নির্বাচনী বছরে গতবার ৭ দশমিক ৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরেছিল সরকার, যা পরে নামিয়ে আনা হয়েছিল ৬ দশমিক ৫ শতাংশে। কিন্তু সেই লক্ষ্যেও পৌঁছানো যায়নি।
Published : 06 Jun 2024, 03:55 PM
মূল্যস্ফীতি, টাকার দরপতনসহ বেশ কিছু সমস্যায় কারণে সামষ্টিক অর্থনীতির নানা সূচক যখন চাপের মুখে, তখন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ঠিক করেছেন বিদায়ী অর্থবছরের চেয়ে কমিয়ে।
বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য উত্থাপিত ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার এই বাজেট প্রস্তাবে ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা ধরেছেন তিনি।
নির্বাচনী বছরে গতবার ৭ দশমিক ৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরেছিল সরকার, যা পরে নামিয়ে আনা হয়েছিল ৬ দশমিক ৫ শতাংশে। কিন্তু সেই লক্ষ্যেও পৌঁছানো যায়নি।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যা ব্যুরো (বিবিএস) প্রথম সাত মাসের প্রাক্কলন অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছর শেষে অর্থনীতির আকার বাড়তে পারে ৫ দশমিক ৮২ শতাংশ হরে।
গত কয়েক বছর আওয়ামী লীগ সরকার জিডিপি প্রবৃদ্ধির উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য ধরলেও এবার কিছুটা পিছিয়ে আসার স্পষ্ট ব্যাখ্যা বাজেট বক্তৃতায় দেননি কূটনৈতিক জীবন থেকে অবসরে গিয়ে রাজনীতিতে নামা অর্থনীতির ছাত্র মাহমুদ আলী।
তিনি বলেন, “২০০৯-১০ অর্থবছর হতে ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত বাংলাদেশের গড় প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৬.৭ শতাংশ। প্রবৃদ্ধির এ গতি ধরে রাখার লক্ষ্যে কৃষি ও শিল্প খাতের উৎপাদন উৎসাহিত করতে যৌক্তিক সকল সহায়তা অব্যাহত রাখা হবে।
“পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো প্রকল্পসমূহের যথাযথ বাস্তবায়ন এবং রপ্তানি ও প্রবাস আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে। আশা করছি আমাদের গৃহীত এসকল নীতিকৌশলের ফলে আগামী অর্থবছরে ৬.৭৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে এবং মধ্যমেয়াদে তা বৃদ্ধি পেয়ে ৭.২৫ শতাংশে পৌঁছাবে।”
অর্থনীতিবিদদের অনেকে প্রবৃদ্ধির হারকে অর্থনীতির গতিশীলতা হিসেবে মানলেও টেকসই উন্নয়নের সূচক হিসেবে মানতে নারাজ। তারপরও অর্থনীতির এই প্রপঞ্চটি বাংলাদেশের রাজনীতিতে বারবার আলোচনায় এসেছে।
২০১৮-১৯ অর্থবছরে রেকর্ড ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছিল বাংলাদেশ। এরপর আসে মহামারী। তার মধ্যেও ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে ৮ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য যখন ধরেছিলেন অর্থমন্ত্রী। কিন্তু অর্জিত হয় ৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ, যা কয়েক দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন।
মহামারীর ধাক্কা সামলে ২০২০-২০২১ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির হার বেড়ে দাঁড়ায় ৬ দশমিক ৯৪ শতাংশে। দুঃসময় কাটিয়ে ২০২১-২২ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি বেড়ে হয় ৭ দশমিক ১০ শতাংশ।
এরপর ২০২২-২৩ অর্থ বছরে অর্থনীতির আকার ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ বাড়ানোর লক্ষ্য ধরেছিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল। পরে তা সংশোধন করে ৬ দশমিক ৫০ শতাংশে নামানো হলেও তা অর্জন হয়নি। বিবিএসের হিসাব অনুযায়ী, ওই অর্থবছর শেষে স্থির মূল্যে জিডিপি বেড়েছে ৫ দশমিক ৭৮ শতাংশ।
মহামারীর মধ্যে বাংলাদেশে বিনিয়োগ কমে গিয়েছিল, সেটা যখন ঘুরে দাঁড়ানো শুরু করল তখনই শুরু হল ইউক্রেইন-রাশিয়া যুদ্ধ। সেই যুদ্ধ পুরো বিশ্বকে ফের টালমাটাল করে দেয়, আবার অনিশ্চয়তার কবলে পড়ে অর্থনীতি।
বিশ্বের সব দেশকেই কমবেশি এর জের টানতে হচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়ে গেছে, চড়ে গেছে ডলারের বিনিময় হার। তাতে পণ্যের উৎপাদন খরচও বেড়েছে।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও সামাজিক নিরাপত্তায় এর বড় ধরনের প্রভাব থাকবে বলে অর্থনীতিবিদরা ধারণা দিয়েছিলেন, হয়েছেও তাই।
জানুয়ারি পর্যন্ত সাত মাসের হিসাব ধরে চলতি অর্থবছরের প্রবৃদ্ধির যে প্রাক্কলন করেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো, তাতে দেখা যাচ্ছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে স্থির মূল্যে ৫ দশমিক ৮২ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির হতে পারে।
অবশ্য বিশ্ব ব্যাংকের প্রাক্কলন বলছে, বিদায়ী অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে আরও কম, ৫ দশমিক ৬ শতাংশ।
নতুন বাজেটে চলতি মূল্যে জিডিপির আকার ধরা হয়েছে ৫৫ লাখ ৯৭ হাজার ৪১৪ কোটি টাকা। বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে এর আকার ছিল ৫০ লাখ ৪৮ হাজার ০২৭ কোটি টাকা।