বাংলাদেশের জন্য ঋণ কর্মসূচির শর্ত নিয়ে আলোচনা হবে।
Published : 25 Oct 2022, 10:37 PM
বাংলাদেশের সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার ঋণের আবেদনে সাড়া দিয়ে শর্ত নিয়ে আলোচনার জন্য বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠকে বসছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল-আইএমএফ।
এই আলোচনার জন্য আইএমএফ এর একটি প্রতিনিধি দল বুধবার থেকে ১৫ দিন ঢাকায় অবস্থান করবে। আলোচনায় আইএমএফ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন ঢাকায় এ সংস্থার মিশন প্রধান রাহুল আনন্দ।
বাংলাদেশের জন্য ঋণ কর্মসূচি এবং নতুন করে দীর্ঘমেয়াদে ঋণ দিতে অর্থনৈতিক ও আর্থিক খাতের সংস্কার ও নীতি নিয়ে তারা আলোচনা করবেন বলে আগেই জানিয়েছিল আইএমএফ।
আইএমএফের ঋণ আলোচনা শিগগিরই, ঢাকায় আসছে প্রতিনিধি দল
বাংলাদেশের সঙ্গে শিগগিরই ঋণ আলোচনা শুরুর প্রত্যাশা আইএমএফ -এর
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আইমএফ প্রতিনিধি দলের বৈঠক শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।”
তাদের এ সফর শেষ হবে আগামী ৯ নভেম্বর। সেদিনও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে একটি বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে সূচিতে।
বড় ধরনের বাণিজ্য ঘাটতির ফলে বাংলাদেশের চলতি হিসাবেও ক্রমাগত ঘাটতি বাড়ছে। এতে বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয়ন (রিজার্ভ) পড়েছে চাপের মুখে। ডলারের বিপরীতে কমে যাচ্ছে বাংলাদেশের টাকার মান।
আবার রিজার্ভ ধরে রাখতে আমদানিতে লাগাম টানায় শিল্পের উৎপাদন কমার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এ বিপদ আরও বাড়িয়ে তুলেছে জ্বালানি সংকট।
এ প্রেক্ষাপটে ডলার সাশ্রয়ে অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন উদ্যোগের পাশাপাশি বিদেশি উৎস থেকেও অর্থায়ন পাওয়ার চেষ্টা করছে সরকার। সেজন্য আইএমএফ এর কাছেও ঋণ চেয়েছে বাংলাদেশ।
আইএমএফ মিশনের ঢাকা সফরের কথাবার্তার মধ্যেই গত ১৬ অক্টোবর ওয়াশিংটনে আন্তর্জাতিক অর্থায়নকারী সংস্থাটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার।
পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেছিলেন, বাংলাদেশের আবেদনে সাড়া দিয়ে আইএমএফ ঋণ দিতে রাজি হয়েছে।
১৫ দিনের জন্য আইএমএফের প্রতিনিধি দল আসছে বুধবার
আইএমএফ-বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে ঋণ নিয়ে ওয়াশিংটনে গভর্নরের আলোচনা
গর্ভনর বলেছেন, আইএমএফ এর কোটা অনুযায়ী বাংলাদেশ ৭ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত ঋণ নিতে পারবে। তার মধ্যে সাড়ে ৪ বিলিয়ন ঋণ নিতে আবেদন করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরের জন্য প্রথম পর্যায়ে দেড় বিলিয়ন ডলার ঋণ দিতে আইএমএফ রাজি।
আর আইএমএফ গত ২১ অক্টোবর জানিয়েছে, ওই ঋণের শর্ত নিয়ে সমঝোতায় পৌঁছাতেই তাদের প্রতিনিধ দল বাংলাদেশ সফর করছে। সরকারি সংস্থার পাশাপাশি অন্যান্য অংশীজনদের সঙ্গেও আলোচনা করবে তারা।
যে তহবিল থেকে ঋণ
আইমএফ জানিয়েছে, এক্সটেনডেড ক্রেডিট ফ্যাসিলিটি (ইসিএফ), এক্সটেনডেড ফান্ড ফ্যাসিলিটি (ইএফএফ) ও নতুন সৃষ্ট রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাস্টেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটি (আরএসএফ) প্রোগ্রাম এর আওতায় বাংলাদেশকে ঋণ দিতে রাজি তারা।
এর মধ্যে আরএসফ তৈরি করা হয়েছে আইএমএফ এর চলে আসা রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাস্টেইনেবিলিটি ট্রাস্ট (আরএসটি) তহবিল থেকে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত এবং দীর্ঘ মেয়াদী আর্থিক চ্যালেঞ্জের মুখে থাকা নিম্ন ও দুর্বল মধ্যম আয়ের দেশগুলোর জন্য এ তহবিল।
এ তহবিল থেকে ঋণ পেতে সদস্য দেশগুলোকে উচ্চ পর্যায়ের নীতি সংস্কারের শর্তও মানতে হয় অনেক সময়। বিশেষ করে দীর্ঘ মেয়াদী কাঠামোগত ঝুঁকি কমিয়ে আনতে এ ধরনের সংস্কার চালাতে হয়।
আরএসএফ এর আওতায় ২০ বছর মেয়াদে ঋণ দেয় আইএমএফ, যার গ্রেস পিরিয়ড হয় সাড়ে ১০ বছর। আর ঋণে সুদের হার নির্ধারণ করা হয় আলোচনার মাধ্যমে।
এই ঋণ পেলে চলমান ডলার সংকট অনেকটা কাটবে বলে আব্দুর রউফ তালুকদার আশা করছেন।