই এসেছে কাউন্সিলর প্রার্থীদের পক্ষ থেকে। পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা, প্রচারে বাধা, অতিরিক্ত নির্বাচনী ক্যাম্প স্থাপন, মাইক ভাংচুর ও হামলার ঘটনায় এই অভিযোগ এসেছে।

কাউন্সিলর প্রার্থীদের পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসার প্রবণতা থাকলেও মেয়র প্রার্থীদের অভিযোগ এসেছে শুধু বিএনপি প্রার্থীর পক্ষ থেকে।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ প্রার্থীর নেই কোনো অভিযোগ। উত্তর-দক্ষিণে তাদের বিরুদ্ধে মাত্র একডজন অভিযোগ পড়েছে।

নির্বাচন কর্মকর্তারা বলছেন, আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ এলে নির্বাহী হাকিম ঘটনাস্থলেই ব্যবস্থা নিচ্ছেন। কোনো কোনো অভিযোগ খতিয়ে দেখে সতর্ক করা হচ্ছে।  তবে ফৌজদারি অপরাধ থাকায় তা আমলে নেওয়া যায় না; সেক্ষেত্রে পুলিশের কাছে অভিযোগগুলো পাঠানো হয়।

১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটগ্রহণ হবে।

সাড়ে সাতশ’ প্রার্থীর এ ভোটে প্রচারণা শেষ হবে ৩০ জানুয়ারি। ১০ জানুয়ারি থেকে এক পক্ষকাল প্রচারণা চালিয়েছেন প্রার্থীরা।

ইতোমধ্যে বিএনপি প্রার্থীদের অধিকাংশই ভোটের পরিবেশ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন, নির্বাচন কমিশনের ভূমিকার সমালোচনা করছেন দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা।

উত্তরে ৩৩টি অভিযোগ

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কাউন্সিলর ও মেয়র প্রার্থী বিরুদ্ধে মাত্র ৩৩টি অভিযোগ জমা পড়েছে।

রিটার্নিং কর্মকর্তা  ইসির যুগ্মসচিব আবুল কাসেম জানান, যখনই কোনো অভিযোগ লিখিতভাবে আসছে তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। পরিবেশ ‘ভালো’ থাকায় উল্লেখযোগ্য তেমন আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ আসছে না।

তিনি বলেন, প্রচারণা শুরুর আগেই আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়ে কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া হয়েছিল। প্রচার শুরুর পরের দুটি অভিযোগ এলেও  তা খতিয়ে দেখে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি।

“সর্বশেষ বিএনপি প্রার্থীর প্রচারে হামলার বিষয়ে অভিযোগ পেলেও তা তদন্তে পুলিশ ও ম্যাজিস্ট্রেটকে বলা হয়েছে। তাদের প্রতিবেদন কমিশনে পাঠানো হবে।”

শুক্রবার রিটার্নিং কর্মকর্তার স্টাফ অফিসার নির্বাচন কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান জানান, এখন পর্যন্ত ৩৩টি অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে দুই জনকে সতর্ক করা হয়েছে; একজনকে জরিমানা করা হয়েছে।

তিনি জানান, মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে শুধু তাবিথ আউয়ালের পক্ষে কয়েকটি অভিযোগ এসেছে। অধিকাংশই কাউন্সিলর প্রার্থীদের অভিযোগ। সব অভিযোগ নিষ্পত্তি করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।

দক্ষিণে অন্তত ৭০টি অভিযোগ

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে এ পর্যন্ত ৭০টি অভিযোগ জমা পড়েছে।  এরমধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ আসেনি।

কাউন্সিলরদের পক্ষ থেকে এসেছে বেশি। বিএনপি মেয়র প্রার্থীর পক্ষ থেকে অন্তত সাতটি এসেছে।

আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ পেলেই সংশ্লিষ্টদের সতর্ক করা হচ্ছে বলে জানান রিটার্নিং কর্মকর্তা আব্দুল বাতেন।

তবে দায়িত্বশীল নির্বাহী হাকিমদের তৎপরতা দেখানোর বিষয়ে বরাবরই জোর দিয়ে আসছেন তিনি।

রিটার্নিং কর্মকর্তার স্টাফ অফিসার নির্বাচন কর্মকর্তা মাসুদুল হক জানান, শুক্রবার পর্যন্ত ৭০টি অভিযোগ জমা  পড়েছে।

“সবগুলো অভিযোগ  নিষ্পত্তি করেছেন রিটার্নিং অফিসার। অননুমোদিত ক্যাম্প বানিয়েছিল, তা ভেঙে দেওয়া হয়েছে; কাউকে সতর্ক করা হয়েছে কিংবা মুচলেকা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে; মাইক ভাঙচুরের অভিযোগ আসে-জরিমানা করা হয়েছে।”

তবে বড় ধরনের অভিযোগ এখনও লিখিতভাবে আসেনি বলে জানান তিনি।

এ কর্মকর্তা বলেন, “কোনো কোনো অভিযোগ আমাদের এখতিয়ারে নেই; ফৌজদারি অপরাধ। এসব মামলা পুলিশের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছি। এই হচ্ছে সার্বিক অবস্থা; কাউন্সিলর প্রার্থীদের অভিযোগই বেশি।”

প্রার্থী ও ভোটার, ভোটকেন্দ্র

 

