এবারও ব্যবসায়ীদের সেই পুরনো অজুহাত, “আমার আগের রেটে কেনা।”
Published : 01 Mar 2024, 07:59 PM
নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানোর ঘোষণা এলে সঙ্গে সঙ্গে কার্যকর আর কমানোর ঘোষণা এলে গড়িমসি- এর আরো একটি নমুনা দেখলেন ভোক্তারা।
‘এটা আগের মাল’, ‘নতুন মাল আসেনি’- ইত্যাদি যেসব কথা ব্যবসায়ীরা বলে থাকেন, সেটি এবার হয়ত শোনা যাবে না, এমন কথা যারা ভেবেছিলেন, তারা ভুল ভেবেছিলেন।
১ মার্চ থেকে সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ১০ টাকা কমবে, সেই ঘোষণা এবার এসেছে গত ২০ ফেব্রুয়ারি।
ঘোষণা অনুযায়ী ভোক্তা পর্যায়ে বোতলজাত লিটার সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ১৭৩ টাকা থেকে কমে ১৬৩ টাকা হওয়ার কথা ছিল। বোতলজাত ৫ লিটারের বোতলের দাম ৮৪৫ টাকা থেমে নামার কথা ছিল ৮০০ টাকায়।
একইভাবে খোলা সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ১৫৫ টাকা থেকে কমে ১৪৯ টাকায় বিক্রি হওয়ার কথা ছিল।
কিন্তু নির্ধারিত দিনে শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট ও টাউনহল বাজার ঘুরে দেখা যায়, আগের দরই চাইছেন বিক্রেতারা।
মোহাম্মদপুর চাঁনমিয়া হাউজিং এলাকা থেকে বাজারে এসে আব্দুল্লাহ আল মামুন বিরক্তি প্রকাশ করেছেন। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দোকানিকে দাম কমায়নি কেন জানাতে চাইলে তিনি বললেন তার মাল নাকি আগেই আনা হয়েছে। এখন কমালে তার লস হবে।”
কারওয়ান বাজারে আগের দামের থেকে একটু কমে বিক্রি হলেও নতুন দামে তেল পাননি ক্রেতারা। অযুহাত সেই একই।
শাহপরান জেনারেল স্টোরের বিক্রেতা সিয়াম আহমেদ বলেন, “আমার এখানে এক লিটারের সব কোম্পানির মালই ১৭০ টাকা করে। ৫ লিটারের তীর ও রূপচাঁদা ৮২০ টাকা করে। আর বসুন্ধরা ও ফ্রেশ ৮০০ টাকা। আর পুষ্টি ৭৯০ টাকা।”
দাম তো কমার কথা, আপনি কেন কমাননি?- এই প্রশ্নে তিনি বলেন, “মালের দাম কমেছে ঠিক আছে। কিন্তু নতুন মূল্যের মালগুলো আসে নাই আমার এখানে এখনো। সেগুলো যেমন কমে আসবে, তেমন কমেই বিক্রি করব।”
পাশের দোকানি মো. কালাম মিয়া সয়াবিন তেল বিক্রি করছেন ১৫৫ টাকা দরে। তারও দাবি, নতুন দামেরটা আসে নাই।
কারওয়ান বাজারে কেনাকাটা করতে আসা কবির মাহমুদ বলেন, “মন্ত্রী ঘোষণার পরেও আগের দাম দেখতে পাচ্ছি। তাহলে মন্ত্রীও কি সিন্ডিকেটদের কাছে ব্যর্থ?”
তবে নতুন তেল যে বাজারে এসেছে, সেটি এই বাজারের পাইকারি বিক্রেতা মোহাম্মদ আলী এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ আলীর বক্তব্যেই স্পষ্ট। তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা পাইকারিতে ১৩৯ টাকা করে লিটার প্রতি বিক্রি করছি। খুচরা বিক্রেতারাও আমার কাছ থেকে এই দামেই কিনে। তারা খুচরাতে লাভ বেশি করে।”
সুগন্ধা-২ পাইকারি দোকানে তীর কোম্পানির ৫ লিটারের বোতল বিক্রি হচ্ছে ৭৯৫ টাকায়। আর খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৫৪ টাকা কেজিতে।
কৃষি মার্কেটের মুদি দোকানি হুমায়ুন কবির বলেন, “সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে প্রতি লিটার ১৬৫ টাকা। আর ৫ লিটারের বোতল বিক্রি হচ্ছে ৫১০ টাকায়। আমাদের কেনা পড়ে লিটার প্রতি ১৬০ করে। তীর আর রূপচাঁদা ১৬৫, বসুন্ধরার এক লিটার তেল ১৬০ টাকা আর পুষ্টির দাম আরও কম।”
ডালের দামে লাফ
রোজা আসার আগে আগে হঠাৎ করে সব ধরনের ডালের দাম বেড়েছে। এক থেকে দেড় সপ্তাহের ব্যবধানে দাম বেড়েছে কেজিতে ১০ টাকা থেকে ৩৫ টাকা পর্যন্ত।
উন্নত জাতের দেশি মশুর ডাল ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ১৩৫ টাকায় আর মোটা আকারের মশুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকায়।
খেসারির ডাল ২০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকায়। আর মুগ ডালে কেজিপ্রতি বেড়েছে ৩৫ টাকা। যা ক্রেতাদের কিনতে হচ্ছে কেজিপ্রতি ১৭৫ টাকা।
কৃষি মার্কেটে মুদি দোকানি হুমায়ুন কবির বলেন, “রোজায় দাম আরও বাড়ে কি না সন্দেহ হচ্ছে।”
কাইয়ুম সরকার ডালের বাড়তি দাম শুনে বলেন, “দুই সপ্তাহ আগে ৩ কেজি ডাল কিনেছিলাম। আজ হিসাব মিলাতে পারছি না। রমজান আসার আগেই চুপিসারে দাম বাড়িয়ে দিল তারা।”
আরেক ক্রেতা জসিম উদ্দিন বলেন, “ডাল মানুষের প্রতিদিনের খাবার। রমজানে বেশি প্রয়োজনীয় খাবার। অথচ এই পণ্যের দামও বেড়ে গেল।”
কারওয়ানবাজারে সবজির দামে পতন, এলাকার বাজারে সুফল নেই
সকালে কারওয়ানবাজারে খুচরা পর্যায়ে ফুলকপি ডেকে ডেকে ২০ টাকা করে বিক্রি করছিলেন একজন বিক্রেতা। বেশ ভালো মান। গাজরও একই দামে এবং টমেটো তিনি রাখছিলেন ৩০ টাকা করে।
এত কম!- এই প্রশ্নে সেই বিক্রেতা বললেন, “অনেক মাল আইছে, দাম পইড়া গেছে।”
ফুলকপি কত করে কিনেছেন পাইকারিতে?- তিনি বললেন, “সব খরচ মিলায়া ১৪ টাকা পড়ছে।”
গাজরও একই দামে এবং পাইকারিতে টমেটো ২৪ টাকায় করে কেনার তথ্য দিলেন এই বিক্রেতা।
সিমের দাম ৩০ টাকা, সিমের বিচি ৯০ থেকে ১০০ টাকা, মটরশুঁটির ৬০ টাকা, দেশি টমেটো ৪০ টাকা, ভাজির বেগুন ৪০ থেকে ৫০ টাকায়, লাউ ৩০ টাকা, কাঁচা মরিচ ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেল বাজারটিতে।
তবে পাইকারিতে দাম পড়ে যাওয়ার এই তথ্য ক্রেতাদেরকে দিতে চাননি অন্য এলাকার বিক্রেতারা।
মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট ও টাউনহল বাজারে ফুল কপি ৫০ টাকায়, টমেটো ৪০ টাকায়, সিম ৫০ টাকায়, কাঁচা মরিচ ৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হতে দেখা গেল। এই দুই বাজারে লাউয়ের দাম কমেলেও তা ৫০ টাকা, অর্থাৎ কারওয়ানবাজারের তুলনায় ২০ টাকা বেশি।
ডিমের দাম ফের বেড়ে ৪৮ টাকা হালিতে উঠেছে। তবে রোজায় কমবে- আভাস দিয়েছেন কারওয়ান বাজারে বিক্রেতা মো. মহিউদ্দিন। তিনি বলেন, “এই একই দাম অনেকদিন ধরে। সামনে দাম কিছুটা কমতে পারে।”
ব্রয়লার মুরগি কারওয়ান বাজারে ২০০ আর কৃষি মার্কেট ও টাউনহল বাজারে রাখা হয়েছে ২১০ টাকা কেজি।
কারওয়ান বাজারের মুরগি বিক্রেতা কাউসার আলম বলেন, “এখন বাজারে সাপ্লাই কম। সবাই রোজার আশায় বসে আছে। রোজার শুরুতে সবাই সাপ্লাই শুরু করলে তখন এমনিতেই দাম কমবে।”
তবে পাশের দোকানি স্বপন মিয়া বলেন, “মুরগির দাম আর কমবে না। এখনই কম আছে। সামনে আরও বাড়তে পাড়ে।”
আরো পড়ুন..
গরুর মাংসে ‘অযৌক্তিক মুনাফা’ ১৫০ টাকা, হাত গুটিয়ে সবাই
সয়াবিন তেলের দাম লিটারে কমল ১০ টাকা
সরকারি চিনির দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত কয়েক ঘণ্টার মধ্যে প্রত্যাহার
কৃষিপণ্য: বিধিমালা কিতাবে রেখে ‘ভুল পথে’ বাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা