ট্রানজিটে ভারতীয় পণ্যের পরীক্ষামূলক চালান এবার মোংলায়

দুই বছর আগে একই চুক্তির আওতায় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ‘সেভেন সিস্টার্সে’ গিয়েছিল ভারতীয় পণ্য।

বাগেরহাট প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 August 2022, 12:58 PM
Updated : 8 August 2022, 12:58 PM

ট্রানজিট ব্যবহারের চুক্তির আওতায় পরীক্ষামূলকভাবে একটি জাহাজ ভারতীয় পণ্য নিয়ে মোংলা বন্দরে ভিড়েছে; এসব পণ্য এখন উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যে যাবে।

চার বছর আগে দুই দেশের মধ্যে করা এই চুক্তির প্রথম চালান এসেছিল চট্টগ্রাম বন্দরে। দুই বছর বাদে এবার মোংলা বন্দর ও সড়ক পথ ব্যবহারের ট্রায়াল রান হিসেবে ‘সেভেন সিস্টার্সের’ দুটি রাজ্যের জন্য পণ্য এলো।

বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দুটি কন্টেইনার নিয়ে ‘এমভি রিশাদ রায়হান’ নামের নৌযানটি (লাইটারেজ জাহাজ) সোমবার সকাল ৯টায় মোংলা বন্দরের ৯ নম্বর জেটিতে ভিড়ে।

এর একটি কন্টেইনার মোংলা-তামাবিল (সিলেট) সড়কপথ ব্যবহার করে যাবে মেঘালয় রাজ্যে। অপরটি মোংলা-বিবিরবাজার (কুমিল্লা) সড়কপথ দিয়ে আসামে যাবে।

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের হারবার মাস্টার কমান্ডার ফকর উদ্দিন বলেন, দুইটি কন্টেইনারের মধ্যে একটিতে রয়েছে ৭০ প্যাকেজের ১৬.৩৮০ মেট্টিক টন লোহার পাইপ এবং আরেকটিতে রয়েছে ২৪৯ প্যাকেজে ৮.৫ মেট্টিক টন প্রিফোম। লোহার পাইপ যাবে মেঘালয়ে আর প্রিফোম যাবে আসামে।

১ আগস্ট কলকাতার হলদিয়া বন্দর থেকে ছেড়ে আসা জাহাজটির পণ্য মোংলা বন্দর জেটিতে খালাসের সময় ভারতের সহকারী হাইকমিশনার ইনডার জিত সাগর, মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ মুসা, মোংলা কাস্টমস হাউসের কমিশনার মোহাম্মদ নেয়াজুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

বন্দর কর্তৃপক্ষ ও ব্যবসায়ীরা জানান, চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর দিয়ে ভারতের উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলোতে পণ্য পরিবহনের জন্য ২০১৮ সালের অক্টোবরে দিল্লিতে ভারত ও বাংলাদেশের সচিব পর্যায়ে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

এরপর প্রথমবারের মতো ট্রায়াল রান হয়েছিল ২০২০ সালের জুলাইয়ে। তখন কলকাতা বন্দর থেকে পণ্যবাহী নৌযান চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছায়। সেখান থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আঘাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে পণ্য গিয়েছিল ত্রিপুরা ও আসাম রাজ্যে।

এরপর করোনাভাইরাস মহামারীসহ নানা জটিলতায় এই চুক্তির আওতায় আর কোনো ট্রায়াল রান হয়নি। মোংলা বন্দর ব্যবহার বিষয়ক চুক্তি পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়নে চারটি ট্রায়াল রানের প্রথমটি শুরু করেছে ভারত।

এ ঘটনাকে বন্দরের জন্য ‘মাইলফলক’ বলছেন মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ মুসা।

তিনি আরও বলেন, “মোংলা বন্দরের মাধ্যমে ভারতের সঙ্গে পণ্য পরিবহণের ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক সৃষ্টি হলো। এ কার্যক্রমের মাধ্যমে আমাদের বন্ধুপ্রতিম দেশের সঙ্গে বন্ধুত্ব ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও জোরদার হবে হলে আমি বিশ্বাস করি।”

পণ্য খালাসের সময় ভারতের সহকারী হাইকমিশনার ইনডার জিত সাগর বলেন, “ভারত-বাংলাদেশ প্রটোকল রুটে অভ্যন্তরীণ নৌ-পথ ব্যবহার করে ব্যবসায়িক গতি বাড়ানোর লক্ষ্যে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ কার্যক্রমের মাধ্যমে দুই দেশের অর্থনীতি ও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নে আরও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।”

২০২২ সালের মার্চে অনুষ্ঠিত ১৩তম ভারত-বাংলাদেশ জয়েন্ট গ্রুপ অফ কাস্টমস (জেএসসি) বৈঠকের পর ট্রায়াল রান পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। তারই প্রথম ট্রায়ালের পণ্য মোংলা বন্দর দিয়ে খালাস ও পরিবহণ শুরু হয়েছে বলে জানান এই সহকারী হাইকমিশনার।

বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, বেলা সাড়ে ১১টায় নৌযানটি থেকে কন্টেইনার ও স্টিল পণ্য খালাসের কাজ শুরু হয়। সেখানে খালাস হওয়া পণ্য নৌযান থেকে সরাসরি টার্মিনাল ট্রাক্টরে উঠানো হয়।

এরপর নানা আনুষ্ঠানিকতা শেষে দুপুর ১২টার দিকে সেই পণ্য নিয়ে টার্মিনাল ট্রাক্টরটি সড়ক পথে ভারতের উদ্দেশে রওনা হয়ে যায়।

আরও পড়ুন:

Also Read: ট্রান্সশিপমেন্ট: মঙ্গলবার আসছে ভারতীয় পণ্যের প্রথম চালান