শুক্রবার বিকালে ওই এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে তিনি এ কথা জানান।
দীর্ঘদিন ধরে আলোচনায় থাকা জঙ্গল সলিমপুরে এদিন গিয়ে দেখা যায়, সেখানে গরুর খামার, খাদ্য ভাণ্ডার, মাজার, বিভিন্ন পণ্যের দোকান, ডাক্তারের চেম্বার, দলীয় কার্যালয়সহ বেশ কিছু নতুন স্থাপনাও গড়ে তোলা হয়েছে।
বিভিন্ন সময় পাহাড় ধস ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের কারণে আলোচনায় আসা সলিমপুরে সীতাকুণ্ড থানার অধীন একটি অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্পও আছে।
মন্ত্রীর গাড়ি বহর প্রবেশের সময় কয়েক হাজার নারী-পুরুষ সড়কের দু’পাশে সারিবদ্ধভাবে অবস্থান নেয়।
পরিদর্শনকালে জেলা প্রশাসক জানান, সেখানে বসবাসকারী ‘ছিন্নমূলদের’ পুনর্বাসন বিষয়ে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা মেনেই সরকারি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।
আর তথ্যমন্ত্রী বলেন, “চট্টগ্রাম শহরে অনেক পাহাড় কেটে ফেলা হয়েছে। এই পুরো জায়গাটা পাহাড় ছিল। এগুলো নির্বিচারে ধ্বংস করা হয়েছে। নানা সমিতির নামে নানা ভাবে এই পাহাড় কাটা হয়েছে।
“চট্টগ্রাম শহরে প্রশাসনিক কার্যক্রমের জন্য এবং শহরের ও দেশের যে বর্ধিত চাহিদা তা পূরণ কল্পে জায়গার খুব অভাব। আমাদের বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য বিভিন্ন জায়গায় জমি খোঁজাখুঁজি করেছি।”
বায়েজিদ লিংক রোডের পাশের এই এলাকায় প্রায় ১৪০০ একর এবং পেছনে আরও ১৭০০ একর খাস জমি আছে জানিয়ে তিনি বলেন, “সত্বর যেটা দরকার তা হল- নোটিশ দিয়ে দেওয়া, যাতে আর কেউ যেন জায়গা দখল না করে। দখল অবশ্যই বেআইনী।
“যারা এতদিন করেছে, ইতিমধ্যে বসতি স্থাপন যারা করেছেন তাদের অবশ্যই সরকার পুনর্বাসন করবে। পদ্মা সেতু প্রকল্পে ছয় হাজার একর অধিগ্রহণ করতে হয়েছে। সবাইকে সেখানে পুনর্বাসন করা হয়েছে। এখানে মাত্র ৮৮ একর দখল করেছে। বাকিটা খালি আছে।”
সলিমপুরে থাকা খাস জমিতে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার, স্পোর্টস ভিলেজ, ক্রিকেট স্টেডিয়াম, আইকনিক মসজিদ, ইকো পার্কসহ বিভিন্ন স্থাপনা করার পরিকল্পনার কথা জানান জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান।
সেখানে একটি আন্তর্জাতিক মানের কনভেনশন হল করার প্রস্তাব দেন সিটি মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী।
এ জায়গায় জেলখানা স্থানান্তর, চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্র, আর্মি স্টেডিয়াম, হাসপাতাল, পার্কসহ অনেক কিছুই করার পরিকল্পনার কথা জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, “জনগণের অসুবিধা হয় এমন কিছু করা হবে না। মনে রাখতে হবে দেশটা আমাদের। তাই আইন মানতে হবে। কারও যাতে অসুবিধা না হয় সেভাবে কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে।“
তিনি বলেন, “চট্টগ্রাম নগরীর মানুষের জন্য অনেক কিছু এখানে করার সুযোগ আছে কারণ এটি খাস জমি। কারণ অধিগ্রহণে তিনগুণ টাকা দিতে হয়, যা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। এখানে অধিগ্রহণের বিষয় নেই।“
এ এলাকা সংলগ্ন বায়েজিদ লিংক রোড করার সময় সিডিএ যে পাহাড় কেটেছে সেটি ‘সমীচীন হয়নি’ মন্তব্য করে হাছান মাহমুদ বলেন, “সরকারের মন্ত্রী হিসেবে বলছি, সিডিএ’র পাহাড় কাটা বেআইনি। সেজন্য পরিবেশ অধিদপ্তর তাদের ১০ কোটি টাকা জরিমানা করেছে। সেটার মত অন্য পাহাড় কাটাও সমীচীন নয়।
“এখানে যখন প্রকল্প বাস্তবায়ন করব যে পাহাড়গুলো অবশিষ্ট আছে সেগুলোকে অক্ষুন্ন রেখে এবং প্রচুর বনায়ন করে তা করা হবে। পাহাড়ি ছড়া ও প্রকৃতি যেন নিজের মত চলতে পারে। সেটিও নিশ্চিত করতে হবে।”
চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ নাজমুল আহসান জানান, জঙ্গল ছলিমপুর, জঙ্গল ভাটিয়ারী, জঙ্গল লতিফপুর, উত্তর পাহাড়তলি ও জালালাবাদ এ ৫ মৌজায় মোট ১৪২৫ একর খাস জমি আছে।
“এখানে ১৫ হাজার অবৈধ অভিবাসী পরিবার থাকে। এমনকি ছড়ার উপর পানি চলাচল বন্ধ করেও অবৈধ স্থাপনা করা হয়েছে।”
প্রশাসনিক কাঠামোতে জঙ্গল সলিমপুরের অবস্থান সীতাকুণ্ড উপজেলার আওতায় হলেও সেখানে যেতে হয় নগরীর বায়েজিদ থানার বাংলাবাজার এলাকা দিয়ে।
প্রায় দুই দশক ধরে সেখানে পাহাড় কেটে অবৈধ ও ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনা গড়ে তোলে ‘চট্টগ্রাম মহানগর ছিন্নমূল বস্তিবাসী সমন্বয় সংগ্রাম পরিষদ’ নামের একটি সংগঠন।
পাঁচ বছর আগে এই সমিতির সদস্য সংখ্যা ছিল ১৫ হাজার। সমিতির নেতারা তখন জানিয়েছিলেন, সেখানে আট হাজার পরিবারে প্রায় ৪০ হাজার মানুষের বসবাস করতেন। এদের অধিকাংশ রিকশাচালক, ঠেলাগাড়ি চালক, দিনমজুর, হোটেল বয় ও গার্মেন্টম শ্রমিক।
২০১৭ সালের হিসাবে- ওই এলাকার ভেতরে ১২টি মসজিদ, চারটি মাদ্রাসা, তিনটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি উচ্চ বিদ্যালয়, তিনটি কেজি স্কুল, তিনটি এতিমখানা, ছয়টি কবরস্থান, পাঁচটি মন্দির, দুটি কেয়াং, একটি গির্জা, একটি শ্মশান এবং একটি কাঁচা বাজার আছে।
আরও পড়ুন: