হালদায় ‘নমুনা ডিম’ ছেড়েছে মা মাছ

কার্প মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন ক্ষেত্র এই নদী বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ হিসেবে ঘোষিত।

হালদা নদী থেকে সংগৃহীত নমুনা ডিম।

কার্প জাতীয় মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে ‘নমুনা ডিম’ ছেড়েছে মা মাছ।

টানা তাপপ্রবাহ শেষে বৃষ্টি ঝরার পর বুধবার রাতে নদীর তিনটি পয়েন্টে নমুনা ডিম পাওয়ার কথা ডিম সংগ্রহকারীরা জানান। তবে বৃহস্পতিবার দিনভর আর কোনো নমুনা ডিম মেলেনি।

হালদা নদীতে প্রজনন মৌসুমে ডিম ছাড়ার আগে নমুনা ডিম ছাড়ে কার্প জাতীয় মা মাছ। নমুনা ডিম দেখে নদী পাড়ের ডিম সংগ্রহকারীরা পুরোদমে ডিম সংগ্রহের জন্য প্রস্তুতি শুরু করেন।

হাটহাজারীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শাহিদুল আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বুধবার রাত ১২টার কাছাকাছি সময়ে খুব অল্প পরিমাণ নমুনা ডিম পেয়েছেন ডিম সংগ্রহকারীরা।

গড়দুয়ারার কাটাখালীতে এবং উত্তর মাদার্শার আমতুয়া ও নাপিতের ঘাট এলাকায় ডিম মিলেছে।

নমুনা ডিম ছাড়ার পর নদী তীরের ডিম সংগ্রহকারীরা নিজেদের নৌকা নিয়ে নদীতে পর্যবেক্ষণ করছেন জানিয়ে ইউএনও বলেন, “উনারা প্রস্তুত আছেন। নদীতে প্রতি নৌকায় দুয়েকজন নিয়ে তারা পরিস্থিতি দেখছেন। ডিম ছাড়লে সবাই সংগ্রহে নামবেন। তিনটি সরকারি হ্যাচারিও প্রস্তুত আছে।”

বছরের এই সময়ে (এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকে জুন পর্যন্ত) বজ্রসহ বৃষ্টি এবং পাহাড়ি ঢল নামলে অমাবস্যা বা পূর্ণিমা তিথিতে নদীতে জোয়ার ও ভাটার সময়ে নিষিক্ত ডিম ছাড়ে রুই, কাতল, মৃগেল, কালিবাউশ জাতীয় মাছ।

গত কয়েক বছরের মধ্যে শুধু ২০১৮ সালে এপ্রিল মাসে মা মাছ ডিম ছেড়েছিল। এছাড়া বাকি চার বছরই মে মাসের দ্বিতীয়ার্ধে মা মাছ ডিম ছাড়ে।

চলতি মৌসুমে প্রথমবারের মতো বুধবার থেকে চট্টগ্রামে বৃষ্টি হচ্ছে। এর আগে পর্যন্ত পুরো চৈত্র ও বৈশাখ মাসজুড়ে বৃষ্টির দেখা মেলেনি।

বৃষ্টি না হওয়ায় কাপ্তাই হ্রদের পানি কমে যাওয়ার ফলে সাগর থেকে জোয়ারের পানি হালদায় বেশি মাত্রায় ঢুকে পড়ে, যা নদীতে লবণাক্ততা বাড়িয়ে তুলেছে।

ইউএনও শাহিদুল আলম বলেন, “গত কয়েক বছর ধরে মে মাসের শেষদিকেই হালদায় মা মাছ ডিম ছেড়েছে। সে হিসেবে ডিম ছাড়ার সময় চলে গেছে বা দেরি হয়েছে, সেটা বলা যাবে না।

“পাহাড়ি ঢল নামার মতো বৃষ্টি এখনও হয়নি। বৃষ্টি গতকাল থেকে শুরু হয়েছে। ডিম সংগ্রহকারী ও সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, আরও বৃষ্টি হলে নদীর পানিতে লবণের পরিমাণ কমবে। তখন মা মাছ ডিম ছাড়তে পারে।”

দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রধান প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র চট্টগ্রামের হালদা নদী বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ হিসেবে ঘোষিত।

হালদা যেখানে কর্ণফুলীর সঙ্গে মিশেছে, সেই কালুরঘাট সেতুর কাছের অংশ থেকে উজানে মদুনাঘাট হয়ে নাজিরহাট পর্যন্ত প্রায় ৫০ কিলোমিটার অংশে নদীর দুই তীরে হাটহাজারী, রাউজান ও ফটিকছড়ি এই তিন উপজেলা।

মদুনাঘাট থেকে সমিতির হাট পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার অংশে হাটাহাজারী এবং রাউজান উপজেলা সংলগ্ন অংশেই মেলে নিষিক্ত ডিম। এই অংশেই মা মাছের আনাগোনা বেশি হয়।

এবার গত এপ্রিলের মাঝামাঝি সময় থেকে হালদায় মা মাছের আনাগোনা বেড়েছে বলে জানান স্থানীয়রা।

নদীতে মা মাছের ছাড়া নিষিক্ত ডিম বিশেষ ধরনের জাল দিয়ে সংগ্রহ করে ডিম সংগ্রহকারীরা। পরে হ্যাচারিতে রেনু তৈরি করা হয়।