“ভবিষ্যতে নগরবাসী যদি মনে করে ওই পাঁচটি র্যাম্প নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা আছে, সেজন্য ব্যবস্থা রেখেই পুরো এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ করা হবে।”
Published : 28 Oct 2024, 07:40 PM
চট্টগ্রামের প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে প্রস্তাবিত ১৪টি র্যাম্পের মধ্যে টাইগারপাসসহ ৫টির কাজ আপাতত না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-সিডিএ।
সোমবার প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থাটির নবগঠিত বোর্ডের প্রথম সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সভায় বেশিরভাগ সদস্য যানজট সৃষ্টি হবে এমন র্যাম্প নির্মাণ না করার পক্ষে মত দেন।
যেগুলোর কাজ আপাতত হবে না সেগুলো হচ্ছে- টাইগারপাস অংশে পলোগ্রাউন্ডের দিক থেকে ওঠার র্যাম্প, আগ্রাবাদের জাতিতাত্ত্বিক জাদুঘরের সামনে নামার র্যাম্প, কেইপিজেডে নামার একটি র্যাম্প এবং আগ্রাবাদের এক্সেস রোডের ওঠা–নামার দুটি র্যাম্প।
চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী দ্বিতল সড়কে গাছ কেটে পলোগ্রাউন্ড থেকে টাইগারপাসমুখী র্যাম্পটি নির্মাণ না করতে আন্দোলনেও নেমেছিল পরিবেশবাদীরা।
৫ অগাস্টের অভুত্থানের পর ২ সেপ্টেম্বর আগের সিডিএ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইউনুছের নিয়োগ বাতিল করে নুরুল করিমকে নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগ দেওয়া হয়। এরপর ৩০ সেপ্টেম্বর সিডিএর আগের বোর্ড বাতিল করে বোর্ডের নতুন ৭ সদস্য নিয়োগ করা হয়।
এক্সপ্রেসওয়েটির আগ্রাবাদে চারটি, টাইগারপাস, নিমতলা, সিইপিজেড ও কেইপিজেড এলাকায় দুটি করে এবং জিইসি মোড়, ফকিরহাটে একটি করে র্যাম্প নির্মাণের কথা ছিল।
আগ্রাবাদ এলাকার চারটির মধ্যে জাতিতাত্ত্বিক জাদুঘর সড়কে একটি, ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার সড়কে একটি এবং আগ্রাবাদ এক্সেস সড়কে হবে দুটি র্যাম্প নির্মাণের প্রস্তাব ছিল।
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহফুজুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ভবিষ্যতে নগরবাসী যদি মনে করে ওই পাঁচটি র্যাম্প নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা আছে, সেজন্য ব্যবস্থা রেখেই পুরো এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ করা হবে।
“চলমান নয়টি র্যাম্পের নির্মাণ কাজ দ্রুত শেষ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”
গত ২৮ আগস্ট থেকে পরীক্ষামূলকভাবে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে যান চলাচল শুরু হয়। টোলের হার নির্ধারণ করার পর আনুষ্ঠানিকভাবে গাড়ি চলাচল করবে।
সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “টোলের একটা হার আমরা প্রস্তাব করেছি। এটা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেলেই কার্যকর করা হবে।”
নগরের লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সিডিএ। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে যৌথভাবে কাজ করছে বাংলাদেশের ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড ও চীনের র্যাঙ্কিন।
নগরীর লালখান বাজার থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত প্রায় ১৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এ উড়াল সড়ক নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ৪ হাজার ২৯৮ কোটি টাকা।
২০১৭ সালে একনেকে অনুমোদন হওয়ার সময় ৩ হাজার ২৫০ কোটি টাকা ব্যয়ের প্রকল্পটি তিন বছরের মধ্যে শেষ করার কথা ছিল।
পরে ২০২২ সালে নকশা ‘সংশোধন’ করে আরও এক হাজার ৪৮ কোটি টাকা (আগের ব্যয়ের চেয়ে ৩২ শতাংশ) ব্যয় বাড়িয়ে মেয়াদ ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়।
এক্সপ্রেসওয়েটির প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর নামে করার প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছিল গত সরকারের আমলে।
প্রকল্পের কাজ শুরুর পর চট্টগ্রাম বন্দরের আপত্তি, জমি অধিগ্রহণের জন্য অপেক্ষা, ট্রাফিক বিভাগের অনুমতি না পাওয়া, লালখান বাজার অংশের নকশা নিয়ে আপত্তি, কোভিডের সময় কাজে ধীরগতি, বিকল্প সড়ক চালু করতে দেরি এবং সবশেষ বন্দর সংলগ্ন এলাকায় নকশা পরিবর্তনসহ নানা কারণে দেরি হয়।
১৬ কিলোমিটার উড়াল সড়কটি বিমানবন্দর এলাকা থেকে শুরু হয়ে ইপিজেড-বন্দর-বারেকবিল্ডিং-চৌমুহনী হয়ে দেওয়ানহাট রেলসেতুর পশ্চিম পাশ দিয়ে পাহাড় ঘেঁষে টাইগার পাস মোড়ের পর মূল সড়কের ওপর দিয়ে লালখান বাজার মোড় পেরিয়ে ওয়াসার মোড়ে আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভারে গিয়ে মিলবে।
ইতোমধ্যে এক্সপ্রেসওয়ের মূল কাঠামোর কাজ শেষ হয়েছে। কয়েকটি র্যাম্প নির্মাণের কাজও শুরু হয়েছে।
আরও পড়ুন-
চট্টগ্রামে এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে 'কিছু অসঙ্গতি' পেয়েছে তদন্ত কমিটি
চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে: এবার র্যাম্প নিয়ে বাওয়া স্কুলের আপত্তি
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে: পতেঙ্গা প্রান্তে ‘উল্টো’ ফলের শঙ্কা ট্রাফিক বিভাগের
চট্টগ্রামে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চালু হচ্ছে র্যাম্প ছাড়াই
টাইগারপাস-সিআরবি সড়কে গাছ কেটে র্যাম্প নয়: দুই মন্ত্রীর নির্দেশ
চট্টগ্রামের 'আইকনিক' সড়কে শতবর্ষী গাছ কেটে র্যাম্প নামাতে চায় সিডিএ