রিজার্ভের অঙ্ক নেমে এল দুই বছর আগের অবস্থায়।
Published : 07 Nov 2022, 09:23 PM
আকুর আমদানি দায় মেটানোর পর আরও চাপে পড়ল বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয়ন।
এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসের ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার আমদানি বিল সোমবার পরিশোধের পর রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩৪ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন ডলার।
এর আগে বাংলাদেশের রিজার্ভ ২০২০ সালের মে মাস শেষে ছিল ৩৩ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলার, যা পরের মাসেই বেড়ে হয় ৩৬ বিলিয়ন ডলার। এরপর ধারাবাহিকভাবে বাড়তে বাড়তে ২০২১ সালের অগাস্টে ৪৮ বিলিয়ন ডালারে পৌঁছেছিল।
তখন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা আশা প্রকাশ করেছিলেন, ২০২১ সাল শেষে রিজার্ভ ৫০ বিলিয়ন ডলার ছাড়াবে।
কিন্তু মহামারীর অবসানের পথে আমদানির চাপ বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে এই বছরের শুরুতে ইউক্রেইন যুদ্ধ বাঁধার পর আমদানির ব্যয় যায় বেড়ে, তার বিপরীতে রেমিটেন্স কমে যেতে থাকলে রিজার্ভ পড়ে চাপে।
এটা এখন একটা বড় সংকট হয়ে দেখা দিয়েছে। সরকার থেকে নানাভাবে আশ্বস্ত করা হলেও যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলার প্রস্তুতি রাখতেও বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আবুল কালাম আজাদ সোমবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “৩৫ দশমিক ৭৭ বিলিয়নে থাকা রিজার্ভ থেকে আজ ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার আকু পেমেন্ট হয়েছে।”
বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, ইরান, মিয়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপ-এই নয়টি দেশ আকুর সদস্য ছিল। তবে রিজার্ভ সঙ্কটে পড়ে গত অক্টোবর মাসে আকু থেকে বেরিয়ে যায় শ্রীলঙ্কা।
গত ১৪ অক্টোবর থেকে আকুর মাধ্যমে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে সব ধরনের লেনদেন থেকে বিরত থাকতে দেশীয় ব্যাংকগুলোকে ইতোমধ্যে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
আকুর সদস্য দেশগুলো থেকে বাংলাদেশ যে সব পণ্য আমদানি করে, তার বিল ৩ মাস পর পর আকুর মাধ্যমে পরিশোধ করতে হয়।
নভেম্বর-ডিসেম্বর মেয়াদের বিল পরিশোধ করতে হবে আগামী বছরের জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে।
আগামী বছরে রিজার্ভ ৫০ বিলিয়ন ডলার হবে: অর্থমন্ত্রী
দেশের মানুষকে ভালো রাখতে আপ্রাণ চেষ্টা করছি: প্রধানমন্ত্রী
আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রার মজুদ থাকতে হয়।
সে অনুযায়ী, বর্তমান বাংলাদেশের রিজার্ভ দিয়ে ৪ মাসের কিছুটা বেশি সময়ের আমদানি বিল পরিশোধ করার সক্ষমতা দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশের।
চলতি অর্থবছরের প্রথম ৩ মাস অর্থাৎ জুলাই-সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশে আমদানি হয়েছে ১ হাজার ৯৩৪ কোটি ডলারের পণ্য, যা গত বছরের একই সময় থেকে বেড়েছে ১১ দশমিক ৭০ শতাংশ।
এই সময়ে বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হয়েছে এক হাজার ১৮০ কোটি ডলারের পণ্য। আর অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে দেশে ৫৬৭ কোটি ডলার রেমিটেন্স এসেছে।
আমদানির বিপরীতে রপ্তানি আয় ও রেমিটেন্স সম পরিমাণ না হওয়ায় ঘাটতি বেড়ে চলছে চলতি হিসাবে।
এতে বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাব ভারসাম্যে (কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্স) ঘাটতি আরও বেড়েছে। সেপ্টেম্বর শেষে যা দাঁড়িয়েছে ৩৬১ কোটি ডলার।
বৈদেশিক মুদ্রার দায় বেশি হওয়ায় গত এপ্রিল থেকে পণ্য আমদানিতে নিয়ন্তণ এনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
তার পরিপ্রেক্ষিতে গড়ে ৮ বিলিয়ন ডলারের ঘরে থাকা আমদানি বিল নেমে এসেছে ৭ এর ঘরে। যদিও নতুন এলসি (ঋণপত্র) খোলার পরিমাণ ৬ বিলিয়নে নামিয়ে এনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা আশা করছেন, আগামী ডিসেম্বর নাগাদ আমদানি বিল ৬ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে আসবে।