“আমরা সবাই এখন ব্রিজে ঘুমাই,… একটা ওয়াশরুম ব্যবহার করি সবাই।”
Published : 14 Mar 2024, 09:37 PM
জলদস্যুরা ছিনতাই করা জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ নিয়ে সোমালিয়ায় পৌঁছানোর পর জিম্মি নাবিকদের একজন পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে দেশে ফেরার ‘আকুতি’ জানিয়েছেন।
আবদুল্লাহর চিফ অফিসার আতিক উল্লাহ খান বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টার দিকে তার ছোটভাই আসিফ খানকে অডিও বার্তা পাঠিয়ে তাদের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে জানান।
রাত পৌনে ৮টার দিকে এমভি আবদুল্লাহ সোমালিয়া উপকূল থেকে সাত মাইল দূরে অবস্থান করছিল বলে বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএমওএ) পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
জাহাজের মালিক এসআর শিপিংয়ের মূল কোম্পানি কবির গ্রুপের পক্ষ থেকেও নাবিকদের সাথে যোগাযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলা হয়েছে, ২৩ নাবিকের সবাই সুস্থ আছেন এবং সোমালি দস্যুরা তাদের সঙ্গে ‘ভালো ব্যবহার’ করছেন।
মোজাম্বিক থেকে ৫৫ হাজার টন কয়লা নিয়ে আরব আমিরাত যাওয়ার পথে মঙ্গলবার ভারত মহাসাগরের সোমালি জলদস্যুদের কবলে পড়ে এমভি আবদুল্লাহ। জলদস্যুরা জাহাজটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ২৩ নাবিকের সবাইকে জিম্মি করে।
জিম্মি হওয়ার আগেই জাহাজের চিফ অফিসার আতিক উল্লাহ খান এবং নাবিকরা জাহাজের পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে মালিকপক্ষকে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে বার্তা এবং ভয়েস মেইল পাঠান। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও তারা যোগাযোগ করেন।
আতিক উল্লাহ খানের ছোটভাই আসিফ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ভাইয়া আজ বিকালে ভয়েস রেকর্ড পাঠিয়ে সর্বশেষ পরিস্থিতি জানিয়েছেন। জলদস্যুরা তাদের সাথে ভালো ব্যবহার করছে, কিন্তু ভাইয়াসহ অন্য নাবিকরা সবসময় নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কার মধ্যে আছেন।”
অডিও বার্তায় আতিক বলেন, “কেমন আছো তোমরা? আমরা আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি, সুস্থ আছি... কিন্তু মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। আমরা সবাই এখন ব্রিজে ঘুমাই, এরকমতো আমাদের অভ্যাস নেই, তারপরও ঘুমাচ্ছি, একটা ওয়াশরুম ব্যবহার করি সবাই।”
মঙ্গলবার দুপুরে এমভি আবদুল্লাহর নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর জলদস্যুরা সেটি সোমলিয়া উপকূলের গারাকাড এলাকায় নিয়ে যায়। বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে সেটি সোমালি উপকূলে পৌঁছায়। দুটি নেভি জাহাজ আবদুল্লাহকে অনুসরণ করে বলে চিফ অফিসার আতিক জানান।
তিনি বলেন, “গতকাল একটা নেভি জাহাজ আসছিল, আজকেও একটা এসেছে। টোটাল দুইটা এসে আমাদের রেসকিউ করতে চাইছিল। বাট পসিবল না, কারণ ওরা তখন আমাদের মাথায় গান ধরে জিম্মি করে রাখে। নেভি জাহাজ ফ্রিগেট আসলে তারা আমদের জিম্মি করে।”
জলদস্যুরা এখনও পর্যন্ত খারাপ ব্যবহার করেনি জানিয়ে আতিক বলেন, “সমস্যা যেটা, যেখানে ঘুমাই সেখানে একপাশে ঠিক আছে, অপরপাশে দেখি যে আমার দিকে বড় বড় মেশিনগান তাক করে রাখছে... এই অবস্থা।
“ঘুম যা হবার হচ্ছে আর কি। তারপরও সুস্থ আছি... মানসিকভাবে একটু ইয়ে থাকলেও সুস্থ থাকার চেষ্টা করতেছি।”
জাহাজটিতে এখনো খাবার-পানি থাকলেও ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তার কথা বলেন তিনি।
অডিও রেকর্ডে এই নাবিক বলেন, “আলহামদুলিল্লাহ, এখনো খাওয়া দাওয়া আছে। যেহেতু জলদস্যুরাসহ আমাদের সাথে খাওয়া দাওয়া করছে, আমাদের পানি ব্যবহার করতেছে.. সো আমদের এই খাওয়া-দাওয়া কতদিন যায় বলতে পারছি না। ১০ থেকে ১৫ দিন হয়ত বড় জোর যেতে পারে।
“১০-১৫ দিন পর খাওয়া দাওয়া শেষ হয়ে যাবে, তখন আমরা কষ্টে পড়ে যাব।পানি শেষ হয়ে গেলে আমরা কষ্টে পড়ে যাব। এটাই আমাদের এখনকার পরিস্থিতি।”
গত দুই দিনে সোমালি দস্যুদের সঙ্গে সম্পর্ক ‘ভালো হয়েছে’ বলেও জানান আবদুল্লাহর চিফ অফিসার।
তিনি বলেন, “আজকে আমরা সোমালিয়া আসলাম, আসার পরে ওদের সাথে আমাদের ভালো রিলেশন হইছে। বলে কয়ে আমরা একটু কেবিনে আসলাম। বাট আবার পরে ব্রিজে চলে যেতে হবে। কথা হচ্ছে আল্লাহ যতদিন মানসিকভাবে আমাদের শক্ত রাখে!
“তোমরাও ভালো থাকিও, সবাইকে দোয়া করতে বলিও যেন আমরা নিরাপদে ফিরে আসতে পারি। রোজার উসিলায় আমরা ব্রিজে বসে আল্লাহ আল্লাহ করি। আশা করি আল্লাহ আমাদের ডাক শুনবেন।”
পাঠানো বার্তায় ঈদের আগেই দেশে ফেরার আকুতি ছিল চিফ অফিসার আতিকের কথায়।
তিনি বলেন, “সরকারও যেহেতু পদক্ষেপ নিচ্ছে, কোম্পানিও যেহেতু সজাগ আছে এবং বিশ্ব মিডিয়াও আমাদের নিয়ে কথা বলছে ইনশাল্লাহ শিঘ্রই আমরা পরিবারের কাছে ফিরে যেতে পারব।ঈদের আগেই যেন পরিবারের কাছে ফিরে যেতে পারি এটাই আমরা চাই আরকি।‘‘
জলদস্যুরা নাবিকদের জিম্মি করার পর তাদের মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়। সে কারণে বুধবার তারা যোগাযোগ করতে পারেননি। তবে বৃহস্পতিবার বিকাল ও সন্ধ্যায় কয়েকজন নাবিক ভয়েস মেসেজ পাঠিয়ে এসআর শিপিং কর্তৃপক্ষ এবং পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
কবির গ্রুপের মিডিয়া ফোকাল পারসন মিজানুল ইসলাম বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, জাহাজের চিফ অফিসারের সঙ্গে তাদেরও কথা হয়েছে।
“তারা ভালো আছেন, সুস্থ আছেন। তাদের কেবিনে যেতে দেওয়া হচ্ছে বলে আমাদের জানিয়েছেন। দস্যুরা তাদের কারও সাথে এখনো খারাপ আচরণ করেনি।”
তবে আবদুল্লাহর নিয়ন্ত্রণ নেওয়া সোমালি জলদস্যুদের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কেউ যোগাযোগ করেনি বলে জানান তিনি।
পুরনো খবর
এমভি আবদুল্লাহ: বিপর্যস্ত চিফ অফিসার আতিকের পরিবার, অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী শয্যাশায়ী