শ্যামল দত্ত বলেন, “ব্যাংক খাত থেকে একজন পি কে হালদার কয়েক হাজার কোটি টাকা লুটপাট করে নিয়ে যাবেন, অথচ কিছু বলা যাবে না, এটা তো হতে পারে না।”
Published : 15 May 2024, 08:55 PM
ব্যাংক খাতের লুটপাট, নৈরাজ্য ও অনিয়ম ধামাচাপা দিতেই বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে বলে মনে করেন সাংবাদিক নেতারা।
নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার ও সাংবাদিকদের আগের মতো নির্বিঘ্নে প্রবেশাধিকার দেওয়া না হলে বৃহত্তর আন্দোলনে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।
বুধবার রাজধানীর পল্টনে অর্থনীতি বিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ইকোনোমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) কার্যালয়ে 'সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকারে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিষেধাজ্ঞা আরোপ বিষয়ে নেতৃবৃন্দকে অবহিতকরণ' শীর্ষক সভায় এসব কথা বলেন তারা।
সভায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, “ব্যাংক খাত থেকে একজন পি কে হালদার কয়েক হাজার কোটি টাকা লুটপাট করে নিয়ে যাবেন, অথচ কিছু বলা যাবে না, এটা তো হতে পারে না। দেশের ৭-৮টা ব্যাংকের মালিক একটা গ্রুপ। রাতারাতি এক ব্যাংকের মালিকানা বদলে গেল। একজন ব্যক্তি সাত থেকে আটটি ব্যাংকের মালিক কীভাবে হন, সেই প্রশ্ন তো উঠবে।”
বাজেটের আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া কেন হবে সেই প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, “হলমার্ক কেলেঙ্কারিসহ সব বড় বড় আর্থিক অনিয়মের সংবাদ প্রকাশ করে সরকারকে সহযোগিতা করেছে গণমাধ্যম। উন্নয়নে সব সময়ে সরকারের সহায়ক ভূমিকা পালন করে সাংবাদিকরা।’’
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) একাংশের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী বলেন, “ব্যাংক রিপোর্টাররা আজ সমস্যায় পড়েছেন, এটা আরও বাড়বে। ধীরে ধীরে সাংবাদিকরা আরও সমস্যার সম্মুখীন হবেন। পেশাদারিত্বের জায়গায় আমাদের ঐক্য গড়ে তুলতে সকল সংগঠন সংঘবদ্ধ হয়ে আগাতে হবে। অতীতেও আমরা সংঘবদ্ধ হয়ে আমাদের অধিকার আদায় করেছি। শেয়ারবাজার, ডলার বাজারে যেসব অপকর্ম হয়, এগুলো তো কর্মকর্তারাই ঘটান, সাংবাদিকরা শুধু তা লিখে তুলে ধরেন।”
ঢাকার বাইরে থাকায় সভায় সরাসরি অংশ নিতে না পারলেও সাংবাদিকদের অধিকার আদায়ে পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বিএফইউজের (অপর অংশ) সভাপতি ওমর ফারুক ও সাধারণ সম্পাদক দীপ আজাদ।
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) একাংশের সভাপতি সোহেল হায়দার চৌধুরী বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংকে এমন একজন গভর্নরকে বসানো হয়েছে, তিনি ওই পদের যোগ্যই নন। তার যে দুর্বলতা আছে, সেটি ঢাকার জন্যই তিনি সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন।”
চোরদের পাহারা দেওয়ার জন্যই এমন নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক মন্তব্য করে বিএফইউজের (একাংশ) মহাসচিব আব্দুল কাদের গণি চৌধুরী বলেন, “নিয়ন্ত্রণ সংস্থায় সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞায় আমরা বিস্মিত হয়েছি, এর মাধ্যমে সাংবাদিকদের কণ্ঠরোধের চেষ্টা করা হচ্ছে।”
ডিইউজের (অপর অংশ) সভাপতি সাজ্জাদ আলম খান তপু বলেন, “আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সাংবাদিকদের বাংলাদেশ ব্যাংকে আগের মতো প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। ১৯৭১ সালে বীর মুক্তিযোদ্ধারা দেশের স্বাধীনতার জন্য জীবন দিয়েছেন, আর এখন বাংলাদেশ ব্যাংক সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার বন্ধ করে স্বাধীনতাকে কলুষিত করছে।’’
