চট্টগ্রামের ৯ ওয়ার্ড ও সাতকানিয়ায় ডেঙ্গুর সংক্রমণ বেশি: আইইডিসিআর

হাসপাতালে ডেঙ্গু কর্নার চালু, উপজেলায় কন্ট্রোল রুম খোলার পদক্ষেপ নিয়েছে জেলার সিভিল সার্জন কার্যালয়।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Oct 2022, 05:36 PM
Updated : 19 Oct 2022, 05:36 PM

চট্টগ্রাম মহানগরীর ৯টি ওয়ার্ড এবং সাতকানিয়া উপজেলায় ডেঙ্গুর সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি বলে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) এর অনুসন্ধানে দেখা গেছে।

এ প্রতিবেদন আসার পর বর্তমানে বাড়তে থাকা সংক্রমণ পরিস্থিতিতে ‘ডেঙ্গু ও চিকনগুনিয়া’ প্রতিরোধে প্রশিক্ষণ ও স্বাস্থ্য শিক্ষা জোরদারে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে জেলার সিভিল সার্জন কার্যালয়।

বুধবার এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের চিঠি দিয়েছেন চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী।

আইইডিসিআরের ‘ইনভেস্টিগেশন রিপোর্ট অন ডেঙ্গু আউটব্রেক অ্যাট চট্টগ্রাম, সেপ্টেম্বর ২০২২’ শিরোনামের অনুসন্ধান কার্যক্রম চলে ১৭ থেকে ২৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।

গত ১৬ অক্টোবর আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ড. তাহমিনা শিরিন সাক্ষরিত এক প্রতিবেদনে অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্য জানানো হয়।

এতে দেখা যায়, নগরীর ডবলমুরিং (৩২ শতাংশ), হালিশহর (২০ শতাংশ), আগ্রাবাদ ও বন্দর এলাকা (১৮ শতাংশ) এবং সাতকানিয়া উপজেলায় (২০ শতাংশ) ডেঙ্গু সংক্রমণের হার সবচেয়ে বেশি।  

দুজন চিকিৎসক, একজন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট এবং একজন নমুনা সংগ্রহকারীর সমন্বয়ে গঠিত ওই অনুসন্ধান দল ২২৩ জন ডেঙ্গু রোগীর সন্ধান পায়।

এদের বেশির ভাগ নগরীর সরাইপাড়া, দক্ষিণ আগ্রাবাদ, পাঠানটুলি, পশ্চিম মাদারবাড়ি, গোসাইলডাঙা, উত্তর মধ্যম হালিশহর, দক্ষিণ মধ্যম হালিশহর, উত্তর পতেঙ্গা ও দক্ষিণ পতেঙ্গা এবং সাতকানিয়া উপজেলার বাসিন্দা বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

অনুসন্ধান দল নগরীর ৮০টি স্থান পরিদর্শন করে এরমধ্যে ২৫টি স্থানে এইডিস মশার লার্ভার সন্ধান পায়। এরমধ্যে খালি জামি, মার্কেট, বাস টার্মিনাল, বহুতল ভবন,  বাড়ির আঙ্গিনা ও নির্মাণাধীন ভবনে বেশি লার্ভা দেখতে পায়।
অব্যবহৃত গাড়ির টায়ার, ফুলের টব, রঙের কৌটা, ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক বোতলসহ বিভিন্ন ফেলে দেওয়া পাত্রে বেশির ভাগ লার্ভার সন্ধান পায় দলটি।

অনুসন্ধানে এইডিস মশার যে নমুনা পাওয়া গেছে তা ‘এইডিস এজিপ্টা’ এবং ‘এইডিস এলবোপিক্টা’ দুই ধরনের মশার উপস্থিতিই মিলেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ। এরমধ্যে এইডিস এলবোপিক্টার সংখ্যা তুলনামূলক বেশি।

এইডিস এলবোপিক্টা প্রজাতির মশা চিকনগুনিয়া সংক্রমণ ঘটায় বলে চট্টগ্রামে স্বল্প সময়ের ব্যবধানে এ রোগও ছড়িয়ে পারতে বলে প্রতিবেদনে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।

ওই প্রতিবেদনে, ডেঙ্গু বিষয়ে জনগণের সচেতনতা বাড়ানো, সব ধরনের অব্যবহৃত টায়ার অপসারণ, মশা নিয়ন্ত্রণ, স্বাস্থ্য শিক্ষা জোরদার, এইডিস মশার প্রজনন ক্ষেত্র ধ্বংস করতে বাসাবাড়িতে জরিপ চালানো এবং হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু কর্নার ও আক্রান্ত রোগীদের মশারির ব্যবহার নিশ্চিত করতে সুপারিশ করে।

চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ডেঙ্গু সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধে স্বাস্থ্য শিক্ষা জোরদার, এইডিস মশার প্রজনন স্থান ধ্বংস করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ, হাসপাতালে ডেঙ্গু কর্নার চালু, উপজেলায় কন্ট্রোল রুম খোলা এবং ভর্তি রোগীদের মশারি ব্যবহার নিশ্চিত করতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।”

তিনি জানান, আইইডিসিআর এর প্রতিবেদন বিষয়ে কার্যকরি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সিটি করপোরেশন এবং উপজেলাগুলোর স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে বুধবার চিঠি দেওয়া হয়েছে।

জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের প্রতিবেদন অনুসারে, গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় নতুন ৬৮ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। বিভিন্ন হাসপাতালে এদিন চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৬০ জন।

চলতি বছর শুরু থেকে বুধবার পর্যন্ত জেলায় মোট ১৭৪২ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। এরমধ্যে অক্টোবরের ১৯ দিনে ৯২৭ জন, যা আগের ৯ মাসের মোট আক্রান্তের চেয়েও বেশি।

গত সেপ্টেম্বরে জেলায় ৬০১ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়। এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ১২ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ২ জন পুরুষ, ৬ জন নারী এবং শিশু ৪ জন।

Also Read: চট্টগ্রামে এক দিনে বছরের সর্বোচ্চ ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত

Also Read: চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে শিশুর মৃত্যু

Also Read: ডেঙ্গু: চট্টগ্রামে এক দিনে ৩ মৃত্যু, মশক নিধন কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন