গরুর মাংসে ‘অযৌক্তিক মুনাফা’ ১৫০ টাকা, হাত গুটিয়ে সবাই

কৃষি বিপণন অধিদপ্তর হিসাব করে দেখিয়েছে, গরুর মাংসের যৌক্তিক খুচরা মূল্য হওয়া উচিত ৬৫৬ টাকা। কিন্তু বাজারে দাম ৮০০ পর্যন্ত।

আবুল বাসার সাজ্জাদবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Feb 2024, 07:55 PM
Updated : 26 Feb 2024, 07:55 PM

গরুর মাংসের দাম কত হওয়া উচিত, তা নিয়ে তর্ক-বিতর্কের মধ্যেই দ্রুত দামের পতন এবং ফের উত্থান- দুটোই দেখলেন ভোক্তারা।

সরকারি সংস্থা হিসাব করে মাংসের সর্বোচ্চ যে ‘যৌক্তিক মূল্য’ নির্ধারণ করেছে, বাজারে বিক্রি হচ্ছে তার চেয়ে কেজিপ্রতি ১০০ থেকে ১৫০ টাকা বেশি দামে।

এই ‘যৌক্তিক মূল্য’ বাস্তবায়নে যে ব্যবস্থাপনা সরকার আইনে তৈরি করেছে, সেটি কাজ করছে না উদ্যোগের অভাবে।

নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতির এই সময়ে বাজার দর নিয়ন্ত্রণকে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা সরকার বারবার বলে আসছে। কিন্তু বাড়তি মুনাফা ঠেকাতে কোনো উদ্যোগ না থাকায় ক্রেতারা হতাশ।

২০২৩ সালের শুরুতে দর আটশ টাকা ছুঁয়ে ফেলার পর এপ্রিল থেকে এক দুই জন করে বিক্রেতা কম দামে মাংস বেচতে থাকলে এক পর্যায়ে অক্টোবর নভেম্বরে দাম ছয়শ টাকার নিচে নেমে আসে। কেউ কেউ এমনকি ৫৫০ টাকাতেও বেচতে শুরু করেন।

সে সময় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর মাংস বিক্রেতা ও ঢাকার বড় খামারিদেরকে নিয়ে একটি সেমিনার করার পর দেখা দেয় পাল্টা প্রতিক্রিয়া। খামারি আর বিক্রেতারা একজোট হয়ে যান। তারা নির্বাচনের আগ পর্যন্ত ৬৫০ টাকায় মাংস বেচার ঘোষণা দেন। এরপর ফেব্রুয়ারির শেষে দাম ফের আটশ টাকা ছুঁয়েছে।

বিক্রেতাদের দাবি, গরুর দাম বেড়েছে, তাই তাদেরকে বেশি দামে বেচতে হচ্ছে। খামারিরা বলছেন উৎপাদন খরচ বাড়ার কথা। কিন্তু এত কম সময়ে খরচ লাফ দেবে, সেটা বিশ্বাস করছেন না খোদ সরকারের কর্মকর্তারাও।

কারওয়ান বাজারে মাংস কিনতে আসা আল মামুনকে যৌক্তিক মূল্যের বিষয়টি জানালে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এত বেশিতে কিনি, সেটা আমি কল্পনাও করিনি। বিক্রেতারা কত শতাংশ লাভ করতে পারবে তার একটা সীমা থাকা উচিত।”

কৃষিপণ্যের বাজারদর নিয়ন্ত্রণে ২০১৮ সালে সরকার কৃষি বিপণন আইন ও তিন বছর পর বিধিমালা করে। কৃষি পণ্যের উৎপাদন খরচের বিবেচনায় কৃষক, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে মুনাফার সর্বোচ্চ হার বেঁধে দেওয়া হয় সেখানে। একে আইনের ভাষায় বলে ‘যৌক্তিক মূল্য’।

কৃষি বিপণন অধিদপ্তর এই যৌক্তিক মূল্য ঠিক করছে, তবে তা বাস্তবায়নের ক্ষমতা তাদের নেই। যাদের তা বাস্তবায়ন করার কথা, তাদের আবার নেই উদ্যোগ।

এমনকি যে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর দাম কমার সময় মাংস বিক্রেতাদের ডেকে ‘একজোট’ করেছিল, তারাও এখন কিছু করছে না। অথচ কৃষি বিপণন থেকে ‘যৌক্তিক মূল্য তালিকা’ এই অধিদপ্তরেও পাঠানো হয়।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, ‘সব কিছু’ তারা করতে পারবেন না।

যৌক্তিক মূল্য কত

কৃষি বিপণন অধিদপ্তর হিসাব করে দেখেছে, প্রতি কেজি গরুর মাংসের উৎপাদন খরচ এখন গড়ে ৫৮৭ টাকা ৫০ পয়সা। তারা খুচরায় ১৭ শতাংশ মুনাফা ধরে যৌক্তিক মূল্য ঠিক করা হয়েছে ৬৫৬ টাকা।

ঢাকার বসিলার খামারি তারেকুর রহমানের দেওয়া তথ্যেও অধিদপ্তরের এই হিসাবের মিল পাওয়া গেল।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, ৩০০ কেজি মাংস হয়, এমন একটি গরু উৎপাদনে খরচ পড়ে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকার মত। তারা ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা লাভে সেই পশু বিক্রি করেন। এই হিসাবে প্রতি কেজি দাম পড়ে ৪৮০ টাকার মত। 

মাংস বিক্রেতাদের পরিবহন, বিপণন ও কাটাকাটির পারিশ্রমিক ১০ হাজার টাকা ধরলেও গরুটির পিছনে মোট ব্যয় ধরা যায় সর্বোচ্চ ১ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। এই হিসাবে সব খরচসহ প্রতি কেজি মাংসের দাম পড়ে ৫১৬ টাকা।

কিন্তু শবেবরাতের আগের দিন ঢাকায় ৮০০ টাকাতেও বিক্রি হয়েছে গরুর মাংস। আগের সপ্তাহেই তা ছিল ৭৫০ টাকা। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে দাম ছিল ৬৫০।

কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের বাজার সংযোগ শাখা-১ এর সহকারী পরিচালক প্রণব কুমার সাহা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ইচ্ছা করলে এই (যৌক্তিক মূল্য) দামের চেয়ে কমেও বিক্রি করতে পারে। যেমন আজিমপুরে আমি দেখেছি এক বিক্রেতা ব্যানার লাগিয়ে ৬৫০ টাকায় বিক্রি করছেন।”

মাংসের উৎপাদন খরচ কীভাবে হিসাব করা হয়েছে- এই প্রশ্নে তিনি বলেন, “খামারের একটি গরুর বাছুর নির্দিষ্ট দাম ধরে সেটা পূর্ণ বয়স্ক হওয়া পর্যন্ত যে খরচ হয় তা হিসাব করেই মাংসের দাম ধরা হয়েছে।”

‘যৌক্তিক মূল্য’ বাজারে অচল

শবেবরাতের আগে মোহাম্মদপুরের টাউনহল বাজারের সাত্তার গোস্ত বিতানের বিক্রেতা রহিজ মিয়া ক্রেতাদেরকে জানিয়ে দিচ্ছিলেন সামনে দাম আরো বাড়বে।

গত সপ্তাহেই তিনি বলেন, "এখন মাংসের দাম বাড়তি। সব জায়গায় ৭৫০ টাকা। কয়েকদিন পরে দাম তো আরও বাড়ব।"

মাংস কিনতে আসা আমিনুল ইসলাম বলেন, "আগের মত আটশতে পৌঁছাবে মনে হচ্ছে।"

মাংস কিনতে এসে বাড়তি দামের কথা জেনে মির্জা মামুন বলেন, “নির্বাচনের আগে যদি ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকায় বেচতে পারে তাহলে এখন কী কারণে এত দাম? এখানে গরু উৎপাদক ও মাংস বিক্রেতার সরাসরি হাত আছে। তারা চাইলেই কম দামে দিতে পারে।”

বসিলা বাজারে ক্রেতা মাহবুব আলম বলেন, “দাম বাড়লে ১০ টাকা বাড়তে পারে, ২০ টাকা বাড়তে পারে। এই যে এক লাফে ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেড়ে যায়। এতেই বোঝা যায় এটা ইচ্ছাকৃত বাড়ানো হয়েছে।

“আর কোনো দিবস বলেন আর রমজানই বলেন, সুযোগ পেলেই তারা দাম আকাশে তোলে। আবার দিবস চলে গেলে কিন্তু দাম আর কমায় না।”

বিক্রেতা রহিজ মিয়া যে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, তা ফলে যেতে দেখা যায় শনিবার। শবেবরাত উপলক্ষে সেদিন গরুর মাংসের চাহিদা ছিল বেশি, আর সেদিন বিক্রেতারা দাম হেঁকেছেন ৮০০ টাকা।

‘যৌক্তিক মূল্য’ তো বাজারে চলছে না- এই প্রশ্নে কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের বাজার সংযোগ শাখা-১ এর সহকারী পরিচালক প্রণব কুমার সাহা বলেন, “আমাদের আইনে আছে যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ ও বাস্তবায়ন। কিন্তু বাস্তবায়ন করতে হলে যে ক্ষমতাটা প্রয়োজন সেটি আমাদের দেওয়া হয়নি।

“কাউকে ধরতে বা বাজার মনিটরিং করতে আমাদের জেলা প্রশাসকের সহায়তা নিতে হয়। ম্যাজিস্ট্রেট আসবে, তার সঙ্গে আমরা যেতে পারব।”

অধিদপ্তরের উপপ্রকল্প পরিচালক মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, “চেষ্টার তো ত্রুটি করা হয় না, তবুও যৌক্তিক মূল্য বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। তাই বাজার নিয়ন্ত্রণে এবার বিভিন্ন সংস্থা একসঙ্গে কাজ করতে হবে।”

সুপার শপেও যৌক্তিক মূল্যের চেয়ে একশ টাকা বেশিতে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে।

মীনা বাজার ‘সাশ্রয়ের কথা বলে’ কেজি প্রতি ৭৪৫ টাকায় বিক্রির বিজ্ঞাপন দিয়েছে সামাজিক মাধ্যমে। একই দাম নিচ্ছে আরেক সুপার শপ স্বপ্ন। ইউনিমার্টে দাম আরো ২০ টাকা বেশি।

সুপার শপ স্বপ্নতে কেনাকাটা করতে আসা জান্নাতুল ফেরদৌসী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি জানতাম না যৌক্তিক মূল্য কত। আমার তো মনে হয় অধিকাংশ মানুষই জানে না।” 

দাম বেশি রাখার কারণ কী- এই প্রশ্নে ‘স্বপ্ন’র জিগাতলা শাখার ব্যবস্থাপক রেজাউল করিম পলাশ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যৌক্তিক দামের ব্যাপারে আমাদের জানানো হয়নি। আর যে দাম বললেন এ দামে তো মাংস কিনতেও পারি না আমরা। তাহলে এই দামে কীভাবে বিক্রি করব?”

আরেক সুপার শপ মীনা বাজারের ধানমন্ডি ২৭ নম্বর শাখার সেকেন্ড ইনচার্জ হাসান আল মামুনও যৌক্তিক মূল্যের বিষয়ে কিছুই জানেন না।

কিছুদিন আগে ৬৫০ টাকা কেজিদরে বিক্রি করেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, “এখন সব জায়গাতেই দাম বেশি। আমাদেরও কেনা বেশি, তাই এত কম টাকায় বিক্রি সম্ভব না বলে মনে হচ্ছে।”

দায়িত্ব তবে কার?

আইন ও বিধিমালায় কৃষি পণ্যের ‘যৌক্তিক মূল্য’ বাস্তবায়নে জেলা পর্যায়ে কৃষি বিপণন সমন্বয় কমিটি আছে।

এই কমিটির সদস্য হিসেবে আছেন জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক, জেলা প্রাণিসম্পদ ও মৎস্য কর্মকর্তা, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক, সিনিয়র বা কৃষি বিপণন কর্মকর্তাসহ ১৬ জন।

উপজেলা ও বাজারভিত্তিক আলাদা কৃষি বিপণন কমিটি গঠনের কথা বলা আছে বিধিমালায়।

বাজার কমিটির সভাপতি হওয়ার কথা সিটি করপোরেশন বা পৌরসভার ওয়ার্ড কাউন্সিল বা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের।

এর সদস্য থাকার কথা সভাপতি কর্তৃক মনোনীত গণ্যমান্য ব্যক্তি, তিনজন কৃষিপণ্য ব্যবসায়ী, একজন কৃষিপণ্য উৎপাদন, বাজার পরিচালনা কমিটির সভাপতি বা সেক্রেটারি।

প্রতিটি বাজারে যৌক্তিক পাইকারি ও খুচরা মূল্য দৃষ্টিগ্রাহ্য স্থানে টানিয়ে দেওয়ার কথা। কিন্তু এই কাজগুলো কেউ করে না। বাজার কমিটিও গঠন করা হয়নি।

যৌক্তিক মূল্য বাস্তবায়নে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর যাদেরকে তালিকা পাঠায় তাদের মধ্যে আছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, কৃষি সচিব, বাণিজ্য সচিব, খাদ্য সচিব, ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান।

দাম যখন কমছিল, তখন মাংস ব্যবসায়ীদের ডেকে কর্মশালা করলেও এখন যখন বেশি দাম রাখা হচ্ছে, তখন উদ্যোগ নেই কেন- প্রশ্ন ছিল ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামানের কাছে।

জবাবে তিনি বলেন, “শুধু ভোক্তা অধিদপ্তরেরই সব দায়িত্ব? আর কারও কোনো দায়িত্ব নেই? সব তো আমরা করতে পারব না।"

গ্রামের হাটে গরুপ্রতি ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা ইজারা নেওয়া, ঢাকায় আসা গরুর ট্রাক থেকে ২০ হাজার টাকার মতো চাঁদা আদায়ের তথ্য জানিয়ে তিনি বলেন, “এটা কি আমি ঠেকাতে পারব? বাজারে বাজারে, গাড়িতে গাড়িতে টাকা যায়। এভাবে দাম বেড়ে যাচ্ছে।”

দাম বাড়িয়েছেন আলোচিত বিক্রেতা খলিলও

ঢাকার উত্তর শাহজাহানপুরে খলিল গোস্ত বিতানে মঙ্গলবার গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৬৯৫ টাকা কেজি দরে। আগের দিনেই দাম ছিল ৬৫০ টাকা।

জানুয়ারির ১০ তারিখ অবধি ৫৯৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছেন তিনি।

দাম কেন বাড়ল?- বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের এই প্রশ্নে খলিলুর রহমান বলেন, “আমরা তো গরু উৎপাদন করি না। এতদিন কিছুটা কমে কিনতে পারতাম, তাই যথাসম্ভব কমেই বিক্রি করতাম। এখন গরুর দাম বেশি, লস দিয়ে তো আর বিক্রি করতে পারি না।”

গরুর দাম কেন বাড়ল- এই প্রশ্নে তিনি বলেন, “শবে বরাতে মানুষের গরু লাগবেই, এটা কৃষক হোক আর খামারি হোক, সবাই যেহেতু জানে, তাই দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।”

উৎপাদন খরচ বাড়ার দাবি

রাজধানীর বসিলায় বেশ কিছু গরুর খামার গড়ে উঠেছে গত কয়েক বছরে। এগুলোর মধ্যে মেঘডুবি এগ্রিকেয়ার লিমিটেড ও রাহমানিয়া ক্যাটেল ফার্ম তুলনামূলক বড়।

মেঘডুবিতে হাজারখানেক গরু রয়েছে। এই খামারের মালিক তারেকুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গো-খাদ্যের মূল্য অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। যে খাবার গত কোরবানির পরেও ৩৫ থেকে ৪৬ টাকায় কিনতাম, সেটা এখন ৫০ থেকে ৫২ টাকা।

“ছোলা, ভুসি, ভুট্টাসহ যাই বলেন না কেন সব কিছুরই তো দাম বেড়েছে। উৎপাদন খরচ যেহেতু বেড়েছে, তাই গরুর দামটাও কিছুটা বেড়েছে এটা সত্য। আর সামনেও কমার কোনো সুযোগ দেখি না।”

তবে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আসলে কি এই দুই-এক মাসে উৎপাদন খরচ বেড়ে গেল? এটা প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের খতিয়ে দেখা দরকার। এই অল্প সময়ে উৎপাদন খরচ এতটা বেড়ে যায়নি যেভাবে বিক্রেতারা দাম বাড়িয়েছে।”

দাম যেভাবে বেড়েছিল

২০১৪ সালে ভারতে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার ক্ষমতায় এসে বাংলাদেশে গরু পাঠানোর ব্যাপারে কড়াকড়ি আরোপ করে। ২০১৫ সালের ১ এপ্রিল তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের এক নির্দেশনার পর সে দেশ থেকে বাংলাদেশে গবাদিপশু আসা এক প্রকার বন্ধ হয়ে যায়।

‘বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অনানুষ্ঠানিক গরু বাণিজ্যের অর্থনীতি: পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের চিত্র’ বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির এক গবেষণায় উঠে আসে, ২০১৪ সালের আগ পর্যন্ত ভারত থেকে বাংলাদেশে অনানুষ্ঠানিক চ্যানেলে গরু আমদানি হত ৫০ কোটি ডলারের। ডলার ও টাকার বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী তা সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকার বেশি।

ভারতের ওই সিদ্ধান্তে দেশে গরুর মাংসের চাহিদা পূরণ নিয়ে শঙ্কা দেখা দেয়। বিশেষ করে কোরবানির সময় পশু পাওয়া যাবে কি না, এ নিয়েও তৈরি হয় অনিশ্চয়তা।

২০১৪ সালে বাংলাদেশে গরু পাঠানোর ক্ষেত্রে ভারত কড়াকড়ি আরোপ করে। এরপর থেকেই বাড়তে থাকে দাম।

তবে এই সিদ্ধান্তে বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে গরুর খামার তৈরি হতে থাকে। ঢাকা শহরের চারপাশেও গড়ে ওঠে অনেক খামার। ধীরে ধীরে সারা বছরের চাহিদা পূরণে সক্ষম হয়ে ওঠে বাংলাদেশ।

কিন্তু উৎপাদন বাড়লেও এর সুফল ভোক্তারা পায়নি। ৯ বছরের মধ্যে দাম বেড়ে হয়ে যায় তিন গুণ।

সরকারের কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৪ সালে দেশে গরুর মাংসের কেজিপ্রতি গড় দাম ২৭৫ টাকা ছিল। তখন ব্রয়লার মুরগির গড় দাম ছিল কেজিপ্রতি ১৩৭ টাকা।

২০১৮ সালে গরুর মাংসের গড় দাম বেড়ে কেজিপ্রতি ৪৩০ টাকা হয়। আর ব্রয়লারের দাম কমে হয় কেজিপ্রতি ১৩১ টাকা।

২০২০ সালের মার্চেও ঢাকায় গরুর মাংস পাওয়া গেছে ৫৫০ টাকা কেজি দরে। ওই বছর প্রথমবারের মত রোজায় গরুর মাংসের দাম ঠিক করে দেয়নি ঢাকা সিটি করপোরেশন। পরে বাজার দর বেড়ে দাঁড়ায় ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকায়।

২০২২ সালে দাম চড়ে ৭০০ টাকায়। ২০২৩ সালে আটশ টাকা ছুঁয়ে যায়।

দাম বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে খাবারের দাম বৃদ্ধি, হাটে খাজনা, চাঁদাবাজিসহ নানা যুক্তি তুলে ধরেন বিক্রেতারা। তবে অতিরিক্ত মুনাফা করার বিষয়টি সব সময় ছিল আলোচনায়।

২০২৩ সালের ২৬ অগাস্ট ঢাকায় একটি বিতর্ক আয়োজনে বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, বিদেশ থেকে গরুর মাংস আমদানি করলে দেশে তা ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা সম্ভব। তবে দেশীয় উৎপাদকদের সুরক্ষা দিতে গরুর মাংস আমদানি করা হচ্ছে না।

পুরনো খবর

Also Read: গরুর মাংসের পড়তি দর টেনে তোলার চেষ্টা কেন, প্রশ্ন ভোক্তাদের

Also Read: নিত্যপণ্য: উৎপাদন খরচের আড়াই গুণ দামকে ‘যৌক্তিক’ ভাবছে সরকার

Also Read: কৃষিপণ্য: বিধিমালা কিতাবে রেখে ‘ভুল পথে’ বাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা

Also Read: খুচরায় চালে কেজিতে ১০ টাকা, মাছে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত মুনাফা

Also Read: ‘যৌক্তিক মূল্য’র চেয়েও কেজিতে ১৯ টাকা বেশি ছোলায়

Also Read: রোজায় খেজুরের দাম কেমন থাকবে?