এখানকার কারখানার তৈরি পোশাক পৌঁছে যায় চট্টগ্রামের বিপণিবিতান, পাহাড়ের তিন জেলা, কক্সবাজার, নোয়াখালী, ফেনী, কুমিল্লা, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার ছোট-বড় মার্কেট ও পোশাকের দোকানে।
Published : 22 Mar 2024, 10:09 AM
কেউ করছে সেলাই, কেউ বসাচ্ছেন জরি-পুঁথি, আবার কেউ করছেন ইস্ত্রি… ঈদ ও নববর্ষকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রামের দর্জিবাড়িখ্যাত খলিফাপট্টির পোশাক কারখানাগুলোতে চলছে শ্রমিকদের ব্যস্ততা।
বছরের অন্যান্য দিনগুলোতে শ্রমিকদের ব্যস্ততা কম থাকলেও রোজা শুরুর আগেই শুরু হয় খলিফাপট্টির ব্যস্ততা। বাইরে সরবরাহ করার পাশাপাশি এ সময়ে কারখানা মালিকরা নিজেদের দোকানের মজুদ বাড়াতেও অতিরিক্ত শ্রমিক নিয়োগ দেন।
চট্টগ্রাম নগরীর আন্দরকিল্লা সংলগ্ন ঘাটফরহাদবেগে অবস্থান এ খলিফাপট্টির, যেখানে তৈরি করা বিভিন্ন পোশাক চট্টগ্রামের পাশাপাশি বিভিন্ন জেলা-উপজেলাতেও যায়। আবার নিজেদের দোকানেও হয় বিকিকিনি।
এ খলিফাপট্টিতে কারখানার পাশাপাশি গড়ে উঠেছে তৈরি পোশাকের অনেক দোকান। সেখান থেকে পছন্দের পোশাক কেনেন চট্টগ্রামের অনেক লোকজন। বিভিন্ন উপজেলা থেকে আসা লোকজন বড় বড় মার্কেটের পাশাপাশি খলিফপট্টিকে থেকেও তাদের পছন্দের পোশাক কেনার স্থান হিসেবে বেছে নেন।
খলিফাপট্টিতে গিয়ে বিভিন্ন কারখানাগুলোতে দেখা গেছে ঈদ সামনে রেখে শ্রমিকদের ব্যস্ততা। আবার দোকানগুলোতেও ক্রেতাদের পছন্দের পোশাক দেখাতে ব্যস্ত সময় পার করছে কর্মচারীরা।
১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর আইয়ুব আলী সওদাগর নামের এক দর্জিসহ কয়েকজন কলকাতা থেকে চট্টগ্রামে এসে ঘাটফরহাদবেগে সেলাইয়ের কাজ শুরু করেন। ধীরে ধীরে ওই এলাকার নামই হয়ে যায় খলিফাপট্টি। সেলাইয়ের কাজে যারা জড়িত, চট্টগ্রামে তারা খলিফা নামে পরিচিত।
এখানকার কারখানার তৈরি পোশাক পৌঁছে যায় চট্টগ্রামের বিপণিবিতান, পাহাড়ের তিন জেলা, কক্সবাজার, নোয়াখালী, ফেনী, কুমিল্লা, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার ছোট-বড় মার্কেট ও পোশাকের দোকানে।
রোজার আগে থেকেই খলিফাপট্টি ছোট ছোট কারখানাগুলোতে দিনরাত মেশিন চালাচ্ছেন দর্জিরা। এ ব্যস্ততা থাকবে ঈদের দুই দিন আগ পর্যন্ত।
খলিফাপট্টির ব্যবসায়ী ও কারখানার শ্রমিকদের ভাষ্য, সারাবছর কাজ চললেও শবে বরাতের আগে থেকেই মূল ব্যস্ততা শুরু হয় খলিফাপট্টিতে। কারিগরদের হাতের ছোঁয়ায় তৈরি হয় সব বয়সের মানুষের পোশাক।
সেখানকার ব্যবসায়ী ও দর্জিরা ঈদের মৌসুমের হিসাব করে শবে বরাতের আগ থেকে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত। বছরের অন্য সময়গুলো তাদের কাছে ‘মন্দা সময়’।
ফয়েজ আহম্মদ নামে এক কারখানা মালিক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ঢাকা থেকে সংগ্রহ করা কাপড় দিয়ে এখানে বিভিন্ন ধরনের পোশাক তৈরি করা হয়। সেসব পোশাক পাইকারি হিসাবে তারা চট্টগ্রাম নগরী ও বিভিন্ন উপজেলার পাশাপাশি নোয়াখালী, ফেনী, কক্সবাজারসহ বিভিন্ন জেলায় কিনে নিয়ে যান দোকানিরা।
আগের বছরগুলো থেকে এবছর বিক্রি ভালো হওয়ার কথা জানালেও দাম নিয়ে আক্ষেপ আছে ফয়েজ আহম্মদের।
তার ভাষ্য, “কাপড়ের দাম বেড়েছে অনেক। সে হিসাবে তৈরি পোশাকের দাম বেশি পাওয়া যাচ্ছে না। ক্রেতারা আগের দামেই মাল কিনতে চান, যার কারণে কম লাভেই বিক্রি করতে হচ্ছে।”
খলিফাপট্টিতে কাজ করেন নানা বয়সী শ্রমিক। প্রতিবছর ঈদের ব্যস্ততা ঘিরে স্থায়ী কারিগরদের পাশাপাশি কিছু ‘মৌসুমি কারিগর’ খলিফাপট্টিতে আসেন কাজ করতে। বছরের অন্য সময় দেশের বিভিন্ন এলাকায় তারা কাজ করেন। তবে ঈদের আগে চাহিদা বাড়ে বলে তারা চলে আসেন বন্দরনগরীতে।
ঢাকার সাভার থেকে আসা রফিক নামে এক দর্জি বললেন, “এখানে সারা বছর কাজ কম থাকে। ওই সময়ে নিজের এলাকায় টুকিটাকি কাজ করে সংসার চলে। প্রতিবছর ঈদের আগে বেশি রোজগারের আশায় চলে আসেন চট্টগ্রামে।”
শবে বরাতের সপ্তাহ খানেক আগে তিনি চট্টগ্রামে আসেন। ঈদের পর আবার বাড়ি ফিরে যান।
খলিফাপট্টির দোকান এস এ আহাদ গার্মেন্টসের মালিক আব্দুল আহাদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মহামারীর ধাক্কা সামলে আমরা কোনোভাবে দাঁড়িয়েছি। এবছর ঈদের মৌসুমের পাশাপাশি মন্দা মৌসুমেও (বছরের অন্য সময়) কিছুটা কাজ হয়েছে।”
দোকানের পাশাপাশি আছে কারখানাও আছে আহাদের।
তিনি জানান, প্রতিবছরের মতো এবারও অনেক ‘সিজনাল’ শ্রমিক এসেছে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে। তারা আবার কাজ শেষে ঈদের পর চলে যাবে।
বেচাকেনা কেমন চলছে, এ প্রশ্নের উত্তরে আহাদ বলেন, “রোজার আগে ওয়ান পিস, টু-পিস এসব জামা বেশি চলেছে। তবে এবারের ঈদে বেশি কদর হচ্ছে ‘আলিয়া’ নামের একটি জামার। বিভিন্ন কারখানায় এবার এ জামাটি তৈরি হচ্ছে, চাহিদাও আছে বেশ।”