শুল্ক ছাড়ের পরেও পণ্যমূল্য না কমা ‘অদ্ভুত’: ফরাসউদ্দিন

‘‘এই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে সরকারের খাদ্য গুদামের মজুত ক্ষমতা বাড়াতে হবে।”

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 March 2024, 06:25 PM
Updated : 7 March 2024, 06:25 PM

আমদানি করা পণ্যের দাম কমানোর লক্ষ্যে সরকার যে শুল্ক ছাড় দিচ্ছে তার প্রভাব বাজারে না দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন। তার দৃষ্টিতে বিষয়টি ‘অদ্ভুত’।

এই অর্থনীতিবিদ বলেছেন, বাজার এখন মধ্যস্বত্বভোগীদের ‘নিয়ন্ত্রণে’। তাদের প্রভাব কমাতে সরকারের খাদ্য মজুদের সক্ষমতা বাড়ানোর পরামর্শ দিয়ে সতর্কও করেছেন এ বলে যে, ১৯৭৪ সালে আগের বছরের চেয়ে বেশি খাদ্য উৎপাদনের পরও দেশে দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছিল।

বৃহস্পতিবার রাতে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) আয়োজিত ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংকিং’ বিষয়ে তৃতীয় এ কে এন আহমেদ মেমোরিয়াল লেকচার অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন সাবেক এই গভর্নর।

এ কে এন আহমেদ ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের দ্বিতীয় গভর্নর। তিনি ১৯৭৪ সালের নভেম্বর থেকে ১৯৭৬ সালের জুলাই পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।

ফরাসউদ্দিন বলেন, “মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকার নানা উদ্যোগ নিচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকও সংকোচনমূলক মুদ্রানীতিতে টাকার সরবরাহ কমাচ্ছে। দ্রব্যমূল্য কমাতে সরকার আমদানি পর্যায়ে শুল্ক ছাড় দিচ্ছে। এই ছাড় সুবিধার পরও মূল্যস্ফীতি কমছে না।

‘‘শুল্ক কমিয়ে দিলে তার দাম কমার লাভটা ক্রেতা পায় না, বিক্রেতা পায়, খুব অদ্ভুত জিনিস। ‘যেখানে শুল্ক কমানো হয়েছে সেখানে কিন্তু দাম কমেনি “

মধ্যস্বত্বভোগীদের নিয়ে সতর্কতা

খাদ্যশস্য যথেষ্ট থাকার পরও মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষের যে যন্ত্রণা পোহাতে হচ্ছে, তার পেছনের মধ্যস্বত্বভোগীদের দায়ী করেন ফরাসউদ্দিন।

১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষেও মধ্যস্বত্বভোগীরা ব্যবসা করেছেন জানিয়ে নিজের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন তিনি। বলেন, ‘‘১৯৭৪ সালে দেশে যে পরিমাণ খাদ্য উৎপাদন হয়েছিল, তা আগের বছর ১৯৭৩ ও পরের বছর ১৯৭৫ সালেরও চেয়েও বেশি। তারপরও দুর্ভিক্ষ হয়, কারণ হল মধ্যস্বত্বভোগীরা।’

‘‘তারা এখন মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টায় যন্ত্রণার কারণ হয়ে উঠেছে। তারা অনেক ক্ষমতাশালী। সরকারের কোনোরকম হম্বি-তম্বিতেও কান দিচ্ছে না, তাদের টনক নড়ছে না।’’

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নরের মতে এই মধ্যস্বত্বভোগীদের মোকাবিলায় তাদের ‘অস্ত্র’ই ব্যবহার করতে হবে।

তিনি বলেন, ‘‘এই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে সরকারের খাদ্য গুদামের মজুত ক্ষমতা বাড়াতে হবে। আগে ১৭ লাখ টন খাদ্য মজুত ছিল। এখন তা ১৫ লাখ টনে নেমেছে। একে ২৫ লাখ থেকে ৩০ লাখ টনে উন্নীত করতে হবে।

‘‘খাদ্য মজুত করে তিন মাস খোলা বাজারে (ওএমএস) স্বল্প দামের পণ্য বিক্রি করলে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আসবে। টিসিবির মাধ্যমে পণ্য বিক্রি বর্তমানের চেয়ে বাড়িয়ে দেওয়া যায়।’’

কিছু মিল মালিক ও ‘অসাধু’ কর্মকর্তারও এর জন্য দায়ী মূল্যায়ন করে ফরাসউদ্দিন বলেন, “তাদের কারণে গত কয়েক বছর ধরে সরকারের ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান ব্যর্থ হচ্ছে।

“নির্ধারিত দামে সরকার শস্য কিনতে পারছে না। পরে মিলাররা শস্য দিচ্ছে সরকারি গুদামে। এর ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের চাষিরা।”

‘বাংলাদেশ ব্যাংককে আরো শক্ত হতে হবে’

মূল্যস্ফীতি, বিনিময় হার এবং সুদ হার নিয়ন্ত্রণ করাই বাংলাদেশ ব্যাংকের মূল কাজ উল্লেখ করে এই কাজগুলো কতটুকু সফলভাবে হচ্ছে তা নিয়ে ‘সন্দেহ’ প্রকাশ করেন ফরাসউদ্দিন। বলেন ‘‘মূল্যস্ফীতি কমাতে বাংলাদেশ ব্যাংককে আরো সফলতার সঙ্গে কাজ করতে হবে।’’

ফেব্রুয়ারি মাসে মূল্যস্ফীতি সামান্য কমার কারণে অতিরিক্ত ‘উল্লাস’ করার কিছু নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘‘এটা নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংককে আরো শক্ত হাতে কাজ করা দরকার।’’

বিআইবিএম গভর্নিং বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর জনাব আব্দুর রউফ তালুকদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত স্মরণসভায় এ কে এন আহমেদ ‘ট্যালেন্ট অ্যাওয়ার্ড’ হিসেবে আট জন শিক্ষার্থীকে ভালো ফলাফলের জন্য ৫০ হাজার টাকা এবং একটি সম্মাননা ক্রেস্ট দেওয়া হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ফজলে কবির, ডেপুটি গভর্নর, নির্বাহী পরিচালক, পরিচালক, সরকারি -বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিআইবিএম-এর মহাপরিচালক আখতারুজ্জামান, সহযোগী অধ্যাপক এবং পরিচালক শিহাব উদ্দিন খান।

Also Read: রোজার আগে কমল চাল, তেল, চিনি ও খেজুরের শুল্ক

Also Read: ১০ দিন আগে ঘোষণা দিয়েও কমানো গেল না তেলের দাম

Also Read: চিনির দাম বাড়িয়ে পিছু হটল টিসিবিও