সরকারের একটি জাকাত ফান্ড আছে, সেখানে অংশগ্রহণ খুবই কম। তবে ইসলামি চিন্তাবিদরা মনে করেন, তহবিল করে সেখান থেকেই বিতরণ করা ভালো।
Published : 09 Apr 2024, 01:33 AM
পারিবারিক সম্পত্তির উপর যে জাকাত আসে, তার একটা বড় অংশ প্রতিবছর ইসলামিক ফাউন্ডেশনের জাকাত ফান্ড বিভাগে জমা দেন রাজধানীর পরীবাগের বাসিন্দা রায়হান হায়দার।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এই নীতি তাদের পরিবারে বহু বছর ধরে চলে আসছে; যেটি ধরে রেখেছেন তিনিও।
তবে রায়হানের মত মানুষের সংখ্যা খুব একটি বেশি না, সে কারণে জাকাত বোর্ডের তহবিলে জমার পরিমাণও বেশি হয় না।
এখন পর্যন্ত এক বছরে সর্বোচ্চ সাড়ে ১১ কোটি টাকা পেয়েছে বোর্ড। ফলে ব্যক্তিগতভাবে যে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অর্থ বিতরণ করা হয়, এই জাকাত ফান্ডও তার বাইরে যেতে পারছে না। জাকাতের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনের যে ধারণা, তাও সাফল্য পাচ্ছে না।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম এ বিষয়ে একাধিক জাকাতদাতার সঙ্গে কথা বলেছে। তাদের কেউ কেউ এই সরকারি এই তহবিলের কথা জানলেও নিজেদের কাছের লোকের মধ্যে জাকাত বিতরণের ‘চাপ’ থাকার কথা বলেছেন।
বাংলাদেশে প্রতি বছর কী পরিমাণ অর্থ জাকাত হিসেবে বিতরণ হয়, তার সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান নেই। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক মো. আব্দুল রশিদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, তাদের ধারণা এই অঙ্কটা ২৫ হাজার কোটি টাকার কম না।
ইসলামের বিধান অনুযায়ী ওই অর্থ সঠিকভাবে বিতরণ করা গেলে দারিদ্র্য বিমোচনে ধীরে ধীরে সফল হওয়া যেত বলে বিশ্বাস করেন তিনি।
প্রতি বছর জাকাত দিয়ে থাকেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠনের চাকরিজীবী ফজলে এলাহী আরিফ। তিনি নিজেই জাকাতের অর্থ বিতরণ করেন। তবে তারও ধারণা, দলগতভাবে কাজ করলে ভালো ফল পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে আরিফ বলেন, “দলগতভাবে দিলে একটা ব্যালান্স হয়, টাকাটা যাকে দেওয়া হবে তার জন্যও কার্যকর হয়। তখন সুবিধাভোগী একটি বড় অঙ্ক পেলে তা দিয়ে নিজের অর্থনৈতিক অবস্থার স্থায়ী পরিবর্তন করতে পারে।”
তাহলে তিনি কেন সরকারের জাকাত ফান্ডে টাকা দেন না? উত্তরে আরিফ বলেন, “পারিপার্শ্বিকতার চাপ আছে, আশেপাশে কিছু লোক তাকে, পরিস্থিতির কারণে দিতে হয়।“
জাকাত ফান্ডে কত টাকা আসে
রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় জাকাত আদায় এবং বিতরণের ব্যবস্থাপনা করতে ১৯৮২ সালের ৫ জুন বাংলাদেশ সরকার এক অধ্যাদেশ বলে জাকাত ফান্ড গঠন করে। চার দশক পর সেই অধ্যাদেশ বিলোপ করে আসে জাকাত তহবিল ব্যবস্থাপনা আইন ২০২৩।
কিন্তু এই তহবিল জাকাতদাতাদের আকৃষ্ট করতে পারছে না। এ বিষয়ে যথেষ্ট প্রচারেরও উদ্যোগ নেই।
২০২০ সালে জাকাত ফান্ড ৩ কোটি ৫৩ লাখ টাকা জাকাত পেয়েছিল, পরের বছর ৭ কোটির বেশি, এর পরের বছর ১০ কোটির বেশি আর ২০২৩ সালে পায় সাড়ে ১১ কোটি টাকা।
তবে এবার জাকাত বোর্ড ২০ কোটি টাকা জাকাত সংগ্রহের বিষয়ে আশাবাদী।
অনাগ্রহ কেন
জাকাত ফান্ড সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এবং যারা বিতরণ করেন, তাদের সঙ্গে আলোচনা করে জানা গেছে, সরকারের তহবিলে অর্থ না দিয়ে নিজেরা বিতরণ করার একাধিক কারণ আছে।
যারা জাকাত দিয়ে থাকে, তাদের মধ্যে এই বোর্ড সম্পর্কে ধারণার যেমন অভাব আছে, তেমনি আস্থারও অভাব আছে। আবার কিছু ভুল ধারণাও আছে।
রাজধানীর নিউ ইস্কাটনের গাউসনগরের বাসিন্দা মাহাবুবুল হোসেন টিটু ও তার ভাই বোনেরা প্রতি বছরই জাকাত বিতরণ করে থাকেন। তারা জাকাত তহবিলের কথা জানেনও। কিন্তু তারা সেই তহবিলে টাকা না দিয়ে নিজেরাই বিতরণ করেন।
তাদের বাবা ও মায়ের নামে করা আলী হোসেন রুফিজা খাতুন ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে বিতরণ করা হয় এই অর্থ।
জাকাত ফান্ডে না দিয়ে নিজেরা বিতরণ করেন কেন- এই প্রশ্নে টিটু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরকে বলেন, “আমাদের নিজস্ব লোকজন আছে না? আর জাকাতের ক্ষেত্রে তো বলাই আছে আত্মীয়স্বজন অগ্রাধিকার পাবে। আর বেশিরভাগ টাকাই চলে যায় বাবা-মায়ের নামে ট্রাস্টের স্কুলে।”
গাজীপুরের ব্যবসায়ী মোসলেহ উদ্দিনও প্রতি রোজায় ব্যক্তিগতভাবে জাকাত বিতরণ করেন। তিনি যেমন শাড়ি-লুঙ্গি দেন, তেমনি দিয়ে থাকেন নগদ টাকাও।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “সরকারের জাকাত ফান্ড সস্পর্কে আমার কোনো ধারণা নাই৷ ধারণা থাকলেও তাদের কেন দেব? নিজের যা আসে তা এলাকার লোকদের নানাভাবে দিয়ে দিই৷ আমার যুক্তিতে এটাই ঠিক।"
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক জাকাতদাতা বলেছেন, “সরকারি তহবিলে যে দেব, সেই টাকা সঠিকভাবে বিতরণ হবে, তার নিশ্চয়তা কী? আবার সেই তহবিল থেকে হয়ত কর্মীদের বেতন ভাতাও দেওয়া হবে। ফলে পুরো টাকা তো গরিব পেল না।”
যদিও জাকাত তহবিল বিতরণে যারা কাজ করেন, তাদের বেতন ভাতা এই তহবিল থেকে দেওয়া হয় না। সেই অর্থ দেওয়া হয় রাজস্ব খাত থেকেই।
জাকাত ফান্ডে অর্থ দেওয়া পরীবাগের বাসিন্দা রায়হান হায়দার বলেন, “আব্বা তাদের কাছে জাকাত দিতেন। তিনি বেঁচে থাকতে আমিও উনার কাছ থেকে টাকা নিয়ে জাকাত ফান্ডে দিতাম। তিনি তাদের সম্পর্কে কীভাবে জেনেছেন তা আমার জানা নেই, তবে আমি উনার থেকেই জেনে, তার দেখানো পথে জাকাত দিয়ে যাচ্ছি।”
কোন প্রক্রিয়ায় টাকা জমা করেন- এই প্রশ্নে তিনি বলেন, “প্রতি রমজানে হিসাব নিকাশের পর ফোন করে তাদের বলি জাকাতের কথা। তারপর উনারা বাসায় এসে নিয়ে যান।”
এই ফান্ডের কার্যক্রমের উপর ভরসা আছে জানিয়ে তিনি বলেন, “তারা সমাজের দুঃস্থ মানুষকে দেয়, অসহায় মানুষকে স্বাবলম্বী করে দেয় এবং এটি যেহেতু সরকারি প্রতিষ্ঠান- তাদের অবশ্যই জবাবদিহিতার বিষয় আছে, তাই এখানে দেওয়া হয়।”
বিধান কী
ইসলাম ধর্মে ইবাদতের পাঁচটি স্তম্ভের একটি হলো জাকাত। কোনো মুসলমান ‘নিসাব সম্পন্ন’ সম্পত্তির মালিক হলে, অর্থাৎ সাংসারিক ব্যয় নির্বাহ করার পর সাড়ে ৭ তোলা স্বর্ণ অথবা সাড়ে ৫২ তোলা রুপা বা সমপরিমাণ অর্থ এক বছর স্থায়ী সঞ্চয় হলে তাকে ওই পরিমাণ সম্পদের বছর পূর্তিতে আড়াই শতাংশ হারে জাকাত দিতে হয়।
কোন কোন খাতে জাকাত দেওয়া যাবে, সে নির্দেশনা কোরআনেই আছে। ইসলামী চিন্তাবিদরা বলেন, জাকাত দারিদ্র্য বিমোচনের একটি হাতিয়ার হতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশে যেভাবে জাকাতের অর্থ বিতরণ হয়, তাতে এই উদ্দেশ্য সফল হয় না।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের জাকাত ফান্ড বিভাগের পরিচালক হারুনুর রশিদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কাউকে স্বাবলম্বী করে দিতে হবে, নাহলে অন্তত এমন একটা কিছু করতে হবে যাতে সে আয় করতে পারে।”
তবে জাকাতদাতাদের মধ্যে নিম্নমানের শাড়ি লুঙ্গি বিতরণের প্রবণতা আছে। কেউ কেউ হয়ত একটু ভালো মানের দেন, তবে বাজারের চিত্র বলছে, কম দামি কাপড়ের সংখ্যাই বেশি। কিন্তু এভাবে জাকাতের অর্থে দারিদ্র্য বিমোচন সম্ভব না।
যারা নগদ অর্থে বিতরণ করেন, তারাও সাধারণত ছোট ছোট অঙ্ক তুলে দেন উপকারভোগীদের হাতে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক মো. আব্দুল রশিদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি বিশ্বাস করি জাকাতটা সরকারের তহবিলে দেওয়াটা ভালো। কারণ, তারা একটা যাচাই বাছাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জাকাত দিয়ে থাকে।
“এখন যারা না খেয়ে আছে তাদের খাদ্যের জন্য অল্প অল্প দেওয়া যায়। কিন্তু দারিদ্র্য বিমোচনে পরিকল্পনা করে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিতে হবে।
“৫০০, ২০০ টাকা দিয়ে দারিদ্র্য কমানো যাবে না। কিন্তু এমন করে জাকাতের টাকাটা কাজে লাগাতে হবে, আগামী ১০ বছরে দেশে যাতে গরিব না থাকে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা যেরকম, তাতে ২৫ হাজার কোটি টাকার মত জাকাত আসে। এটাকে কাজে লাগাতে পারতে ২০ বছরের মধ্যে দেশের দারিদ্র কমানো সম্ভব।”
২৫ হাজার কোটি টাকার ধারণাটা কীভাবে পেলেন- এই প্রশ্নে তিনি বলেন, “মোট যে বিনিয়োগ ও সঞ্চয় আছে, সেটা যদি বিবেচনা করে বেশ কিছু হিসাব আছে যে জাকাতের অংকটা আসলে এমন।”
কীভাবে চলে জাকাত ফান্ড?
১৯৮২ সালে যে জাকাত ফান্ড গঠন করা হয়েছিল, সেটির আলোকে ধর্ম মন্ত্রীকে সভাপতি এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালককে সদস্য সচিব করে ১৩ সদস্যের জাকাত বোর্ড গঠন করা হয়েছিল। সেখানে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব ও ১০ জন শীর্ষস্থানীয় আলেম সদস্য ছিলেন।
জেলা এবং উপজেলা পর্যায়েও জাকাত কমিটি রয়েছে। জেলা পর্যায়ে জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে ১৩ সদস্য বিশিষ্ট জেলা জাকাত কমিটি এবং উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে আহ্বায়ক করে ৯ সদস্যের কমিটি করা হয়েছে।
২০২২ সাল পর্যন্ত এই অধ্যাদেশের আওতায় জাকাত ফান্ডের কার্যক্রম চলছিল। ২০২৩ সালে এই অধ্যাদেশকে বিলুপ্ত করে ‘জাকাত তহবিল ব্যবস্থাপনা আইন ২০২৩’ চালু করা হয়। গত বছরের জানুয়ারি থেকে নতুন আইনের আওতায় চলছে জাকাত বোর্ডের কার্যক্রম। পরিবর্তন আনা হয়েছে বোর্ডেও।
ধর্ম মন্ত্রীকে চেয়ারম্যান ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালককে সদস্য সচিব করে এই বোর্ডে ৫ জন আলেমকে রাখা হয়েছে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের জাকাত ফান্ড বিভাগের পরিচালক মো. হারুনুর রশীদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ফাউন্ডেশনের জেলাভিত্তিক অফিসগুলো আমাদের মূল সহায়তা করে থাকে। এই কমিটিগুলোর মাধ্যমেই আদায়ের কাজটা চলে আসছে। প্রথম দিকে তো খুব একটা আদায় হত না, আস্তে আস্তে এটা বৃদ্ধি পাচ্ছে।”
হারুনুর রশীদ ৪ বছর ধরে জাকাত ফান্ডের দায়িত্বে রয়েছেন। দায়িত্বের প্রথম বছর কোভিড মহামারীর কারণে সাড়া কম মিললেও ধীরে ধীরে তা বাড়ছে।
“আমরা বিভিন্ন জায়গায় সেমিনার করেছি, প্রচার চালিয়ে যাচ্ছি। সচেতন মানুষ সরাসরি আমাদের অফিসে এসে দিয়ে যায়, কেউ ব্যাংক অ্যাকাউন্টে দেয়, দায়িত্বপ্রাপ্ত ইমামরা সংগ্রহ করে পাঠান। যারা আমাদের এখানে জাকাত দিচ্ছেন তারা জেনে-বুঝেই দিচ্ছেন।”
যারা জাকাত ফান্ডে টাকা দিতে চান, তারা রাষ্ট্রায়ত্ত সব সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকের যে কোনো শাখা থেকে ‘সরকারি যাকাত ফান্ড’ শিরোনামে নির্ধারিত অ্যাকাউন্ট নম্বরে জাকাতের অর্থ জমা দিতে পারবেন।
এছাড়া নগদে বা চেকে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বায়তুল মোকাররম দপ্তর, আগারগাঁওয়ের জাকাত বোর্ড দপ্তরে এবং ৬৪ জেলার ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কার্যালয়েও জাকাতের অর্থ জমা দেওয়া যাবে।
কোন কোন খাতে বিতরণ
হারুনুর রশীদ বলেন, জেলাগুলো থেকে জাকাতের যে টাকা আসে তার ৭০ শতাংশ টাকা সেই জেলায় কর্মসংস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা ও নও মুসলিমদের জন্য ব্যয় করার জন্য পাঠানো হয়।
“পাঠানোর পরে জেলা জাকাত কমিটি বা উপজেলা জাকাত কমিটি যাচাই-বাছাই করে বিতরণ করে।”
আর বাকি ৩০ শতাংশ টাকা ‘টঙ্গী জাকাত বোর্ড শিশু হাসপাতাল’ পরিচালনা ও দেশের বিভিন্ন এলাকার ২৪টি সেলাই মেশিন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র পরিচালনায় ব্যয় করা হয়।
হারুনুর রশীদ বলেন, “সেখানে (সেলাই মেশিন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র) অসহায়, দুঃস্থ নারীদেরকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, তাদের জাকাত ভাতা দেওয়া, স্বাবলম্বী করিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হয়, সেলাই মেশিন কিনে দিই।
“এছাড়া বিভিন্ন সময় যে প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয়, তখন তাৎক্ষণিকভাবে জাকাত বোর্ড কেন্দ্রীয়ভাবে অর্থ বিতরণ করে। বিভিন্ন বস্তিতেও দেওয়া হয়।”
জাকাত বোর্ডের স্বচ্ছতার বিষয়ে প্রশ্ন করলে হারুনুর রশিদ বলেন, সরকার রাজস্ব খাত থেকে যে অর্থ আয় করে, সেখান থেকে জাকাত বোর্ডের কর্মকর্তা, কর্মচারীদের বেতন ও সব প্রশাসনিক ব্যয় নির্বাহ করা হয়।
“জাকাত থেকে যে অর্থ পাওয়া যায়, সেটা কোরআন বর্ণিত খাত অনুযায়ীই বিতরণ করা হয়। তার মানে জাকাত ফান্ডে যারা জাকাত দেবেন, তারা নিশ্চিত থাকবেন যে, এখানে শরিয়তের খাত বহির্ভূত অন্য কোনো খাতে টাকা ব্যয় করা হয় না। এক্ষেত্রে অত্যন্ত স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা প্রতিপালন করে থাকি।”
কতটুকু সফল জাকাত ফান্ড?
