অক্টোবরে মোট ৮৫৯ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হল চট্টগ্রাম জেলায়।
Published : 18 Oct 2022, 09:24 PM
চট্টগ্রামে একদিনে ৯১ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে, যা এ বছরের সর্বোচ্চ।
জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় জানিয়েছে, মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত এই নতুন রোগীদের নিয়ে চলতি অক্টোবর মাসের ১৮ দিনেই মোট ৮৫৯ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হল।
সিভিল সার্জন মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “থেমে থেমে বৃষ্টি হওয়ার কারণে ডেঙ্গুর প্রকোপ না কমে উল্টো বাড়ছে। এজন্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা ও জনগণকে সচেতন করতে যা করার তা আমরা সবই করছি।
“চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনকে একাধিকবার বলা হয়েছে। তারাও বিভিন্ন স্থানে মশার লার্ভা মারাসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছে।”
এইডিস মশাবাহিত এ রোগ কমাতে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার উপর জোর দিয়ে এই স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলেন, “যেহেতু বৃষ্টি বন্ধ হচ্ছে না, তাই প্রতিরোধের বিকল্প নেই। বাসা-বাড়ির আশেপাশে তিন দিনের বেশি যাতে স্বচ্ছ পানি জমে না থাকে।
“এছাড়া ফুলের টবে এবং এসির পানি যেন না জমে। ঝোপঝাড় যেন বাড়ির আশেপাশে না থাকে। পাশাপাশি স্কুল-কলেজ যেহেতু খোলা, শিক্ষার্থীরা যেন ফুল স্লিভ জামা পরে ক্লাসে যায়। এবং বাড়িতে ঘুমানোর সময় অবশ্যই যেন মশারি টাঙানো হয়।”
ঢাকা ও কক্সবাজারের পর চট্টগ্রামে ডেঙ্গুর প্রকোপ সবচেয়ে বেশি জানিয়ে সিভিল সার্জন বলেন, “উপজেলা পর্যায়ে হেলথ ইনস্পেক্টর ও স্যানিটারি ইনস্পেক্টরদের আজ ডেকে আমরা স্বাস্থ্য শিক্ষা জোরদার করতে বলেছি।
“পাশাপাশি বিশেষায়িত হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু কর্নার প্রস্তুত রাখতে বলেছি। চিকিৎসার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা আমরা করতে পারি। প্রতিরোধের ব্যবস্থাটা আমাদের হাতে নেই। তাই স্বাস্থ্যশিক্ষা জোরদার করতে জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় চিকিৎসা কর্মী ও জনগণের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।”
উপজেলাগুলোর মধ্যে সীতাকুণ্ড, সাতকানিয়া ও পটিয়ায় ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা তুলনামূলক বেশি বলে জানায় সিভিল সার্জন কার্যালয়।
চলতি মাসে আক্রান্তদের মধ্যে ২৩২ জনই বিভিন্ন উপজেলার। ৬২৭ জন নগরীর বাসিন্দা।
জেলায় এখন পর্যন্ত ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ১৬৭৪ জন।
এখনও ৮২ জন বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে জানান সিভিল সাজন কার্যালয়ের স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধায়ক সুজন বড়ুয়া।
এর আগে গত ১৫ অক্টোবরের প্রতিবেদনে আগের ২৪ ঘণ্টায় ৮৩ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়। যা ছিল ওইদিন পর্যন্ত ছিল দিনে সর্বোচ্চ।
সেপ্টেম্বরের শেষ ১০ দিনে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে নগরীতে পাঁচজনের মৃত্যু হয়। তাদের মধ্যে তিনজন নারী, একজন শিশু ও একজন যুবক।
এছাড়া অক্টোবরে মঙ্গলবার পর্যন্ত তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন নারী ও দুই শিশু।
বর্ষা মৌসুমের শেষে অগাস্টের মাঝামাঝি থেকে বৃষ্টি শুরু হলে অগাস্টের শেষ সপ্তাহ থেকে চট্টগ্রামে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়তে থাকে। সেপ্টেম্বরে তা আরও বেড়ে যায়।
সেপ্টেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ২০ জন করে নতুন রোগী শনাক্ত হয়। চলতি মাসে তা বেড়ে দিনে ৫০-৬০ জনে দাঁড়ায়।
চলতি বছর জানুয়ারিতে ৯ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৪ জন, মার্চে ১ জন, এপ্রিলে ৩ জন, জুনে ১৯ জন, জুলাইয়ে ৬৪ জন, অগাস্টে ১১৪ জন ও সবশেষ সেপ্টেম্বর মাসে ৬০১ জন নতুন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়।
আরও পড়ুন
চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে শিশুর মৃত্যু
চট্টগ্রামে একদিনে ৫৫ ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত
চট্টগ্রামে কোভিড ও ডেঙ্গু দুটোই বাড়ছে
ডেঙ্গু: চট্টগ্রামে এক দিনে ৩ মৃত্যু, মশক নিধন কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন
চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে শিশুর মৃত্যু, দিনে শনাক্ত ৩৩