চট্টগ্রামের টানা তিনবারের এ সংসদ সদস্যের তার স্ত্রীর সম্পদ এক দশকে বেড়েছে ৭ গুণ।
Published : 11 Dec 2023, 07:28 AM
প্রথমবার সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার সময় ২০০৮ সালে আত্মীয় স্বজনের কাছে দেনা ছিল, গাড়ি কিনতেও ব্যাংকের কাছ থেকে ঋণ নিয়েছিলেন; ২০২৩ সালে ভোটের আগে সামশুল হক চৌধুরী দেনামুক্ত হয়েছেন। দেড় দশক সময়ের এ ব্যবধানে তার সম্পদও বেড়েছে প্রায় ১৩ গুণ।
তবে গত পাঁচ বছরে তার আয় কমলেও সম্পদ বেড়েছে দেড়গুণের বেশি।
চট্টগ্রাম ১২ আসনের টানা তিনবারের সংসদ সদস্য সামশুলেরই শুধু সম্পদ বাড়েনি; এক দশকের ব্যবধানে তার স্ত্রী কামরুন নাহার চৌধুরীর সম্পদও বেড়েছে সাতগুণের বেশি।
২০২৩ সালে সামশুলের বার্ষিক আয় কমে হয়েছে ৬২ লাখ ৮৮ হাজার টাকা এবং মোট স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬ কোটি ৬৬ লাখ ৬২ হাজার টাকা। ২০১৮ সালে ভোটের আগে তার বার্ষিক আয় ছিল ৮৩ লাখ ৫৭ হাজার টাকা এবং সম্পদ ছিল মোট ৪ কোটি এক লাখ সাত হাজার টাকার। সময়ের এ ব্যবধানে তার সম্পদ বেড়েছে ১ দশমিক ৬৬ গুণ।
সবশেষ ২০১৮ সালে সংসদ সদস্য হওয়ার আগে সামশুল নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হলফনামায় ৫৮ লাখ ৪৬ হাজার টাকা ঋণের তথ্য দিলেও ২০২৩ সালে কোনো ঋণ নেই বলে জানিয়েছেন। ১৫ বছর আগে ২০০৮ সালে তার দেনা ছিল ২৮ লাখ ৩৮ হাজার টাকা এবং ২০১৪ সালে ছিল ২৩ লাখ টাকার বেশি।
সংসদের হুইপ সামশুল ২০০৮ সালে চট্টগ্রাম ১২ আসন থেকে প্রথমবার জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে গিয়ে হলফনামায় নিজের সম্পদের তথ্য দিয়েছিলেন ৪৯ লাখ ৮৬ হাজার টাকার। এবার তার সেই অস্থাবর ও স্থাবর সম্পদের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ কোটি ৬৬ লাখ ৬২ হাজার টাকা। অর্থাৎ সম্পদ বেড়েছে ১৩ দশমিক ৩৭ গুণ।
২০০৮ সালে স্ত্রীর সম্পদের কোনো তথ্য ছিল না ওই হলফনামায়। চতুর্থবার দলের মনোনয়নপত্র না পেয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়া সামশুল স্ত্রীর স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ উল্লেখ করেছেন ৪ কোটি ৪৩ লাখ ৩৭ হাজার টাকা। ২০১৪ সালে যা ছিল ৬২ লাখ ৭৭ হাজার টাকা। সে হিসাবে সম্পদ বেড়েছে ৭ দশমিক শূন্য ৬ গুণ।
নবম থেকে দ্বাদশ চারটি নির্বাচনে ইসিতে দেওয়া হলফনামা পর্যালোচনা করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। প্রতিবারই সামশুলের সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে।
আনোয়ারা ও পটিয়ার একাংশ নিয়ে গঠিত চট্টগ্রাম-১২ আসন থেকে এর আগে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে টানা তিন বার সংসদ সদস্য হলেও এবার দলের মনোনয়ন পানি হুইপ সামশুল হক চৌধুরী। দলীয় মনোনয়ন না পেলেও ভোটের মাঠে আছে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার দিনই গাড়িতে সরকারি পতাকা নিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার অফিসে হাজির হয়ে আলোচনায় এসেছেন; আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে নোটিস পেয়েছেন।
এ আসনে এবার মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পদত্যাগকারী উপজেলা চেয়ারম্যান মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীকে।
পতাকাশোভিত গাড়িতে এসে মনোনয়নপত্র দিলেন হুইপ সামশুল
আচরণবিধি: হুইপ সামশুলের কাছে ব্যাখ্যা তলব
চট্টগ্রামের ৫ আসনে নৌকার প্রতিদ্বন্দ্বী হচ্ছেন আওয়ামী লীগ নেতারাই
২০০৮ সালে ভোটের সময় সামশুল নিজের ছাড়া পরিবারের অন্য সদস্যদের আয় ও সম্পদের তথ্য দেননি। পরের বার থেকে নিজের পাশাপাশি নির্ভরশীল অন্য সদস্যদের আয় এবং স্ত্রীর নামে থাকা সম্পদের হিসেব দিয়েছেন হলফনামায়।
২০০৮ সালের হলফনামায় একটি গাড়ি থাকার তথ্য দিয়েছিলেন; সঙ্গে ব্যাংক থেকে গাড়ি কেনার ঋণ নেওয়ার তথ্যও দিয়েছিলেন। তিন দফায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর এখন একাধিক গাড়ির মালিক। লাখ টাকার গাড়ির পরিবর্তে হয়েছেন কোটি টাকার গাড়ির মালিক।
আয় কমার পাশাপাশি এবারের হলফনামায় গতবারের চেয়ে নিজের নামে হাতে নগদ ও ব্যাংকে জমার পরিমাণও কম উল্লেখ করেছেন সামশুল। তিনি নগদ ও ব্যাংকে জমার পরিমাণ দেখিয়েছেন যথাক্রমে দুই লাখ ৫৩ হাজার ৬২৪ টাকা ও ৬১ লাখ ৬৭ হাজার ৩৯ টাকা। ২০১৮ সালে যা ছিল ১৩ লাখ ৭৪ হাজার ৪১৭ টাকা ও ৯২ লাখ ৩৩ হাজার ১২১ টাকা।
২০১৮ সালের তুলনায় তার স্ত্রীর ব্যাংকে জমার পরিমাণ কমলেও বেড়েছে হাতে নগদ টাকার পরিমাণ। এবার শামসুল তার এবং স্ত্রীর নামে ব্যাংকে এফডিআর ও সঞ্চয়পত্রের পরিমাণ উল্লেখ করেছেন যথাক্রমে ২ কোটি ৬৫ লাখ এবং ২ কোটি ৮৩ লাখ ৭৪ হাজার ৪৯১ টাকা।
প্রতিবার বেড়েছে সামশুলের সম্পদ
২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে ভোটে অংশ নেওয়া এ সংসদ সদস্য হলফনামায় নিজের বার্ষিক আয় উল্লেখ করেছিলেন ২ লাখ ৯৫ হাজার টাকা। নিজের একটি ২০ লাখ ৬০ হাজার টাকা দামের গাড়িসহ অস্থাবর সম্পত্তির দাম উল্লেখ করেছিলেন ২১ লাখ ৭৬ হাজার ৩৬৯ টাকা। স্থাবর সম্পত্তির দাম দেখিয়েছিলেন ২৮ লাখ ১০ হাজার টাকা।
তাছাড়া গাড়ি কেনার জন্য ১৭ লাখ ৮৮ হাজার টাকা ঋণ নেয়ার তথ্য প্রদান করেছিলেন।
ওই হলফনামায় সামশুল নিজের ছাড়া স্ত্রী কিংবা পরিবারের অন্য কারও সদস্যদের সম্পদ ও আয়ের বিবরণী উল্লেখ করেননি।
পরেরবার ২০১৪ সালে বার্ষিক আয় উল্লেখ করেছেন ১৩ লাখ টাকা। তার ওপর নির্ভরশীল পরিবারের অন্য সদস্যদের আয় ছিল ৭ লাখ ৩০ হাজার টাকা।
ওই দুই হলফনামায় দেখা যায় সামশুল পাঁচ বছরের ব্যবধানে লাখপতি থেকে হয়ে যান কোটিপতি। সঙ্গে সম্পদের পরিমাণ বেড়ে যায় তার স্ত্রীরও।
২০১৪ সালে তার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির মূল্য দেখান ১ কোটি ৬৫ লাখ ৮৭ হাজার টাকা। স্ত্রীর ছিল ৬২ লাখ ৭৭ হাজার টাকার সম্পদ।
বারবার গাড়ি বদল
২০০৮ সালে সামশুল হক গাড়ির দাম ২০ লাখ ৬০ হাজার টাকা এবং সেটির জন্য ১৭ লাখ ৮৮ হাজার টাকা ঋণের কথা উল্লেখ করেছিলেন। পাঁচ বছরের ব্যবধানে গাড়ির দাম উল্লেখ করেন ৬১ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
২০১৮ সালে গাড়ির দাম দেখান এক কোটি ৩৩ লাখ টাকা। সর্বশেষ ২০২৩ সালের হলফনামায় নিজের কাছে দুইটি ‘ল্যান্ড ক্রুজার’ গাড়ির কথা উল্লেখ করে সেগুলোর দাম দেখান ১ কোটি ৫ লাখ ও ৭১ লাখ ৫০ হাজার টাকা করে।