এ দুর্ঘটনার পর সিডিএ কোনো তদন্ত কমিটি গঠন করেনি। ইতোপূর্বে এ ধরনের যে ঘটনাগুলো ঘটেছে সেগুলোতেও কোনো তদন্ত কমিটি গঠন করেনি।
Published : 27 Apr 2025, 07:21 PM
চট্টগ্রামে খালে রিকশা উল্টে শিশু মৃত্যুর পর জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পে কোনো ‘গাফিলতি’ হয়েছে কি না, তা খুঁজতে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) ও সিটি করপোরেশনে গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক।
রোববার দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়-২ এর একটি দল সিডিএ এবং সিটি করপোরেশন তথ্য সংগ্রহের পাশাপাশি ঘটনাস্থলও পরিদর্শন করেছে।
সিডিএতে তথ্য সংগ্রহের পর দুদক দলের নেতৃত্বে থাকা সহকারী পরিচালক রিয়াজ উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, “সম্প্রতি খালে পড়ে শিশু মৃত্যুর ঘটনায় সিডিএ ও সিটি করপোরেশনের কোন দায় দায়িত্ব আছে কি না, সেটা যাচাই-বাছাই করতে তারা সেখানে গিয়েছেন। সিডিএ চেয়ারম্যান এবং জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের সাথে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলেছেন।
তিনি বলেন, “সিডিএর কাজের আওতায় ৩৬টি খাল আছে। এর মধ্যে তারা ১৯টি খালের কাজ সমাপ্ত করেছেন বলে আমাদের জানিয়েছে।
“যে হিজড়া খালে দুর্ঘটনা ঘটেছে সে খালে সিডিএ মাত্র কাজটা শুরু করেছে, এটা এখনও চলমান আছে। যেসব খাল উনারা সম্পন্ন করেছেন সেগুলোর তীরে রেলিং দেওয়া হয়েছে কি না সেটা আমরা সরজমিনে দেখব।
তিনি বলেন, “এ দুর্ঘটনার পর সিডিএ কোনো তদন্ত কমিটি গঠন করেনি। এর আগেও এ ধরনের যে ঘটনাগুলো ঘটেছে সেগুলোতেও কোনো তদন্ত কমিটি গঠন করেনি। সে বিষয়টি আমরা দেখব, তারা কেন তদন্ত কমিটি করেনি।”
সিডিএ চেয়ারম্যান প্রকৌশলী নুরুল করিম সাংবাদিকদের বলেন, দুদকের নিয়মিত পর্যক্ষেণ থাকে। তারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন সময় যায়, তথ্য সংগ্রহ করে। রোববারের পরিদর্শনও তাদের নিয়মিত কাজের অংশ।
তিনি বলেন, “জলাবদ্ধতা প্রকল্পের কিছু তথ্য তারা আমাদের কাছে জানতে চেয়েছেন। সংশ্লিষ্টরা সেটা তাদের সাথে শেয়ার করেছেন। শিশু মৃত্যুর বিষয়টি তারা জানতে চেয়েছেন। জলবদ্ধতা প্রকল্পের কাজ করছে সেনাবাহিনীর ৩৪ কনস্ট্রাকশন ডিভিশন। মন্ত্রণালয় থেকে সেনাবাহিনীকে দিয়ে কাজটি করানো হচ্ছে। সিডিএ সমন্বয়ের কাজ করছে। যে খালে দুর্ঘটনা ঘটেছে সে খালটির কাজ শুরু করিনি। পর্যায়ক্রমে খালের কাজ শুরু হচ্ছে।
“যে খালগুলো আমরা করেছি, সেগুলোতে আমরা ভবিষ্যতে প্রটেকশনের ব্যবস্থা করব কি না সেটা তারা জানতে চেয়েছে। যেসব খালগুলো হয়েছে সেগুলোতে প্রটেকশনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আমাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রত্যেকটিতে দেড় থেকে দুই ফুট করে রেলিং দেওয়া আছে। এর বেশি বড় রেলিং দেওয়া যায় না। কারণ পরিষ্কার করার একটা বিষয় আছে।”
চট্টগ্রামে বৃষ্টির মধ্যে গত ১৮ এপ্রিল শুক্রবার রাত ৮টার দিকে কাপাসগোলা নবাব হোটেলের কাছে হিজড়া খালে ব্যাটারিচালিত রিকশা পড়ে স্রোতে ভেসে যায় সাত মাসের মেয়ে শিশু। তার মা, নানি খালে পড়লেও তারা উঠে আসতে সক্ষম হন।
ওই ঘটনার ১৪ ঘণ্টা পর শনিবার সকাল ১০টায় নগরীর চাক্তাই খালের আসাদগঞ্জ শুটকিপট্টির অংশে শিশুটির লাশ ভেসে ওঠে। শিশুর পরিবারও থাকে শুটকিপট্টি এলাকাতেই।
সিডিএ তে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলার পর দুদকের দল কাপাসগোলা হিজড়া খালের যেখানে দুর্ঘটনা ঘটেছে সেখানে যায়। এরপর তারা টাইগার পাসের সিটি করপোরেশনের কার্যালয়ে যায়।
সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, খালে পড়ে যে শিশুটির মৃত্যু হয়েছে সে বিষয়ে দুদক জানতে চেয়েছে।
তৌহিদুলের ভাষ্য, সিডিএ ৩৬টি খাল খননের কাজ করছে। হিজড়া খালটি সেজন্য সিডিএর কাছে সিটি করপোরেশন হস্তান্তর করেছে। যে স্থানে দুর্ঘটনা ঘটেছে সেটা খুব ঝুঁকিপূর্ণ। সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী ঝুঁকি বিবেচনায় খালের পাড়ে বাঁশ দিয়ে একটা বেষ্টনী তৈরি করে দিয়েছিল।
“দুর্ঘটনার আগের দিন কিংবা তার দুই একদিন আগে খাল পরিষ্কারের জন্য স্ক্যাভেটর নামাতে বেষ্টনী সরিয়ে ফেলা হয়েছিল। বৃষ্টি হওয়ার পর রাস্তার ওপর পানি হওয়ায় দেখা যায়নি। তখন রিকশা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খালে পড়ে গেছে। এ দুর্ঘটনায় সিটি করপোরেশনের কিছু করার ছিল না।”
চট্টগ্রামে নালায় নিখোঁজ শিশুর লাশ মিলল ১৪ ঘণ্টা পর