ট্রান্সশিপমেন্ট: মঙ্গলবার আসছে ভারতীয় পণ্যের প্রথম চালান

ট্রান্সশিপমেন্টের আওতায় চার কন্টেইনার ভারতীয় পণ্যের পরীক্ষামূলক চালান নিয়ে আসা জাহাজটি মঙ্গলবার সকালে চট্টগ্রাম বন্দরে এসে পৌঁছাবে।

মিন্টু চৌধুরীবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 July 2020, 03:33 PM
Updated : 20 July 2020, 04:10 PM

রোববার ভারতের হলদিয়া বন্দর থেকে বাংলাদেশি কন্টেইনারবাহী জাহাজ ‘এমভি সেঁজুতি’ চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্দেশে যাত্রা করেছে।

চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেইনার খালাসের পর সড়কপথে আখাউড়া সীমান্ত হয়ে ভারতের ত্রিপুরা ও আসাম প্রদেশে এসব পণ্য যাবে।

পরীক্ষামূলক চালানে দুই কন্টেইনার টিএমটি বার (লোহার রড) এবং দুই কন্টেইনার ডালজাতীয় পণ্য রয়েছে। প্রথম দুটি ভারতের ত্রিপুরায় এবং ডালজাতীয় পণ্যের কন্টেইনার দুটি আসামে যাবে।

ভারত থেকে দেশটির এক এলাকা থেকে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দর এবং সড়কপথ ব্যবহার করে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে পণ্য পরিবহনের পরীক্ষামূলক প্রথম চালান এটি।

ভারতীয় পণ্য পরিবহনের ট্রায়াল রান শুরুর বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন বন্দর ব্যবহারকারী ব্যবসায়ীরা। এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ব্যবসা বাড়ার সাথে অবকাঠামোও বাড়বে বলে তাদের আশা।

চট্টগ্রাম বন্দর সচিব মো. ওমর ফারুক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, পরীক্ষামূলক প্রথম চালানটি নিয়ে আসা জাহাজটি মঙ্গলবার সকাল ৮টার দিকে বন্দরের বহির্নোঙ্গরে পৌঁছানোর সিডিউল রয়েছে। জোয়ার আসা সাপেক্ষে জাহাজটি বন্দরের জেটিতে ভিড়বে কন্টেইনার খালাসের জন্য।

বাংলাদেশি জাহাজ এমভি সেঁজুতির স্থানীয় শিপিং এজেন্ট ম্যাঙ্গোলাইনের ম্যানেজার হাবীবুর রহমান জানান, রোববার ভারতীয় পণ্য পরিবহনের চারটিসহ মোট ২২১টি কন্টেইনার নিয়ে জাহাজটি কলকাতার হলদিয়া বন্দর ছেড়েছে। মঙ্গলবার বহির্নোঙ্গরে পৌঁছানোর পর সিডিউল অনুযায়ী চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি-১ জেটিতে ভিড়বে।

বিভিন্ন পর্যায়ে মাশুল ও বন্দরের ট্যারিফ পরিশোধের পর জাহাজ থেকে খালাসের পর কন্টেইনার চারটি ট্রেইলারে করে আখাউড়া সীমান্তে নিয়ে যাওয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, কন্টেইনার চারটিতে ১০০ টনের মতো পণ্য রয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দর সচিব ওমর ফারুক বলেন, ২০১৮ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তির আওতায় পণ্যবাহী চারটি কন্টেইনারের ট্রায়াল রান উপলক্ষে বন্দরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

বিদ্যমান বার্থিং নীতিমালা অনুযায়ী যে জাহাজটি আগে আসবে, সেটি আগে জেটিতে ভিড়বে বলে জানান তিনি।

বন্দর সচিব বলেন, ভারতীয় পণ্য পরিবহনের ট্রায়াল রানের কন্টেইনার থাকলেও সাধারণ সময়ের মতোই জাহাজ ভেড়ানো ও কন্টেইনার খালাস করা হবে। এর জন্য আলাদা কোনো সুবিধা থাকবে না।

বন্দরের নির্ধারিত ট্যারিফ সিডিউল অনুযায়ী বন্দরের মাশুলসহ আনুষঙ্গিক ফি আদায় করা হবে বলেও জানান তিনি।

এসব প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর হয়ে ভারতীয় এসব পণ্য সড়কপথে নির্বিঘ্নে তাদের গন্তব্যে পৌছাতে পারছে কি না তা বোঝা যাবে। 

চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর দিয়ে ভারতের উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলোতে পণ্য পরিবহনের জন্য  ২০১৮ সালের অক্টোবরে দিল্লিতে ভারত ও বাংলাদেশের সচিব পর্যায়ে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোতে পণ্য পরিবহনের জন্য বিভিন্ন পর্যায়ে সাত ধরনের মাশুল নির্ধারণ করা হয়েছে। চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ এসব আদায় করবে।

এগুলো হল- প্রসেসিং মাশুল, ট্রান্সশিপমেন্ট মাশুল, নিরাপত্তা মাশুল, প্রশাসনিক মাশুল, এসকর্ট মাশুল, কন্টেইনার স্ক্যানিং মাশুল ও ইলেকট্রিক সিলের মাশুল। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) হিসেবে প্রতি কন্টেইনারের জন্য প্রায় ৪৮ ডলারের মতো মাশুল দাঁড়াবে।

এছাড়া চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারের জন্য তারা মাশুল পাবে।এর বাইরে সড়কপথে কন্টেইনার পরিবহন এবং অন্যান্য পর্যায়ে অর্থ আদায় করা হবে।

ট্রান্সশিপমেন্টের আওতায় ভারতীয় পণ্য পরিবহনের প্রথম ট্রায়াল রান শুরু নিয়ে চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এখন মুক্তবাজার অর্থনীতির সময়। এক দেশ তাদের পণ্য পরিবহনের জন্য আরেক দেশের বন্দর ব্যবহার করবে।এ প্রক্রিয়ায় চট্টগ্রাম বন্দর অর্থ পাবে। তবে এর জন্য বন্দরের প্রয়োজন সাপেক্ষে অবকাঠামো তৈরি করতে হবে।

তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র প্রথম সহ-সভাপতি এম এ সালাম বলেন, “এটি ইতিবাচক। আমাদের বন্দরের ব্যবসা বাড়বে। প্রথমে চার কন্টেইনারের চালান আসছে। পরে তা আরও বাড়বে। সক্ষমতা বিবেচনায় নিজেদের প্রয়োজন মিটিয়ে যদি সেবা বিক্রি করা হয় তা অবশ্যই লাভজনক।”

তবে আগে নিজেদের সেবাগুলো ঠিক রাখার ওপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, “পণ্য আসা- যাওয়ার মধ্যে যেন বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত না হন।”

এ প্রক্রিয়ায় শুধু বন্দর-কাস্টমস নয় পরিবহন, কুরিয়ারসহ বিভিন্ন পর্যায়ে ব্যবসার দ্বার খুলবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।