যানজটের সম্ভাব্য পাঁচটি কারণ খুঁজে পেয়ে সেগুলো সমাধানের পথ বাতলে সিডিএকে চিঠি দিয়েছে ট্রাফিক বিভাগ।
Published : 17 May 2024, 09:15 AM
চট্টগ্রাম নগরীর ‘যানজট নিরসনে’র লক্ষ্যে নির্মিত প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটি চালু হলে পতেঙ্গা প্রান্তে ফল ‘উল্টো’ হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ।
এক্সপ্রেসওয়েটি চালু হলে পাঁচটি কারণে পতেঙ্গা প্রান্তে ‘ভয়াবহ’ যাজনট দেখা দিতে পারে জানিয়ে ট্রাফিক বিভাগ থেকে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (সিডিএ) চিঠি দেওয়া হয়েছে।
সম্ভাব্য এ যানজট নিরসনে চারটি উপায় অবলম্বেরও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে চিঠিতে।
সিডিএ-কে চিঠি পাঠানোর বিষয়টি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মাসুদ আহম্মদ।
চট্টগ্রামে সরকারের মেগা প্রকল্প ‘এবিএম মহিউদ্দিন সিডিএ এক্সপ্রেসওয়ে’ মাসখানের মধ্যে চালু হতে পারে। এটি চালু হলে পতেঙ্গা প্রান্তে ‘যানজট’ সৃষ্টি হয়ে সংকট আরও বাড়াতে পারে বলে মানছে সিডিএ-ও।
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চালু হলে পতেঙ্গা প্রান্তের যানজট পরিস্থিতি কেমন দাঁড়াবে এবং তা থেকে কীভাবে পরিত্রাণ পাওয়া যাবে, তার একটি সম্ভাব্য চিত্র ট্রাফিক বিভাগের চিঠিতে দেওয়া হয়েছে।
মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মাসুদ আহম্মদ বলেন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে পতেঙ্গা প্রান্তে যেখানে শেষ হয়েছে, সেখানে সড়কটি অপ্রশস্ত। সে মোড়েই মিলেছে বিমানবন্দর, টানেল এবং আউটার রিং রোডের সঙ্গে সংযুক্ত সড়কগুলো।
“পাশাপাশি সড়কে সৈকতের দর্শনার্থী এবং পথচারী চলাচলের কারণে যানবাহনের গতি ধীর হয়ে যাবে। সব মিলে ওই মোড়ে যানজট সৃষ্টি হবে। সেগুলো চিহ্নিত করে সমস্যা সমাধানের পরামর্শ দিয়ে সিডিএকে আমরা একটি চিঠি দিয়েছি।”
চিঠিতে বলা হয়েছে, ফৌজদারহাট থেকে শুরু হওয়া আউটার রিং রোড শেষ হয়েছে পতেঙ্গা সৈকতসংলগ্ন বঙ্গবন্ধু টানেলে গিয়ে। টানেলের গোল চত্বরের অদূরে বিমানবন্দরমুখী ভিআইপি সড়ক যেখান থেকে শুরু হয়েছে, সেখানেই শেষ হয়েছে এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে।
এ চত্বরে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নিচ থেকে বিপরীতমুখী সড়কটি চলে গেছে মূল শহরের দিকে।
সেখানে গিয়ে দেখা যায়, এক্সপ্রেসওয়ে যেখানে সড়কে নেমেছে, সেখানেই টোল বুথ। আবার সে অংশ থেকেই নগরীর দিকে চলাচলকারী ১০ ও ১১ নম্বর রুটের সব যাত্রীবাহী বাস যাত্রীর অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে।
টানেলের দিক থেকে যেসব পণ্যবাহী ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ও লরি ভিআইপি সড়ক হয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন জেটিতে চলাচল করে, সেগুলো এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মোড় ঘুরেই যাতায়াত করছে। এসব যানবাহন ঘোরার জন্য যে ক্রসিং রাখা হয়েছে, তা এক্সপ্রেসওয়ের শেষ প্রান্তের ১৫ থেকে ২০ গজের মধ্যে।
এসব যানবাহন ওই ক্রসিং ধরে ঘুরতে গেলেই অপেক্ষমাণ বাসের লাইনের পিছে এসে গতি কমে যাচ্ছে। এক্সপ্রেসওয়ে চালু না হলেও এ ক্রসিং ঘিরে এখনই ধীর গতিতে চলছে সব ধরনের যানবাহন।
টানেল থেকে আসা সড়ক, বিমানবন্দরমুখী ভিআইপি সড়ক এবং নগরমুখী নিচের সড়ক– এ চার সড়কেই ধীর গতির যানবাহন চলাচালের জন্য কোনো আলাদা লেইন নেই। মোড়ে এসে সব যানবাহন নিজেদের ইচ্ছামত এক সড়ক থেকে আরেক সড়কে যাচ্ছে।
ট্রাফিক বিভাগের দেওয়া চিঠিতে বলা হয়েছে, টানেল উদ্বোধনের পর থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজারো দর্শনার্থী টানেল দেখতে আসছে। সেই সঙ্গে আগের মতই সমুদ্র সৈকতেও আসছে বহু মানুষ। এ জন্য পতেঙ্গা গোল চত্বরে যানজট বেড়ে পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল হচ্ছে।
চিঠির ভাষ্য অনুযায়ী, পাঁচটি কারণে এক্সপ্রেসওয়ের পতেঙ্গা প্রান্তে যানজট বাড়তে পারে।
• আউটার রিং রোড হয়ে বঙ্গবন্ধু টানেল ও বিমানবন্দরগামী, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে হয়ে বন্দর ও শহরগামী এবং টানেল থেকে বের হয়ে বিমানবন্দর ও আউটার রিং রোড দিয়ে ফৌজদারহাটমুখী যানবাহনগুলো প্রথমে টানেলমুখে পতেঙ্গা গোল চত্বরে পরস্পরের মুখোমুখী হয়ে চলাচল করবে, যাতে সড়কে স্থবিরতা তৈরি হবে। এতে যানজট বেড়ে যাবে।
• এক্সপ্রেসওয়ের পতেঙ্গা এন্ডিং পয়েন্ট ও গোল চত্বর পর্যন্ত স্থানটি ত্রিকোণকৃতির সংকীর্ণ সংযোগস্থল। আলাদা গন্তব্যে সহজভাবে গাড়ি চলাচলের ক্ষেত্রে এ সংযোগস্থলটি খুবই অপ্রশস্ত।
• এক্সপ্রেসওয়ে থেকে নামা গাড়িগুলো পৃথক গন্তব্যে যাওয়ার আলাদা লেইন নেই এবং জায়গাটি প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রশস্ত হওয়ায় টোল বুথের সামনেই ত্রিকোণ সংযোগস্থলে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। এক্সপ্রেসওয়ে চালুর পর এ যানজট এক্সপ্রেসওয়ের ওপর পর্যন্ত চলে যেতে পারে।
• বর্তমান সময়ে টানেল ও সৈকতে আসা পর্যটকদের গাড়ির রাখার কোনো জায়গা না থাকায় তারা সৈকত এলাকার সড়কেই গাড়ি পার্কিং করছে। পাকিংয়ের আইন প্রয়োগ করেও কোনো সুফল পাওয়া যাচ্ছে না।
• সড়কে ফুটপাত না থাকায় পর্যটকরা মূল সড়কে হেঁটে সৈতকে যাচ্ছেন এবং সড়কে কোনো বেড়া না থাকায় মূল রাস্তা দিয়ে যত্রতত্র পারাপার হচ্ছেন।
নগর পুলিশের উপকমিশনার (ট্রাফিক-বন্দর) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “সিডিএ এবং সিটি করপোরেশনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আমরা বসেছিলাম। তাদের জানিয়েছি পতেঙ্গা প্রান্তে যে টোলবুথ করা হয়েছে, সেখানে ভয়াবহ যানজট সৃষ্টি হতে পারে।
“সিডিএ জানিয়েছে, এটা পরীক্ষামূলকভাবে করা হয়েছে। আমরা তাদের বলেছি, সেটি টাইগারপাসের দিকে করলে ভালো হত। তারা আমাদের কথাটি বুঝতে পেরেছে।”
সিডিএ কর্তৃপক্ষ সমাধান করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে বলে জানান পুলিশ কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান।
ট্রাফিক বিভাগ সমস্যা সমাধানে যে চারটি পরামর্শ দিয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে পর্যটক ও দর্শনার্থীদের বহনকারী গাড়ির জন্য আলাদা টার্মিনাল নির্মাণ, পর্যটক ও দর্শনার্থীদের পারাপারের জন্য দুটি ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ, মূল সড়কের পাশে প্রশস্ত ফুটপাত নির্মাণ করে বেড়া দিয়ে মূল সড়কে মানুষের প্রবেশ বন্ধ করা।
সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যানজট নিরসনের জন্য এরই মধ্যে আরেকটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। একনেকে অনুমোদনও হয়ে গেছে। আগামী এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে সেটির কাজ শেষ হয়ে যাবে।”
চার হাজার ২৯৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নগরীর লালখান বাজার থেকে শাহ আমানত বিমানবন্দর পর্যন্ত নির্মিত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের দৈর্ঘ্য ১৬ কিলোমিটার।
প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর নামে করা উড়াল সড়কটি গত বছরের ১৪ নভেম্বর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ছয় মাস আগে উদ্বোধন করা হলেও উড়াল সড়কটি এখনও যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়নি। গত মার্চে সেটি যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়ার কথা থাকলেও করা হয়নি।
হাসান বিন শামস বলেন, স্ট্রিট ক্যামরা ও সাধারণ ক্যামেরা স্থাপন এবং বিদ্যুতের ব্যবস্থা করার পর এক্সপ্রেসওয়েটি চালু করে দেওয়া হবে। ১৫টি র্যাম্পের মধ্যে দুটির কাজ শেষ হয়েছে।
“তবে পাঁচ-ছয়টি র্যাম্পের কাজ চলমান। আমরা সব র্যাম্পের কাজ শেষ হওয়ার জন্য অপেক্ষা করব না। যে র্যাম্পের কাজ যখন শেষ হবে, তখনই যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে।”