এবার কোরবানির ঈদে চট্টগ্রাম মহানগরীতে সুন্নীয়া মাদ্রাসা ভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গাউসিয়া কমিটির সদস্যরা কাঁচা চামড়া সংগ্রহে নামায় অনেকটাই উধাও হয়ে গেছেন মৌসুমি ব্যবসায়ী ও ফড়িয়ারা।
Published : 10 Jul 2022, 09:56 PM
গাউসিয়া কমিটি চামড়া সংগ্রহ করায় কোরাবনির পশুর চামড়ার সংগ্রহ এবং বাজার অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর কিছুটা অন্যরকম দেখা গেছে।
আড়তদাররা বলছেন, এ বছর কাঁচা চামড়া সংগ্রহে মৌসুমি ব্যবসায়ী ও ফড়িয়াদের সৃষ্ট ‘বিশৃঙ্খলা’ নেই। অনেকটাই সুশৃঙ্খলভাবে চলছে চামড়া বেচাকেনা।
দেশে সারা বছর যে পরিমাণ পশুর চামড়া সংগ্রহ হয়, তার বেশিরভাগ আসে কোরবানির ঈদে। অন্যবছর ঈদের দিন সকালে পশু কোরবানির পর মৌসুমি ব্যবসায়ী ও ফড়িয়ারা বিভিন্ন বাসা বাড়ি থেকে চামড়া সংগ্রহ করে দুপুরের দিকে নিয়ে আসতেন নগরীর আগ্রাবাদ চৌমুহনী এলাকায়। আড়তদারের প্রতিনিধিরা সেসব চামড়া কিনে নিতেন।
বিভিন্ন সময়ে অভিযোগ পাওয়া যেত, আড়তদার ‘কারসাজি’ করে চামড়ার দাম কমিয়ে ফেলেছেন। ফলে লোকসানে পড়তেন কোরবানির ঈদ কেন্দ্রীক মৌসুমি চামড়ার ব্যবসায়ী ও ফড়িয়ারা। ২০১৯ সালে দাম না পেয়ে অনেকে রাস্তায় চামড়া ফেলে যাওয়ায় সে ঘটনা খবরের শিরোনাম হয়েছিল।
পরের বছর মহামারীর কারণে মৌসুমি ব্যবসায়ীদের অনেকে চামড়া ব্যবসা থেকে বিরত ছিলেন। তবে গত বছর কিছু মৌসুমি ব্যবসায়ী চোখে পড়ে। এবার তাদের সংখ্যা আরও কমেছে।
রোববার বিকালে চৌমুহনী এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, গুটি কয়েক লোক চামড়া সংগ্রহ করছেন। কেউ চামড়া নিয়ে সেখানে গেলেই কয়েকজন গিয়ে তাদের আনা চামড়াগুলো কেনার জন্য দরদাম করছেন।
চৌমুহনী এলাকায় কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহকারী চট্টগ্রাম দোকান মালিক সমিতির সহসভাপতি মো. ইয়াছিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গাউসিয়া কমিটির সদস্যরা বিভিন্ন এলাকার বাসা-বাড়িতে গিয়ে চামড়া সংগ্রহ করছেন। তাই এখানে অনেকেই চামড়া নিয়ে আসছেন না।”
রোববার সকাল থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত তিনি বিভিন্ন জনের কাছ থেকে কয়েকশ চামড়া সংগ্রহ করলেও বেলা সাড়ে ৪টা পর্যন্ত আড়তদারের কোনো প্রতিনিধি চৌমুহনী এলাকায় যাননি বলে জানান ইয়াছিন।
অন্যবছর মুরাদপুর রেললাইন থেকে রাস্তার পাশে আড়তদার ও তাদের প্রতিনিধিরা চামড়া সংগ্রহের কাজ করলেও এবছর আগের মতো ভিড় চোখে পড়েনি।
এদিকে গাউসিয়া কমিটির স্বেচ্ছাসেবীরা বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে সংগ্রহ করা চামড়া মজুদ করেছেন মুরাদপুর এলাকায় সুন্নীয়া মাদ্রাসা মাঠে। সেখানে চামড়াগুলো লবণ দিয়ে সংরক্ষণের কাজ চলছে।
গাউসিয়া কমিটি চট্টগ্রাম মহানগরের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, চট্টগ্রাম জেলায় এ বছর তারা এক লাখ চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্য নিয়েছেন, যার মধ্যে ৫০ হাজার শুধু মহানগরী এলাকা থেকে সংগ্রহ করা হবে।
আগের বছরগুলোতে তারা যে পরিমাণ চামড়া সংগ্রহ করতেন এ বছর তার চেয়েও বড় আকারে সংরক্ষণের কাজ করছেন জানিয়ে আব্দুল্লাহ বলেন, “চট্টগ্রাম নগরীতে চামড়া সংগ্রহের জন্য তাদের সংগঠনের ৭০০ ইউনিটের মাধ্যমে অন্তত ৬ হাজার কর্মী কাজ করছেন। প্রায় ৮০টি গাড়ির মাধ্যমে বিভিন্ন পাড়া মহল্লা থেকে সংগ্রহ করা চামড়া এনে মাদ্রাসা মাঠে লবণ দিয়ে সংরক্ষণ করা হচ্ছে।
আব্দুল্লাহ বলেন, “জাতীয় সম্পদ হিসেবে চামড়া সংরক্ষণের জন্য সরকারের বিভিন্ন বৈঠকে আমাদের চামড়া সংগ্রহের জন্য অনুরোধ করা হয়। কিন্তু চামড়া সংগ্রহে যে পরিমাণ টাকা বিনিয়োগ দরকার তা আমাদের নেই। তাই এক জন আড়তদার আমাদের সংগ্রহ করা চামড়া কিনে নেওয়ার প্রস্তাব করেন। তিনিই জনবলসহ বিভিন্ন সহায়তা করছেন সংরক্ষণের জন্য।”
গাউসিয়া কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ বলেন, “কোরাবনির পশুর চামড়া এতিম, মিসকিনের হক। তাই কোরবানি দাতারা সেগুলো বিভিন্ন মসজিদ মাদ্রাসায় দান করেন। অনেকেই আমাদের মাদ্রাসায় এবং গাউসিয়া কমিটির সাম্প্রতিক সময়ের কাজে খুশি হয়ে আমাদের কাছে তাদের কোরবানির চামড়াগুলো দান করছেন।”
দেশে যে পরিমাণ কাঁচা চামড়া সংগ্রহ হয় তার সিংহভাগ হয় কোরবানি ঈদে। বিভিন্ন পাড়া মহল্লা থেকে ফড়িয়া কিংবা মৌসুমী ব্যবসায়ীরা এসব চামড়া সংগ্রহ করে বিক্রি করেন আড়তদারদের কাছে। আর আড়তদাররা তা সংরক্ষণ করে বিক্রি করেন বিভিন্ন ট্যানারিতে।
ট্যানারি কত দামে চামড়া কিনবে, তা প্রতিবছর নির্ধারণ করে দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সরকারের বেঁধে দেওয়া দর অনুযায়ী, ট্যানারি ব্যবসায়ীদের এবার ঢাকায় লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া কিনতে হবে ৪৭ থেকে ৫২ টাকায়। আর ঢাকার বাইরে এই দাম হবে ৪০ থেকে ৪৪ টাকা।
এছাড়া লবণযুক্ত খাসির চামড়া সাড়া দেশে ১৮ থেকে ২০ টাকায় কিনবে ট্যানারি। প্রতিটি ক্ষেত্রেই গতবারের চেয়ে দাম বেড়েছে ৭ টাকা।
বৃহত্তর চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার ব্যবসায়ী সমিতির সহ-সভাপতি আব্দুল কাদের বলেন, “নগরীর বিভিন্ন স্থান থেকে বিকালের মধ্যেই আড়তে চামড়া আসা শুরু হয়েছে। তবে তা অন্যান্য বছরের তুলনায় কম।“”
গাউসিয়া কমিটির বিভিন্ন পাড়া মহল্লার বাসায় গিয়ে চামড়া সংগ্রহ করার কারণে এবছর সরাসরি আড়তে চামড়া কম আসছে বলে মনে করেন তিনি।