আইএমএফ প্রতিনিধি দলটি সবচেয়ে বেশি জোর দিয়েছে খেলাপি ঋণের উচ্চ হার কমিয়ে আনার কৌশল এবং বিনিময় হার বাজারমুখী করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগের কার্যকারিতা নিয়ে।
Published : 16 Oct 2023, 12:59 PM
খেলাপি ঋণের উচ্চ হার কবে কমবে, বিনিময় হার কবে নাগাদ পুরোপুরি বাজারমুখী হবে এবং স্মার্ট সুদহার মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কেমন ভূমিকা রাখতে পারে– এসব বিষয় নিয়ে ব্যাংকারদের সঙ্গে বৈঠক করেছে বাংলাদেশ সফররত আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রতিনিধি দল।
রাষ্ট্রায়ত্ত, বিদেশি খাতের ব্যাংকের পর সর্বশেষ রোববার রাতে আইএমএফ প্রতিনিধি দল বৈঠক করেছে বেসরকারি খাতের ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের সংগঠনের সঙ্গে। ব্র্যাক ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে ওই বৈঠকে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশ (এবিবি) এর চেয়ারম্যান সেলিম আরএফ হোসেন, মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট (এমটিবি) ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমানসহ এবিবি নেতারা অংশ নেন।
বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি হওয়া ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি ছাড়ের আগে প্রথম কিস্তির অর্থের ব্যবহার দেখতে রিভিউ মিশন নিয়ে এসেছে আইএমএফ প্রতিনিধি দলটি।
ঋণ আলোচনার আগে ও পরে আন্তর্জাতিক সংস্থাটি শুধু সরকার, মন্ত্রণালয়, সরকারি দপ্তর ও নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসলেও এবার ব্যাংকারদের সঙ্গে সরাসরি বৈঠক করল।
বৈঠকে অংশ নেওয়া সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আইএমএফ প্রতিনিধি দলটি ব্যাংকিং খাতের খেলাপি ঋণ নিয়ে কথা বলেছেন। স্মার্ট সুদহার এর সুফল কতটা আসতে পারে-মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও তারল্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে তারা ধারণা নিয়েছেন। বিনিময় হার বাজারমুখী কবে নাগাদ হতে পারে তা নিয়েও বলেছেন।’’
এবিবি চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আরএফ হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আইএমএফ এর প্রতিনিধিরা ব্যাংকিং খাতের চলমান বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন। এর মধ্যে বিনিময় হার বাজামুখী করার প্রক্রিয়াটি বাস্তবান হচ্ছে- তা আমরা জানিয়েছি যে, এটি পুরো বাজারমুখী করতে আরো সময় লাগবে।
“সুদহার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের যে উদ্যোগ বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়েছে, তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। এছাড়া তারল্য পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেছেন তারা।”
ব্যাংকারদের সঙ্গে আলোচনায় আইএমএফ প্রতিনিধি দলটির সবচেয়ে বেশি জোর দিয়েছে খেলাপি ঋণের উচ্চ হার কমিয়ে আনার কৌশল এবং বিনিময় হার বাজারমুখী করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগের কার্যকারিতা নিয়ে।
বৈঠকে অংশ নেওয়া একজন ব্যাংক এমডি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে বিনিময় হার পুরোটা বাজারমুখী করা সম্ভব হবে কি-না, তা আইএমএফ প্রতিনিধিরা জানতে চেয়েছেন। উত্তরে ব্যাংকারদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, আগামী বছরের শুরুর দিকে বিনিময় হার পুরোপুরি বাজারমুখী হতে পারে।
“খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও ব্যাংকিং নীতিমালা আরো কঠোর করার পক্ষে মতামত দিয়ে আমরা বলেছি, ডলার সংকটে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতের আমদানি নির্ভর শিল্প।”
ঋণ চুক্তির শর্ত অনুযায়ী রেমিটেন্স বৃদ্ধি করতে হবে বাংলাদেশকে। কিন্তু গত কয়েক মাস ধরেই প্রবাসী আয় কমছে। এ অবস্থায় রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়ানোর উপায় নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়।
ব্যাংকের চেয়ে বাইরে ডলারের দর বেশি হওয়ায় প্রবাসীরা হুন্ডিতে লেনদেন করছেন, তা জানানো হয় রেমিটেন্স কমে যাওয়ার ব্যখ্যায়।
বর্তমানে ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হার র্নিধারণ করছে এবিবি ও বাফেদা। ডলারের একাধিক দর বাদ দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা করে ক্রয় ও বিক্রয় পর্যায়ে দর নির্ধারণ করে দিচ্ছে সংস্থা দুটি।
ব্যাংকিং চ্যানেলে ডলার কিনতে (সেবাখাতসহ সব ধরনের রপ্তানি আয়, বিদেশ থেকে আসা রেমিটেন্স, আন্তঃব্যাংকে কেনা) বিনিময় হার ঠিক করা হয়েছে ১১০ টাকা। অন্যদিকে ডলার বিক্রিতে (আমদানি, আন্তঃব্যাংক, বিদেশে অর্থ প্রেরণ) ডলারের বিনিময় হার এখন সর্বোচ্চ ১১০ টাকা ৫০ পয়সা।
গত ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে এই দরে ডলার কেনা-বেচা করছে ব্যাংকগুলো। এর বাইরে খোলা বাজারে ডলারের দর থাকছে ১২০ টাকা পর্যন্ত।
ডলারের এই অস্থিরতা কমাতে বিনিময় হার বাজারমুখী করার শর্ত দেয় আইএমএফ। বাংলাদেশ ব্যাংক গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে তা বাজারমুখী করতে এবিবি ও বাফেদার উপর দায়িত্ব দেয়।
গত জুন মাসে ঘোষিত মুদ্রানীতিতে গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেছিলেন, চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের মধ্যে বাজারমুখী হবে বিনিময় হার। ওই ঘোষণার মেয়াদ গত মাসে শেষ হলেও বিনিময় হার বাজারমুখী হয়নি।