মেয়র

সাধারণ

সংরক্ষিত

ভোটার

ভোটকেন্দ্র

উত্তর

২৫১

৭৭

৩০,১০,২৭৩

১৩১৮

দক্ষিণ

৩২৬

৮২

২৪,৫৩,১৯৪

১১৫০

প্রার্থীর ছড়াছড়ি ও মামলার রেকর্ড

এবার দুই সিটি করপোরেশনের ৫৯টি ওয়ার্ডে পাঁচ থেকে ১০ জন পর্যন্ত প্রার্থী কাউন্সিলর পদে ভোট করছেন।

এদের মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের যেমন বিদ্রোহীরা আছেন, তেমনি বিএনপিরও ৩৭ জন বাড়তি প্রার্থী রয়েছেন।

ঢাকা উত্তর সিটির ৫৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২৯টিতেও পাঁচ থেকে নয়জন করে প্রার্থী ভোট করছেন। এই ওয়ার্ডগুলো হল- ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮, ১১, ১৩, ১৪, ১৫, ১৬, ২০, ২৩, ২৫, ২৯, ৩০, ৩১, ৩২, ৩৫, ৩৬, ৩৮, ৩৯, ৪০, ৪৩, ৪৭, ৪৮, ৪৯ ও ৫৪ নম্বর ওয়ার্ড।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৭৫টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৩০টিতে পাঁচ থেকে ১০ জন পর্যন্ত প্রার্থী রয়েছে। এগুলো হল- ৪, ৯, ১১, ১২, ১৯, ২৬, ২৮, ৩২, ৩৬, ৩৯, ৪৪, ৪৫, ৪৬, ৪৭, ৪৮, ৫০, ৫১, ৫২, ৫৫, ৫৬, ৫৭, ৫৮, ৫৯, ৬০, ৬১, ৬২, ৬৬, ৬৭, ৬৯ ও ৬৪ নম্বর ওয়ার্ড।

প্রার্থীদের হলফনামা পর্যালোচনায় দেখা গেছে, দুই সিটিতে ১৭৪ জন সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থীর মামলার রেকর্ড রয়েছে এবং সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে রয়েছে ১৮ জন নারী প্রার্থীর।

ঢাকা উত্তরের ৩২৮ জন কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে মামলা আছে ৮৭ জনের বিরুদ্ধে। এর মধ্যে ১০ জন সংরক্ষিত ওয়ার্ডের নারী কাউন্সিলর প্রার্থীও আছেন।

দক্ষিণের ৪১৭ জন প্রার্থীর মধ্যে ১০৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। এর মধ্যে সংরক্ষিত ওয়ার্ডের নারী কাউন্সিলর প্রার্থী আছেন ৮ জন। 

আচরণবিধিতে নজর কম, তবুও শান্তিপূর্ণ

প্রতিদ্বন্দ্বীদের বাধা ও গোলযোগের বড় ধরনের ঘটনা না থাকলেও হরহামেশাই নেতাকর্মী-সমর্থকদের ঢলে সাময়িক রাস্তা বন্ধের উপক্রম হচ্ছে প্রধান দুই দলের মেয়র প্রার্থী প্রচারে।

আচরণবিধি প্রতিপালন নিয়ে কার্যকর তৎপরতা না থাকায় খোদ কমিশনেই ক্ষোভ রয়েছে। তবে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ‘ভালো’ থাকায় সন্তোষ সব পক্ষের।

শেষ চার দিনে আইন শৃঙ্খলাবাহিনী মাঠে নামার পর কঠোর তৎপরতার কথা জানানো হয়েছে।

ভোটাররা অপেক্ষায় ভোটের জন্য। শান্তিপূর্ণ প্রচার শেষে অনুকূল পরিবেশের অপেক্ষায় সবাই। নির্বাচন কমিশনও নির্বিঘ্ন পরিবেশে নিশ্চিতের আশ্বাস দিয়ে আসছে।

নির্বাচন কর্মকর্তারা বলছেন, এবারের নির্বাচনে কিছুটা ভিন্ন ও ইতিবাচক আবহ রয়েছে। এখন পর্যন্ত প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা একে অপরকে তেমন আক্রমণাত্মক বক্তব্য দেননি এবং প্রচারণায় বড় ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।

মন্ত্রী-এমপি মন্ত্রীদের প্রচার নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মধ্যে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের সঙ্গে তাদের আর দেখা যায়নি।

ভোটের শেষ পর্যায়ে এসে বিদ্যামন সহনশীল পরিস্থিতি ধরে রাখতে প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে নির্বাচন আয়োজনকারী সংস্থাটির।

তবে ইসির ভূমিকা নিয়ে বরাবরই প্রশ্ন তুলে আসছে বিএনপি।

বিরোধী প্রার্থীরা আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ করে এলেও পরিবেশ নিয়ে এখনও সন্তোষ প্রকাশ করে ইসির জ্যেষ্ঠ সচিব মো. আলমগীর বলেন, “এখন পর্যন্ত আচরণবিধির গুরুতর লঙ্ঘন কিংবা গুরুতর নির্বাচনী অপরাধ সংগঠনের কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। নির্বাচনের পরিবেশ-পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।”

সচিব জানান, নির্বাচনের দুই দিন আগে আরও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হবে। জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটও সে সময় মাঠে থাকবে। ‘শান্তিপূর্ণ পরিবেশের’ যেন অবনতি না হয় সে দিকে নজর রয়েছে রয়েছে কমিশনের।