চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহার করে ভারত পণ্য নেবে সে দেশের এক অংশ থেকে আরেক অংশে।
Published : 26 Apr 2023, 09:10 PM
বাংলাদেশের উপর দিয়ে ভারতের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে পণ্য পরিবহণের জন্য চট্টগ্রাম ও মোংলা সমুদ্রবন্দর দিয়ে ট্রানজিট সুবিধা চালু করা হয়েছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) যে আদেশ জারি হয়েছে, তাতে বলা হয়েছে, দুই বন্দরে পণ্য খালাসের পর বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে পরিবহনে ভারত সময় পাবে সাত দিন।
১৫ শতাংশ হারে কাস্টমস ভ্যাটসহ নির্ধারিত চার্জ ও ফি আদায় করে ভারত তার পণ্য পরিবহনের জন্য বাংলাদেশের এই দুই সমুদ্রবন্দর ব্যবহারের সুযোগ পেল।
এনবিআর সদস্য (শুল্ক নিরীক্ষা, আধুনিকায়ন ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য) আব্দুল মান্নান শিকদার বলেছেন, “এটা মূলত একটা নীতিগত সিদ্ধান্ত। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডাব্লিউটিও) ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন এগ্রিমেন্টে আমরা স্বাক্ষর করেছি।
“ওই চুক্তি অনুযায়ী প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে ট্রানজিট সুবিধার কথা রয়েছে। তাছাড়া ভারতেরও আমাদেরকে নেপাল ও ভুটানের সাথে ট্রানজিট ও বাণিজ্য সুবিধা দেওয়ার কথা রয়েছে।”
এখন ভারতের ভূখণ্ড ব্যবহার করে নেপাল ও ভুটানে বাণিজ্যের পথ খোলার জন্য সরকারকে তাগিদ দিয়েছেন অর্থনীতি গবেষক মোস্তাফিজুর রহমান।
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে পণ্য পরিবহনে বাংলাদেশের ভূমি ব্যবহার নয়া দিল্লির দীর্ঘদিনের চাওয়া।
২০১৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় কার্গো ট্রানজিট চালু করার জন্য একটি স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) স্বাক্ষরিত হয়েছিল।
এরপর পণ্যের কয়েকটি পরীক্ষামূলক চালান চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহার করে ভারতে গিয়েছিল। এখন তা স্থায়ী রূপ পেল গত সোমবার জারি করা এনবিআরের আদেশে।
এনবিআর সদস্য মান্নান শিকদার বলেন, শিগগির এই আদেশের গেজেট প্রকাশ করা হবে।
ট্রানজিটে ভারতীয় পণ্যের পরীক্ষামূলক চালান এবার মোংলায়
ট্রান্সশিপমেন্ট: চট্টগ্রাম বন্দরে ভারতীয় পণ্যের দ্বিতীয় চালান
পণ্য পরিবহনে সময়
এনবিআরের আদেশে বলা হয়েছে, ট্রানজিট ও ট্রান্সশিপমেন্ট পণ্যবাহী জাহাজগুলোকে বাংলাদেশ বন্দরে প্রবেশের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ‘কার্গো ম্যানিফেস্ট’ জমা দিতে হবে। পোর্ট অব এন্ট্রিতে সমস্ত প্রক্রিয়া শেষ করে সাত দিনের মধ্যে ট্রানজিট পণ্যগুলোকে পোর্ট অব এক্সিট দিয়ে বাংলাদেশ ছাড়তে হবে। তবে শুল্ক কর্তৃপক্ষ যে কোনো জরুরি পরিস্থিতিতে সময় বাড়াতে পারবে বলে আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে।
ফি
আদেশে বলা হয়, ভারতকে দেওয়া এই ট্রানজিট সুবিধার বিপরীতে প্রতি টন পণ্যে ২০ টাকা ট্রানশিপমেন্ট ফি, প্রতি চালানের দলিলাদি প্রক্রিয়াকরণ ফি ৩০ টাকা, প্রতি টনের জন্য নিরাপত্তা চার্জ ১০০ টাকা, একেকটি কন্টেইনার বা কভার্ড ভ্যানের প্রতি কিলোমিটারের এসকর্ট চার্জ আদায় করা হবে ৮৫ টাকা।
এছাড়াও প্রতি টনের বিবিধ প্রশাসনিক চার্জ ১০০ এবং প্রতিটি কন্টেইনারের কন্টেইনার স্ক্যানিং ফি হিসেবে নেওয়া হবে ২৫৪ টাকা।
আদেশ অনুযায়ী, কাস্টমস ভ্যাট এবং সম্পূরক শুল্ক (এসডি) আইন ২০১২ অনুযায়ী প্রতিটি পরিষেবার ওপর ১৫-শতাংশ ভ্যাট আদায় করা হবে।
এনবিআরের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ভারতীয় পণ্যের এই ট্রান্সশিপমেন্টের জন্য ৮টি রুটে ১৫ টনের ধারণ ক্ষমতার মাঝারি ট্রাকের উপর সড়ক পরিবহন ও সেতু কর্তৃপক্ষের প্রতি টন কিলোমিটারে ১ টাকা ৮৫ পয়সা মাশুল নির্ধারণ করেছে।”
এই হিসাব অনুযায়ী, একটি ট্রাকে ভারতীয় পণ্য পরিবহনে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে আখাউড়া রুটে ৬ হাজার ৭০ টাকা, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে শেওলা রুটে ৯ হাজার ৫৯৩ টাকা, চট্টগ্রাম থেকে তামাবিল রুটে ১০ হাজার ৯ টাকা, চট্টগ্রাম থেকে কুমিল্লা বিবির বাজার রুটে ৩ হাজার ৯৮৮ টাকা মাশুল দিতে হবে।
মোংলা বন্দর থেকে আখাউড়া রুটে ৯ হাজার ৬৯৯ টাকা, শেওলা রুটে ১১ হাজার ৭৭৯ টাকা, বিবিরবাজার রুটে ৮ হাজার ৬৮৬ টাকা ও তামাবিল রুটে ১২ হাজার ১৯৫ টাকা মাশুল দিতে হবে একটি মাঝারি ট্রাককে।
মান্নান শিকদার বলেন, “ভারতের ট্রানজিট ব্যবস্থাপনার জন্য বাংলাদেশে অবশ্যই তাদের অপারেটর নিয়োগ দিতে হবে। অপারেটরদের অবশ্যই বাংলাদেশ কাস্টমসের কাছ থেকে লাইসেন্স নিতে হবে।”
আদেশে বলা হয়, লাইসেন্সের আবেদনের ক্ষেত্রে ৫ বছরের কাজের বিবরণ, তাদের কর প্রদান অনুশীলন অবস্থা, অফেরতযোগ্য ১০ হাজার টাকার ট্রেজারি চালান এবং ১০ লাখ টাকার শর্তহীন অব্যাহত ব্যাংক গ্যারান্টি ও ৫০ লাখ টাকার ঝুঁকি বন্ড কাস্টমস কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিতে হবে।
রুট
এর আগে পরীক্ষামূলক চালানে ভারতকে আশুগঞ্জ শুল্ক পয়েন্ট ট্রানজিট রুট হিসেবে ব্যবহার করার অনুমতি দিয়েছিল সরকার।
এনবিআরের জারি করা সোমবারের আদেশে ভারতীয় পণ্যের ট্রানজিট সুবিধা দিতে আখাউড়া-আগরতলা, তামাবিল-ডাউকি, শেওলা-সুতারকান্দি ও বিবিরবাজার-শ্রীমন্তপুর পয়েন্টে যাওয়া-আসার হিসাবে ১৬টি রুট অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলো থেকে পণ্য নিয়ে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহার করে ভারতের অন্য প্রান্তে নিয়ে যেতেও এই রুট ব্যবহার করা হবে।
ভারতের কাছ থেকেও ট্রানজিট নেওয়ার তাগিদ
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডি‘র সম্মানীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আসলে আমাদের বন্দর ব্যবহার করে ভারতের এক অংশ থেকে অন্য অংশে পণ্য পরিবহণ করবে। এখান থেকে রাজস্ব আদায়ের বিষয়টা মুখ্য নয়।
“তবে এখানেও একটা সুযোগ আছে। সেটা হচ্ছে, তাদের পণ্য পরিবহনে আমাদের ট্রান্সপোর্ট ব্যবহারের সুযোগ। এছাড়া ভারতের সেই পণ্য লোডিং-আনলোডিংয়েও আমাদের একটা সুযোগ রয়েছে। এখন শুধু ভারতীয় জাহাজে পণ্য নিয়ে এলেও এখানেও আমাদের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এমন ছোট ছোট সুযোগগুলো কাজে লাগাতে হবে।”
তিনি বলেন, “তবে আমাদের সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে ভারতে সড়ক যোগাযোগ ব্যবহার করে আমাদের নেপাল ও ভুটানে রপ্তানির একটা সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। যেটা ইতোমধ্যে চুক্তিও হয়েছে।”
এই সুযোগ কাজে লাগাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সরকারের প্রতি আহবান রাখেন তিনি।