বিএনপির আমলের বিদ্যুৎখাতের দুর্নীতি তথ্য ‘সময় হলে প্রকাশ করা হবে’, বলেন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
Published : 01 Nov 2022, 09:56 PM
বর্তমান সরকারের তিন মেয়াদে বিদ্যুৎখাতে ২৮ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ হয়েছে বলে জনিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
মঙ্গলবার বিকালে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের অধিবেশনের প্রশ্নোত্তর পর্বে এ তথ্য জানান তিনি।
নিজাম উদ্দিন হাজারীর প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ২০০৯-১০ অর্থবছর থেকে ২০২১-২২ অর্থবছরে বিদ্যুৎ খাতে ২৮ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ হয়েছে। এর মধ্যে বেসরকারি খাতে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ৯ দশমিক ৭৩ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ হয়েছে।
সরকার দলীয় সংসদ মোজাফফর হোসেনের প্রশ্নের জবাবে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী জানান, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের কাছে বিদ্যুৎ বিভাগের পাওনা ১ হাজার ৮৯৩ কোটি ৪২ লাখ টাকা।
এর মধ্যে স্থানীয় সরকার বিভাগের কাছে পাওনা ৯০৫ কোটি ২১ লাখ টাকা, আর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের কাছে এই পরিমাণ ৩৯৫ কোটি ৬৮ লাখ টাকা।
প্রতিমন্ত্রীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের কাছে ৮৮ কোটি ৪৬ লাখ, জননিরাপত্তা বিভাগের কাছে ৬৪ কোটি ২২ লাখ, কৃষি মন্ত্রণালয়ের কাছে ৬৩ কোটি ৬১ লাখ, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের নিকট ৪৩ কোটি ৫৬ লাখ এবং স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে মন্ত্রণালয়ের পাওনা ৩৯ কোটি ৯৯ লাখ টাকা।
নসরুল হামিদ বলেন, “বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগ এবং তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন সরকারি বিভিন্ন দপ্তর/সংস্থা নিয়মিতভাবে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ না করায় বিপুল অংকের বিদ্যুৎ বিল বকেয়া আছে। তবে তদারকি জোরদার করে মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করায় বিগত কয়েক বছরে বিদ্যুৎ বিলের বকেয়ার পরিমাণ কমানো সম্ভব হয়েছে।”
বিদ্যুৎ বিলের বকেয়া আদায়ে সরকারের ‘নানা উদ্যোগ রয়েছে’ জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বকেয়া কমানোর জন্য পর্যায়ক্রমে সব গ্রাহককে প্রিপেইড/স্মার্ট মিটারের আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে। গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৫১ লাখ ৭ হাজার ৪৫২টি প্রি-পেইড/স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে এবং আগামী এক বছরের মধ্যে আরও ২০ লাখ প্রি-পেইড/স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হবে।
সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য রুমানা আলীর প্রশ্নের জবাবে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরে গত তিন মেয়াদে এখন পর্যন্ত ১৯ হাজার ৯৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে; যাতে গ্রিড, অফগ্রিড ও ক্যাপটিভসহ মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২৫ হাজার ৭৩০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে।
সরকারি দলের সংসদ সদস্য এম আব্দুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে নসরুল হামিদ বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধের কারণে বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশ থেকে উন্নত দেশগুলো জ্বালানি সংকটে আছে। বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতও এর বাইরে নয়। বৈশ্বিক জ্বালানি সংকটের কারণে বাংলাদেশ বিদ্যুতের সাশ্রয়ী ব্যবহার ও পরিকল্পিত লোড শেড করার মাধ্যমে সংকট উত্তরণের চেষ্টায় আছে।
“পরিকল্পনা অনুযায়ী কয়লাভিত্তিক নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো গ্রিডে যুক্ত হওয়াসহ সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ ব্যবহার নিশ্চিত করার মাধ্যমে অচিরেই সংকট থেকে উত্তরণ সম্ভব হবে।”
সরকার দলীয় সংসদ সদস্য আ ক ম সরওয়ার জাহানের প্রশ্নের জবাবে নসরুল হামিদ বলেন, দেশে বর্তমানে বছরে এলপিজির চাহিদা প্রায় ১৪ লাখ মেট্রিক টন। দেশে সরকারি পর্যায়ে উৎপাদন মাত্র ২ শতাংশ। বাকি চাহিদা বেসরকারি পর্যায়ে আমদানির মাধ্যমে পূরণ করা হয়।
‘বিএনপির লুটপাটের হিসাব রয়েছে, প্রস্তুত থাকেন’
মঙ্গলবার সংসদে বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদের সম্পূরক প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানান, নাইকো, সিদ্ধিরগঞ্জ ও খাম্বা কোম্পানির দুর্নীতি ‘তুলে ধরা হবে’।
“নাইকো মামলা নিয়ে যে পরিমাণ প্রমাণ আমাদের হাতে আছে। তাদের নেতা তারেক জিয়ার বন্ধু এফবিআইয়ের কাছে যে পরিমাণ ওপেন সাক্ষাতকার দিয়েছেন। সেগুলো আমরা দেখাব।… সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার প্ল্যান্টে যে পরিমাণ টাকা চুরি করেছে, সেগুলোর প্রমাণপত্র আমাদের হাতে আছে।”
প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিএনপির দুর্নীতির তথ্য ‘সময় হলে’ বের হবে।
“খাম্বা কোম্পানি দিয়ে তারেক রহমান যে পরিমাণ লুটপাট করেছে, তার হিসাব আমাদের কাছে আছে। সেই তথ্য আমরা সংগ্রহ করেছি। সময় হলে সব বের করব। নির্বাচন সামনে আসছে তো, প্রস্তুত থাকেন। সব দেখাব।”
‘রুমিন ততটা স্মার্ট নন’
বাংলাদেশের রূপপুর পরমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের ব্যয় ভারতের তুলনায় বেশি কেন–সংসদে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদকে এমন প্রশ্ন করেন বিএনপির সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা।
তাকে ‘সঠিক তথ্য জেনে’ প্রশ্ন করার পরামর্শ দিয়ে রুমিনের উদ্দেশে নসরুল হামিদ বলেন, “সংসদ সদস্যকে অনুরোধ করব- উনি সঠিক তথ্য জেনে যেন আসেন, কোন মন্ত্রণালয়ের জন্য কী প্রশ্ন করবেন।”
সম্পূরক প্রশ্ন করতে গিয়ে রুমিন ফারহানা বলেন, “আমাদের মন্ত্রীরা অতীত নিয়ে আলোচনা যত দক্ষ। যে জবাবদিহিতা আমরা চাই, সেই ব্যাপারে উত্তর দিতে তারা ততটা দক্ষ নন।”
হিন্দুস্তান টাইমসের উদ্ধৃতি দিয়ে রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্রের নির্মাণ খরচ ভারতের তুলনায় চারগুণ বেশি বলে দাবি করেন তিনি।
জবাবে নসরুল হামিদ বলেন, “আমি উনাকে যতটা স্মার্ট আশা করেছিলাম, তিনি ততটা স্মার্ট নন। তার তথ্য জানার জন্য যে ধরনের উপাত্ত থাকা দরকার, সেটাও নেই। কারণ উনি বুঝতে পারছে না পরমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র আমার মন্ত্রণালয়ের (বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়) অধীনে নয়। প্রশ্নটা করা উচিত ছিল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের কাছে।”