বিশ্বজুড়ে ইফাদের অর্থায়নে পরিচালিত প্রায় ৭০০ প্রকল্পের মধ্যে পিকেএসএফ পরিচালিত ‘পেইস’ গুণগত মানের দিক থেকে ‘দ্বিতীয় শ্রেষ্ঠ প্রকল্প’।
Published : 28 May 2024, 08:11 PM
আগামী অর্থবছরের বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান।
মঙ্গলবার ঢাকার আগারগাঁওয়ে পিকেএসএফ ভবনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি একথা বলেন।
আগামী ৬ জুন জাতীয় সংসদে আগামী ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের জন্য বাজেট উত্থাপন করা হবে। বাজেট চূড়ান্ত করার আগে সেখানে কী কী পরিবর্তন আসছে তা নিয়ে চলছে কাটাছেঁড়া।
বাজেট প্রণয়ন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্তগুলো ভূমিকা রাখছে কি না জানতে চাইলে অর্থ প্রতিমন্ত্রী বলেন, আইএমএফ কোনো শর্ত দিচ্ছে তা বলব না। অর্থনীতিকে টেকসই করতে বিশ্বব্যাপী যে মূল্যস্ফীতির সমস্যা আছে সেগুলো থেকে বাংলাদেশ বাইরে নয়। সেই সমস্যাগুলো নিরসনে প্রস্তাবিত বাজেটে গুরুত্ব দেওয়া হবে।
খাদ্য মূল্যস্ফীতি কমাতে কোনো উদ্যোগ থাকবে কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, কৃষিজাত পণ্য ও খাদ্য নিরাপত্তার জন্য সার-বীজ ইত্যাদিতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়। এবং সেচের জন্য বিদ্যুতেও গুরুত্ব দেওয়া হয়। খাদ্য সহায়তার জন্য শেখ হাসিনার সরকার গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে। প্রস্তাবিত বাজেটে খাদ্য নিরাপত্তা বজায় রাখার জন্য সব পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
ওয়াসিকা বলেন, কৃষিজাত পণ্য ও খাদ্য নিরাপত্তার জন্য সার, বীজ ও সেচের বিদ্যুতে সর্বোচ্চ ভর্তুকি দেওয়া হয়। খাদ্য নিরাপত্তার জন্য বর্তমান সরকার অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে।
ঘূর্ণিঝড় রেমালে ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি সহানুভূতি জানিয়ে তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল। বাংলাদেশ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও দুর্যোগ পূর্ব প্রস্তুতিতে বিশ্বে রোল মডেল। তারপরও ঘূর্ণিঝড় রেমালে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের যেসব কৃষক ও উদ্যোক্তার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তাদের ক্ষতিপূরণে কৃষি মন্ত্রণালয় বিভিন্ন উদ্যোগ নেবে। আগামী বাজেটে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ও কৃষকের জন্য আগে থেকেই বরাদ্দ করা হয়েছে।
জাতিসংঘের ইন্টারন্যাশনাল ফান্ড ফর এগ্রিকালচারাল ডেভেলপমেন্ট-ইফাদ এর সঙ্গে যৌথভাবে প্রমোটিং এগ্রিকালচারাল কমার্শিয়ালাইজেশন অ্যান্ড এন্টারপ্রাইজেস (পেইস) শীর্ষক প্রকল্প হাতে নিয়েছিল পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশন পিকেএসএফ।
মঙ্গলবার ছিল নয় বছর মেয়াদি এ প্রকল্পের সমাপনি অনুষ্ঠান। পিকেএসএফ ২০১৫ থেকে ২০২৩ সময়ে প্রকল্পটি কৃষি বাণিজ্যিকীকরণসহ কৃষি ও অকৃষি খাতে ক্ষুদ্র উদ্যোগ সম্প্রসারণের মাধ্যমে দারিদ্র্য দূরীকরণের লক্ষ্যে বাস্তবায়ন করেছে।
অনুষ্ঠানে অর্থ প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অঙ্গীকার ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চ মধ্যম আয়ের বাংলাদেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ, যেখানে মাথাপিছু বাড়বে এবং চরম দারিদ্র্যের অবসান হবে। পিকেএসএফ দারিদ্র্য বিমোচন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সরকারের যে অঙ্গীকার রয়েছে, তা অর্জনে বরাবরের মতো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
পিকেএসএফ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক নমিতা হালদার বলেন, এই প্রকল্পের মূল কাজ ছিল কৃষি ক্ষেত্রে আধুনিকায়নের অভিজ্ঞতা বিতরণ করে উদ্যোক্তা সৃষ্টি করা। মানুষকে সচেতন করা ও দারিদ্র বিমোচন করা। প্রকল্পের শতভাগই অর্জন হয়েছে। ইফাদ সারা পৃথিবীতে যে ৭০০ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে তার মধ্যে এই পেইস প্রকল্পটি দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছে।
প্রকল্পের কিছু কাজ তুলে ধরে তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হালদা নদী বিষয়ক গবেষণা সেন্টার তৈরি করা হয়েছে। কেউ উদ্যোগ নিতে চাচ্ছেন, কিন্তু অর্থ ও প্রশিক্ষণের অভাবে এগোতে পারছেন না। এমন মানুষদের নিয়ে কাজ করা হয়েছে।
প্রকল্পের আওতায় উপকূলীয় অঞ্চলে বারি-৬ মুগডাল, সূর্যমুখী, বাদাম, সয়াবিন চাষ সম্প্রসারণ করার তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, দেশি কাদাকনাথ জাতের মুরগি পালন ও বাজার সম্প্রসারণ, টিস্যু কালচারের মাধ্যমে ফুল চাষ সম্প্রসারণ, স্বাস্থ্যসম্মত ভাবে মধুপণ্যের প্রক্রিয়াজাতকরণ, ভেষজ ও গুল্মজাতীয় লতাপাতার আবাদ বাড়িয়ে ভালো মানের খাদ্য ও ওষুধ তৈরি করার প্রযুক্তি সম্প্রসারণ করা হয়েছে। উৎপাদন থেকে শুরু করে প্রক্রিয়াজাতকরণ, বাজারজাতকরণ, ব্র্যান্ডিংসহ এই ধরনের কাজ করা হয়েছে।
প্রকল্পের সমাপনী অনুষ্ঠানে ইফাদের কান্ট্রি ডিরেক্টর আর্নড হ্যামেলিয়ার্স বলেন, বাংলাদেশ ‘প্রায় উন্নত’ দেশের পর্যায়ে চলে এসেছে। বিশ্বজুড়ে ইফাদ-অর্থায়িত প্রায় ৭০০ প্রকল্পের মধ্যে পেইস গুণগত মানের দিক থেকে দ্বিতীয় শ্রেষ্ঠ প্রকল্প।
বাংলাদেশের কৃষি খাতকে অধিক উৎপাদনশীল ও টেকসই করার লক্ষ্যে ইফাদ পিকেএসএফ-এর সঙ্গে সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে বলে তিনি প্রতিশ্রুতি দেন।
সভাপতির বক্তব্যে পিকেএসএফ এর চেয়ারম্যান এম. খায়রুল হোসেন বলেন, পেইস প্রকল্পটি কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি মানুষের প্রযুক্তিগত জ্ঞান বৃদ্ধি করেছে এবং তাদের নতুন জীবনের স্বপ্ন দেখিয়েছে।