উদ্দেশ্য যে সফল হয়নি, খোদ পরিচালক হারুনুর রশীদই তা বলছেন।
তিনি বলেন, “আমাদের ফান্ডের পরিমাণ আস্তে আস্তে বাড়ছে। তবে যে পরিমাণ বাড়া উচিত সে পরিমাণ বাড়ছে না। আমরা চেষ্টা করছি। আইনের আলোকে আমরা নতুন নতুন পন্থা হাতে নেব।”
উদ্দেশ্য পূরণ না হওয়ার কারণ হিসেবে হারুনুর রশীদ বলছেন, বাংলাদেশের বেশির ভাগ জাকাতদাতা ব্যক্তিগতভাবে জাকাত আদায় করতে চান এবং একটা অংশ জাকাতের হিসাব নিকাশ ‘ঠিকভাবে না করেই কোনো রকমে’ জাকাত দিয়ে থাকেন।
“ধরেন একজনের জাকাত হিসাব করলে হবে এক লাখ টাকা, উনি ধরেন দশ হাজার, বিশ হাজার টাকা দিয়ে মনে করে জাকাত আদায় হয়ে গেছে। আবার অনেকের হয়ত আমাদের বিষয়ে অতটা স্বচ্ছ ধারণা নেই যে, আমরা কীভাবে কাজ করি। প্রচারটাও হয়ত মানুষের কাছে পৌঁছাচ্ছে না।”
তিনি বলেন, “প্রচারের কাজটাও আমরা বাড়াচ্ছি। আমরা আশাবাদী, ভবিষ্যতে এই ফান্ডকে শক্তিশালী করে, এর মাধ্যমে মানুষকে সাবলম্বী করা এবং দারিদ্র্যমুক্ত করার স্বপ্ন আছে।”
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী
‘দারিদ্র বিমোচনে জাকাতের ভূমিকা’ স্লোগান নিয়ে আগানোর কথা জানিয়ে জাকাত ফান্ডের পরিচালক বলেন, তারা দরিদ্র ও অসহায় মানুষদের তালিকাও করতে যাচ্ছেন।
“যাতে এই লোকটা জাকাত নেওয়ার পরে আস্তে আস্তে নিজ কিছু করে খেতে পারে, একটা পর্যায়ে তাকে যেন জাকাত না নিতে হয়; বরং তিনি যেন জাকাতদাতা হতে পারেন।”
জাকাত ফান্ডের আওতায় দেশের কত শতাংশ দারিদ্র্য কমানো হয়েছে জানতে চাইলে এই তহবিলের হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান ভূঁইয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কত শতাংশ কমেছে তা সেভাবে বলা সম্ভব নায়। কারণ সরকারি ফান্ডে টাকা তেমন আসে না। বড় অঙ্ক পেলে তখন শতাংশ বলা যেত।”
জাকাত বোর্ডকে শক্তিশালী করার পরিকল্পনা তাহলে কী?
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক বশিরুল আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যদি প্রচার আরো জোরদার করতে পারতাম, যারা জাকাত দিচ্ছেন, তারা যদি বিষয়গুলো ভালোভাবে জানতেন যে সরকারি জাকাত ফান্ডে দিলে তা যথাযথভাবে বিতরণ হয়, তাহলে একটা বিশাল অঙ্কের টাকা আসত। দারিদ্র্য বিমোচনে একটা বড় ভূমিকা রাখতে পারতাম।”
জাকাত আদায় আরো সহজ করতে ইসলামিক ফাউন্ডেশন আগামী দুই মাসের মধ্যে জাকাত অ্যাপ নিয়ে আসার কাজ করছে বলে জানান মহাপরিচালক।
তিনি বলেন, “অ্যাপটা চালু হলে নিজেই জাকাতের হিসেব করতে পারবে এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অফিসে বা ব্যাংকে না গিয়ে ঘরে বসেই জাকাত দিতে পারবে। তাহলে পদ্ধতিটাও স্বচ্ছ হল এবং আদায়ের কার্যক্রমও জোরদার হল।”
জাকাত তহবিল ব্যবস্থাপনা বিল পাস
ইয়েমেনে পদদলিত হয়ে ৭৮ জনের মৃত্যু
রাজবাড়ীতে জাকাতের কাপড় নিতে গিয়ে প্রাণ গেল বৃদ্ধার