“নিজস্ব অর্থায়নে আমরা খাল নালা পরিষ্কার করছি,” বলেন তিনি।
Published : 29 Jan 2025, 03:58 PM
কাঙ্ক্ষিত বরাদ্দ না পাওয়ায় বর্ষা মৌসুমের আগে চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতার সমস্যা নিরসনের কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে তুলে ধরে ‘হতাশা’ ব্যক্ত করেছেন সিটি করপোরেশনের মেয়র শাহাদাত হোসেন।
বুধবার দুপুরে নগরীর বাকলিয়া বড় কবরস্থান এলাকায় কৃষি খাল খনন কাজের উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, দুটি প্রকল্পের জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগের কাছে ৩০০ কোটি টাকা চেয়েছেন। কিন্তু এত বেশি ধীরগতি ও সমস্যা যে কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে ১৪ হাজার ৩৪৯ কোটি টাকা ব্যয়ে চারটি প্রকল্পের কাজ চলছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) দুটি, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (সিসিসি) একটি এবং পানি উন্নয়ন বোর্ড একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।
তবু প্রতি বর্ষায় নগরীর চকবাজার, মুরাদপুর, বাকলিয়ার একাংশ, দুই নম্বর গেইট, বহদ্দারহাট, কাপাসগোলা, চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ, আছাদগঞ্জ, আগ্রাবাদ, হালিশহরসহ বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়।
১৮ জানুয়ারি জলাবদ্ধতার সমস্যা সমাধানে করণীয় নির্ধারণে প্রকল্পগুলো পরিদর্শন করেন পরিবেশ ও পানিসম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান ও ত্রাণ উপদেষ্টা ফারুক ই আজম।
চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতার নিরসনে চলমান প্রকল্পগুলোর মাধ্যমে পরিস্থিতির ‘দৃশ্যমান উন্নতি না হলে’ সেগুলো ‘চালিয়ে নেওয়া হবে কি না’, তা ভেবে দেখার কথা বলেছেন দুই উপদেষ্টা।
এর জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত প্রকল্পগুলোকে কাজের লক্ষ্য ঠিক করে দিয়ে অগ্রগতির চিত্র পর্যবেক্ষণের কথা বলেছেন তারা।
বর্ষার আগে জলাবদ্ধতা নিরসনে সিটি করপোরেশনের উদ্যোগ বিষয়ে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে মেয়র শাহাদাত হোসেন বলেন, “স্থানীয় সরকার বিভাগে আমরা দুটো প্রকল্প দিয়েছি। একটা হচ্ছে থোক বরাদ্দের মাধ্যমে ড্রেন ও খাল পরিষ্কার করা। কারণ আমাদের তো ওই পরিমাণ বাজেট নেই। ওই বাজেটটা (১০০ কোটি টাকা) আমরা চেয়েছি।
“আরেকটা হচ্ছে, যন্ত্রপাতি কেনার জন্য ১৯৮ কোটি টাকার প্রকল্প। সামান্য ৩০০ কোটি টাকার বাজেট চেয়েছি। সেগুলোতে এত বেশি ধীরগতি, এত বেশি প্রবলেম হচ্ছে সেটা আমাদের জন্য অন্তরায় হিসেবে কাজ করছে।”
তিনি বলেন, “নিজস্ব অর্থায়নে আমরা খাল নালা পরিষ্কার করছি। যে টাকা হোল্ডিং ট্যাক্স হিসেবে পাচ্ছি, সেখান থেকে। হোল্ডিং ট্যাক্সগুলোও ঠিকমত দেওয়া হচ্ছে না।”
সিডিএ জলাবদ্ধতার সমস্যা নিরসনে প্রকল্প হিসেবে ২০১৬ সালে নগরীর ৩৬টি খাল নিয়ে কাজ শুরু করে, এর বাইরে ২১টি খাল আছে তুলে ধরে মেয়র বলেন, “শুরু থেকে ৫৭টি খালকে অ্যাড্রেস করে যদি আমরা কাজ করতে পারতাম তাহলে শতভাগ না হলেও ৯০ ভাগ জলাবদ্ধতা নিরসন হত। কিন্তু ৩৬টি খাল করার কারণে ৫০-৬০ ভাগ জলাবদ্ধতা নিরসন হবে কিনা সেটা সন্দেহ আছে।”
সিডিএ ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাস্তবায়নাধীন প্রকল্প বিষয়ে শাহাদাত বলেন, “আগে যে কর্মসূচিগুলো ছিল জনগণকে সম্পৃক্ত করতে তারা পারেনি। ৩৬টি খাল যখন তারা করছিল যদি এলাকাবাসীর সাথে পরামর্শ করে সেগুলোকে প্রাধান্য দিয়ে কাজ করতে পারত, তাহলে আজ এত সমন্বয়সভারও দরকার ছিল না।”
২১টা খাল যদি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনকে দেওয়া হয় তাহলে তারা ড্রেনেজ মাস্টারপ্ল্যানের সাথে সমন্বয় করে কাজ করবেন তুলে ধরে তিনি বলেন, “পানি উন্নয়ন বোর্ড যে ৩০-৩২টা স্লুইস গেট করেছে, সেগুলোর যে প্রশস্ততা থাকার কথা ছিল সেটা রাখতে পারেনি। সরু করে ফেলেছে। এই বাধা দূর করতে না পারলে সমস্যা হবে। স্থানীয় জনসাধারণের পরামর্শ নেওয়া হলে সবাই সুফল পেত।”
কৃষি খালের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “এই খালটি চাকতাই খাল হয়ে কর্ণফুলী নদীতে গিয়ে পড়েছে। নৌকা দিয়ে একসময় মালামাল পরিবহন হত। কালের বিবর্তনে সেগুলো হারিয়ে গেছে। এ কারণেই কিন্তু জলাবদ্ধতা হচ্ছে।
“কৃষি খালের অবস্থা হল, একসময় এটার প্রশস্ততা ছিল প্রায় ২১ ফুট। এখন ৬-৮ ফুটের বেশি হবে না। আশেপাশের বাড়িগুলো দখল করে ফেলেছে। যেসব বাড়ি পড়েছে সেগুলো ছেড়ে দিতে হবে। ২১ ফুটে ফিরিয়ে নিতে চাই। অন্তত ১৫-১৬ ফুট হতে হবে।”
নগরবাসীকে খাল পরিষ্কার রাখতে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে মেয়র বলেন, “আজ পরিষ্কার করছি। কাল যেন গারবেজ স্টেশন না হয়। এখানে পলিথিন প্লাস্টিক তো আছেই, লেপ তোষক বালিশ পর্যন্ত পেয়েছি।
“শহরটা আমাদের সবার। শহরকে বাসযোগ্য করার জন্য সবাইকে একসাথে কাজ করতে হবে। শুধু সিটি করপোরেশন, সিডিএ, পানি উন্নয়ন বোর্ড এককভাবে পারবে না। আমাদের কাজ হচ্ছে পরিকল্পনা নিয়ে জনগণকে সাথে নিয়ে সেগুলো বাস্তবায়ন করা।”
এর আগে সকালে নগরীর ডবলমুরিং এলাকার গুলজার খালের ময়লা পরিষ্কার করার কাজও উদ্বোধন মেয়র শাহাদাত।
এসময় উপস্থিত ছিলেন সিসি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, সচিব মোহাম্মদ আশরাফুল আমিন ও প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা কমান্ডার ইখতিয়ার উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী।