Published : 20 Oct 2022, 11:17 PM
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার জঙ্গল সলিমপুরের প্রবেশপথে এবার ‘পাহাড় ব্যবস্থাপনা ক্যাম্প ও চেকপোস্ট’ বসিয়েছে জেলা প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার সলিমপুরের প্রবেশ পথে ক্যাম্প ও চেকপোস্ট উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান।
চলতি বছরের মধ্য জুলাই থেকে জঙ্গল সলিমপুরের ৩১০০ একর খাস জমি উদ্ধারে অভিযান শুরু করে প্রশাসন।
এরপর কয়েক দফায় অভিযান, সংঘর্ষ, মামলা, আটকসহ বিভিন্ন ঘটনা ঘটেছে সলিমপুর ঘিরে। এর মধ্যে গত অগাস্টের মাঝামাঝি এই ক্যাম্প স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
সবশেষ বৃহস্পতিবার ‘প্রশাসনিক কার্যক্রম, অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ ও জমি উদ্ধার কার্যক্রমকে স্থায়ী রূপ দিতে’ ক্যাম্প ও চেকপোস্ট চালু করা হয়েছে বলে জেলা প্রশাসনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
ক্যাম্প উদ্বোধন করে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান বলেন, “জঙ্গল সলিমপুরে পাহাড় কেটে অবৈধ বসতি স্থাপন, বৃক্ষ নিধন এবং অবৈধভাবে মাটি কেটে বিক্রি করা বন্ধের জন্য এই স্থানে একটি পাহাড় ব্যবস্থাপনা ক্যাম্প করা হয়েছে এবং একটি চেকপোস্ট স্থাপন করা হয়েছে।
“এখানে একজন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে সার্বক্ষণিক পুলিশ, আনসার, র্যাব ও বিজিবির সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। যেন কেউ অবৈধভাবে সরকারি খাস খতিয়ানভুক্ত পাহাড় শ্রেণির এ ভূমিতে অবৈধভাবে বসতি স্থাপন করতে না পারে এবং পরিবেশের কোনো ক্ষতি করতে না পারে।”
অনুষ্ঠানে পুলিশ সুপার এস এম শফিউল্লাহ বলেন, “জঙ্গল সলিমপুরে পাহাড়ি ভূমিতে অবৈধ দখল প্রতিরোধে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী পুলিশ বিভাগের তৎপরতা জোরদার থাকবে।”
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সীতাকুণ্ডের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন, জেলা প্রশাসনের নেজারত ডেপুটি কালেক্টর তৌহিদুল ইসলাম, জেলা পুলিশের অ্যাডিশনাল এসপি (হেড কোয়ার্টার) আরিফ হোসেন, অ্যাডিশনাল এসপি (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) সুদীপ্ত বিশ্বাস, সীতাকুণ্ডের সহকারী কমিশনার (ভূমি) আশরাফুল আলম, কাট্টলী সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) উমর ফারুক, হাটহাজারী সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবু রায়হান, সীতাকুণ্ড থানার ওসি তোফায়েল হোসেন।
প্রায় দুই দশক ধরে সেখানে পাহাড় কেটে অবৈধ ও ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনা গড়ে তোলে ‘চট্টগ্রাম মহানগর ছিন্নমূল বস্তিবাসী সমন্বয় সংগ্রাম পরিষদ’ নামের একটি সংগঠন। পাঁচ বছর আগে এই সমিতির সদস্য সংখ্যা ছিল ১৫ হাজার।
সমিতির নেতারা তখন জানিয়েছিলেন, সেখানে আট হাজার পরিবারের প্রায় ৪০ হাজার মানুষের বসবাস করতেন। এদের অধিকাংশ রিকশাচালক, ঠেলাগাড়ি চালক, দিনমজুর, হোটেল বয় ও গার্মেন্টম শ্রমিক।
গত ১ জুলাই জঙ্গল সলিমপুরে পরিদর্শনে গিয়ে সেখানে থাকা খাস জমিতে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার, স্পোর্টস ভিলেজ, ক্রিকেট স্টেডিয়াম, আইকনিক মসজিদ ও ইকো পার্কসহ বিভিন্ন স্থাপনা তৈরির পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিলেন জেলা প্রশাসক।
সেদিন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছিলেন, সলিমপুরে বসতি স্থাপনকারী ১৫ হাজার পরিবারকে সেখানেই পুনর্বাসন করে সরকারি বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করা হবে।
ওই এলাকায় মোট ৩১০০ একর জমির মধ্যে ৮৮ একর অবৈধ দখলদারদের হাতে থাকার কথা সেদিন জানিয়েছিল জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
এরপর ২২ জুলাই সলিমপুরে পাহাড় কাটা বন্ধে অভিযান শুরু করে প্রশাসন। টানা অভিযানে ১৭০টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে প্রায় ৭০০ একর জমি দখলমুক্ত করা হয়।
এরপর ২৩ অগাস্ট বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগের দাবিতে ফৌজদারহাট বিআইটিআইডি মোড়ের ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে ছয় ঘণ্টা অবস্থান করে সলিমপুর ও আলী নগরের বাসিন্দারা।
পরে পুলিশ তাদের সরাতে গেলে সেদিনও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনার পরদিন পুলিশ ছয়টি মামলা করেছিল।
এরপরই প্রশাসনের পক্ষ থেকে সলিমপুর ও আলী নগরে ‘অবৈধ বসতি স্থাপনকারীদের’ সরে যেতে ৩০ অগাস্ট পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়।