সাকার বাড়ির ‘রাজাকার হিল’ সাইনবোর্ড খুলে নিল কারা

মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের নেতারা বলছেন, ওই সাইনবোর্ড সরানোর বিষয়টিকে তারা ‘যুদ্ধাপরাধীদের ধৃষ্টতা’ হিসেবে দেখছেন।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Oct 2022, 09:35 AM
Updated : 30 Oct 2022, 09:35 AM

চট্টগ্রাম নগরীতে যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পারিবারিক বাসভবন গুডস হিলকে ‘রাজাকার হিল’ নামকরণ করে যে সাইনবোর্ড টাঙানো হয়েছিল, সেটি খুলে ফেলা হয়েছে। দেয়ালের ‘রাজাকারের বাড়ি’ লেখাটিও ঢেকে দেওয়া হয়েছে কালো রঙে।

মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড শনিবার দুপুরে গুডস হিল ঘেরাও কর্মসূচি থেকে ওই বাড়িতে ‘রাজকার হিল’ লেখা সাইবোর্ড ঝুলিয়ে ফটকে তালা লাগিয়ে দেয়।

সমাবেশ শেষ হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই লেখাটি মুছে সাইনবোর্ড সরিয়ে ফেলা হয় জানিয়ে সংগঠনের নেতারা বলছেন, এ বিষয়টিকে তারা ‘যুদ্ধাপরাধীদের ধৃষ্টতা’ হিসেবে দেখছেন।

মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড, চট্টগ্রাম মহানগরের আহ্বায়ক শাহেদ মুরাদ সাকু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তারা বৈঠকে বসে পরবর্তী কর্মসূচি ঠিক করবেন।

সাকু মনে করেন, যুদ্ধাপরাধী সাকা চৌধুরীর পরিবারের ‘ঘনিষ্ঠরাই’ এটা করেছেন।

চট্টগ্রাম শহরের গণি বেকারি মোড়ে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বাসভবন ‘গুডস হিল’ এ একাত্তরে মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোকদের ধরে নিয়ে নির্যাতনের পর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া হত। আন্তর্জাতিক অপরাধি ট্রাইব্যুনালে বিভিন্ন মামলার বিচারেও বিষয়গুলো উঠে এসেছে।

গত ১২ অক্টোবর চট্টগ্রামে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশে দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী তার বাবাকে ‘শহীদ’ দাবি করেন।

এর প্রতিবাদে গত ২২ অক্টোবর মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড ঘোষণা দেয়, হুম্মাম কাদের চৌধুরী নিজের বক্তব্যের জন্য সাত দিনের মধ্যে ক্ষমা না চাইলে ২৯ অক্টোবর ‘গুডস হিল’ ঘেরাও করা হবে।

সে অনুযায়ী শনিবার গুডস হিলের সামনের সড়কে ঘেরাও কর্মসূচি হয়। বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, পেশাজীবী ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সদস্যরাও তাতে একাত্মতা প্রকাশ করেন।

সমাবেশ শুরুর আগেই বাসার গেইটে ‘রাজকার হিল’ লেখা সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেওয়া হয়। আশেপাশে দেয়ালে রাজাকারবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান লেখা হয়।

সমাবেশ থেকে চট্টগ্রামে হুম্মাম কাদের চৌধুরীকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে সংগঠনের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি সরোয়ার আলম মনি পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরেন।

দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- যুদ্ধাপরাধীদের সন্তানদের বাংলাদেশের রাজনীতি ও নির্বাচন অযোগ্য ঘোষণা, তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে রাষ্ট্রের অনূকূলে নেওয়া, প্রতি উপজেলা-জেলা পর্যায়ে যুদ্ধাপরাধীদের তালিকা প্রস্তুত করে পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা, নিরস্ত্র বাঙালি ও মুক্তিযোদ্ধাদের নির্যাতনের জন্য ১৯৭১ সালে গড়ে তোলা টর্চার সেলগুলোকে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর হিসেবে গড়ে তোলা ও হুম্মাম কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদোহের মামলা করা।

আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে দাবি মানা না হলে পরবর্তীতে আরও কঠোর কর্মসূচি দেয়ার ঘোষণাও করা হয় সমাবেশ থেকে।

মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড কাউন্সিল চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির সদস্য ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ওমর ফারুক রাসেল রোববার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি ‘রাজাকার বাড়ি’ লিখে দেওয়ার পর সেটা মুছে ফেলে ধৃষ্টতা দেখানো হয়েছে। স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও যুদ্ধাপরাধীদের পরিবারের সদস্যরা এ ধরনের ধৃষ্টতা দেখাচ্ছে।” 

রোববার ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, গুডস হিলের ফটকের পাশে ‘রাজাকার বাড়ি’ লেখাটি কালো রঙে মুছে দেওয়া হয়েছে। ‘রাজাকার হিল’ লেখা সাইনবোর্ডও আর নেই। 

তবে মূল সড়কের পাশে গুডস হিলের সীমানা প্রাচীরে লেখা রাজাকার বিরোধী স্লোগানগুলো রয়ে গেছে।

Also Read: সাকার বাসভবনে টানানো হলো ‘রাজাকার হিল’ সাইনবোর্ড

Also Read: ‘গুডস হিল’ ঘেরাওয়ের হুঁশিয়ারি মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের