Published : 29 Apr 2025, 06:13 PM
সৎ মাকে বঞ্চিত করে ছেলেরা সম্পত্তি লিখে নিয়েছে এমন অভিযোগে চাঁপাইনবাবগঞ্জের এক ব্যক্তির দাফন আটকে দিয়েছিল স্ত্রীর স্বজনরা। গ্রাম্য সালিসে বিরোধের সমাধান করতে করতে পার হয়ে যায় ২৪ ঘণ্টা। এ দীর্ঘসময় মৃতের মরদেহ পড়েছিল বাড়ির বাইরে রাখা ফ্রিজিং গাড়িতে।
সোমবার চাঁপাইনবাবগঞ্জের সদর উপজেলার সুন্দরপুর ইউপির বড় মরাপাগলা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান।
মৃত ব্যক্তির নাম মাজেদ বিশ্বাস (৭৫)। রোববার তিনি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আমিনুল ইসলাম বলেন, মাজেদ বিশ্বাসের চার ছেলে ও ছয় মেয়ে। প্রায় বিশ বছর আগে প্রথম স্ত্রী মারা গেলে হামফুল বেগম নামে এক নারীকে বিয়ে করেন মাজেদ বিশ্বাস। তবে হামফুলের সংসারে কোনো ছেলে মেয়ে হয়নি।
মাজেদ বিশ্বাস ছয় থেকে সাত বিঘা জমি রেখে গেছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
স্থানীয়রা জানান, মাজেদ বিশ্বাসের ছেলেদের মধ্যে দুজন লতিফুর রহমান ও আব্দুল জাব্বার পুলিশে চাকরি করেন। ছয়মাস আগে মাজেদ বিশ্বাস অসুস্থ হয়ে শয্যাশয়ী হলে তাকে চিকিৎসার জন্য রাজশাহীতে নিয়ে যায় ছেলেরা।
রোববার তিনি মারা গেলে সন্ধ্যা সাতটার দিকে লাশ বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। তখন মাজেদ বিশ্বাসের সহায়-সম্পত্তি দু ছেলে ও এক ভাতিজা নিজেদের নামে লিখিয়ে নেওয়ার অভিযোগ করে দ্বিতীয় স্ত্রী হামফুর বেগমসহ তার আত্মীয় স্বজনরা লাশ দাফনে বাধা দেন।
ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান বলেন, পুলিশে চাকরিরত দুই ছেলে লতিফুর ও জাব্বার চিকিৎসার কথা বলে তাদের বাবাকে অন্য জায়গায় নিয়ে যান এবং সেখানে বাবার সম্পত্তি তাদের নামে লিখে নেন বলে অভিযোগ হামফুল বেগমের।
তিনি আরও জানান, গত ১৬ এপ্রিল হামফুল বেগমের কাছে উকিল নোটিশের মাধ্যমে মাজেদ বিশ্বাসের তালাকনামা পাঠানো হয়েছিল, তবে হামফুল বেগম সেটি গ্রহণ করেননি।
এ নিয়ে হামফুল বেগম স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান বরাবর অভিযোগ দিলে আগামী ৫ মে গ্রাম্য সালিসের দিন নির্ধারণ হয়। কিন্ত তার আগেই মাজেদ বিশ্বাস মারা যান।
এ বিষয়ে সোমবার সকালে ও বিকালে ইউপি চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে দুদফা গ্রাম্য সালিস বসেন এলাকার স্থানীয় তিনজন ইউপি সদস্য ও গণ্যমান্য ব্যক্তিরা। শেষে ৩০০ টাকার স্ট্যাম্পে সিদ্ধান্ত হয়, অংশীদারদের মাঝে সম্পত্তির বণ্টন হবে।
পরে ২৪ ঘণ্টা পর সোমবার সোয়া ৭টার দিকে বড় মরা পাগলা গোরস্থানে মাজেদ বিশ্বাসের লাশ দাফন হয়।
এ বিষয়ে মাজেদ বিশ্বাসের ছেলে এএসআই জাব্বার বলেন, “তিনি (হামফুর বেগম) বাবার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করতেন। তার যত্ন-আত্তি করতেন না। তাই বাবা তাকে ডিভোর্স দিয়েছিলেন। বাবার মৃত্যুর পরও তিনি আমাদের ব্ল্যাকমেল করেন।
“তারপরেও আমরা সামাজিক মানুষ, সমাজ যেটা রায় দিয়েছে। আমরা তা মেনে নিয়েছি। “
লতিফুর রহমান ও আব্দুল জাব্বার পুলিশে চাকরি করার কথা নিশ্চিত করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানার ওসি মতিউর রহমান বলেন, “ঘটনা শুনে ওই এলাকায় পুলিশ টিম পাঠিয়েছিলাম। পরে গ্রাম্য সালিসে মিমাংসা হয়ে লাশ দাফনের কথা জেনেছি। ”