সাংবাদিক যদি বাংলাদেশে থাকে, তথ্য তাকে দিতেই হবে। যখনি তথ্য দিবে না, তখনি লুকোচুরির বিষয় থাকবে বলেই ধরে নেওয়া হবে জানিয়ে ডিআরইউ সভাপতি সৈয়দ শুকুর আলী শুভ বলেন, “সাংবাদিকরা কোনো ব্যক্তির জন্য কাজ করেন না, তারা পুরো দেশের জন্য কাজ করেন। বাংলাদেশ ব্যাংকে অবশ্যই সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। সাংবাদিকদের জন্য উন্মুক্ত করা না হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের গেট বন্ধ করে সাংবাদিকরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে।”
ইআরএফের প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক ও ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেসের সম্পাদক শামসুল হক জাহিদ বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আগে ১৯৭৩-৭৪ সালের দিকে আমাদের যেসব তথ্য দেওয়া হত, এখন আর সেগুলো হয় না। অনিয়ম ও দুর্নীতি প্রকাশ করলে তাদের সমস্যা হওয়ার কারণেই প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।”
সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের মার্যাদা ক্ষুন্ন হচ্ছে বলে পর্যবেক্ষণ দেন বার্তা সংস্থা ইউএনবির সম্পাদক ফরিদ হোসেন।
সাংবাদিকদের নিষেধাজ্ঞা শুধু ব্যাংক বিটের রিপোর্টার বা অর্থনীতির রিপোর্টারদের অসম্মান করা হচ্ছেই না, পুরো গণমাধ্যমের গলা টিপে ধরা হচ্ছে বলে মনে করেন ডিআরইউ সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন আহমেদ।
ইআরএফ সভাপতি রেফায়েত উল্লাহ মীরধার সভাপতিত্বে আয়োজিত সভা সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম।
রেফায়েত উল্লাহ মীরধা বলেন, “আমরা অনেক চেষ্টা করেছি, গভর্নরের সঙ্গে কথা বলেছি। তারপরও অনুরোধ করে চিঠি দিয়েছি। কিন্তু দেড় মাস পার হলেও এখনো সাংবাদিক ভাই-বোনেরা বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রবেশ করতে পারছেন না।
“বাংলাদেশ ব্যাংক যদি দেশপ্রেমিক হত, তাহলে ব্যাংক খাতের অবস্থা এতো ভয়াবহ হত না। তাই এই বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের বৃহত্তর কর্মসূচিতে যেতে হবে।”
সভায় সিনিয়র সাংবাদিক সোহেল মঞ্জুর, ইআরএফের সাবেক সভাপতি মনোয়ার হোসেন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমান, এস এম রাশিদুল ইসলাম কথা বলেন।
আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সব ভবনের নিচতলায় অভ্যর্থনা বিভাগে রাখা রেজিস্ট্রার বইয়ে পরিচয় লিখে সই করে বিশেষ ‘পাস’ নিয়ে ভেতরে যেতে পারতেন সংবাদকর্মীরা। তবে গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে এই পাস ইস্যু করা বন্ধ রয়েছে গভর্নরের নির্দেশে। সাংবাদিকরা কোন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলছেন সেটিও নজরদারি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ সাংবাদিকদের। চার ডেপুটি গভর্নর, নির্বাহী পরিচালক, পরিচালকসহ সব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের অলিখিত নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা না বলতে।
এর আগে ২০১৫ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনা প্রকাশ হওয়ার পর কয়েকদিন কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছিল। তখন প্রতিবাদের মুখে সেই অবস্থান থেকে সরে এসেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধজ্ঞার জানিয়ে আসছে সাংবাদিক ও সুশীল সমাজের বিভিন্ন সংগঠন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংবাদ সম্মেলন বর্জন সাংবাদিকদের
সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা: কেন্দ্রীয় ব্যাংক বার্তা কী, প্রশ্ন