দিনের দ্বিতীয় জোয়ার শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ আগে কার্প জাতীয় মা মাছ ডিম ছাড়ে। মধ্যরাতেই সেই ডিম সংগ্রহে নেমে পড়েন মৎস্যজীবীরা।
Published : 19 Jun 2023, 01:40 AM
দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রধান প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে ডিম ছেড়েছে মা মাছ।
রোববার সকাল ৯টা থেকে প্রতীক্ষার পর রাত সোয়া ১২টার দিকে মা মাছ পুরোদমে ডিম ছাড়ে। এর আগে সকাল ৯টার দিকে নমুনা ডিম ছাড়লেই ডিম সংগ্রহকারীরা নৌকা নিয়ে হালদায় নেমে পড়েছিলেন। দিনভর তাদের প্রতীক্ষার শেষ হয় মাঝরাতে।
দিনের দ্বিতীয় জোয়ার শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ আগে কার্প জাতীয় মা মাছ ডিম ছাড়ে। মধ্যরাতেই সেই ডিম সংগ্রহে নেমে পড়েন হালদা পাড়ের মৎস্যজীবীরা।
হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাহিদুল আলম রাত সাড়ে ১২টার দিকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কিছুক্ষণ আগে নদীতে মাছ পুরোদমে ডিম ছেড়েছে। এখন ডিম সংগ্রহের কাজ চলছে। এরআগে সকালে নমুনা ডিম ছেড়েছিল। দিনভর নদীতে ডিম আহরণকারীরা অপেক্ষায় ছিলেন।”
এর আগে দুপুরে হালদা পাড়ের বর্ষীয়ান ডিম সংগ্রহকারী কামাল সওদাগর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, “সকাল ৯টার দিকে কয়েক জায়গায় নমুনা ডিম দিয়েছে। আমরা কিছু কিছু সংগ্রহও করেছি। এখন মূল ডিম দেয়নি। আল্লাহ দিয়ে আজকেই হয়ত ডিম পাব। পাহাড়ি ঢলও আছে।”
শনিবার থেকে হালদায় পাহাড়ি ঢল নামে। সেদিন সকালে নমুনা ডিম ছাড়ার পর দুপুরে বৃষ্টিও হয়। এতে আশাবাদী হয়ে উঠেন ডিম সংগ্রহকারীরা। তাদের সেই আশা পূরণ হয় একদিন বাদেই, যখন মৌসুমের ষষ্ঠ জো (অমাবস্যা বা পূর্ণিমার তিথিতে) চলছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রাণীবিদ্যা বিভোগের অধ্যাপক ও হালদা রির্সাচ কেন্দ্রের সমন্বয়ক ড. মনজুরুল কিবরীয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গত কয়দিন ধরে মৌসুমের ষষ্ঠ জো চলছিল। পাহাড়ি ঢল নামায় আশা ছিল দুয়েকদিনের মধ্যে ডিম ছাড়বে। প্রতীক্ষার পর সেই ডিম ছেড়েছে। ডিমের পরিমাণ বিষয়ে এখনই কিছু বলতে পারছি না। তবে সংগ্রহকারীদের কয়েকজন জানিয়েছেন ভালো পরিমাণে ডিম পাচ্ছেন।”
প্রাকৃতিক নিয়মে ডিম ছাড়তে চট্টগ্রামের হালদা নদীতে রুই-কাতাল-মৃগেলসহ কার্প জাতীয় মা মাছের আনাগোনা শুরু হয় এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকে।
দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রধান প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ ঘোষিত চট্টগ্রামের হালদা নদী।
বছরের এই সময়ে (এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকে জুন পর্যন্ত) বজ্রসহ বৃষ্টি এবং পাহাড়ি ঢল নামলে অমাবস্যা বা পূর্ণিমা তিথিতে নদীতে জোয়ার ও ভাটার সময়ে নিষিক্ত ডিম ছাড়ে কার্প জাতীয় মাছ।
নদীতে মা মাছের ছাড়া সেই নিষিক্ত ডিম বিশেষ ধরনের জাল দিয়ে সংগ্রহ করে ডিম সংগ্রহকারীরা। পরে হ্যাচারিতে রেনু তৈরি করা হয়।
হালদা যেখানে কর্ণফুলীর সঙ্গে মিশেছে, সেই কালুরঘাট সেতুর কাছের অংশ থেকে উজানে মদুনাঘাট হয়ে নাজিরহাট পর্যন্ত প্রায় ৫০ কিলোমিটার অংশে নদীর দুই তীরে হাটহাজারী, রাউজান ও ফটিকছড়ি এই তিন উপজেলা।
মদুনাঘাট থেকে সমিতির হাট পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার অংশে হাটাহাজারী ও রাউজান উপজেলা সংলগ্ন অংশেই মেলে নিষিক্ত ডিম। এই অংশেই মা মাছের আনাগোনা বেশি হয়।
হালদায় প্রজনন মৌসুমে মাছের সাথে বেড়েছে চোরা শিকারীও
হালদায় ‘নমুনা ডিম’ ছেড়েছে মা মাছ
এবার এপ্রিলের মাঝামাঝি সময় থেকে হালদায় মা মাছের আনাগোনা বাড়ে। তারপর প্রতিবার অমাবস্যা ও পূর্ণিমার তিথিতে ডিম সংগ্রহকারীরা নদীতে গেছে। কিন্তু ডিম ছাড়েনি মা মাছ।
এবার গ্রীষ্মে তীব্র তাপদাহ, বৃষ্টি না থাকা, হালদা ও কর্ণফুলীতে লবণের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া, কাপ্তাই লেকের পানি প্রবাহ কমে যাওয়াসহ নানা নেতিবাচক সূচক ছিল মৌসুম জুড়েই।
সবশেষ ১৮ মে নমুনা ডিম ছাড়লেও প্রায় এক মাস পর ডিম ছাড়লো হালদা নদীর কার্প জাতীয় কাতাল, রুই, মৃগেল ও কালিবাউশ মাছ।
গত কয়েক বছরের মধ্যে শুধু ২০১৮ সালে এপ্রিল মাসে মা মাছ ডিম ছেড়েছিল। এছাড়া বাকি চার বছরই মে মাসের দ্বিতীয়ার্ধে মা মাছ ডিম ছাড়ে।