হালদা পাড়ের সবাইকে মা মাছ রক্ষায় সচেতন থাকার অনুরোধ জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
Published : 04 May 2023, 09:55 PM
প্রাকৃতিক নিয়মে ডিম ছাড়তে চট্টগ্রামের হালদা নদীতে রুই-কাতাল-মৃগেলসহ কার্প জাতীয় মা মাছের আনাগোনা বেড়েছে; পাল্লা দিয়ে বেড়েছে চোরা শিকারীর উৎপাত।
এ সপ্তাহে দুদিন অভিযান চালিয়ে হালদার বিভিন্ন অংশ থেকে প্রায় ৮ হাজার মিটার জাল জব্দ করেছে স্থানীয় প্রশাসন।
প্রশাসনের নজর এড়াতে রাতের বেলা জাল পাতা হয় মা মাছ শিকার করতে। কেবল জাল নয়, নানা রকম দেশীয় ফাঁদ ও বড়শি দিয়েও মাছ শিকারের চেষ্টা চলছে হালদায়।
দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রধান প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ ঘোষিত চট্টগ্রামের হালদা নদী।
বছরের এই সময়ে (এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকে জুন পর্যন্ত) বজ্রসহ বৃষ্টি এবং পাহাড়ি ঢল নামলে অমাবস্যা বা পূর্ণিমা তিথিতে নদীতে জোয়ার ও ভাটার সময়ে নিষিক্ত ডিম ছাড়ে কার্প জাতীয় মাছ। তবে চলতি বছর এখনও কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টি হয়নি।
নদীতে মা মাছের ছাড়া সেই নিষিক্ত ডিম বিশেষ ধরনের জাল দিয়ে সংগ্রহ করে ডিম সংগ্রহকারীরা। পরে হ্যাচারিতে রেনু তৈরি করা হয়।
হালদা যেখানে কর্ণফুলীর সঙ্গে মিশেছে, সেই কালুরঘাট সেতুর কাছের অংশ থেকে উজানে মদুনাঘাট হয়ে নাজিরহাট পর্যন্ত প্রায় ৫০ কিলোমিটার অংশে নদীর দুই তীরে হাটহাজারী, রাউজান ও ফটিকছড়ি এই তিন উপজেলা।
মদুনাঘাট থেকে সমিতির হাট পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার অংশে হাটাহাজারী ও রাউজান উপজেলা সংলগ্ন অংশেই মেলে নিষিক্ত ডিম। এই অংশেই মা মাছের আনাগোনা বেশি হয়।
এবার এপ্রিলের মাঝামাঝি সময় থেকে হালদায় মা মাছের আনাগোনা বেড়েছে বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দারা।
হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাহিদুল আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ডিম ছাড়ার মৌসুমে কর্ণফুলী নদী, আশেপাশের খাল-বিল এমনকি কাপ্তাই লেক থেকেও মা মাছ হালদা নদীতে আসে।
“ইতোমধ্যে মা মাছের আনাগোনা বেড়েছে। নদীতে মা মাছদের ঘাই দিতেও দেখেছেন বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। মা মাছ আসার পর থেকে চোরা শিকারীদের উৎপাত বেড়ে গেছে। খবর পেলেই আমরা অভিযান চালাচ্ছি।”
বুধবার রাত ১১টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত হালদা নদীর ২০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে অভিযান চালানো হয়।
ওই অভিযানে ৩ হাজার মিটার জাল, একটি নৌকা ও মাছ ধরার বিভিন্ন সরঞ্জাম জব্দ করা হয়েছে বলে জানান ইউএনও মো. শাহিদুল আলম।
অভিযানে হালদা নদীর হাটহাজারীর অংশের উত্তর মাদার্শা, গড়দুয়ারা, ছিপাতলী, নাঙ্গলমোড়া, গুমান মর্দ্দন ও ধলই ইউনিয়ন থেকে মোট ছয়টি ঘেরাজাল জব্দ করা হয়। এছাড়া রাউজান ও ফটিকছড়ি অংশ থেকেও জাল, নৌকা ও মাছ ধরার বিভিন্ন সরঞ্জাম আটক করা হয়।
ইউএনও মো. শাহিদুল আলম বলেন, “শুধু জাল না, দেশীয় নানা কৌশলে ফাঁদ পেতে শিকারিরা মা মাছ ধরার চেষ্টা করছে। অভিযানে সেরকম কিছু সরঞ্জামও পেয়েছি।”
অভিযানে সহযোগিতা করেন গুমান মর্দ্দন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. মুজিবুর রহমান, বেসরকারি সংস্থা আইডিএফ মৎস্য কর্মকর্তা ফয়েজ রাব্বানী ও উপজেলা প্রশাসনের স্বেচ্ছাসেবীরা।
এর আগে শনিবার রাত থেকে রোববার ভোর পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে ৫ হাজার মিটার ঘেরা জাল জব্দ করা হয়।
সেদিন হাটহাজারীর গড়দুয়ারা, মেখল, ছিপাতলী ও গুমান মর্দ্দন ইউনিয়নের বিভিন্ন পয়েন্টে অভিযান চালানো হয়।
ইউএনও মো. শাহিদুল আলম বলেন, “আসন্ন ডিম সংগ্রহ মৌসুমকে সামনে রেখে মা মাছ সুরক্ষায় উপজেলা প্রশাসন সর্বোচ্চ তৎপর রয়েছে। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক স্যারের নির্দেশনায় নিয়মিত মনিটরিং কার্যক্রম চলছে।
“মা মাছ সুরক্ষিত থাকলে ডিম তথা রেনু উৎপানের পরিমাণ বাড়বে। স্থানীয় চেয়ারম্যান, মেম্বার ও গ্রাম পুলিশের সদস্যদেরও সর্তক থাকতে বলা হয়েছে। সংবাদ পেলেই আমরা অভিযান করছি।”
পাশাপাশি হালদা পাড়ের সবাইকে মা মাছ রক্ষায় সচেতন থাকার অনুরোধ করেন তিনি।