“সরকারের বেঁধে দেওয়া দামটি সংরক্ষণের পরের দাম, যা অনেক কোরবানি দাতা কিংবা মৌসুমী ব্যবসায়ীরা বোঝেন না,” বলেন আড়তদার নেতা মুসলিম।
Published : 27 Jun 2023, 08:36 PM
এই কোরবানির ঈদে চট্টগ্রামে সাড়ে তিন লাখ চামড়া সংগ্রহ করতে চায় আড়তদাররা, তবে চামড়া সংরক্ষণের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান লবণের বাড়তি দাম নিয়ে দুশ্চিন্তায় তারা।
বৃহত্তর চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়ৎদার ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি মুসলিম উদ্দিন জানান, গতবছর বিভিন্ন আড়তে প্রায় সাড়ে তিন লাখ কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহ হয়েছিল। এবারের ঈদেও একই পরিমাণ চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্য ঠিক করেছেন তারা।
বাংলাদেশে পশুর চামড়ার যে চাহিদা, তার ৮০ থেকে ৯০ শতাংশই পূরণ হয় কোরবানির পশু থেকে। সেকারণে এ সময়টাই চামড়া সংগ্রহের মূল মৌসুম।
আগামী বৃহস্পতিবার দেশে কোরবানির ঈদ হবে। তার পরের দুই দিনও চলবে কোরবানি। ওই সময় পাড়া-মহল্লা ঘুরে মৌসুমী ব্যবসায়ীরা কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করে বিক্রি করবেন আড়তে। আড়ৎ সেই চামড়া কিছুটা প্রক্রিয়াজাত করে ট্যানারির কাছে বিক্রি করবে।
ঈদ সামনে রেখে পশুর চামড়া সংগ্রহের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার; ঢাকায় গরুর চামড়ার দাম গতবারের চেয়ে ৩ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৪ টাকা বেড়েছে।
ট্যানারি ব্যবসায়ীদের এবার ঢাকায় লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া কিনতে হবে ৫০ থেকে ৫৫ টাকায়; গত বছর এই দাম ছিল ৪৭ থেকে ৫২ টাকা। ঢাকার বাইরে লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দাম হবে ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা, গত বছর যা ৪০ থেকে ৪৪ টাকার মধ্যে ছিল।
এছাড়া সারা দেশে লবণযুক্ত খাসির চামড়া গত বছরের মতই প্রতি বর্গফুট ১৮ থেকে ২০ টাকা, আর বকরির চামড়া প্রতি বর্গফুট ১২ থেকে ১৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
চট্টগ্রামের আড়তদার সমিতির সভাপতি মুসলিম উদ্দিন বলেন, “সরকারের বেঁধে দেওয়া দামটি সংরক্ষণের পরের দাম, যা অনেক কোরবানি দাতা কিংবা মৌসুমী ব্যবসায়ীরা বোঝেন না। তারা মনে করেন সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে আড়তদাররা চামড়া কিনবেন মৌসুমী ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে।”
প্রতিবারের মতো এবারও মৌসুমী ব্যবসায়ীদের হিসাব করে চামড়া কেনার পরামর্শ দেন আড়তদারদের এই নেতা।
মুসলিম বলেন, “এ বছর গরমের তীব্রতা বেশি। চামড়া রেখে দিলে খুব তাড়াতাড়ি সেগুলো নষ্ট হয়ে যাবে, চামড়া সংগ্রহ করার পর যাতে লবণ দিয়ে রাখা হয় “
লবণে দাম বৃদ্ধিতে দুশ্চিন্তা
চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদারদের দাবি, ১০০টি চামড়া সংরক্ষণের জন্য এক বস্তা লবণের প্রয়োজন হয়। কিন্তু প্রতিবছর কোরবানির ঈদের মাস খানেক আগে থেকে বাজারে লবণের দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়।
তারা বলছেন, গত বছর প্রতি বস্তা (৭৪ কেজি) লবণ বিক্রি হয়েছিল ৯৫০ থেকে এক হাজার টাকায়, যা ২০২১ সালে ছিল ৬০০- ৬৫০ টাকা। এ বছর তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২০০ টাকা।
