“আলোচনা না থাকলে রাজনীতি কী? রাজনীতিতে আলোচনা থাকতে হবে,” বলেন তিনবারের সংসদ সদস্য লতিফ।
Published : 29 Nov 2023, 10:40 PM
বন্দর ও পতেঙ্গা এলাকা নিয়ে গঠিত চট্টগ্রাম-১১ আসনে নৌকার প্রার্থী এম এ লতিফের বিপরীতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে চান আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা ওয়ার্ড কাউন্সিলর জিয়াউল হক সুমন।
এ আসনের টানা তিনবারের সংসদ সদস্য লতিফের বিরুদ্ধে নগর আওয়ামী লীগের আরও এক নেতা নিজের অবস্থান নেওয়ার কথাও জানিয়েছেন।
একইসঙ্গে ওই আসনের তৃণমূল নেতাদের সাক্ষরে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর বদল চেয়ে নগর আওয়ামী লীগের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে। পরে মঙ্গলবার বিকালে নগরের কার্য নির্বাহী কমিটির সভায় এ নিয়ে আলোচনাও হয়।
চট্টগ্রাম-১১ আসনের তৃণমূল নেতাদের দেওয়া ওই চিঠি বুধবার দলের কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন নগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির।
এর আগে সোমবার সুমনের সমর্থনে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের পাশাপাশি নগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারাও অংশ নেন।
এরপর থেকে নগরীতে এ আসনে ভোট নিয়ে আলোচনা নতুন মাত্রা যেমন পেয়েছে, তেমনি নগর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে লতিফ বিরোধীতা নিয়েও জোর আলোচনা চলছে।
বুধবার বিকালে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে এলে এম এ লতিফের কাছে এসব বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, “আলোচনা না থাকলে রাজনীতি কী? রাজনীতিতে আলোচনা থাকতে হবে।”
এদিকে বৃহস্পতিবার সকালে দল মনোনীত নগরের তিনটি আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থীরা একযোগে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে এতে চট্টগ্রাম-১১ আসনের সংসদ সদস্য লতিফের না থাকার কথা শোনা যাচ্ছে।
২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে পর্যন্ত আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন না লতিফ।
পরে একসময় নগর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে নাছিরের ঘনিষ্ট হিসেবে এবং সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর বিরোধী হিসেবে পরিচিত ছিলেন লতিফ। পরে নাছিরের সঙ্গে আগের সুসম্পর্ক আর থাকেনি লতিফের। বরং মহিউদ্দিন শিবিরেই তার ঘনিষ্টতা বাড়ে।
এ আসনে প্রার্থী হতে স্বতন্ত্র হিসেবে মনোনয়ন নিয়েছেন লতিফের ছেলে ও চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি ওমর হাজ্জাজ। তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন ওপেন নির্বাচন হবে। বাবার মতই আমি সুযোগ পেলে মানুষের সেবা করতে চাই।”
বন্দর ও পতেঙ্গা নিয়ে গঠিত চট্টগ্রাম-১১ আসনে দলের মনোনয়ন চেয়েছিলেন আ জ ম নাছির এবং নগর কমিটির সহসভাপতি ও সিটি করপোরেশনের প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করা খোরশেদ আলম সুজন। তবে দলের মনোনয়ন ধরে রেখেছেন সংসদ সদস্য লতিফ, যিনি নগর আওয়ামী লীগের নির্বাহী কমিটির সদস্য।
নওফেলের ‘সমর্থনকারী’ হচ্ছেন আ জ ম নাছির
দলের প্রার্থিতা ঘোষণার পর সুজন বলেছেন, এ আসনে দলের অন্য কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে তাকেই সমর্থন দেবেন তিনি।
অপরদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে চাওয়া ৩৯ নম্বর দক্ষিণ হালিশহর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল হক সুমনের মতবিনিময় সভায় অংশ নেন নাছির। সোমবার রাতে স্থানীয় একটি কমিউনিটি সেন্টারে আয়োজিত এ সভায় নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নঈম উদ্দিন আহম্মদ চৌধুরীসহ নগর ও স্থানীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
ওই সভায় নাছির বলেন, “নেত্রী বলেছেন, কেউ যদি স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে চান, তাকে কোনোভাবে বাধা সৃষ্টি না করা। জনস্বার্থে বা এলাকার স্বার্থে কেউ যদি প্রার্থী হতে চান সেখানে হতে পারেন।
“আমরা এখানে উপস্থিত হওয়ার কারণ হল যে, আপনাদের মনোভাবটা আমাদের অবহিত হওয়ার চেষ্টা করা।”
তিনি বলেন, “মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সভা আছে। আরো কয়েকটি আসনে আরো কয়েকজন প্রার্থী হবার ইচ্ছা ব্যক্ত করেছে। সভায় সেটা আলোচনা করব। আপনারা যে বক্তব্য দিয়েছেন সেটা লিখিত আকারে আমাদের কাছে পাঠিয়ে দিলে, সেটা নিয়ে আলোচনা করব।
“জিয়াউল হক সুমন স্বতন্ত্র প্রার্থী হবার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন, এটা আমরা বলব। যে সিদ্ধান্ত ঢাকা থেকে পাব তা জানিয়ে দিব। এর ভিত্তিতে আপনারা পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন।”
বুধবার এ বিষয়ে সুমন বলেন, “আমাদের এলাকায় যত থানা ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ এবং কাউন্সিলররা আছেন তাদের মধ্যে প্রায় সবাই চিঠিতে সাক্ষর করেছেন। উনারা সবাই প্রার্থী হিসেবে আমাকে চান।”
লতিফের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “গত ১৫ বছর এখানে যিনি সংসদ সদস্য ছিলেন তিনি আন্দোলন-সংগ্রাম ও দলীয় কর্মসূচিতে ছিলেন না। বরং দলের নেতাকর্মীদের হেনস্তা করেছেন।”
বুধবার রাতে নাছির বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “উনাদের আপত্তির কথা চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন, সেটা ঢাকায় পাঠিয়েছি। দলের পক্ষ থেকে যে সিদ্ধান্ত দেয়া হবে তার ভিত্তিতে নীতি নির্ধারণ করব।”
এর আগে মঙ্গলবার রাতে ঢাকা থেকে ফিরে চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দরে কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশ্যে লতিফ বলেন, “নৌকা প্রতীক বঙ্গবন্ধুকন্যা আমার হাতে দিয়েছেন। আমি আপনাদের সেই নৌকা উপহার দিলাম। আওয়ামী লীগের মধ্যে কোনো অনৈক্য নেই। দেশে-বিদেশে নানা ষড়যন্ত্র চলছে। আওয়ামী লীগে যারা বিভেদ আনবে তারা খন্দকার মোশতাকের বংশধর। আগামী নির্বাচনে কুচক্রীদর উপযুক্ত শাস্তি ইনশাল্লাহ হবে।”
তিনি “আওয়ামী লীগ মোকাবেলা করবে বিরোধী দলকে। আওয়ামী লীগের মধ্যে বিভেদ করবার চেষ্টা করবেন না। আমি অত্র আসনে আওয়ামী লীগের ঝান্ডাকে উঁচু করে ধরেছি। এই জামাত বিএনপির ঘাঁটি খ্যাত বন্দর পতেঙ্গা আসনে নৌকার ঘাটিতে পরিণত করেছি। সেটি এ এলাকার নেতাকর্মী জনসাধারণকে সাথে নিয়ে আবার উপহার দিতে চাই।”