অবস্থান বদলেছে আবদুল্লাহর, বেড়েছে জলদস্যুর সংখ্যা

জাহাজের বিভিন্ন অবস্থানে মেশিনগান, একে-৪৭সহ নিরাপত্তা প্রহরী বসিয়েছে জলদস্যুরা।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 March 2024, 04:43 PM
Updated : 15 March 2024, 04:43 PM

সোমালি জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহতে অন্তত ৫০ দস্যুর অবস্থান করার কথা জেনেছে জাহাজে থাকা এক নাবিকের পরিবার।

শুক্রবার বিকালে জাহাজের চিফ অফিসার আতিক উল্লাহ খান ফোনালাপে তার পরিবারকে এ তথ্য দেন।

আতিকের ভাই আসিফ খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, জাহাজে থাকা জলদস্যুরা বিকালে আতিককে পরিবারের সঙ্গে এক মিনিট কথা বলার সুযোগ দিয়েছিল। জাহাজের স্যাটেলাইট ফোনের মাধ্যমে এই আলাপ হয়।

আসিফ বলেন, “ভাইয়া জানিয়েছেন, তাদের জাহাজে অন্তত ৫০ জনের মত জলদস্যু অবস্থান করছে এখন। তবে তারা কারও সাথে কোনো খারাপ আচরণ করেনি। জাহাজে থাকা খাবারগুলো একসাথে তারাও খাচ্ছে। যার কারণে কিছুদিন পর খাবারের সংকট সৃষ্টি হতে পারে তারা আশঙ্কা করছেন।”

এদিকে সোমালিয়ায় যে স্থানে জাহাজটি নোঙর করেছিল, সেখান থেকে তার অবস্থান পরিবর্তন হয়েছে বলে জানিয়েছেন এমভি আবদুল্লাহর মালিক প্রতিষ্ঠান কবির গ্রুপ।

চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানটির মিডিয়া ফোকাল পার্সন মিজানুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, জাহাজের নাবিকদের সাথে তাদের যোগাযোগ হয়েছে। সোমালিয়ায় জাহাজটি যে স্থানে নোঙর করা হয়েছিল, সেখান থেকে কিছুটা সরে গিয়েছে।

বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি শাখাওয়াত হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, বৃহস্পতিবার দুপুরে যে স্থানে জাহাজটিকে নোঙর করা হয়েছিল, সেখান থেকে উত্তর অভিমুখে ৪৫-৫০ মাইল দূরে জাহাজটি আছে এখন। ওই স্থানটি গদবজিরান উপকূল থেকে ৪ মাইল দূরে।

মোজাম্বিক থেকে ৫৫ হাজার টন কয়লা নিয়ে আরব আমিরাত যাওয়ার পথে গত ১২ মার্চ ভারত মহাসাগরের সোমালি জলদস্যুদের কবলে পড়ে এমভি আবদুল্লাহ। জলদস্যুরা জাহাজটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ২৩ নাবিকের সবাইকে জিম্মি করে।

জিম্মি হওয়ার আগেই জাহাজের নাবিকরা জাহাজের পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে মালিকপক্ষকে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে বার্তা এবং ভয়েস মেইল পাঠান। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও তারা যোগাযোগ করেন।

চিফ অফিসার আতিক উল্লাহ শুক্রবার তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারলেও সবাই সে সুযোগ পাচ্ছেন না।  

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের তরফে জাহাজে থাকা আরও তিন নাবিকের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা বলেছেন, গত ১২ মার্চ জাহাজ জলদস্যুদের কবলে পড়ার পর তারা পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। তারপর থেকে আর যোগাযোগ হয়নি।

উদ্ধারের ‘সর্বাত্মক চেষ্টা’

এমভি আবদুল্লাহর চিফ অফিসার আতিক উল্লাহ খানের ভাই আসিফ খান জানিয়েছেন, শুক্রবার সকালে তিনি ও তার মা পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের সঙ্গে কথা বলেছেন।

“আমরা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসায় গিয়েছিলাম। উনি আমাদের আশ্বস্ত করেছেন সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের চেষ্টা চলছে তাদের নিরাপদে মুক্ত করার। আমাদেরকে কোনো চিন্তা না করতে বলেছেন।”

কবির গ্রুপের মিডিয়া ফোকাল পারসন মিজানুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা যোগাযোগের চেষ্টা করছি। বিষয়টি নিয়ে পররাষ্ট্র, নৌ মন্ত্রণালয়, প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর নিয়মিত খবরাখবর রাখছে। আমাদের মধ্যে সমন্বয় হচ্ছে, কীভাবে জাহাজটি নিরাপদে মুক্ত করা যায়, সে বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন পক্ষের সাথে যোগাযোগ করে জলদস্যুদের সাথে যোগাযোগ স্থাপনের চেষ্টা করা হচ্ছে।”

কেমন আছেন নাবিকরা? 

এমভি আবদুল্লাহর জিম্মি নাবিকদের ফোনে কথা বলার সুযোগ দিয়েছে জলদস্যুরা। বিভিন্ন দেশি-বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজে ক্যাপ্টেন হিসেবে কাজ করা আতিক ইউ খান এমভি আবদুল্লাহতে থাকা নাবিকদের বিষয়ে বেশ কিছু তথ্য পেয়েছেন। 

ক্যাপ্টেন আতিক ইউ এ খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দস্যুরা জিম্মি নাবিকদের ফোনে দেশে কথা বলার অনুমতি দিয়েছেন। তবে তা দিনের বেলায়। একজন একজন করে। জাহাজে থাকা জিম্মি নাবিকদের মধ্যে কয়েকজনের সাথে আমার কথা হয়েছে।

“আজ বেশ কিছুক্ষণ (৩৫মিনিট) কথা হয়। স্যাটেলাইট ফোনে নাবিকরা দেশে ফোন করছেন। সর্বশেষ আজ দুপুরে কথা হয়েছে।”

এক ফেইসবুকে পোস্টও এ বিষয়ে বিস্তািরত লিখেছেন ক্যাপ্টেন আতিক ইউএ খান।

তিনি লিখেছেন, “সোমালিয়ার স্থানীয় সরকারের নির্দেশক্রমে এমভি আবদুল্লাহ আজ (শুক্রবার) সকাল ১১টায় নোঙর তুলে স্থান পরিবর্তন করেছে। বিকেল ৪টার দিকে জানা গেছে, আগের অবস্থান হতে ৪০ মাইল দূরে এসে নোঙর করার প্ল্যান ছিল।”

আতিক ইউএ খান বলছেন, “আপাতত জলদস্যুদের সাথে কথা বলার (নাবিকদের) একমাত্র মাধ্যম ওদের ইন্টারপ্রেটার (দোভাষী)। তিনি মোটামুটি ভালো ইংরেজি বলেন। অন্যদের (জলদস্যুদের) সাথে শুধু ইশারা ইঙ্গিতের মাধ্যমে কুশল বিনিময় হয় নাবিকদের।

“জলদস্যুরা এখন পর্যন্ত নাবিকদের বাসস্থান বা অ্যাকোমোডেশন নিয়ে হস্তক্ষেপ করেনি। তবে তাদের নেতাগোছের ২-৩ জন পাইলট কেবিনে অবস্থান করছে। বাকিরা রাতে থাকছে ব্রিজ উইংয়ে বা ব্রিজের দুইপাশের খোলা ডেকে। এজন্য নাবিকরা ওদেরকে স্টোর রুম হতে চাদর, বালিশ ইত্যাদি সরবরাহ করেছে।”

জাহাজের বিভিন্ন অবস্থানে মেশিনগান, একে ৪৭সহ নিরাপত্তা প্রহরী জলদস্যুরা বসিয়েছে বলে নাবিকদের কাছ থেকে জেনেছেন আতিক ইউএ খান।

তিনি বলেন, “দিনের বেলা জলদস্যুরা সব নাবিককে ব্রিজে থাকা স্যাটেলাইট ফোনের মাধ্যমে পরিবারের সাথে কথা বলার অনুমতি দিয়েছে। সন্ধ্যার পর অবশ্য সেই অনুমতি নেই৷ আজ হতে নাবিকদের জাহাজের সাধারণ রুটিন মেনে চলার জন্য অনুমতিও দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ রুটিন মেইনটেন্যান্স বা রক্ষণাবেক্ষণের কাজ।

“ইঞ্জিনিয়াররা তাই ইঞ্জিন রুমে স্বাভাবিক কাজ করার অনুমতি পেয়েছেন। ইঞ্জিনরুমে ওরা কোনো পাহারা বসায়নি। ডেক অফিসাররাও তাই কার্গো হোল্ডের ৫৫ হাজার টন কয়লার তাপমাত্রা নিয়ে কাজ করার সুযোগ পাবেন। কয়লার তাপমাত্রা আর হোল্ডের অক্সিজেন পারসেন্টেজ নিয়ন্ত্রণ করলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা কমে আসবে।”

এমভি আবদুল্লাহর জিম্মি নাবিকদের বরাতে আতিক ইউএ খান জানান, শুক্রবারই আরো ১০-১২ জন জলদস্যু জাহাজে যুক্ত হওয়ার কথা। মোটামুটি ২৫-৩০ জন সবসময় জাহাজে অবস্থান করছে।

“১০-১২ দিনের খাবার মজুদ আছে। এরপর সোমালিয়ানরা প্রতিদিন সম্ভবত খাসি জাতীয় প্রাণী জবাই করে ভাতের সাথে খাওয়াবে। তবে পানি ফুরিয়ে এলে কী হবে, সেই বিষয়ে ধারণা পাওয়া যায়নি।”

আতিক বলেন, “এখন পর্যন্ত জলদস্যুরা কোনো নির্দিষ্ট অংকের মুক্তিপণ দাবি করেনি।

“নাবিকরা কোনো ঝুঁকি নিচ্ছেন না। ওরা যা বলছে তা শুনছেন। তাই জলদস্যুরাও কারো সাথে খারাপ ব্যবহার করেনি।” 

পুরানো খবর:

এমভি আবদুল্লাহ জাহাজে ১২ দস্যু, এখনো ‘অপারেশন আটলান্টার’ নজরে 

জিম্মিদশায় কেমন আছেন, অডিও বার্তায় জানালেন আবদুল্লাহর নাবিক