সে হিসাবে শুধু প্রতিটি চামড়ার সংরক্ষণে লবণের খরচ হবে ১০ টাকার বেশি। এর সাথে যুক্ত হবে শ্রমিক, গুদাম খরচসহ অন্যান্য বিষয়। সবমিলিয়ে প্রতিটি চামড়া সংরক্ষণে অন্তত ৩০০ টাকার মতো খরচ হয় আড়তদারদের।
আড়তদার সমিতির সভাপতি মুসলিম বলেন, “ট্যানারি মালিকরা চামড়া কেনার সময় ২০ শতাংশ কর্তন করে চামড়া কিনে থাকে। আবার সব চামড়া চট্টগ্রামে বিক্রি হয় না। যার কারণে চামড়া ঢাকায় পাঠানোর প্রয়োজন হয়, সেক্ষেত্রেও গাড়ি ভাড়া এবং অতিরিক্ত আড়ত খরচ বৃদ্ধি পায়।
“প্রতিবছর কোরবানির মাস দুয়েক আগে লবণের দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়। যেটার বড় প্রভাব পড়ে আমাদের সংরক্ষণ খরচে, এবছরও তা বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু সরকার যদি লবণ আমদানির সুযোগ দিত, তাহলে এভাবে দাম বৃদ্ধি করতে পারত না।”
এবারও মাঠে থাকবে গাউসিয়া কমিটি
‘ন্যায্য দাম’ না পাওয়ার অজুহাতে ২০১৯ সালে মৌসুমী ক্রেতারা সড়কে ফেলেছিলেন কোরবানির পশুর চামড়া। ফলে বিপুল পরিমাণ চামড়া নষ্ট হয়ে গিয়েছিল।
এর পরের বছর মহামারী ও লোকসানের শঙ্কায় একপ্রকার অদৃশ্য হয়ে পড়েছিলেন কোরবানিকেন্দ্রিক মৌসুমী ব্যবসায়ীরা। ২০২১ সালে কিছু মৌসুমী ব্যবসায়ীর দেখা মিললেও তারা আড়তদারদের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমেই চামড়া কিনেছিলেন বলে জানিয়েছিলেন।
তবে গতবছর গাউসিয়া কমিটি চামড়া সংগ্রহ করায় অনেকটা উধাও ছিল ফড়িয়া ও মৌসুমী ব্যবসায়ীরা।
এবছরও চামড়া সংগ্রহে গাউসিয়া কমিটির সদস্যরা মাঠে থাকবে বলে জানিয়েছেন সংগঠনের চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি জানান, গত বছর তারা প্রায় এক লাখ চামড়া সংগ্রহ করেছিলেন। এ বছর তারা দেড় লাখ চামড়া সংগ্রহের টার্গেট করেছেন।
“আগে যে পরিমাণ চামড়া সংগ্রহ করা হত, গত বছর আমরা ব্যাপক হারে চামড়া সংগ্রহ করেছিলাম। চট্টগ্রাম নগরী ও আশেপাশের বিভিন্ন উপজেলা মিলে প্রায় এক লাখ চামড়া সংগ্রহ হয়েছিল।”
আঞ্জুমানে রহমানিয়া আহম্মদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্টের অধীনে দেশে পরিচালিত হয় দুই শতাধিক সুন্নিয়া মাদ্রাসা। এ ট্রাস্টের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গাউসিয়া কমিটি। মহামারীর মধ্যে কোভিডে মৃতদের সৎকারের মত কাজে সহায়তা দিয়ে এ সংগঠন ব্যাপকভাবে আলোচনায় আসে।
চট্টগ্রামে চামড়া সংগ্রহে গাউসিয়া কমিটি, উধাও ফড়িয়ারা
আব্দুল্লাহ বলেন, “চট্টগ্রামের এক আড়তদার গতবার লোকবল দিয়ে আমাদেরকে সহায়তা করেছিল এবং উনি এসব চামড়া কিনে নিয়েছিলেন। এবারও উনি এসব চামড়া নিবেন এবং লোকজন দিয়ে সহায়তা করবেন বলে আমাদের সাথে কথা হয়েছে।”
ইতোমধ্যে মুরাদপুর সুন্নীয়া মাদ্রাসা মাঠে চামড়া সংগ্রহের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, “চট্টগ্রাম নগরীতে চামড়া সংগ্রহের জন্য তাদের সংগঠনের ৭০০ ইউনিটের মাধ্যমে অন্তত ৭ হাজার কর্মী কাজ করবেন। তার পাশাপাশি বিভিন্ন উপজেলায় আরও লোকজন থাকবেন। তবে সংরক্ষণের কাজটি করবেন আড়তদারের নিয়োজিত লোক।
“চামড়া সংগ্রহের জন্য চট্টগ্রাম নগরীতে ১০০টি ও বিভিন্ন উপজেলায় আরও ১০০টিসহ মোট ২০০ গাড়ি থাকবে। সংগ্রহের পর এসব গাড়িতে করে চামড়াগুলো মুরাদপুর সুন্নীয়া মাদ্রাসা মাঠে এনে লবণ দিয়ে সংরক্ষণ করা হবে।”